Tuesday, 24 November 2015

বিভিন্ন স্বাদের লেখা --১ "আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা

আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা -'তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার চাকরি করার সময়
,বেশ কিছু বিচিত্র অবস্থার সন্মুিখীন হতে হয়েছ,যার থেকে এমন সব অভিজ্ঞতা লাভ করেছি যা আমার জীবনে মুল্যবান সম্পদ, এমন ই একটি ছোট্ট কাহিনী,আমি ১৯৯৮ সালের ২রা ডিসেম্বর হুগলী জেলা থেকে বদলী হয়ে পুরুলিয়া যোগদান করি আমার চাকরি র স্থল ঝালদা ২নং , কোটশিলা তে একদম নতুন ঝাঁ চকচকে দোতলা অফিস ফাঁকা জায়গায় পিছনে একটু দূর দিয়ে রেল লাইন  অফিস থেকেই সামনে দেখাযায় ওখানে থাকার মতন ঘর না পাওয়ায় আমি ওখান থেকে কিছু দূরে বাসে করে যেতে আধ ঘণ্টা লাগে ঝালদাতে ঘর ভাড়া নিলামদিন৪/৫ এর মধ্যেই অফিসের দায়িত্ব আগের অফিসারের কাছ থেকে বুঝে নিলাম এর ঠিক দু দিনের মাথায় কোলকাতা হাই কোর্ট সংলগ্ন সি টি সিভিল কোর্ট থেকে সমন ৩দিন বাদে ওই কোর্টে হাজির  হয়ে  পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষন মামলা য় আমাকে সাক্ষী দিতে যেতে হবে কোর্টে  জেলা আদালতে,কোলকাতা    উচ্চ আদালতে  বিভাগীয় বিভিন্ন মোকদ্দমায় আমি ইতি পুর্বে স্বাক্ষী দিয়েছি কিন্তু সে বিষয় গুলো সবই বিভাগীয়  রেকর্ড নথী পত্র সংক্রান্ত, এই রকম বিষয় যার কিছুই আমি জানিনা কাগজে পড়েছিলাম যে ১৯৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর শীতের রাত্রে প্লেন থেকে বহু কয়েক শত AK47 সহ
অত্যাধুনিক অস্ত্র  ঝালদার কাছে ফেলা হয় এ নিয়ে খুউব সরগোল হৈ চৈ  পড়েছিলো
, ওই প্লেন টি অস্ত্র বর্ষণের কদিন বাদেই ভারতের আকাশ সীমায় ঢুকলে বায়ু সেনার MIG-21তাড়া করে মাটিতে নামতে বাধ্য করে  কয়েক জন গ্রেফতার হয়  ২ জন পলাতক
প্লেন টা ডেনমার্কের তাই নাটাভিয়ান নাগরিক আর একজন ব্রিটীশ নাগরিক ধরা পড়ে কলিকাতায়  মহামান্য উচ্চ আদালতে মোকদ্দমা  চলছে খবরে শুনেছিলাম এই পর্য্যন্ত
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম কি সাক্ষী দেব কিছুই জানিনা
, অফিসে এর ফাইল ও তেমন ভাবে প্রস্তুত করা নেই যাতে প্রামাণ্য তথ্য কিছু পাওয়া যায় বিষয় টা প্রশাসনিক আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত তাই,আরক্ষা দপ্তর,জেলা করণ বিষয় টা দেখছেহাতে সময় নেই জেলা অফিসের সাথে যোগাযোগ করার কারণ মাঝে দুটো দিন ই ছুটি শনি আর রবি বার আমিও বাড়ি আসবো স্থানীয় লোকের মুখে শোনা কাহিনী আদালতে বলা যাবেনা, তাছাড়া ইতিপুর্বে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেটার উপর তাকেই ভিত্তি করে ই আদালত জানতে চাইবেন,আমার বক্তব্য আমি কিছুই পেলামনা খালি হাতে পুরুলিয়া থেকে বাড়ি এলাম শনি আর রবি দুদিন ভীষন দুঃশ্চিন্তায় কাটালাম  রবিবার সকাল ১০টার আগেই মহামান্য আদালতে সমন হাতে হাজির হলাম খুজঁতে লাগলাম চারপাশে আমার চেনা কেঊ আসে কিনা আমার বন্ধু যার কাছ থেকে আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম তার আসার কথা অবশ্য তিনিও এব্যাপারে সাক্ষী দেবার মতন কিছুই জানে না তিনি ও সাময়িক দায়িত্বে ছিলেন ঘটনা তিনবছর আগের, এর মধ্যে দেখি অনেক আধুনিক অস্ত্র হাতে সসস্ত্র প্রহরী আমাদের আদালত চত্বরে ঘিরে ফেলেছে সবাই সতর্ক সন্ত্রস্ত ভাব,আদালতে মাননীয় বিচারপতি এসে আসন গ্রহণ করেছেন, পাশে নির্বাহী সহায়ক তার পাশে একজন কালোসামলা গায়ে বোধ হয় সেকার পক্ষের উকিল কৌঁসলি, আমি আদালত ক ক্ষে প্রবেশ  করলাম দান পাশেই ঘেরা আসামীদের রাখার গারদ হঠাৎ সবাইকে উত্তেজিত সন্ত্রস্ত চোখে দ্রজার দিকে চেয়ে দেকছে দেখে ওই দিকে তাকাতেই দেখি একজন খুউব ফর্সা লালচে গায়ের রঙ হাসিহাসি মুখ হাতে হাত কড়া তাকে ঘিরে সসস্ত্র অনেক প্রহরী ঐ কায়হের ঘেরা গারদে পুরে দিলো চারপাসে ভীড় করা প্রহরী বা সরকারী আমাদের মতন কোন ব্যক্তি বোল্লেন পিটার ব্লিচ ব্রিটিশ নাগরিক প্রাক্তন মিলিটারীর লোক আমি ভয়ে চারপাশ দেখছি হঠাত আমার বন্ধুকে দেখলাম এগিয়ে এসে আমায় ডেকে বলল পুরুলিয়ার বর্তমান ডি,এম, এসেছেন ঊনি আমাদের দপ্তরেই ছিলেন  অনাকে আমার অবস্থাটা জানাতে ওনাকেও সমন করেছে,আমাকে দেখিয়ে দিতে আমি গিয়ে জানালাম, যে আমি এইমাসের ই ২ তারিখ পুরুলিয়ায় এসেছি্‌সবে দায়িত্ব নিয়েছি ,কিছুই  জানিনা কি বোলব ? উনি আমায় বললেন রিপোর্টিং অফিসার কোথায় ? আমি বললাম উনি অনেক দিন আগেই মেদিনীপুর জেলায় বদলী হয়ে চলে গেছেন ঠিক কোথায়এখনউনি পোস্টেড জানিনা , আমিকি স্যার থাকবো না চলে যেতে পারিউনি আমায় চলে যেতে বললেন আমার ধরে প্রাণ ফিরে পেলাম, তখন আদালতের ভিতর দেখি এটাচি হাতে একজন কালো সুটপরা লোক মাথায় পণি টেল বাঁধা চুল সেই সরকারি উকিলের সাথে কি আলোচনা করছেন পুরুলিয়ার ডি,এম ওদিকে এগিয়ে যেতেই আমি পাশের কাঠ গড়ার মধ্যে পিটার ব্লিচ কে খুইয়ে একবার দেখলাম পাশে আরো দুজন ফর্সা বিদেশী আসামী রয়েছেনআমি দুর্গা দুর্গা বলে পিছন ফিরে উর্দ্ধশ্বাসে একদম আদালত চত্বর পেড়িয়ে সোজা চাঁদপাল ঘাটে ফেরী সার্ভিসের লঞ্চ ধরে হাওড়া
পুরুলিয়ায় যোগদান করেই আমার এই অভিজ্ঞতা

এর পর আমি পুরুলিয়ায় ফিরে গিয়ে স্থানীয় মানুষ জনের মুখে অস্ত্র বর্ষণ সম্বন্ধে যা শুনেছিলাম তা হোলো
, ১৯৯৫ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর ,বেশ ঠাণ্ডাছিলো সেদিন ঝালদা র একটু আগে পুরুলিয়া রাঁচী সড়কে কোটশিলা য় আমাদের ভুমি সংস্কার দপ্তরের  ,ব্লক ভুমি সংস্কার আধিকারিকের নতুন দোতলা সুন্দর  অফিস রাস্তার ধারেইপিছনে ফাঁকা মাঠ রেল লাইন রাঁচি থেকে ঝালদাপুরুলিয়া, বোকারো গেছেশীত কাল সন্ধ্যার পর জায়গাটা নিঝুম স্থানীয় লোকেরা আগুন জ্বেলে রাস্তার ধারে মাঠে পিকনিক মতন করে খাওয়া দাওয়া করে আগুন পোহাচ্ছিলো,নেশা করে কেঊ কেঊ নাচ গান কোরছিলো, পাশের গ্রামের ঝালদা,বেলামৌ,মরামু, লোকজন প্রায়ই ঘুমিয়ে,একটু গভীর রাত হঠাত প্লেনের আওয়াজ, বেশ নীচে নেমে এসেছে প্লেনটা, তার পর বৃষ্টি ধারার মতন ওই এরোপ্লেন থেকে শয়েশয়ে অস্ত্র সস্ত্র মাটিতে পড়তে লাগলো সব ই অত্যাধুনিক অস্ত্র ,এ কে -৪৭মুহুর্তে জানাজানি থানা পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার এইসব শুরু হোলোনানা গুজব পরস্পর দোষারোপ, কেঊ বলে কোটশিলার পাশেই আনন্দমার্গী দের হেড কোয়াটার আনন্দ নগরে এই অস্ত্র ফেলার কথা আগুন জ্বলার ভুল  সিগ্ন্যালে কোটশিলার চারপাশে অস্ত্র ফেলা হয়েছে ,কেঊ বলে কেন্দ্রের সরকার রাজ্য সরকার কে ফেলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য এই চক্রান্ত, বিষয় টা মহামান্য আদালতের বিচারাধীন আমি আট মাস পুরুলিয়ায় ঝালদাতে ছিলাম দুটি মারাত্মক অভিজ্ঞতা হয়  একটি এই ঘটনা অন্যটি অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে সে কাহিনী পরে লিখব
    
 

No comments:

Post a Comment