'ডাক্তার উকিল ও মৎস কন্যা ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশ্বেরবিস্ময় ডাক্তার উকিল থাকতেন ঝাড়্গ্রামে তার নিজস্ব বাংলো উন্মেষে যা তারই বিস্ময়কর সৃষ্টিতে পরিপুর্ণ।এইসব আবিষ্কার গুলো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। মানব কল্যাণে এগুলির অবদানীয় অতুলনীয়। ডাক্তার উকিল ছিলেন আচার আচরণে সাজ পোষাকে বৈদিক ঋষির মতন।আমার সাথে তাঁর পরিচয় প্রায় চল্লিশ বছর আগে।তাঁর বেশ কিছু আবিষ্কার যা অলৌকিক বলে মনে হয়ে ছিলো তার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম।তখনই ডাক্তার উকিল তাঁর জীবনে কিছু রহস্য ময় ঘটনা যার রহস্য তিনি নিজেই সমাধান করে ছিলেন তার লিখিত বিবরণ আমাকে দিয়েছিলেন তার থেকেই কয়েকটি আমি ধারা বাহিক প্রকাশ করার চেষ্টা করছি।এই ঘটনাটিও ঐ ডাক্তার উকিলের দেওয়া পাণ্ডুলিপি থেকে-তাঁর ই লিখিত বর্ণনা অনুসারে প্রকাশ করলাম।প্রকৃত স্থান,কাল , পাত্র ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা যাবেনা তাই এগুলি কাল্পনিক।আমি ডাক্তার উকিল কে কথা দিয়েছিলাম যে পাণ্ডুলিপি পাওয়ার ১০ বছরের মধ্যে কোন লেখা প্রকাশ করতে পারবোনা,কিন্তু নানা অসুবিধা থাকায় আজ ৪০ বছর পর লেখা গুলো প্রকাশ করছি। ডাক্তার উকিল আসলে উপেন্দ্র কিশোর লস্করের সংক্ষিপ্ত উকিল আর উনি ডাক্তারি পড়েছিলেন তাই ডাক্তার নামের প্রথমে যুক্ত হয়েছে। ডাক্তার উকিল জীবিত আছেন না মৃত জানিনা কারণ আমার সাথে যখন ওনার পরিচয় ঘটে তখন ই ওনার বয়স ছিলো আশির উর্দ্ধে,কিন্তু শক্ত সবল যোগী পুরুষ ছিলেন,তারপর তিনি কোথায় চলে গেছেন কেউ জানেনা।আজ বেঁচে থাকলে বয়স ১২০ বছরের বেশী।তিনি যোগী সংযমী মানুষ,সঠিক বৈজ্ঞানিক তাই সবই সম্ভব,এখনো বেঁচে সুস্থ থাকাও সম্ভব।উনি বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তার জীবনে অনেক জটিল সমস্যার সমাধানের মধ্যে এই মতস কন্যা অন্যতম আকর্ষণীয় ঘটনা।তাঁর পাণ্ডুলিপি থেকে যেভাবে ঘটনাটির বিবরণ পেয়েছি তাঁর ভাষায় লিখলাম..........
আজ আবার কাগজে মৎস কন্যার দেখা পাওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে,এবার একজন জার্মাণ বৈজ্ঞাণিক প্রফেসর স্যামুয়েল হান্স জানিয়েছেন,তিনি একটি অতি ক্ষুদ্র ১০ ইঞ্চি মৎস কন্যা ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ছোট দ্বীপ থেকে সংগ্রহ করে তাঁর পরীক্ষাগারে নিয়ে এসেছেন। এই দ্বীপেই দু বছর আগে বড় মৎস কন্যা জল আর ডাঙার সংযোগ স্থলে জাহাজ থেকে দেখা গেছিলো ,কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে জলে ডুবে যাওয়ায় ছবি তোলা যায়নি।বছর ছয়েক আগে ওই অঞ্চলে সমুদ্রে মৎস কন্যা দেখা পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়ে ছিলো।একটি অস্পষ্ট ছবিও ছাপা হয়েছিলো। ইতি পূর্বে বার কয়েক মৎস কন্যার খবর কাগজে প্রকাশিত হলেও কোন ক্ষেত্রেই কোন প্রামান্য তথ্য পাওয়া যায়নি-নিছকই কল্প কাহিনীর মতন ।আজ অবধি এই বিষয় টি অমীমাংসিত রহস্যময় হিসাবেই রয়ে গেছে।কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেগুলি অস্বাভাবিক বা বিকৃতভাবে জন্মথেকে বড় হয়ে ধরা পড়েছে ,জলের বাইরে ওগুলো এক মুহুর্ত বাঁচেনি,ওগুলো কোনটাই মৎস কন্যা নয়,ওগুলো অস্বাভাবিক আকৃতি বিশিষ্ট জলজ প্রাণী, মাছ, শুশুক জাতীয় প্রাণী প্রমানিত হয়েছে। মানুষ ও অনান্য জীব জন্তুর ক্ষেত্রেও এরকম বিচিত্র আকৃতির সন্তান/শাবক জন্মায় অনেক সময় এরকম অস্বাভাবিক প্রাণীদের নিয়ে মেলায়
উপার্জণের জন্য ব্যবস্থা হয়।এবার বৈশিষ্ট হোলো প্রফেসর স্যামুয়েল হান্স এর দাবী।তিনি আরো দাবী করেছেন, বছর দুই আগে তিনি এই মৎস কন্যাটি সংগ্রহ করেছিলেন তারপর তার নিজস্ব গবেষণাগারে বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি করে একোরিয়ামে দু বছর ধরে এটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং আকারে পায় ৩ ইঞ্চি বড় হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে বৈজ্ঞাণিক মহলের সামনে এবং সাংবাদিক সন্মেলন করে সবাইকে দেখাবেন, তাঁর সংগ্রহের এই বিরল প্রাণীটি । কাগজে তিনি সারা বিশ্বের আগ্রহী বৈজ্ঞাণিক, সাংবাদিক,বিশিষ্ট মানুষদের আগামী ৭ই নভেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর অবধি বেলা ৯টা থেকে বিকাল ৪টা অবধি তাঁর গবেষণাগারে উপস্থিত হয়ে প্রাণীটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।মাঝে ১০ই নভেম্বর একটি আলোচনা-সভা প্রশ্নত্তর এর ব্যবস্থা করেছেন তাঁরই আলোচনা কক্ষে।এই আলোচনা সভায় সারা বিশ্বে তিনি একশত জন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাবেন, বৈজ্ঞাণিক, সাংবাদিক,বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, ও বুদ্ধিজীবি সমালোচক হিসাবে খ্যাত ব্যক্তি বর্গ হিসাবে গন্য মানুষদের।বিশ্বের নানা দেশ থেকে প্রতিনিধিরা আসবেন এজন্য প্রফেসর হ্যান্স সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সমস্ত দেশকে অবগত করেছেন, প্রতিনিধিদের নাম,পরিচয়,খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিবরণ সহ তালিকা পাঠানোর জন্য।
দিল্লীর প্রশাসণিক
ও কারিগরি বিজ্ঞান গবেষণা মন্ত্রক আমার বিশেষ ভাবে পরিচিত থাকায়
কারণ আমি নির্বাচিত সব্জী বিশেষ ভাবে উৎপন্ন করা যা কোন রাসায়নিকসার, কীটনাশক
ছাড়াই উৎপন্ন,কাঁচা অবস্থায় আহার করতে অভ্যস্ত। আমি জানিয়ে দিয়েছি-আমার জন্য
কোন আহারের বন্দোবস্ত না করতে,আমার নিজের সঙ্গেই নিজস্ব সৃষ্ট খাবার পুষ্টি বটিকা
থাকবে। একটা বটিকা ২৪ ঘন্টার পরিপুর্ণ আহার।চুষে খেলে পুরো নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানের খাবার
মেনু,শাক, ভাজা , ডাল,শুক্তো থেকে পায়েস মুখ শুদ্ধির সবের আস্বাদ একে একে পাওয়া
যাবে,তবে কেবল নিরামিষ আহার। খেতে সময় লাগবে বড়জোর ৩ মিনিট।সারা দিনের জলের
চাহিদা পুরণের জন্য জীবনামৃত - দু ফোঁটা ২৪ ঘন্টার চাহিদা মেটাবে।আমার,থাকা, খাওয়া,
শোওয়ার কোন কিছুর জন্য ই কোন ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নাই,নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ,যে কোন
আবহাওয়ায় নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সুস্থ রাখার ক্ষমতা আমার আছে। আমার ছোট্ট
হাত ব্যাগটাই আমার সমস্ত কিছুর ভাণ্ডার-এর মধ্যেই আমার গবেষণার যন্ত্র,আত্মরক্ষার
সরঞ্জাম সবই আছে।কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাশনিক দপ্তর আমার পরিচয় একজন বিজ্ঞান সাধক,
প্রকৃতি প্রেমিক এবং বাস্তুতান্ত্রিকতার প্রচারক বলে উল্লেখ করে আমাকে প্রতিনিধি হিসাবে
সুপারিশ করে প্রফেসর হ্যান্সকে জানাতে, সাতদিনের মধ্যে আমার আমন্ত্রণ এসে গেলো।
আমি যথাদিন যথা সময়ে অর্থাত ৭ই নভেম্বর প্রফেসর হ্যান্স এর আবাসন, জার্মাণীর ব্ল্যাক
ফরেস্ট এ ' DIVINE RESORT' এ উপস্থিত হলাম। বিরাট এলাকা আমাদের এখানে
প্রায় একশ বিঘা বা ৩৩একর জায়গা ঘিরে তার বাসস্থান,গবেষণাগার, সভা আলোচনা কক্ষ,
প্রতি রক্ষা ব্যাবস্থা, নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা্অথিতি নিবাস সবই আছে।চারিদিকে উঁচু
পাঁচিল তার উপর লোহার কাঁটা তারের বেষ্টনী।ভেতরে বাগান খেলার মাঠ,সুন্দর জলাশয় সবই আছে।আধুনিক পাঁচতারা হোটেল ও হার মেনে যাবে। ঐ চৌহদ্দিতে ঢুকতে গেলে আমন্ত্রণ পত্রের অনুলিপি,ব্যক্তি পরিচিতি ফটো সহ এবং কতদিন থাকার ব্যবস্থা চাই তা লিখিত ভাবে ঢোকার ফটকের পাশে যে প্রতিরক্ষার জন্য কার্য্যালয় আছে সেখানে জমা দিতে হচ্ছে। ঐ বিবরণ ঐকার্য্যালয়ে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর ভিতরে যে মন্ত্রণালয় আছে সেখানে পাঠানো হয়, ঐ মন্ত্রণালয় সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে পর্য্যবেক্ষণ ও তথ্য গুলির সত্যতা নিরুপন করে অনুমতিপত্র পাঠালে তবেই প্রফেসর হ্যান্সএর ঐ ' DIVINE RESORT' এর চত্বরে ঢোকাযায়। আমি অনুমতি পাবার পর ভেতরে গেলাম।
এবার একটি সুন্দর চারপাশ স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা সুরঙ্গপথে মূল বাস ভবন যেখানে প্রাথমিক আপ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে উপস্থিত হলাম। ওখানে পৌঁছতেই দেখি সুন্দর সাজানো গোছানো বসার হল। মাঝে একটা সম্পুর্ণ কাঁচে ঢাকা কক্ষ। সেই কক্ষের মধ্যে জনা চারেক সুপুরুষ ও মহিলা। তাঁদের পরনে বেশ অভিজাত পোষাক।সুন্দর দর্শণীয় চেয়ারে বসে আছেন,তাঁদের সামনে অর্ধগোলাকার কাঁচের টেবিল তাতে চারটি টেবিল মাইক্রোফোন চার জনের সামনে রয়েছে।টেবিলে কিছু ম্যাগাজিন,লিফ্লেট জাতীয় পত্র-পত্রিকা আর একটি মনিটর। আমি ঐ হলে পৌঁছতেই আমাকে বসার জন্য অনুরোধ ঐ কাঁচের কক্ষের মধ্য থেকে ভেসে এলো।দেওয়ালের চারপাশে বসার চেয়ার গুলির সামনে ঐ রকম মাইক্রোফোন ছোট টেবিলে আর চেয়ারের পিছনে ছোট লাউড স্পীকার লাগানো। আমি হলে ঢুকে দেখি আমার আগে চোদ্দজন ব্যক্তি এসে বসে আছেন।তার মধ্যে দুজন ভদ্রমহিলাও আছেন।ঘড়িতে দেখি তখন সকাল ৮টা৩০মি।এর পর গুরু গম্ভীর গলায় যে ভাষণ লাউড স্পীকারের মাধ্যমে ভেসে এলো তার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় "সুপ্রভাত মাননীয় অতিথি বৃন্দ,প্রফেসর হ্যান্সএর পক্ষ থেকে সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ এই আমন্ত্রণ গ্রহন করার জন্য।"এরপর হ্যান্স যা বলেন সংক্ষেপে আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন ভূমধ্যসাগরের অভ্যন্তরে একটি অখ্যাত দ্বীপ জন ডেয়ার ল্যাণ্ডের উপকুলে যেখানে সমুদ্রের জল বালীর তটের উপর দিয়ে বয়ে যায়, সেখানে আকস্মিকভাবে বছর দুই আগে একটি মৎস কন্যাকে জাহাজ থেকে দেখতে পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়, কিন্তু কোন প্রামান্য তথ্য এর অনুকুলে কেউ দিতে পারেননি।খবরটা কাগজে দেখার পর প্রফেসর হ্যান্স খুউব উৎসাহিত ও ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ঐ মৎস কন্যার সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য ।
তিনি নিজে একটা ছোট মোটর বোট সঙ্গে নিয়ে জাহাজে যাত্রা করেন।জাহাজটির সাথে চুক্তি থাকে তিনি ঐ দ্বীপে যাওয়ার দিন পাঁচেক বাদে পুনরায় জাহাজটি ঐ দ্বীপটির কাছ দিয়ে ফেরার সময় তাঁকে তুলে নেবে। যাবার সময় দ্বীপ থেকে দশ কিলোমিটার তাঁকে মোটর বোট সহ সমুদ্রে নামিয়ে দেবে।প্রফেসর একাই দ্বীপে যাবেন-গোপনে অনুসন্ধান করাই তাঁর উদ্দেশ্য,তাই কাউকে কিছু নাবলে একাই যেতে চান।ফেরার সময় জাহাজ দ্বীপের কাছাকাছি এলে উনি নিজেই বোটে চেপে চলে আসবেন এটা তাঁর দায়িত্ব-দেখানা হলে জাহাজ চলে যাবে তাদের কোন দায় থাকবেনা।যেহেতু ঐ জাহাজটি একটি ছোট সংস্থার তাই তারা রাজী হয় এবং প্রফেসারের অনুরোধ মতন ঐ দ্বীপের কাছাকাছি তাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্স মোটর বোটে তার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র,দশ দিনের মতন খাবার,পানীয়জল,আত্ম রক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র,থাকার জন্য তাঁবু নিয়ে ঐ দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বীপে উপস্থিত হন।এরপর প্রফেসর ওই দ্বীপে সমুদ্রের পাড়ের কাছাকাছি বালির চরে একটা গর্ত করে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকার মতন একটা আস্তানা বানিয়ে নেন।খুউব শক্তিশালী অথচ ছোট টেলীস্কোপ লাগিয়ে সমুদ্রের দিকে নজর রাখতে শুরু করেন। পিছনে লম্বালম্বা গাছের সারি। নানা রকম বানর,পাখীর বাসা।জঙ্গলের ভিতর থেকে হিংস্র পশুর ডাক ভেসে আসে। এখনে কোন জন মানব নেই বোঝাই যায়।আকাশ থেকে তোলা দ্বীপের ছবিতে দেখাযায় যে দ্বীপটির তিন দিকেই ঘন জঙ্গল,একদম সমুদ্রের জল থেকে শুরু দক্ষিণ দিকে সামান্য কিছুটা, মাইল তিনেক ধূ ধূ বালির পাড় রয়েছে।চওড়ায় বড় জোর পৌনে এক মাইল হবে।এই বালির চরের দিকেই মাঝামাঝি জায়গায় প্রফেসর গোপন তাঁবু বানিয়ে থাকতে শুরু করেন। প্রথম দুদিন তেমন কোন কিছুই নজরে এলোনা তৃতীয়দিন খুব ভোরে সবে সূর্য্য উঠবে উঠবে হঠাৎ সমুদ্রের জলের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রাণী মুহুর্তের মধ্যে ভেসে বেড়িয়ে গেলো।জলের মধ্যে আবছা দেখা গেলো, মনেহোলো চার পাঁচ ফুটের মাছ জাতীয় তবে অর্ধেকটা খুউব পরিস্কার গোলাপী আভা যুক্ত মুখ,পাখনাগুলো দেখা যায়নি।তবে পিছনের গাছ গুলো থেকে পাখীরা সব কিচির মিচির শুরু করে,বানররা চেঁচাতে থাকে।বুঝলাম জলে ঐ অদ্ভুত প্রাণীটা দেখে ভয়ে ডাকছে সবাই।এরপর অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি,সেদিন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত্রি নামে, আমি না ঘুমিয়ে অধীর উৎকন্ঠার মধ্যে চোখে টেলিস্কোপ লাগিয়ে জলের দিকে চেয়ে থাকি।ঐ দিন ছিলো পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় চারপাশ স্পষ্ট।সাদা বালিতে চাঁদের আলো পড়েছে অপুর্ব শোভা, এক মনে চেয়ে আছি। হঠাৎ মাঝ রাতের পর পাখীগুলো আবার ডাকছে শুনতে পেলাম, তখন টেলিস্কোপ সমুদ্রের তীরে,যেখান থেকে বালির চরা দেখা যাচ্ছে,তাকিয়ে দেখলাম -একটা বড় মাছের মতন প্রাণী অর্দ্ধেকটা জলে আর অর্দ্ধেকটা বালির চড়ায় দেখা যাচ্ছে।ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলাম যে অংশ টি জলের দিকে সেই অংশ টা বড় মাছের আঁশেরমতন রুপালী আলো ছিটকে বেরুচ্ছে।ডাঙ্গার দিকের অংশ টিতে কোন আঁশ নেই রঙটা চাঁদের আলোয় ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা তবে স্থলচর প্রাণীর মতন চামড়া রঙটা গোলাপী সাদা-অনেকটা সাদা শুয়োরের মতন।মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা।গোলাকার বলের মতন,মাথার থেকে অনেক সরু সরু শুঁড়ের মতন লম্বা লম্বা রয়েছে চিংড়ি মাছের শুঁড়ের মতন দেখতে তবে সংখ্যায় অসংখ বিছিয়ে রয়েছে।আরো ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে দেখি-দু তিনটে ঐ রকম দেখতে প্রাণী আকারে গলদা চিংড়ির মতন ইঞ্চি ছয়েক হবে ঐ বড় প্রাণীটার মুণ্ডুটা থেকেফুট খানেক নীচে বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে।বেড়াল কুকুর ছানা যেমন দুধ খায় তেমনি দুধ খাচ্ছে বলে মনে হোলো।ঐ গুলো যে বড় প্রাণীটার শরীরের অংশ নয় বুঝলাম যখন ঐ ছোটো প্রাণী গুলো বড় প্রাণীটিকে ছেড়ে চারপাশে অল্প জলের মধ্যে সাঁতরে ঘুরছে।
আমি সাবধানে এগুনোর জন্য প্রস্তুত হলাম, গর্ত্ত থেকে বেরিয়ে এক হাতে ক্যামেরা অন্য হাতে একটা মাছ ধরার মতন চারপাশ সরু জাল দিয়ে ঘেরা এক দিক খোলা বাক্স নিয়ে এগুতে শুরু করলাম।বড় একটা মাছ ধরার খ্যাপলা জাল কাঁধে নিলাম। জেলেদের কাছে এই জাল ফেলা শিখে নিয়েছিলাম ।দশ পনেরো ফুট থেকে অনায়সে ফেলতে পারি। আমি ঐ বড় প্রাণীটা না বুঝতে পারে তাই আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে এগুতে লাগলাম।ঐ প্রাণীটার থেকে ফুট ছয়েক দূরে দাঁড়িয়ে ক্ষেপলা জালটা ফেলার জন্য ঠিক করতে মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে যেই মাথার উপর ঘুরিয়ে ঐ প্রাণীটার দিকে ছুঁড়লাম, প্রাণীটা ঠিক টের পেয়ে গেলো জালটা তার উপর ভালো মতন পড়ার আগেই মুহুর্ত্তে সমুদ্রের জলে মিলিয়ে গেলো, আমি প্রচণ্ড হতাশ হলাম।জানি একবার এইরকম আক্রান্ত হয়েছে ঐ প্রাণী আর শীঘ্র এদিকে আসবেনা, যদি প্রাণীটার মগজ বলে কিছু থাকে আর সেটা উন্নত হয় জলজ প্রাণীর থেকে।আস্তে আস্তে সাবধানে জালটা তুলে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করতে দেখি জালের মধ্যে একটা ছোট বাচ্চা ধরা পড়েছে।আমার যে কি ভীষণ আনন্দ হোলো কি বলব ?কিন্তু জলের উপর টেনে আনলে বাঁচবে না ,কি করব বুঝতে পারছিলাম না তাই জালটা পুরো জল থেকে না তুলে ঐ তার জালের চৌকো বাক্সটার মধ্যে অতি সাবধানে জালের মধ্যেকার প্রাণটাকে জলে বাক্সটার অর্ধেক ডোবা অবস্থায় ভরলাম । এবার বাক্সটা চাপা দিলাম।জাল সরিয়ে নিলাম কিন্তু বাক্সটা জলে আর ডাঙার মধ্যে অর্ধেক ডোবা অবস্থায় রাখলাম।
ক্রমশঃ পরবর্তী প্রকাশনা
কারণ আমি নির্বাচিত সব্জী বিশেষ ভাবে উৎপন্ন করা যা কোন রাসায়নিকসার, কীটনাশক
ছাড়াই উৎপন্ন,কাঁচা অবস্থায় আহার করতে অভ্যস্ত। আমি জানিয়ে দিয়েছি-আমার জন্য
কোন আহারের বন্দোবস্ত না করতে,আমার নিজের সঙ্গেই নিজস্ব সৃষ্ট খাবার পুষ্টি বটিকা
থাকবে। একটা বটিকা ২৪ ঘন্টার পরিপুর্ণ আহার।চুষে খেলে পুরো নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানের খাবার
মেনু,শাক, ভাজা , ডাল,শুক্তো থেকে পায়েস মুখ শুদ্ধির সবের আস্বাদ একে একে পাওয়া
যাবে,তবে কেবল নিরামিষ আহার। খেতে সময় লাগবে বড়জোর ৩ মিনিট।সারা দিনের জলের
চাহিদা পুরণের জন্য জীবনামৃত - দু ফোঁটা ২৪ ঘন্টার চাহিদা মেটাবে।আমার,থাকা, খাওয়া,
শোওয়ার কোন কিছুর জন্য ই কোন ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নাই,নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ,যে কোন
আবহাওয়ায় নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সুস্থ রাখার ক্ষমতা আমার আছে। আমার ছোট্ট
হাত ব্যাগটাই আমার সমস্ত কিছুর ভাণ্ডার-এর মধ্যেই আমার গবেষণার যন্ত্র,আত্মরক্ষার
সরঞ্জাম সবই আছে।কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাশনিক দপ্তর আমার পরিচয় একজন বিজ্ঞান সাধক,
প্রকৃতি প্রেমিক এবং বাস্তুতান্ত্রিকতার প্রচারক বলে উল্লেখ করে আমাকে প্রতিনিধি হিসাবে
সুপারিশ করে প্রফেসর হ্যান্সকে জানাতে, সাতদিনের মধ্যে আমার আমন্ত্রণ এসে গেলো।
আমি যথাদিন যথা সময়ে অর্থাত ৭ই নভেম্বর প্রফেসর হ্যান্স এর আবাসন, জার্মাণীর ব্ল্যাক
ফরেস্ট এ ' DIVINE RESORT' এ উপস্থিত হলাম। বিরাট এলাকা আমাদের এখানে
প্রায় একশ বিঘা বা ৩৩একর জায়গা ঘিরে তার বাসস্থান,গবেষণাগার, সভা আলোচনা কক্ষ,
প্রতি রক্ষা ব্যাবস্থা, নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা্অথিতি নিবাস সবই আছে।চারিদিকে উঁচু
পাঁচিল তার উপর লোহার কাঁটা তারের বেষ্টনী।ভেতরে বাগান খেলার মাঠ,সুন্দর জলাশয় সবই আছে।আধুনিক পাঁচতারা হোটেল ও হার মেনে যাবে। ঐ চৌহদ্দিতে ঢুকতে গেলে আমন্ত্রণ পত্রের অনুলিপি,ব্যক্তি পরিচিতি ফটো সহ এবং কতদিন থাকার ব্যবস্থা চাই তা লিখিত ভাবে ঢোকার ফটকের পাশে যে প্রতিরক্ষার জন্য কার্য্যালয় আছে সেখানে জমা দিতে হচ্ছে। ঐ বিবরণ ঐকার্য্যালয়ে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর ভিতরে যে মন্ত্রণালয় আছে সেখানে পাঠানো হয়, ঐ মন্ত্রণালয় সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে পর্য্যবেক্ষণ ও তথ্য গুলির সত্যতা নিরুপন করে অনুমতিপত্র পাঠালে তবেই প্রফেসর হ্যান্সএর ঐ ' DIVINE RESORT' এর চত্বরে ঢোকাযায়। আমি অনুমতি পাবার পর ভেতরে গেলাম।
এবার একটি সুন্দর চারপাশ স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা সুরঙ্গপথে মূল বাস ভবন যেখানে প্রাথমিক আপ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে উপস্থিত হলাম। ওখানে পৌঁছতেই দেখি সুন্দর সাজানো গোছানো বসার হল। মাঝে একটা সম্পুর্ণ কাঁচে ঢাকা কক্ষ। সেই কক্ষের মধ্যে জনা চারেক সুপুরুষ ও মহিলা। তাঁদের পরনে বেশ অভিজাত পোষাক।সুন্দর দর্শণীয় চেয়ারে বসে আছেন,তাঁদের সামনে অর্ধগোলাকার কাঁচের টেবিল তাতে চারটি টেবিল মাইক্রোফোন চার জনের সামনে রয়েছে।টেবিলে কিছু ম্যাগাজিন,লিফ্লেট জাতীয় পত্র-পত্রিকা আর একটি মনিটর। আমি ঐ হলে পৌঁছতেই আমাকে বসার জন্য অনুরোধ ঐ কাঁচের কক্ষের মধ্য থেকে ভেসে এলো।দেওয়ালের চারপাশে বসার চেয়ার গুলির সামনে ঐ রকম মাইক্রোফোন ছোট টেবিলে আর চেয়ারের পিছনে ছোট লাউড স্পীকার লাগানো। আমি হলে ঢুকে দেখি আমার আগে চোদ্দজন ব্যক্তি এসে বসে আছেন।তার মধ্যে দুজন ভদ্রমহিলাও আছেন।ঘড়িতে দেখি তখন সকাল ৮টা৩০মি।এর পর গুরু গম্ভীর গলায় যে ভাষণ লাউড স্পীকারের মাধ্যমে ভেসে এলো তার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় "সুপ্রভাত মাননীয় অতিথি বৃন্দ,প্রফেসর হ্যান্সএর পক্ষ থেকে সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ এই আমন্ত্রণ গ্রহন করার জন্য।"এরপর হ্যান্স যা বলেন সংক্ষেপে আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন ভূমধ্যসাগরের অভ্যন্তরে একটি অখ্যাত দ্বীপ জন ডেয়ার ল্যাণ্ডের উপকুলে যেখানে সমুদ্রের জল বালীর তটের উপর দিয়ে বয়ে যায়, সেখানে আকস্মিকভাবে বছর দুই আগে একটি মৎস কন্যাকে জাহাজ থেকে দেখতে পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়, কিন্তু কোন প্রামান্য তথ্য এর অনুকুলে কেউ দিতে পারেননি।খবরটা কাগজে দেখার পর প্রফেসর হ্যান্স খুউব উৎসাহিত ও ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ঐ মৎস কন্যার সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য ।
তিনি নিজে একটা ছোট মোটর বোট সঙ্গে নিয়ে জাহাজে যাত্রা করেন।জাহাজটির সাথে চুক্তি থাকে তিনি ঐ দ্বীপে যাওয়ার দিন পাঁচেক বাদে পুনরায় জাহাজটি ঐ দ্বীপটির কাছ দিয়ে ফেরার সময় তাঁকে তুলে নেবে। যাবার সময় দ্বীপ থেকে দশ কিলোমিটার তাঁকে মোটর বোট সহ সমুদ্রে নামিয়ে দেবে।প্রফেসর একাই দ্বীপে যাবেন-গোপনে অনুসন্ধান করাই তাঁর উদ্দেশ্য,তাই কাউকে কিছু নাবলে একাই যেতে চান।ফেরার সময় জাহাজ দ্বীপের কাছাকাছি এলে উনি নিজেই বোটে চেপে চলে আসবেন এটা তাঁর দায়িত্ব-দেখানা হলে জাহাজ চলে যাবে তাদের কোন দায় থাকবেনা।যেহেতু ঐ জাহাজটি একটি ছোট সংস্থার তাই তারা রাজী হয় এবং প্রফেসারের অনুরোধ মতন ঐ দ্বীপের কাছাকাছি তাঁকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্স মোটর বোটে তার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র,দশ দিনের মতন খাবার,পানীয়জল,আত্ম রক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র,থাকার জন্য তাঁবু নিয়ে ঐ দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বীপে উপস্থিত হন।এরপর প্রফেসর ওই দ্বীপে সমুদ্রের পাড়ের কাছাকাছি বালির চরে একটা গর্ত করে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকার মতন একটা আস্তানা বানিয়ে নেন।খুউব শক্তিশালী অথচ ছোট টেলীস্কোপ লাগিয়ে সমুদ্রের দিকে নজর রাখতে শুরু করেন। পিছনে লম্বালম্বা গাছের সারি। নানা রকম বানর,পাখীর বাসা।জঙ্গলের ভিতর থেকে হিংস্র পশুর ডাক ভেসে আসে। এখনে কোন জন মানব নেই বোঝাই যায়।আকাশ থেকে তোলা দ্বীপের ছবিতে দেখাযায় যে দ্বীপটির তিন দিকেই ঘন জঙ্গল,একদম সমুদ্রের জল থেকে শুরু দক্ষিণ দিকে সামান্য কিছুটা, মাইল তিনেক ধূ ধূ বালির পাড় রয়েছে।চওড়ায় বড় জোর পৌনে এক মাইল হবে।এই বালির চরের দিকেই মাঝামাঝি জায়গায় প্রফেসর গোপন তাঁবু বানিয়ে থাকতে শুরু করেন। প্রথম দুদিন তেমন কোন কিছুই নজরে এলোনা তৃতীয়দিন খুব ভোরে সবে সূর্য্য উঠবে উঠবে হঠাৎ সমুদ্রের জলের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রাণী মুহুর্তের মধ্যে ভেসে বেড়িয়ে গেলো।জলের মধ্যে আবছা দেখা গেলো, মনেহোলো চার পাঁচ ফুটের মাছ জাতীয় তবে অর্ধেকটা খুউব পরিস্কার গোলাপী আভা যুক্ত মুখ,পাখনাগুলো দেখা যায়নি।তবে পিছনের গাছ গুলো থেকে পাখীরা সব কিচির মিচির শুরু করে,বানররা চেঁচাতে থাকে।বুঝলাম জলে ঐ অদ্ভুত প্রাণীটা দেখে ভয়ে ডাকছে সবাই।এরপর অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি,সেদিন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত্রি নামে, আমি না ঘুমিয়ে অধীর উৎকন্ঠার মধ্যে চোখে টেলিস্কোপ লাগিয়ে জলের দিকে চেয়ে থাকি।ঐ দিন ছিলো পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় চারপাশ স্পষ্ট।সাদা বালিতে চাঁদের আলো পড়েছে অপুর্ব শোভা, এক মনে চেয়ে আছি। হঠাৎ মাঝ রাতের পর পাখীগুলো আবার ডাকছে শুনতে পেলাম, তখন টেলিস্কোপ সমুদ্রের তীরে,যেখান থেকে বালির চরা দেখা যাচ্ছে,তাকিয়ে দেখলাম -একটা বড় মাছের মতন প্রাণী অর্দ্ধেকটা জলে আর অর্দ্ধেকটা বালির চড়ায় দেখা যাচ্ছে।ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলাম যে অংশ টি জলের দিকে সেই অংশ টা বড় মাছের আঁশেরমতন রুপালী আলো ছিটকে বেরুচ্ছে।ডাঙ্গার দিকের অংশ টিতে কোন আঁশ নেই রঙটা চাঁদের আলোয় ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা তবে স্থলচর প্রাণীর মতন চামড়া রঙটা গোলাপী সাদা-অনেকটা সাদা শুয়োরের মতন।মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা।গোলাকার বলের মতন,মাথার থেকে অনেক সরু সরু শুঁড়ের মতন লম্বা লম্বা রয়েছে চিংড়ি মাছের শুঁড়ের মতন দেখতে তবে সংখ্যায় অসংখ বিছিয়ে রয়েছে।আরো ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে দেখি-দু তিনটে ঐ রকম দেখতে প্রাণী আকারে গলদা চিংড়ির মতন ইঞ্চি ছয়েক হবে ঐ বড় প্রাণীটার মুণ্ডুটা থেকেফুট খানেক নীচে বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে।বেড়াল কুকুর ছানা যেমন দুধ খায় তেমনি দুধ খাচ্ছে বলে মনে হোলো।ঐ গুলো যে বড় প্রাণীটার শরীরের অংশ নয় বুঝলাম যখন ঐ ছোটো প্রাণী গুলো বড় প্রাণীটিকে ছেড়ে চারপাশে অল্প জলের মধ্যে সাঁতরে ঘুরছে।
আমি সাবধানে এগুনোর জন্য প্রস্তুত হলাম, গর্ত্ত থেকে বেরিয়ে এক হাতে ক্যামেরা অন্য হাতে একটা মাছ ধরার মতন চারপাশ সরু জাল দিয়ে ঘেরা এক দিক খোলা বাক্স নিয়ে এগুতে শুরু করলাম।বড় একটা মাছ ধরার খ্যাপলা জাল কাঁধে নিলাম। জেলেদের কাছে এই জাল ফেলা শিখে নিয়েছিলাম ।দশ পনেরো ফুট থেকে অনায়সে ফেলতে পারি। আমি ঐ বড় প্রাণীটা না বুঝতে পারে তাই আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে এগুতে লাগলাম।ঐ প্রাণীটার থেকে ফুট ছয়েক দূরে দাঁড়িয়ে ক্ষেপলা জালটা ফেলার জন্য ঠিক করতে মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে যেই মাথার উপর ঘুরিয়ে ঐ প্রাণীটার দিকে ছুঁড়লাম, প্রাণীটা ঠিক টের পেয়ে গেলো জালটা তার উপর ভালো মতন পড়ার আগেই মুহুর্ত্তে সমুদ্রের জলে মিলিয়ে গেলো, আমি প্রচণ্ড হতাশ হলাম।জানি একবার এইরকম আক্রান্ত হয়েছে ঐ প্রাণী আর শীঘ্র এদিকে আসবেনা, যদি প্রাণীটার মগজ বলে কিছু থাকে আর সেটা উন্নত হয় জলজ প্রাণীর থেকে।আস্তে আস্তে সাবধানে জালটা তুলে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করতে দেখি জালের মধ্যে একটা ছোট বাচ্চা ধরা পড়েছে।আমার যে কি ভীষণ আনন্দ হোলো কি বলব ?কিন্তু জলের উপর টেনে আনলে বাঁচবে না ,কি করব বুঝতে পারছিলাম না তাই জালটা পুরো জল থেকে না তুলে ঐ তার জালের চৌকো বাক্সটার মধ্যে অতি সাবধানে জালের মধ্যেকার প্রাণটাকে জলে বাক্সটার অর্ধেক ডোবা অবস্থায় ভরলাম । এবার বাক্সটা চাপা দিলাম।জাল সরিয়ে নিলাম কিন্তু বাক্সটা জলে আর ডাঙার মধ্যে অর্ধেক ডোবা অবস্থায় রাখলাম।
ক্রমশঃ পরবর্তী প্রকাশনা
সমাপ্য
(2) 'ডাক্তার উকিল ও মৎস কন্যা ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
( পূর্ব ঘটনা সংক্ষিপ্ত ঃ কাগজে মৎস কন্যার দেখা পাওয়ার ঘটনা
প্রকাশিত হয়েছে,এবার
একজন জার্মাণ বৈজ্ঞাণিক প্রফেসর স্যামুয়েল হান্স জানিয়েছেন,তিনি একটি অতি ক্ষুদ্র
১০ ইঞ্চি মৎস কন্যা ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ছোট দ্বীপ থেকে সংগ্রহ করে তাঁর পরীক্ষাগারে
নিয়ে এসেছেন। কাগজে তিনি সারা বিশ্বের আগ্রহী বৈজ্ঞাণিক, সাংবাদিক,বিশিষ্ট মানুষদের
আগামী ৭ই নভেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর অবধি বেলা ৯টা থেকে বিকাল ৪টা অবধি তাঁর
গবেষণাগারে উপস্থিত হয়ে প্রাণীটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যথাদিন যথা সময়ে অর্থাত
৭ই নভেম্বর প্রফেসর হ্যান্স এর আবাসন, জার্মাণীর ব্ল্যাক ফরেস্ট এ ' DIVINE RESORT
' এ দিল্লীর প্রশাসণিক ও কারিগরি বিজ্ঞান গবেষণা মন্ত্রক নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে ডাক্তার
উকিল উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হ্যান্স যা বলেন সমুদ্রের জলের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রাণীর
একটা ছোট বাচ্চা তাঁর হাতে ধরা পড়েছ )প্রফেসর বলেই চললেন, আমি একটা ছ ফুট লম্বা।চার ফুট চওরা আর তিন ফুট উচ্চতার বিশেষ ভাবে প্রস্তুত একোরিয়াম সাথে নিয়ে এসেছিলাম,ওটাতে সমুদ্রের জল ভরে বাইরে থেকে ব্লোয়ারের সাহার্য্যে জলে স্রোত তৈরী করে, আর যাতে একোরিয়ামের মধ্যেকার আবহাওয়া ,উত্তাপ সব কিছু ওই দ্বীপের মতন হয়, সেই রকম করার জন্য ইলেকট্রণিক কণ্ডীশণার যন্ত্র লাগানো ছিলো। সবই ব্যাটারী চালিত।একোরিয়ামটির মধ্যেকার জলের ধরন ,আবহাওয়া,সবকিছু একদম বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখার ব্যবস্থা ছিলো যাতে ঐ প্রাণী যে অন্য আবহাওয়া পরিবেশে রয়েছে তার কোন প্রভাব না পরে। বুঝলাম এই প্রাণীটি স্তন্যপায়ী বড়জোর ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী হতেপারে।প্রাণী টি এতোই ছোট যে ওটা আদৌ মৎস কন্যা কিনা বোঝা যাচ্ছিল না।একটা হালকা আকাশী রঙের কাপড় দিয়ে একোরিয়ামটা ঢাকার ব্যবস্থা ছিলো।এবার ঐ প্রাণীটা একোরিয়ামে ভরে কাপড়ে ঢেকে অপেক্ষা করতে লাগলাম জাহাজটা ফেরার জন্য। অবশেষে দুদিন বাদে জাহাজের দেখা পেতে ওটাতে করে একোরিয়াম সমেত ফিরে এলাম নিজের আস্তানায় গবেষনাগারে।দীর্ঘ দু'বছর অসীম ধৈর্য্য সহকারে প্রতিপালন করে বড় করে তুলেছি, এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই প্রাণীটি মৎস কন্যা ।
মাননীয় অতিথি গন,আপনারা সকলেই বুঝতেই পারছেন এই বিরল সম্পদটি রক্ষা করার জন্যআমাকে কি ধৈর্য্য আর সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি ক্ষণ কাটাতে হয়েছে। সতর্কতা নিতে হয়েছে প্রচণ্ড, কারণ যদি কোন কারণে গবেষণাগারে বিশেষ করে ঐ একোরিয়ামে পরিবেশ পরিস্থিতি বিঘ্নিত হয়, বদলে যায়, কোন রকম পরিবর্তন ঘটে তাহলে বাঁচানো যাবেনা মৎস কন্যাকে মুহুর্তে বিনষ্ট হয়েযাবে সকলপ্রয়াস। এই জন্য কতকগুলি বিশেষ সতর্কতার পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যেমন এক সাথে পাঁচজনের বেশী অতিথি ঐ পরীক্ষাগারে প্রবেশ করতে পারবেন না।একটি ব্যাচে ৫ জন প্রবেশ করবেন আর আধ ঘণ্টা দেখার সময় পাবেন।একোরিয়াম থেকে চার ফুট দুরত্ব থেকে দেখতে হবে, কারণ অতিথিগনের গায়ের তাপ ,নিশ্বাস প্রশ্বাস যে পরিবেশ প্রভাব ফেলবে সেটাও ক্ষতিকর, এছাড়া মৎস কন্যা র মধ্যে কোন রকম উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে যদি অতিথিদের উপস্থিতি টেরপায়।এ জন্য বেশীক্ষণ দেখার সুযোগ পাবেন না,তাছাড়া একটা ব্যাচের পর এক ঘণ্টা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ব্যাচ ঢুকবে।মাননীয় অতিথি গনের নিকট আমার একান্ত অনুরোধ আপনারা ঐ গবেষণাগারের ঢোকার আগে আপনাদের সাথে যদি কোন রকম বৈদ্যুতিক বা বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি থাকে,কোন রকম রাসয়ানিক দ্রব্য থাকে অনুগ্রহ করে সেগুলি গবেষনাগারের প্রবেশ দ্বারের ডানপাশে গচ্ছিত রাখার ঘরে জমা দিয়ে কুপন নিয়ে নেবেন।একদম ফাঁকা খালি হাত পায়ে প্রবেশ করবেন, কোন রকম বাড়তি জিনিস সঙ্গে রাখবেন না। গবেষনাগারে প্রবেশ করার আগে আপনাদের সকলের এক্সরে পরীক্ষা,মেটাল ডিটেক্টর আর এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন পরীক্ষা করা হবে।এগুলি সবই ঐ বিরল প্রাণীটির রক্ষণার্থে তাই অপরাধ নেবেননা আমি দুঃখিত।এবার আপনারা ঐ মহার্ঘ্য দুর্ল্ভ রুপকথার প্রাণীটিকে স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রস্তুত হন।আগে এসেছেন আগে যাবেন, এই ভাবে পর পর পাঁচজন করে ব্যাচ হিসাব করে যাবেন। আপনাদের সহায়তা করার জন্য এখানে বহু কর্মী আছেন,এরা সকলেই আমার রক্ষী বাহিনীর লোক। কারো অসুবিধা বা কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে সহায়তা করার জন্য যে কার্য্যালয় আছে সেখানে যোগাযোগ করবেন। ধন্যবাদ আপনাদের দর্শণ সুখের হউক । অধ্যাপক স্যামুয়েল হ্যান্স এই কথাগুলি বলে চলে গেলেন। এরপর দেখি দুজন উর্দ্দিপরা লোক আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা লিফলেট আর একটা টোকেন নম্বর দেওয়া কার্ড দিল যাতে প্রত্যেকের কত নং ব্যাচ-ক' টার সময় গবেষণাগারে প্রবেশ সময় লেখা আছে। লিফলেটে লেখা আছে প্রত্যেক অতিথি ,দর্শনার্থীদের কি করণীয়( গবেষনাগারে প্রবেশের আগে কোথায় যেতে হবে,সেখানে কি করণীয়,সব ভালো করে বোঝানো আছে)। আমার ব্যাচ নং চার, সময় ৩টা ৩০ মি।
যথা সময়ে আমি অন্য চারজন অতিথির সাথে উঠে গবেষনাগারে যাবার জন্য এগুলাম। আমার সাথে যে ছোট্ট লাগেজ ব্যাগটা ছিলো সেটা আমি মালপত্র রাখার ঘরে গচ্ছিত করে টোকেন নিয়ে এগিয়ে গেলাম গবেষনাগারের দরজার দিকে।আমাকে নিরাপত্তারক্ষীরা যখন পরীক্ষা করে দেখছিলেন তখন মেটাল ডিটেক্টারে আমার একটা ছোট্ট বাক্স নিরাপত্তারক্ষীরা আটকে জানতে চাইলো ওটা কি? আমি জানালাম ওটা আমার শ্রবন যন্ত্র, ওটা ছাড়া আমি কানে শুনতে পাইনা,ওটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে আপত্তি জানালেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিলেন এটাতো সাথে থাকতেই পারে, এটাতো অপরিহার্য্য তাই আমাকে তারা ঢোকার অনুমতি দিলেন।
গবেষনাগারের দরজায় সশস্ত্র প্রহরী ,নিরাপত্তারক্ষীরা যে অনুমতি পত্র দিয়েছে সেটা দেখে আমাকে ঢোকার অনুমতি দিলে গবেষনাগারের ঘরে ঢুকলাম। এটা মুল গবেষনাগার নয়, তার একটা অংশ, আলাদা করে ঘিরে বানানো.১৪'X১২' এর মতো জায়গা ঘরের ঢোকার দরজার বিপরীত দেওয়ালের কাছে একটা বড় টেবিলের উপর কাঁচের একোরিয়াম,ঘরে হালকা আলোয় সব দেখা যাচ্ছে,কিন্তু আলোটার তীব্রতা নেই-তাই দূর থেকে ভালোমত দেখা যাচ্ছে না।একোরিয়ামের সামনে চারফুট মতন দুরত্ব বজায় রেখে গার্ড দেওয়া আছে বেড়া দিয়ে।বেড়ার এপাশ থেকে একোরিয়ামের মধ্যে একটা মাছের মতন প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখা যাচ্ছে।খুউব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে এই প্রাণীটি আমাদের দেখা কোন প্রাণী নয় এর অর্দ্ধেকটা মাছের মতন আঁশে ঢাকা আর অর্দ্ধেকটা মানুষের মতন। তবে হাত পা মানুষের মতন নয়- ওটা লম্বা পাখনার মতন,নৌকার হাল যেমন হয়।নাক, মুখ, চোখ হুবহু মানুষের মতন নয়,তবে অনেকটাই ওই আদলের,মাথায় অগুনতি সরু সরু নালিকা, যেগুলি চুল মনে হতেই পারে।ছবি তোলা বারন,কিন্তু আমি যেটা হিয়ারিং এড বলে নিয়ে এসেছি ওটা আসলে একটা বিশেষ ভাবে প্রস্তুত বৈদ্যুতিন যন্ত্র, যাতে ইলেক্ট্রো ইনফ্রা ফোটো আর থার্মাল সেন্সেটিভ ডিভাইস যুক্ত থাকায় নিখুত ভাবে বহু দুরথেকে সব কিছুর ছবি তা স্থির চিত্র বা মুভি দুটোই করা সম্ভব।এই ছবি যেকোন উন্নত ক্যামেরার তোলা ছবির থেকেও স্পষ্ট ও নিখুত।চোখে চশমার ডাঁটি টা বিশেষ ভাবে প্রস্তুত এর মধ্যে সমস্ত রকম ডিটেকটর, ও রেকর্ডার আছে মাইক্রোচিপ লেভেলে রেকর্ড হয়ে যায় যে সমস্ত ইলেক্ট্রণিক,ইলেক্ট্রিক্যাল বা ইলেক্টোমেকানিক্যাল ডিভাইস গুলো এই পরীক্ষা গারে রয়েছে তার কার্য্য পদ্ধতি,সিগ্নালিং,কোনো ইলেক্ট্রো-অপ্টিক্যাল তরঙ্গ আছে কিনা?তড়িৎ চুম্বকীয় বা মাইক্রো ওয়েভ ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা?চশমার ফ্রেমের একদিকে আছে থার্মাল হিডেন ক্যামেরাওটা ইনফ্রারেডেও ছবি সাউন্ড তুলতে পারে।আমি ঐ ঘরের সমস্ত কিছুর তথ্য নথীভুক্ত করে নিয়ে চলে এলাম।গবেষনা ঘরে ঢোকবার সময় দরজার পাশে রক্ষীর কাছে রাখা খাতায় প্রবেশের সময় লিখে স্বাক্ষর করতে হয় আবার বেরুনোর সময় আবার ঐ রকম সময় দিয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। যদি মৎস কন্যা র কোন ক্ষতি হয় কোন সময়ে হয়েছে? তখন দর্শক কারা ছিলেন চিহ্নিত করার জন্য এই ব্যবস্থা।আমার হ্যান্স এর এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা টায় একটা সন্দেহ সৃষ্টি করেছে,- মৎস কন্যা টি সঠিক প্রাকৃতিক প্রাণী না সৃষ্টি করা কোন প্রাণী!কেন প্রফেসর এতো সতর্কতা অবলম্বন করেছেন?সত্যই কি মৎস কন্যা র নিরাপত্তার জন্য নাকি কোন সত্য তথ্যকে গোপন রাখতে? আমি ' DIVINE RESORT' এ থাকব না একথা আগেই ঐ খানকার কার্য্যালয়ে নথিভুক্ত করিয়ে রেখেছিলাম, তাই আমি গবেষনাগার থেকে বেরিয়ে মুল কার্য্যালয়কে অবগত করিয়ে বেরিয়ে চলে এলাম সোজা আমার হোটেলের বুক করে রাখা সুইটে।আমার সন্দেহ হয়ে ছিলো, প্রফেসরের আস্তানায় নিরাপত্তার্ররঅভাব হবে স্বাধীন ভাবে কোন কাজ করা সম্ভব হবেনা।আমার সন্দেহ আরো দৃঢ় হয় ঐ খানে অতিথি আবাসে যে ঘর গুলো নির্দিষ্ট ছিলো প্রতিটি ঘরেব দুজন করে থাকার ব্যাবস্থা।ঐ ঘর গুলোতে হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে,ক্লোজড সার্কিটেটিভিতে নজরদারীর ব্যবস্থা আমার গোপন অনুসন্ধান যন্ত্রে ধরা পড়েছে।
আমি হোটেলে ফিরে নিজের ঘরে এসে ডিটেক্টর, রেকর্ডারগুলি নিয়ে ডিকোডারে মেশিনে লাগিয়ে পরীক্ষা করতে এক অত্যাশ্চর্য্য রহস্যময় বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠল।একোরিয়ামে যে প্রাণীটি ঘুরে বেড়াচ্ছে ওটি একটি কৃত্রিম রোবট বিশেষ।এটি তৈরী করা হয়েছে কৃত্রিম পলিমার দিয়ে মাছের ন্যায় দেখতে, অভ্যন্তরে জটিল যন্ত্রপাতি যা বিশেষ কম্পাঙ্কের ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক তরঙ্গ দ্বারা কন্ট্রোল করা চালানো যায়।একোরিয়ামের মাথায় যে কন্ট্রোলার লাগানো আছে সেখানেই প্রোগ্রাম করা যন্ত্র রয়েছে সেটার সাহার্য্যে ওই মৎস কন্যার মত দেখতে রোবটটাকে চালানো ও নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে।পাছে এই সত্যটা প্রকাশ পায় তাই এতো নিয়ন্ত্রণ কঠোর নিরাপত্তার ঘেরা জাল।আগামী ১০ই নভেম্বর যখন আলোচনা সভায় নানা দেশের বিজ্ঞজনেরা উপস্থিত থাকবেন সেখানে প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্সের জালিয়াতি ফাঁস করে দেব তথ্য প্রমান সহ।প্রফেসর চ্যালেঞ্জ জানালে ভালো, সবার সামনে আসল ঘটনা প্রকাশ পাবে।কিন্তু প্রফেসর এটা মেনে নেবেন না হিংস্র হয়ে প্রতিশোধ নেবার জন্য আক্রমন করবেনই।তাই আমার নিজেরও নিরাপত্তা প্রয়োজন। আমি ভারতীয় হাই কমিশনসকেবিষয়টিগোপনে জানালাম এবং অনুরোধ করলাম নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করার জন্য।হাই কমিশনস আশ্বাস দিলে আমি হোটেোলে ফিরে এলাম। ১০ তারিখ সকালে আমাকে হাই কমিশনস থেকে জানাল,চারজন সশস্ত্র গার্ড ঐ দিন কমিশনস অফিস থেকে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন,তাঁরা লক্ষ্য রাখবেন আমার উপর কোন রকম আক্রমন হয় কিনা? যদি সেই রকম পরিস্থিতি হয় তাঁরাই মুহুর্ত্তে ব্যবস্থা নেবেন, বহু পুলিশ সাধারন বেশে উপস্থিত থাকবেন।কোন রকম বিপদ ঘটবেনা।
আমি যথা সময়ে প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্সের আলোচনা সভায় উপস্থিত হলাম।এদিন ও পরিচয় পত্র আমন্ত্রণপত্র দেখিয়েই ঢুকতে হয়েছে, এদিন সঙ্গে করে নিয়ে যাবার জন্য চেকিং তেমন কড়াকড়ি ছিলোনা, কারণ আজ গবেষনাগার যাওয়া যাবেনা বন্ধ থাকবে.১২টা নাগাদ আলোচনা সভা শুরু হোলো।আলোচনা গৃহে বহুলোক উপস্থিত,বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বহু প্রতিনিধি এসেছেন।তাদের বসার স্থান আগে থেকেই নির্দিষ্ট। আমন্ত্রিতের নাম কোন দেশের প্রতিনিধি ,চেয়ারের পিছনে লাগানো ছিলো তাই খুঁজে পেতে কোন অসুবিধাই নেই,তবুও অনেক সাহার্য্যকারী কর্মী রয়েছেন তারা সাহার্য্য করছেন। আমার দুপাশে দুজন করে হাই কমিশনসের প্রতিনিধির জায়গা তাঁরাও এসেছেন।প্রথমে প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্স সেই প্রথম দিনের বক্তৃতাটি দিয়েই শুরু করলেন, কিভাবে উনি মৎসকন্যার বাচ্চা পেয়ে নিয়ে এসেছেন,প্রতিপালন করেছেন ইত্যাদি।এখনও পর্য্যবেক্ষণ নিরীক্ষণ কার্য্য চলছে যদি আর বছর খানেক বাঁচিয়ে রাখা যায় তা হলে এই মৎস কন্যাটিকে বিশদভাবে সর্বসাধারণের গবেষনার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।বর্তমানে এটা সম্ভব হচ্ছেনা কারণ মৎস কন্যাটিকে বাঁচিয়ে রাখাই প্রধান চিন্তা। ওর পুর্ণ বিকাশ ঘটতে আরো সময় লাগবে,এখনো পুরোপুরি সব কিছু বিকশিত হয়নি ওর বর্ধণকাল চলছে।এখন এই গবেষনাগারের বাইরে এটাকে বাঁচানো সম্ভবপর নয়।আলোচনা বেশ জমে উঠেছে নানা জন নানা কৌতুহলী প্রশ্ন করছেন প্রফেসর হ্যান্স গর্বিত ভাবে উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন।বড় মৎস কন্যাটির আর দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা কেন? কি কারণ?একটাই কি মৎসকন্যাছিলো? মৎসকন্যার যখন বাচ্চা পাওয়া গেছে তখন নিশ্চয় আরো মৎসকন্যা আছে,তাদের দেখা যায়না কেন?ঐ দ্বীপের পাশেই যখন দেখা যায় তাদের তাহলে ওখানে বিশদ ভাবে গবেষনার ব্যাবস্থা করা হচ্ছেনা কেনো?এইসব প্রশ্নত্তরে যখন আলোচনা মুখরিত, আলোচনা তখন ঘন্টা দু য়েক অতিক্রান্ত হয়েছে একটা চায়ের বিরতি ১৫ মিনিট দিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হতেই আমি সভায় বোমাটি ফাটালাম।
আমি বললাম প্রফেসর হ্যান্স আপনি এতক্ষন যে তথ্য গুলি পেশ করলেন এগুলি সবই মনগড়া কাল্পনিক।আপনার মৎসকন্যাটি আদৌকোনো প্রাণী নয়,এটা একটি কৃত্রিম যান্ত্রিক খেলনা রোবট।আমার কথাটি সভায় শোনামাত্র প্রফেসর হ্যান্স অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন,চিৎকার করে বলেন মিস্টার উকিল আপনি কার সমন্ধে কি যাতা বলছেন? আমি আপনার বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করবো আপনাকে পুলিশে দেব।আপনার কথার সত্যতা আপনি প্রমান করতে পারবেন?আমি অবশ্যই পারবো জানাতে প্রফেসর হ্যান্স খানিকটা বিব্রত বোধ করেন,একটু হতভম্ব হয়ে বলেন আপনি কতটুকু জানেন মৎসকন্যা সম্পর্কে?আপনি কতটুকু দেখেছেন?দেখেছেন তো চার ফুট দূর থেকে একটা একোরিয়মের মধ্যে, তাতেই এতো কিছু বুঝে গেলেন?আপনি কিসের সাহার্য্যে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে ওটা জীবন্ত প্রাণী নয় ওটা রোবট?আমি বললাম আমার কাছে যে প্রামান্য তথ্য আছে জন সমাজে সে গুলি প্রকাশ করব। আমার সংগৃহীত তথ্য ও তত্ত্ব বিশ্লেষণ গুলোমৎসকন্যার ছবি ফটো প্রিন্ট সমেত একটি পুস্তিকাকারে সবার মধ্যে বিলি করে দিলাম,ঐ পুস্তিকাতেআমি কিভাবে তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করেছি তার ও বিশদ বিবরণ উল্লেখ আছে। হঠাৎ এই পুস্তিকা হাতে পেয়ে প্রফেসর অগ্নিশর্মা হয়ে বলেন "যতসব ইডিয়ট সিকিউরিটি তারা কি করে এই যন্ত্র সহ গবেষনাগারে এই চোর ভণ্ড লোকটিকে ঢুকতে দিলো, অবিলম্বে এই লোকটিকে আটক করো- সিকিউরিটি অবিলম্বে লোকটিকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা কর।প্রফেসরের হুঙ্কার শুনে জনা দশেক সিকিউরিটি গার্ড আমার দিকে ধেয়ে আসছিলো কিন্তু হাই কমিশনসের প্রতিনিধিরা উঠে দাঁড়িয়ে পাল্টা হুঙ্কার দিলেন খবরদার কেউ ওনার কাছে আসবেন না,আমরা স্থানীয় প্রশাসনিক প্রধানদের জানিয়েই এসেছি-পুলিশ দপ্তর থেকে বিদেশী হাইকমিশনস অফিসেও বিষয় টি অবগত আছেন।আমরাও প্রস্তুত আছি,যদি ওনার প্রতি কোনরুপ অশোভন আচরণ করার চেষ্টা করা হয় আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব, এই আলোচনা সভায় পুলিশ,সেনা বাহিনী প্রবেশ করবে।এই কথা শুনে প্রফেসর স্যমুয়েল হ্যান্স ও তাঁর রক্ষী বাহিনী থমকে গেলো।আমি বললাম আমি আরো প্রমান আপনাদের সামনে দিতে প্রস্তুত।আমি গবেষনাগারের একোরিয়ামটি জন সমক্ষে এনে প্রমান করে দেব যে,মৎসকন্যা, এটা দূর থেকে চালিত রোবট।আমার কথা শেষ হবার আগেই দেখি উর্দ্ধশ্বাসে সভাকক্ষ ছেড়ে প্রফেসর হ্যান্স ভিতরে গবেষনাগারের দিকে দৌড় লাগালেন। সকলে হতভম্ব।প্রফেসর মুল প্রবেশ দ্বার দিয়ে ' DIVINE RESORT' বাংলো তে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেবার জন্য নির্দেশ দিলেন নিরাপত্তা কর্মীদের।মুল আবাসনের গেট বন্ধ হয়ে গেলো। প্রফেসর হ্যান্স ভিতরে গবেষনাগারের দিকে তড়িৎ গতিতে চলে গেলেন। এরপর একটা বিকট জোর বিস্ফোরণের আওয়াজ।উপস্থিত সকল আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা ভয়ে সন্ত্রস্ত সবাই আলোচনা কক্ষ ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে এসেছেন।নিরাপত্তারক্ষীরা,অফিস কর্মীরা, বাইরে থাকা পুলিশরা সবাই এসে ঘিরে ফেলেছে গবেষনাগারের ভবনটা।এরপর পুলিশ থেকে খবর দিয়ে আরো বড় পুলিশ বাহিনী,দমকলের লোকজন গাড়ী এসে হাজির।গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখা গেলো গবেষনাগারের মৎসকন্যার কক্ষটি সম্পুর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে পরীক্ষাগার জুড়ে।প্রফেসর হ্যান্স এর ছিন্ন ভিন্ন দেহটা পড়ে রয়েছে গবেষনাগারের একোরিয়ামটার কাছে। একোরিয়ামটির কোন অস্তিত্ব নেই চারপাশে কাঁচের গুড়া লণ্ড ভণ্ড হয়ে আছে।মৎসকন্যার ওকোন অস্তিত্ব নেই চারপাশে চুর্ণ বিচুর্ণ ধ্বংসাবশেষ,আগুন জ্বলছে, বোঝার উপায় নেই কোনটা মৎসকন্যার রোবট।প্রফেসর হ্যান্স এর হাতে একটা রিমোট কন্ট্রোলারের মতোন যন্ত্র যা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো।দমকল এসে আগুন নেভানোর পর ফরেনসিক দপ্তর এসে বহু কিছু নমুনা নিয়ে যায় পরীক্ষার জন্য। সমস্ত আমন্ত্রিত ব্যাক্তিরা ধিক্কার দিতে দিতে ফিরে চলে গেলেন।সকলেই তখন ছিলেন প্রফেসরের এই জালিয়াতির নিন্দা সমালোচনায় মুখর।
আমার ফেরার জন্য বিমানের টিকিট কাটাই ছিলো, এই দিনের ই রাতের বিমানে- কোলকাতার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।সারা পথে প্রফেসর স্যমুয়েল হ্যান্সের এই জালিয়াতির আর তার সুন্দর পরিকল্পনার কথা ভাবতে ভাবতে ফিরে এলাম।পর দিনের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এই খবর পৌঁছে গেলো কিন্তু আমার কাছে ছাড়া ঐ রোবট মৎসকন্যার ছবি কারো কাছে না থাকায় তার কোনো ছবি প্রকাশিত হয়নি।প্রফেসর হ্যান্সের নিখুঁত পরিকল্পনার তারিফ করতেই হবে।আমার হিডেন ডিটেক্টর,রেকর্ডার,এবং ওয়েভ জেনারেটর কোনটাই মেটাল ডিটেক্টর বা এক্স-রশ্মি দিয়ে ধরা পড়েনা কারন আমার সমস্ত যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম এমন রাসায়নিকের প্রলেপ দেওয়া আবরণে ঢাকা থাকে বাহ্যিক সব রকম তরঙ্গ, রশ্মি প্রাথমিক ভাবে শোষিত হয় তারপর অপর তল দিয়ে পুনরায় নির্গত হয়ে যায় ফলে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনা।স্বচ্ছ কাঁচ যেমন আলোর ক্ষত্রে আচরণ করে ,এক্ষেত্রে ভেতরের বস্তু ধরা পড়েনা।
একজন জার্মাণ বৈজ্ঞাণিক প্রফেসর স্যামুয়েল হান্স জানিয়েছেন,তিনি একটি অতি ক্ষুদ্র
১০ ইঞ্চি মৎস কন্যা ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ছোট দ্বীপ থেকে সংগ্রহ করে তাঁর পরীক্ষাগারে
নিয়ে এসেছেন। কাগজে তিনি সারা বিশ্বের আগ্রহী বৈজ্ঞাণিক, সাংবাদিক,বিশিষ্ট মানুষদের
আগামী ৭ই নভেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর অবধি বেলা ৯টা থেকে বিকাল ৪টা অবধি তাঁর
গবেষণাগারে উপস্থিত হয়ে প্রাণীটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যথাদিন যথা সময়ে অর্থাত
৭ই নভেম্বর প্রফেসর হ্যান্স এর আবাসন, জার্মাণীর ব্ল্যাক ফরেস্ট এ ' DIVINE RESORT
' এ দিল্লীর প্রশাসণিক ও কারিগরি বিজ্ঞান গবেষণা মন্ত্রক নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে ডাক্তার
উকিল উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হ্যান্স যা বলেন সমুদ্রের জলের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রাণীর
একটা ছোট বাচ্চা তাঁর হাতে ধরা পড়েছ )প্রফেসর বলেই চললেন, আমি একটা ছ ফুট লম্বা।চার ফুট চওরা আর তিন ফুট উচ্চতার বিশেষ ভাবে প্রস্তুত একোরিয়াম সাথে নিয়ে এসেছিলাম,ওটাতে সমুদ্রের জল ভরে বাইরে থেকে ব্লোয়ারের সাহার্য্যে জলে স্রোত তৈরী করে, আর যাতে একোরিয়ামের মধ্যেকার আবহাওয়া ,উত্তাপ সব কিছু ওই দ্বীপের মতন হয়, সেই রকম করার জন্য ইলেকট্রণিক কণ্ডীশণার যন্ত্র লাগানো ছিলো। সবই ব্যাটারী চালিত।একোরিয়ামটির মধ্যেকার জলের ধরন ,আবহাওয়া,সবকিছু একদম বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখার ব্যবস্থা ছিলো যাতে ঐ প্রাণী যে অন্য আবহাওয়া পরিবেশে রয়েছে তার কোন প্রভাব না পরে। বুঝলাম এই প্রাণীটি স্তন্যপায়ী বড়জোর ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী হতেপারে।প্রাণী টি এতোই ছোট যে ওটা আদৌ মৎস কন্যা কিনা বোঝা যাচ্ছিল না।একটা হালকা আকাশী রঙের কাপড় দিয়ে একোরিয়ামটা ঢাকার ব্যবস্থা ছিলো।এবার ঐ প্রাণীটা একোরিয়ামে ভরে কাপড়ে ঢেকে অপেক্ষা করতে লাগলাম জাহাজটা ফেরার জন্য। অবশেষে দুদিন বাদে জাহাজের দেখা পেতে ওটাতে করে একোরিয়াম সমেত ফিরে এলাম নিজের আস্তানায় গবেষনাগারে।দীর্ঘ দু'বছর অসীম ধৈর্য্য সহকারে প্রতিপালন করে বড় করে তুলেছি, এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই প্রাণীটি মৎস কন্যা ।
মাননীয় অতিথি গন,আপনারা সকলেই বুঝতেই পারছেন এই বিরল সম্পদটি রক্ষা করার জন্যআমাকে কি ধৈর্য্য আর সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি ক্ষণ কাটাতে হয়েছে। সতর্কতা নিতে হয়েছে প্রচণ্ড, কারণ যদি কোন কারণে গবেষণাগারে বিশেষ করে ঐ একোরিয়ামে পরিবেশ পরিস্থিতি বিঘ্নিত হয়, বদলে যায়, কোন রকম পরিবর্তন ঘটে তাহলে বাঁচানো যাবেনা মৎস কন্যাকে মুহুর্তে বিনষ্ট হয়েযাবে সকলপ্রয়াস। এই জন্য কতকগুলি বিশেষ সতর্কতার পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যেমন এক সাথে পাঁচজনের বেশী অতিথি ঐ পরীক্ষাগারে প্রবেশ করতে পারবেন না।একটি ব্যাচে ৫ জন প্রবেশ করবেন আর আধ ঘণ্টা দেখার সময় পাবেন।একোরিয়াম থেকে চার ফুট দুরত্ব থেকে দেখতে হবে, কারণ অতিথিগনের গায়ের তাপ ,নিশ্বাস প্রশ্বাস যে পরিবেশ প্রভাব ফেলবে সেটাও ক্ষতিকর, এছাড়া মৎস কন্যা র মধ্যে কোন রকম উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে যদি অতিথিদের উপস্থিতি টেরপায়।এ জন্য বেশীক্ষণ দেখার সুযোগ পাবেন না,তাছাড়া একটা ব্যাচের পর এক ঘণ্টা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ব্যাচ ঢুকবে।মাননীয় অতিথি গনের নিকট আমার একান্ত অনুরোধ আপনারা ঐ গবেষণাগারের ঢোকার আগে আপনাদের সাথে যদি কোন রকম বৈদ্যুতিক বা বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি থাকে,কোন রকম রাসয়ানিক দ্রব্য থাকে অনুগ্রহ করে সেগুলি গবেষনাগারের প্রবেশ দ্বারের ডানপাশে গচ্ছিত রাখার ঘরে জমা দিয়ে কুপন নিয়ে নেবেন।একদম ফাঁকা খালি হাত পায়ে প্রবেশ করবেন, কোন রকম বাড়তি জিনিস সঙ্গে রাখবেন না। গবেষনাগারে প্রবেশ করার আগে আপনাদের সকলের এক্সরে পরীক্ষা,মেটাল ডিটেক্টর আর এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন পরীক্ষা করা হবে।এগুলি সবই ঐ বিরল প্রাণীটির রক্ষণার্থে তাই অপরাধ নেবেননা আমি দুঃখিত।এবার আপনারা ঐ মহার্ঘ্য দুর্ল্ভ রুপকথার প্রাণীটিকে স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রস্তুত হন।আগে এসেছেন আগে যাবেন, এই ভাবে পর পর পাঁচজন করে ব্যাচ হিসাব করে যাবেন। আপনাদের সহায়তা করার জন্য এখানে বহু কর্মী আছেন,এরা সকলেই আমার রক্ষী বাহিনীর লোক। কারো অসুবিধা বা কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে সহায়তা করার জন্য যে কার্য্যালয় আছে সেখানে যোগাযোগ করবেন। ধন্যবাদ আপনাদের দর্শণ সুখের হউক । অধ্যাপক স্যামুয়েল হ্যান্স এই কথাগুলি বলে চলে গেলেন। এরপর দেখি দুজন উর্দ্দিপরা লোক আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা লিফলেট আর একটা টোকেন নম্বর দেওয়া কার্ড দিল যাতে প্রত্যেকের কত নং ব্যাচ-ক' টার সময় গবেষণাগারে প্রবেশ সময় লেখা আছে। লিফলেটে লেখা আছে প্রত্যেক অতিথি ,দর্শনার্থীদের কি করণীয়( গবেষনাগারে প্রবেশের আগে কোথায় যেতে হবে,সেখানে কি করণীয়,সব ভালো করে বোঝানো আছে)। আমার ব্যাচ নং চার, সময় ৩টা ৩০ মি।
যথা সময়ে আমি অন্য চারজন অতিথির সাথে উঠে গবেষনাগারে যাবার জন্য এগুলাম। আমার সাথে যে ছোট্ট লাগেজ ব্যাগটা ছিলো সেটা আমি মালপত্র রাখার ঘরে গচ্ছিত করে টোকেন নিয়ে এগিয়ে গেলাম গবেষনাগারের দরজার দিকে।আমাকে নিরাপত্তারক্ষীরা যখন পরীক্ষা করে দেখছিলেন তখন মেটাল ডিটেক্টারে আমার একটা ছোট্ট বাক্স নিরাপত্তারক্ষীরা আটকে জানতে চাইলো ওটা কি? আমি জানালাম ওটা আমার শ্রবন যন্ত্র, ওটা ছাড়া আমি কানে শুনতে পাইনা,ওটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে আপত্তি জানালেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিলেন এটাতো সাথে থাকতেই পারে, এটাতো অপরিহার্য্য তাই আমাকে তারা ঢোকার অনুমতি দিলেন।
গবেষনাগারের দরজায় সশস্ত্র প্রহরী ,নিরাপত্তারক্ষীরা যে অনুমতি পত্র দিয়েছে সেটা দেখে আমাকে ঢোকার অনুমতি দিলে গবেষনাগারের ঘরে ঢুকলাম। এটা মুল গবেষনাগার নয়, তার একটা অংশ, আলাদা করে ঘিরে বানানো.১৪'X১২' এর মতো জায়গা ঘরের ঢোকার দরজার বিপরীত দেওয়ালের কাছে একটা বড় টেবিলের উপর কাঁচের একোরিয়াম,ঘরে হালকা আলোয় সব দেখা যাচ্ছে,কিন্তু আলোটার তীব্রতা নেই-তাই দূর থেকে ভালোমত দেখা যাচ্ছে না।একোরিয়ামের সামনে চারফুট মতন দুরত্ব বজায় রেখে গার্ড দেওয়া আছে বেড়া দিয়ে।বেড়ার এপাশ থেকে একোরিয়ামের মধ্যে একটা মাছের মতন প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখা যাচ্ছে।খুউব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে এই প্রাণীটি আমাদের দেখা কোন প্রাণী নয় এর অর্দ্ধেকটা মাছের মতন আঁশে ঢাকা আর অর্দ্ধেকটা মানুষের মতন। তবে হাত পা মানুষের মতন নয়- ওটা লম্বা পাখনার মতন,নৌকার হাল যেমন হয়।নাক, মুখ, চোখ হুবহু মানুষের মতন নয়,তবে অনেকটাই ওই আদলের,মাথায় অগুনতি সরু সরু নালিকা, যেগুলি চুল মনে হতেই পারে।ছবি তোলা বারন,কিন্তু আমি যেটা হিয়ারিং এড বলে নিয়ে এসেছি ওটা আসলে একটা বিশেষ ভাবে প্রস্তুত বৈদ্যুতিন যন্ত্র, যাতে ইলেক্ট্রো ইনফ্রা ফোটো আর থার্মাল সেন্সেটিভ ডিভাইস যুক্ত থাকায় নিখুত ভাবে বহু দুরথেকে সব কিছুর ছবি তা স্থির চিত্র বা মুভি দুটোই করা সম্ভব।এই ছবি যেকোন উন্নত ক্যামেরার তোলা ছবির থেকেও স্পষ্ট ও নিখুত।চোখে চশমার ডাঁটি টা বিশেষ ভাবে প্রস্তুত এর মধ্যে সমস্ত রকম ডিটেকটর, ও রেকর্ডার আছে মাইক্রোচিপ লেভেলে রেকর্ড হয়ে যায় যে সমস্ত ইলেক্ট্রণিক,ইলেক্ট্রিক্যাল বা ইলেক্টোমেকানিক্যাল ডিভাইস গুলো এই পরীক্ষা গারে রয়েছে তার কার্য্য পদ্ধতি,সিগ্নালিং,কোনো ইলেক্ট্রো-অপ্টিক্যাল তরঙ্গ আছে কিনা?তড়িৎ চুম্বকীয় বা মাইক্রো ওয়েভ ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা?চশমার ফ্রেমের একদিকে আছে থার্মাল হিডেন ক্যামেরাওটা ইনফ্রারেডেও ছবি সাউন্ড তুলতে পারে।আমি ঐ ঘরের সমস্ত কিছুর তথ্য নথীভুক্ত করে নিয়ে চলে এলাম।গবেষনা ঘরে ঢোকবার সময় দরজার পাশে রক্ষীর কাছে রাখা খাতায় প্রবেশের সময় লিখে স্বাক্ষর করতে হয় আবার বেরুনোর সময় আবার ঐ রকম সময় দিয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। যদি মৎস কন্যা র কোন ক্ষতি হয় কোন সময়ে হয়েছে? তখন দর্শক কারা ছিলেন চিহ্নিত করার জন্য এই ব্যবস্থা।আমার হ্যান্স এর এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা টায় একটা সন্দেহ সৃষ্টি করেছে,- মৎস কন্যা টি সঠিক প্রাকৃতিক প্রাণী না সৃষ্টি করা কোন প্রাণী!কেন প্রফেসর এতো সতর্কতা অবলম্বন করেছেন?সত্যই কি মৎস কন্যা র নিরাপত্তার জন্য নাকি কোন সত্য তথ্যকে গোপন রাখতে? আমি ' DIVINE RESORT' এ থাকব না একথা আগেই ঐ খানকার কার্য্যালয়ে নথিভুক্ত করিয়ে রেখেছিলাম, তাই আমি গবেষনাগার থেকে বেরিয়ে মুল কার্য্যালয়কে অবগত করিয়ে বেরিয়ে চলে এলাম সোজা আমার হোটেলের বুক করে রাখা সুইটে।আমার সন্দেহ হয়ে ছিলো, প্রফেসরের আস্তানায় নিরাপত্তার্ররঅভাব হবে স্বাধীন ভাবে কোন কাজ করা সম্ভব হবেনা।আমার সন্দেহ আরো দৃঢ় হয় ঐ খানে অতিথি আবাসে যে ঘর গুলো নির্দিষ্ট ছিলো প্রতিটি ঘরেব দুজন করে থাকার ব্যাবস্থা।ঐ ঘর গুলোতে হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে,ক্লোজড সার্কিটেটিভিতে নজরদারীর ব্যবস্থা আমার গোপন অনুসন্ধান যন্ত্রে ধরা পড়েছে।
আমি হোটেলে ফিরে নিজের ঘরে এসে ডিটেক্টর, রেকর্ডারগুলি নিয়ে ডিকোডারে মেশিনে লাগিয়ে পরীক্ষা করতে এক অত্যাশ্চর্য্য রহস্যময় বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠল।একোরিয়ামে যে প্রাণীটি ঘুরে বেড়াচ্ছে ওটি একটি কৃত্রিম রোবট বিশেষ।এটি তৈরী করা হয়েছে কৃত্রিম পলিমার দিয়ে মাছের ন্যায় দেখতে, অভ্যন্তরে জটিল যন্ত্রপাতি যা বিশেষ কম্পাঙ্কের ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক তরঙ্গ দ্বারা কন্ট্রোল করা চালানো যায়।একোরিয়ামের মাথায় যে কন্ট্রোলার লাগানো আছে সেখানেই প্রোগ্রাম করা যন্ত্র রয়েছে সেটার সাহার্য্যে ওই মৎস কন্যার মত দেখতে রোবটটাকে চালানো ও নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে।পাছে এই সত্যটা প্রকাশ পায় তাই এতো নিয়ন্ত্রণ কঠোর নিরাপত্তার ঘেরা জাল।আগামী ১০ই নভেম্বর যখন আলোচনা সভায় নানা দেশের বিজ্ঞজনেরা উপস্থিত থাকবেন সেখানে প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্সের জালিয়াতি ফাঁস করে দেব তথ্য প্রমান সহ।প্রফেসর চ্যালেঞ্জ জানালে ভালো, সবার সামনে আসল ঘটনা প্রকাশ পাবে।কিন্তু প্রফেসর এটা মেনে নেবেন না হিংস্র হয়ে প্রতিশোধ নেবার জন্য আক্রমন করবেনই।তাই আমার নিজেরও নিরাপত্তা প্রয়োজন। আমি ভারতীয় হাই কমিশনসকেবিষয়টিগোপনে জানালাম এবং অনুরোধ করলাম নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করার জন্য।হাই কমিশনস আশ্বাস দিলে আমি হোটেোলে ফিরে এলাম। ১০ তারিখ সকালে আমাকে হাই কমিশনস থেকে জানাল,চারজন সশস্ত্র গার্ড ঐ দিন কমিশনস অফিস থেকে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন,তাঁরা লক্ষ্য রাখবেন আমার উপর কোন রকম আক্রমন হয় কিনা? যদি সেই রকম পরিস্থিতি হয় তাঁরাই মুহুর্ত্তে ব্যবস্থা নেবেন, বহু পুলিশ সাধারন বেশে উপস্থিত থাকবেন।কোন রকম বিপদ ঘটবেনা।
আমি যথা সময়ে প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্সের আলোচনা সভায় উপস্থিত হলাম।এদিন ও পরিচয় পত্র আমন্ত্রণপত্র দেখিয়েই ঢুকতে হয়েছে, এদিন সঙ্গে করে নিয়ে যাবার জন্য চেকিং তেমন কড়াকড়ি ছিলোনা, কারণ আজ গবেষনাগার যাওয়া যাবেনা বন্ধ থাকবে.১২টা নাগাদ আলোচনা সভা শুরু হোলো।আলোচনা গৃহে বহুলোক উপস্থিত,বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বহু প্রতিনিধি এসেছেন।তাদের বসার স্থান আগে থেকেই নির্দিষ্ট। আমন্ত্রিতের নাম কোন দেশের প্রতিনিধি ,চেয়ারের পিছনে লাগানো ছিলো তাই খুঁজে পেতে কোন অসুবিধাই নেই,তবুও অনেক সাহার্য্যকারী কর্মী রয়েছেন তারা সাহার্য্য করছেন। আমার দুপাশে দুজন করে হাই কমিশনসের প্রতিনিধির জায়গা তাঁরাও এসেছেন।প্রথমে প্রফেসর স্যামুয়েল হ্যান্স সেই প্রথম দিনের বক্তৃতাটি দিয়েই শুরু করলেন, কিভাবে উনি মৎসকন্যার বাচ্চা পেয়ে নিয়ে এসেছেন,প্রতিপালন করেছেন ইত্যাদি।এখনও পর্য্যবেক্ষণ নিরীক্ষণ কার্য্য চলছে যদি আর বছর খানেক বাঁচিয়ে রাখা যায় তা হলে এই মৎস কন্যাটিকে বিশদভাবে সর্বসাধারণের গবেষনার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।বর্তমানে এটা সম্ভব হচ্ছেনা কারণ মৎস কন্যাটিকে বাঁচিয়ে রাখাই প্রধান চিন্তা। ওর পুর্ণ বিকাশ ঘটতে আরো সময় লাগবে,এখনো পুরোপুরি সব কিছু বিকশিত হয়নি ওর বর্ধণকাল চলছে।এখন এই গবেষনাগারের বাইরে এটাকে বাঁচানো সম্ভবপর নয়।আলোচনা বেশ জমে উঠেছে নানা জন নানা কৌতুহলী প্রশ্ন করছেন প্রফেসর হ্যান্স গর্বিত ভাবে উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন।বড় মৎস কন্যাটির আর দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা কেন? কি কারণ?একটাই কি মৎসকন্যাছিলো? মৎসকন্যার যখন বাচ্চা পাওয়া গেছে তখন নিশ্চয় আরো মৎসকন্যা আছে,তাদের দেখা যায়না কেন?ঐ দ্বীপের পাশেই যখন দেখা যায় তাদের তাহলে ওখানে বিশদ ভাবে গবেষনার ব্যাবস্থা করা হচ্ছেনা কেনো?এইসব প্রশ্নত্তরে যখন আলোচনা মুখরিত, আলোচনা তখন ঘন্টা দু য়েক অতিক্রান্ত হয়েছে একটা চায়ের বিরতি ১৫ মিনিট দিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হতেই আমি সভায় বোমাটি ফাটালাম।
আমি বললাম প্রফেসর হ্যান্স আপনি এতক্ষন যে তথ্য গুলি পেশ করলেন এগুলি সবই মনগড়া কাল্পনিক।আপনার মৎসকন্যাটি আদৌকোনো প্রাণী নয়,এটা একটি কৃত্রিম যান্ত্রিক খেলনা রোবট।আমার কথাটি সভায় শোনামাত্র প্রফেসর হ্যান্স অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন,চিৎকার করে বলেন মিস্টার উকিল আপনি কার সমন্ধে কি যাতা বলছেন? আমি আপনার বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করবো আপনাকে পুলিশে দেব।আপনার কথার সত্যতা আপনি প্রমান করতে পারবেন?আমি অবশ্যই পারবো জানাতে প্রফেসর হ্যান্স খানিকটা বিব্রত বোধ করেন,একটু হতভম্ব হয়ে বলেন আপনি কতটুকু জানেন মৎসকন্যা সম্পর্কে?আপনি কতটুকু দেখেছেন?দেখেছেন তো চার ফুট দূর থেকে একটা একোরিয়মের মধ্যে, তাতেই এতো কিছু বুঝে গেলেন?আপনি কিসের সাহার্য্যে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে ওটা জীবন্ত প্রাণী নয় ওটা রোবট?আমি বললাম আমার কাছে যে প্রামান্য তথ্য আছে জন সমাজে সে গুলি প্রকাশ করব। আমার সংগৃহীত তথ্য ও তত্ত্ব বিশ্লেষণ গুলোমৎসকন্যার ছবি ফটো প্রিন্ট সমেত একটি পুস্তিকাকারে সবার মধ্যে বিলি করে দিলাম,ঐ পুস্তিকাতেআমি কিভাবে তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করেছি তার ও বিশদ বিবরণ উল্লেখ আছে। হঠাৎ এই পুস্তিকা হাতে পেয়ে প্রফেসর অগ্নিশর্মা হয়ে বলেন "যতসব ইডিয়ট সিকিউরিটি তারা কি করে এই যন্ত্র সহ গবেষনাগারে এই চোর ভণ্ড লোকটিকে ঢুকতে দিলো, অবিলম্বে এই লোকটিকে আটক করো- সিকিউরিটি অবিলম্বে লোকটিকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা কর।প্রফেসরের হুঙ্কার শুনে জনা দশেক সিকিউরিটি গার্ড আমার দিকে ধেয়ে আসছিলো কিন্তু হাই কমিশনসের প্রতিনিধিরা উঠে দাঁড়িয়ে পাল্টা হুঙ্কার দিলেন খবরদার কেউ ওনার কাছে আসবেন না,আমরা স্থানীয় প্রশাসনিক প্রধানদের জানিয়েই এসেছি-পুলিশ দপ্তর থেকে বিদেশী হাইকমিশনস অফিসেও বিষয় টি অবগত আছেন।আমরাও প্রস্তুত আছি,যদি ওনার প্রতি কোনরুপ অশোভন আচরণ করার চেষ্টা করা হয় আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব, এই আলোচনা সভায় পুলিশ,সেনা বাহিনী প্রবেশ করবে।এই কথা শুনে প্রফেসর স্যমুয়েল হ্যান্স ও তাঁর রক্ষী বাহিনী থমকে গেলো।আমি বললাম আমি আরো প্রমান আপনাদের সামনে দিতে প্রস্তুত।আমি গবেষনাগারের একোরিয়ামটি জন সমক্ষে এনে প্রমান করে দেব যে,মৎসকন্যা, এটা দূর থেকে চালিত রোবট।আমার কথা শেষ হবার আগেই দেখি উর্দ্ধশ্বাসে সভাকক্ষ ছেড়ে প্রফেসর হ্যান্স ভিতরে গবেষনাগারের দিকে দৌড় লাগালেন। সকলে হতভম্ব।প্রফেসর মুল প্রবেশ দ্বার দিয়ে ' DIVINE RESORT' বাংলো তে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেবার জন্য নির্দেশ দিলেন নিরাপত্তা কর্মীদের।মুল আবাসনের গেট বন্ধ হয়ে গেলো। প্রফেসর হ্যান্স ভিতরে গবেষনাগারের দিকে তড়িৎ গতিতে চলে গেলেন। এরপর একটা বিকট জোর বিস্ফোরণের আওয়াজ।উপস্থিত সকল আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা ভয়ে সন্ত্রস্ত সবাই আলোচনা কক্ষ ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে এসেছেন।নিরাপত্তারক্ষীরা,অফিস কর্মীরা, বাইরে থাকা পুলিশরা সবাই এসে ঘিরে ফেলেছে গবেষনাগারের ভবনটা।এরপর পুলিশ থেকে খবর দিয়ে আরো বড় পুলিশ বাহিনী,দমকলের লোকজন গাড়ী এসে হাজির।গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দেখা গেলো গবেষনাগারের মৎসকন্যার কক্ষটি সম্পুর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে পরীক্ষাগার জুড়ে।প্রফেসর হ্যান্স এর ছিন্ন ভিন্ন দেহটা পড়ে রয়েছে গবেষনাগারের একোরিয়ামটার কাছে। একোরিয়ামটির কোন অস্তিত্ব নেই চারপাশে কাঁচের গুড়া লণ্ড ভণ্ড হয়ে আছে।মৎসকন্যার ওকোন অস্তিত্ব নেই চারপাশে চুর্ণ বিচুর্ণ ধ্বংসাবশেষ,আগুন জ্বলছে, বোঝার উপায় নেই কোনটা মৎসকন্যার রোবট।প্রফেসর হ্যান্স এর হাতে একটা রিমোট কন্ট্রোলারের মতোন যন্ত্র যা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো।দমকল এসে আগুন নেভানোর পর ফরেনসিক দপ্তর এসে বহু কিছু নমুনা নিয়ে যায় পরীক্ষার জন্য। সমস্ত আমন্ত্রিত ব্যাক্তিরা ধিক্কার দিতে দিতে ফিরে চলে গেলেন।সকলেই তখন ছিলেন প্রফেসরের এই জালিয়াতির নিন্দা সমালোচনায় মুখর।
আমার ফেরার জন্য বিমানের টিকিট কাটাই ছিলো, এই দিনের ই রাতের বিমানে- কোলকাতার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।সারা পথে প্রফেসর স্যমুয়েল হ্যান্সের এই জালিয়াতির আর তার সুন্দর পরিকল্পনার কথা ভাবতে ভাবতে ফিরে এলাম।পর দিনের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এই খবর পৌঁছে গেলো কিন্তু আমার কাছে ছাড়া ঐ রোবট মৎসকন্যার ছবি কারো কাছে না থাকায় তার কোনো ছবি প্রকাশিত হয়নি।প্রফেসর হ্যান্সের নিখুঁত পরিকল্পনার তারিফ করতেই হবে।আমার হিডেন ডিটেক্টর,রেকর্ডার,এবং ওয়েভ জেনারেটর কোনটাই মেটাল ডিটেক্টর বা এক্স-রশ্মি দিয়ে ধরা পড়েনা কারন আমার সমস্ত যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম এমন রাসায়নিকের প্রলেপ দেওয়া আবরণে ঢাকা থাকে বাহ্যিক সব রকম তরঙ্গ, রশ্মি প্রাথমিক ভাবে শোষিত হয় তারপর অপর তল দিয়ে পুনরায় নির্গত হয়ে যায় ফলে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনা।স্বচ্ছ কাঁচ যেমন আলোর ক্ষত্রে আচরণ করে ,এক্ষেত্রে ভেতরের বস্তু ধরা পড়েনা।


No comments:
Post a Comment