Monday 18 July 2016

রহস্য গল্প (৪) 'শপথ'

এই লেখাটি দু মাসের অধিককাল সময় লেগেছে,বহু বাধায় বার বার লেখায় বিঘ্ন ঘটেছে,  মন সংযোগের
 অভাব ঘটেছে ,তাই লেখাটা উপযুক্ত হয়নি দোষ ত্রুটি মার্জনীয়,অনুগ্রহ করে মতামত জানাবেন সেই
 মতন সংশোধনের চেষ্টা কোরবো


'শপথ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সকালে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে  কৌশিক রায় যিনি স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান কারী হিসাবে পরিচিত, তাঁর একমাত্র মাসতুত ভাই  অর্ক মৈত্র মানে আমাকে বোললেন,'অর্ক আজকের খবরের কাগজে এই বিশেষ খবরটা দেখেছিস?" আমি জানতে চাইলাম কোনটা?ওই অবসরপ্রাপ্ত বিচার পতি ধ্রুবজ্যোতি মিশ্রের  অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর টা? কৌশিক দা বোললেন হ্যাঁ ঠিক গতমাসের ৫ তারিখ আর ১২ তারিখে এমন
দু জন সরকারী কর্মীর ও অজ্ঞাত কারনে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাইনা? আমার নোটবুকটা নিয়ে  আয় তো ওখানে আমি নোট রেখেছি, কাগজে বেড়িয়েছিলো,কাগজ গুলোর কাটিংতো রাখাই থাকে

আমি তক্ষুণী নোটবই আর কাগজের কাটিংনিয়ে হাজির হলাম
কাগজের কাটিং দৃষ্টে নোটবুকে কৌশিকদা, নোটবুকে নিজের অভিমত সহ যেমন লিখেছেন তা হোলো
০৬/০৬/২০১২ ঃ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘা থানায় কর্মরত পুলিশ আধিকারীক সৌমেন দাস যাঁর বাড়ি হাওড়া জেলার বালীতে, গত কাল ০৫ই জুন ভোর রাত ৪ট নাগাদ রামনগরের  কাছে সমুদ্র উপকুলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নাই

১০
/০৬/২০১২ঃ পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাপ্ত মৃত পুলিশ আধিকারিক সৌমেন দাসের ময়না তদন্তে জানাযায় মৃত্যুটি অস্বাভাবিক ,মৃতদেহের পাকস্থলীতে কড়া ঘুমের ওষুধ ও নেশার ওষুধের সন্ধান মিলেছে, অথচ সমুদ্রের জল পাওয়া যায়নি, সৌমেন বাবুর কোন রকম মাদকতায় নেশা ছিলোনাএতে অনুমান হত্যার পর সমুদ্রের জলে মৃত দেহ টা ফেলা হয়েছিলো   হত্যার কোন কারন এখনও বোঝা যাচ্ছেনা,পুলিশের  অনুমান এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও এই হত্যা হতে পারে, অনুসন্ধান চলছে
সৌমেন বাবুর কোন ব্যক্তিগত শত্রুর খবর জানা নেই
উনি আজ তিন মাস হোলো দীঘা থানায় হাওড়া  থেকে বদলী হয়েএসেছেন, এর আগে উনি বছর দুয়েক হাওড়া থানায় ছিলেন,তার আগে হুগলীর ভদ্রেশ্বর থানায় তিন বছর সেকেণ্ড অফিসার হিসাবে ছিলেন, ওখানেই প্রথম চাকুরিতে যোগদান করেন হাওড়াতে ভি,আই, পি,দের সিকিঊরিটি অফিসার হিসাবে ছিলেন
১৩/০৬/২০১২ঃচুচুড়া গতকাল রাতে হুগলী জেলা আদালতের প্রাক্তন সরকারী পক্ষের ফৌজদারী মামলায় কৌঁসলী  উকিল অমিয় ভুষণ সাহা বাঁশবেড়িয়ায় নিজের বাড়িতে আততায়ীর হাতে  নিহত হয়েছেন,কাল রাত ১০টার সময় বাড়ির কলিংবেল বাজলে অমিয় বাবু সদর দরজা  খুলতে নীচে নামেন তখন প্রবল বৃষ্টি,সদর দরজা খোলা মাত্রই আগন্তুক অমিয় বাবুর হাতে একটা চিরকুটদেয় তাতে  লেখা
'শপথ ২০০৮,যাদব' আর মুখে কিছু বলতেই অমিয় বাবু মাটিতে ঢলে পড়েন ,তক্ষুণী আগন্তুক মোটর বাইক চেপে উধাও হয়ে যায় , বর্ষাতি পড়ে থাকায় চেনার উপায় ছিলোনা, ডাক্তার এসে মৃত বলে জানায়,প্রথমে এটা স্ট্রোক মনে হোলে ও  পুলিশের অনুমান এটা ব্যক্তিগত আক্রোশে হত্যা মৃত দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে১৬/০৬/২০১২ঃপ্রাক্তন সরকারী উকিল অমিয় ভূষণ সাহার ময়না তদন্তে জানা যায়, শরীরে  কোনো বড় আঘাতের চিহ্ন ছিলোনা মৃত্যুর কারণ পটাসিয়াম সায়েনাইড মতন মারাত্মক কোন অজ্ঞাত বিষপ্রয়োগপুলিশ এখন ও হত্যার কোনো কারণ বা কোনো সন্দেহ ভাজন কাউকে গ্রেপ্তার কোরতে পারেনি তদন্ত চলছেঅমিয় বাবু ২০১০ সালে অবসর নেন, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে অমিয়বাবু  অসুস্থ ছিলেন, একটা হার্ট এটাক মতন হয়েছিলো তাই বেশী বাইরে বেরুতেন নাকৌশিকদা খবরের কাগজের কাটিংগুলো পড়ার পর আমাকে বোল্লেন, আমাদের একটু ঘোরাঘুরি করে  খোঁজ খবর জোগার কোরতে হবে কতদূর কি জোগার কোরতে পারবো জানিনা,আমাদের যদি একজন সিদু জ্যাঠার মতন কেঊ থাকতেন ভালো হোতো খুউব প্রয়োজন, আমি বুঝতে পারছি আজকের খবরের সাথে আগের দুটো খুনের একটা যোগাযোগ  আছে, কিন্তু ঠিক কোথায় মিল চট করে বুঝে উঠতে পারছিনা, কিছু তথ্যের প্রয়োজন তাই নানা জায়গায় যেতে হবে, কে কতটা সাহার্য্য কোরবেন জানিনা,তাছাড়া আমাকেতো কেঊ এই তথ্য অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দেয়নি তাই নিজে উপযাচক হয়ে এই কেসে গেলে পুলিশের সাহার্য্য পাওয়াও মুস্কিল হবেতবু দেখি আমার মন বোলছে এই প্রত্যেকটা খুনের মধ্যে একটা যোগ খুঁজে পাবোইকোথা থেকে কিভাবে শুরু কোরব আগে ভেবে ছক কষে নিইআজকের কাগজে বিচারক  ধ্রুবজ্যোতি মিশ্রের যে মৃত্যুর সংবাদ টা বেড়িয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন তাই এখান থেকেই শুরু কোরতে হবেদিন সাতেক বাদে আমরা মানে আমি আর কৌশিকদা সকাল ৯টা নাগাদ সন্তোষপুরে যে নুতন বাড়ি করে বিচারক ধ্রুবজ্যোতি মিশ্র থাকতেন সেই বাড়িতে হাজির হলামছোট একতলা সুন্দর ছিমছাম  বাংলো ধরনেরবাড়িনতুন বাড়ি বছর পাঁচেকের হবেচারপাশে পাঁচিল ঘেরা গেট খুলে ভিতরে ঢুকলে  দুপাশে বাহারী ফুলের বাগান একটু খানি লন পেরিয়ে বাংলোর সদর দরজা দুপাশের ঘরের জানালা খোলা পর্দ্দা ঝুলছে দরজা বন্ধ, কলিং বেলের সুইচ টিপতেই ভিতর থেকে একজন মাঝ বয়েসী ভদ্রলোক বেড়িয়ে এসে জানতে চাইলেন আমাদের পরিচয়, কোথাথেকে আসছি? কৌশিকদা হাতজোড় করে নমস্কার জানিয়ে নিজের পরিচিতির কার্ডটা এগিয়ে দিতে দিতে বোললেন, খবরের কাগজে খবরটা পড়ে মন টা খুউব খারাপ হয়ে গেলো উনি আমাকে অনেক সাহার্য্য করেছিলেন, প্রথমে উনিই উৎসাহ দিয়েছিলেন এই শখের পেশায় আসার জন্য, ২০১০সালে উনি তো ২০১১ মার্চ মাসে অবসর নিয়েছিলেনআমরা চুচুড়া থেকে আসছি আমাদের পরিচয় পেয়ে ভদ্রলোক  আমাদের ভেতরে ডাকলেনভিতরে ঢুকে দেখি অথিতি আপ্যায়নের জন্য চেয়ার টেবিল সুন্দরভাবে সাজানো, আমরা ভিতরে গিয়ে বসলাম, ভদ্রলোক সামনের চেয়ারে বসে বোললেন আমার বাবা ই ধ্রুবজ্যোতি মিশ্র আমি ই একমাত্র সন্তান, আমার নাম সপ্তর্ষি মিশ্র আমি পেশায় কলেজের অধ্যাপক,বর্তমানে বর্দ্ধমানে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপনা করি,ওখানেই সস্ত্রীক থাকি, আমাদের একটি ৪ বছরের পুত্র লুবদ্ধক নার্শারি স্কুলে পড়েবাবার আকস্মিক মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা  ১৮ তারিখ সকাল ১১টার মধ্যেই এখানে চলে আসি, তখন ও সব আত্মীয় স্বজনরা খবর পান নি, বাবার মৃত দেহ তখন ও হাসপাতালেই ছিলো ,পুলিশ কেস কারন বাবা প্রাতঃ ভ্রমনে বেড়িয়ে ছিলেন, হঠাৎ একটি মোটর বাইক পাশে এসে গতি কমিয়ে ই দ্রুত বেড়িয়ে যায়, বাবা রাস্তার পাশে লুটিয়ে পড়েন, হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানায়হাসপাতাল থেকেই পুলিশ কে জানায়, পোস্টমর্টেম করার পর মৃতদেহ নিয়ে সৎকার কোরতে রাত ১০টা বেজে যায়
কৌশিক দা জানতে চান,আচ্ছা আপনার বাবার সাথে প্রাতঃ ভ্রমনে আর কেকে যান? সপ্তর্ষি বাবু বলেন,বাবার সাথে পাশের বাড়ির মৃগেন কাকু যেতেন, ওই দিন ও সাথে তিনি ছিলেন
উনি ই বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলেনকৌশিকদা জানতে চাইলেন মৃগেন বাবুর সাথে কি দেখা করা যায়? সপ্তর্ষি বাবু জানালেন তা যায় তবে পুলিশ ওনাকে বার বার থানায় ডেকে বিব্রত করে তুলেছে কাজের কাজ কিছুই হয়েছে বলে মনেনি হয়নাময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে তীব্র বিষের ক্রিয়াই মৃত্যুর
 কারণ সারা শরীরে কোনো বড় আঘাতের চিহ্ন ছিলোনা,কেবল মাত্র গলার ডান দিকে ঘাড়ের কাছে  ছুঁচের ছিদ্রের মতন একটা দংশনের বা পতঙ্গের হুল ফোটানোর ক্ষত ছিলো

মৃগেন বাবুর কাছ থেকে শুধু জানা যায় মোটর বাইকের চালক অল্প বয়সের যুবক কারন চালানোর
ভঙ্গিমা থেকে তাই মনে হয়, এক হাতে গাড়ি চালাচ্ছিলো
,আর গাড়ির গতি কমিয়ে ধ্রুবজ্যোতি বাবুর কাছে একদম গা ঘেঁষে  এসে পড়ে ছিলো খুউব আস্তে এর পর লোকটি গাড়ি সামলে নিয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যায়, একটি কাগজের চি রকুট পড়ে থাকে, তাতে লেখা ছিলো  'শপথ- যাদব,২০০৮',  তাই প্রথমে মনে হয় হার্ট এটাক,স্ট্রোক হয়েছে কারণ মোটর বাইক এর সাথে কোন রকম ধাক্কাই লাগেনি,কোন আঘাতের প্রশ্ন ই নেই কৌশিকদা ধ্রুব জ্যোতি বাবুর বইপড়া,ডায়েরী লেখা বা কোনো কিছুর বিশেষ নেশা, ঝোঁক ছিলো কিনা জানতে চাইলে সপ্তর্ষি বাবু জানালেন বাবা ধারাবাহিক  ডায়েরী না লিখলেও কিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয় গুলো একটা খাতায় লিখে রাখতেন ছোট ছোট টিকার মতন করেকৌশিকদা ঐ খাতাটা চেয়ে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো, কিছু কিছু জায়গাথেকে কিছু নোট নিজের ডায়েরীতে লিখে রাখছিলেন, চোখ মুখ দেখে বুঝে ছিলাম গুরুত্ব পুর্ণ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন এরপর কৌশিকদা সপ্তর্ষি বাবুকে সহায়তা করার জন্য ধন্যবাদ আর প্রয়োজনে পরে আবার আসবো বলে নমস্কার জানিয়ে ফিরে এলামবাড়ি ফিরে আমি কৌশিকদাকে ঐ খাতাটায় কি পেলেন ? জানতে চাইলে কৌশিকদা জানান ঐ খাতাটায় রহস্যের চাবি কাঠি একটা মুল সুত্রের হদিস পেয়েছি 'যাদব -২০০৮' আমি জানতে চাইলাম তার মানে? উত্তরে কৌশিকদা বোললেন ওই খাতায় ধ্রুবজ্যোতি বাবু তাঁর কর্মজীবনের নানা ঘটনা নানা কেসের বিষয়ে তাঁর বিচারেরআদেশ  অভিমত সহ  লিখে রাখতেন ওই খাতায় পাতা ওল্টাতে দেখলাম ২০০৮ সালে একটা আলোড়ন জাগানো ঘটনা হুগলী জেলার একজন চটকল শ্রমিক ভিকুরাম যাদবের পুলিশ কাস্টডি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া পরে পরে এই নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কেস হলে ভিকুরামের স্ত্রী জানায় পুলিশ তাঁর স্বামীকে লকআপে খুন করেছে, নির্দিষ্ট পুলিশের নামে প্রমাণ সহ অভিযোগ দায়ের করা হয়ে  ছিলো, প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণে এই অভিযোগ আপাত প্রমাণিত হয়েছিলো কিন্তু পরবর্তী কালে স্বাক্ষীরা বিরুপ হয়েযায়, সরকারী উকিল, থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের রিপোট সব ই বিপক্ষে যায় মোকদ্দমার নথীও বদল হয়  বলে অভিযোগ ওঠে , ভিকুরামের স্ত্রীর আবেদন খারিজ হয়ে যায়,ভিকুরামের নাবালকপুত্র আদালতে আদেশ শুনে কাঁদতে থাকে মাকে জড়িয়ে ধরেবলে এই মিথ্যার একদিন জবাব দেবোই আমি শপথ কোরছি দেখো দোষীদের কেমন সাজা হয়আমি জানতে চাই এই সব জজ সাহেব ডায়েরীতে লিখেছেন? কৌশিকদা জানান না এত কথা লেখা নেই ওই কেস টার আর বিচারের আদেশের কথাটাই লেখা আছে, কিন্তুআমি কাগজে তখন সব টা পড়েছিলাম তাই মনে পড়ে গেলোআমি সরকারী উকিল, তদন্ত কারী পুলিশ অফিসারের নাম পরিচয় লিখে এনেছিলাম জানতাম এঁরাই খুন হয়েছেন মিলিয়ে দেখলাম ধারনাটা সত্যি এখন একটা খবর জানার দরকার যে পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে লক আপে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগ ছিলো তিনি কোথায়  কেমন আছেন?কৌশিকদার কাছে অভিযুক্ত পুলিশের নাম ঠিকানা থাকায় তাঁর হদিশ পেতে দেরী হয়নি ২০১১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি আগেই মারা গেছেন ভিকুরামের স্ত্রী আত্মহত্যা করেন২০০৯ সালে, তাঁর এক মাত্র ছেলে ফাগুলাল যাদব বর্তমানে কোথায় কেঊ জানেনা ,বাবা মা মারা যাবার পর এখান থেকে তার মামার বাড়ি গয়া তে চলে যায়, তার পর কোনো খোঁজ নেই ওর বাবার চটকল আজ ৫ বছর বন্ধখোলার আশাও নেইভিকুলাল যাদব পুলিশের সাথে সমাজ বিরোধীদের যোগ সাজসের বিরোধী ছিলো স্থানীয় একটাডাকাতির কেসে পুলিশের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়াতে তাকেই ২০০৭সালে মিথ্যা মামলায় বাড়ি থেকে শীতের রাতের বেলা তুলে এনে লক আপে ভরে, পর দিন থেকে তাকে পাওয়া যায়না ঘটনাটা বেশ আলোড়ন ফেলে ছিলো রাজনৈতিক জল ঘোলা হয়েছিলো তার পর আর দশ টা এই রকম ঘটনার যা পরিনতি হয়, এটাও ধামা চাপা পড়ে যায়আমি জানতে চাইলাম ধ্রুবজ্যোতি বাবুতো নিরপরাধ,ওনাকে কেন খুন হোতে হোলো?কৌশিকদা জানান এই কেসে প্রথম দিকে ধ্রুবজ্যোতি বাবু যে ভুমিকা নিয়েছিলেন তাতে দোষীরা শাস্তি পেতো কিন্তু পরবর্তী কালে হয়ত কোনো অজ্ঞাত কারণেভয়ে বা চাপে উনি ও ঠিক আগের মতন সেই দৃঢ়তা দেখাতে সক্ষম হননিএতে উনিও শত্রু হিসাবে গণ্য হনকৌশিকদা তাঁর বিশ্লেষণ তথ্য প্রমাণ ও মতামত গোপনে লালবাজারে জানান,তবে ভিকুরামের ছেলের খবরাখবর কিছুই জানান নি তাঁর কথা সব অপরাধের প্রকৃত বিচার আদালতে হয়না দোষীরা শাস্তি পায়না তাদের বিচার শাস্তি এই ভাবেই ঘটেপ্রকৃত দোষীকে যারা আড়াল কোরেছিলো তারা শাস্তি পেয়েছে,কঠিনশপথের কাছে
 



রহস্য গল্প (৩) লালদাদা জিন্দাবাদ'

লালদাদা জিন্দাবাদ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
হঠাৎ আমার বন্ধু রুপা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল জানিস কাকলি দের বাড়িতে কাল খুউব বড় চুরি হয়ে গেছে চোরে সব নিয়ে পালিয়েছে অনেক লোক ভীড় করেছে ওদের বাড়িতে,এক্ষুনি নাকি পুলিশ আসবেশুনেই আমি বললাম তাই নাকি?চল এক্ষুণি যাইরণি আর তোতনকেও ডেকে নিয়ে যাব-তার আগে লালদাদা কে খবরটা দেইপাঁচমিনিটের মধ্যে আমরা সদলবলে যখন হাজির     হলাম দেখি ততক্ষণে পুলিশ এসে গেছেসব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে নিচ্ছে বাড়ির সবার কাছ  থেকেকাকলিদের সবার মন ভীষণ খারাপ কান্না কাটি করছে কারণ জামা কাপড় বাসনপত্র, ঘড়ি, সব নিয়ে গেছে একতলা  নীচের তলা থেকেউপরের তলায় কাকলির মা,ঠাকুমা আর কাকলি ঘুমায়, তলায় বাইরের দিকের  ঘরে কাকলির ভাই রাজু আর কাকলির বাবা ঘুমিয়ে ছিলেনচোরেরা শিকল তুলে দিয়েছিলো কেউ টের পায়নি অথচ চারপাশে অনেক বাড়ি, বড় রাস্তা,সারারাত লোকজন    চলাচল করে পিছনে জঙ্গল সোজা জি,টি রোড(গ্রাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড ) অবধিচোরেরা কি ধূণার মতন পুড়িয়ে ছিলো,তাই খাবার টেবিল ছিলো ছাইতে ভরাপুলিছে সব দেখেশুনে বলল দেখি চেষ্টা করে, তবে কোন কিছু বোঝা যাচ্ছেনা যে কি করে চোর বন্ধঘরের মধ্যে ভিতরে ঢুকলো? পুলিশ চলে গেলে  হঠাৎ লালদাদা আমাদের ডাকলো, দৌড়ে  গেলাম লালদাদার কাছে,দেখি লালদাদা সিঁড়ির টালির ছাদের কাছে উঠে হাতে কি নিয়ে নেমে এলো,কাছে গিয়ে দেখি হাতে কিছু লোমলালাদাদা বলল চোর কোন বাঁদর এই চালার টালির ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে তাকে দিয়েই দরজা খুলিয়েছেআর ঐ দেখ পাশের বেলগাছটাতে এক টুকরো জামার কাপড় আটকেআছে কাপড়টা নীল ডোরাকাটা    একটা জামার ছেঁড়া অংশ লালদাদা একটু চুপ করে থেকে বলল বুঝতে পেরেছি কে চুরি করে থাকতে পারেআমার একজনকে সন্দেহ হচ্ছে,চল একটু পরীক্ষা করে দেখি সন্দেহটা কতটা সঠিক? একজনের ঘরের সামনে গিয়ে লালদাদা ডাকতে লাগলো ও রং মিস্ত্রীদাদা বাড়ি আছেন? একজন বৌ ঘরের ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন 'উনি খুব অসুস্থ, এখন ঘুমিয়ে আছেনকাল থেকে ভীষণ বমি হচ্ছে'লাল দাদা তখন জোরে জোরে বলল ,কিন্তু ওনার সাথে যে খুউব জরুরী একটা দরকার ছিলো,আমাদের স্কুল বিল্ডিং রঙ হবে ,তাই ওনার সাথে দেখা করার প্রয়োজন ছিলো,আমার সাথে গেলে উনি কাজটা পেতেন,কাজটার তাড়া আছে,আগামী কালকের মধ্যে মিস্ত্রী ঠিক করে দেবার জন্য আমাকে হেডস্যার একজন ভালো রঙ মিস্ত্রী সাথে নিয়ে যেতে বলেছেনতা উনি যখন অসুস্থ কাজটা তো ওনার পক্ষে করা সম্ভব হবেনা দেখি সুকান্ত পল্লীর রবিদাদাকে যদি পাই ওনাকে নিয়েই যাব হঠাৎ দেখি তক্ষুনি বাড়ির ভিতর থেকে একজন লোক বেড়িয়ে এসে বলল ,আমি এখন ঠিক আছি কালকে স্কুলে যেতে পারবোলালদাদা আমার হাতটা চেপে ধরে চাপ দিতে বুঝলাম, তাকিয়ে দেখি লোকটার গায়ে নীল ডোরা কাটা শার্ট পিছনে শার্ট টার কিছুটা অংশ ছেঁড়া রয়েছে, কাপড়ের টুকরোটা ওই অংশের নেইব্যাস প্রমাণ পেয়ে গেলাম-এবার লোকটার সাথে কথাবলার আছিলায় লোকটার ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলামঢুকে ই দেখলাম ঘরের কোণে শিকল দিয়ে বাঁধা একটা ছোট বাঁদর একটা এলুমিনিয়ামের বাটিতে ছোলা আর বাদাম বাঁদরটা খাচ্ছেলালদাদা ওই রং মিস্ত্রীকে কাল সকালে স্কুলে যাবার সময় ডেকে নিয়ে যাবে বলে আমরা সকলে বেড়িয়ে এলামআরকি আমরা কাকলির  বাড়িতে গিয়েওর বাবাকে সব জানিয়ে দিয়ে এলাম  কাকু তক্ষুনি থানায় গিয়ে সব বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দিয়ে এলেন পুলিস এসে মাল সমেত রং মিস্ত্রীকে ধরে নিয়ে এলোআমরা লালদাদাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম'তুই একবারে সব বুঝে ধরলি কি করে যে ঐ চুরি করতে পারে?লালদাদা বলল এতো খুউব সোজা-ঐ বন্ধ ঘরে বাইরে থেকে যখন বড় কোন মানুষের ঢোকা সম্ভব নয় তখন দুটি রাস্তা, এক আগে থেকে বাড়ির মধ্যে কাউকে লুকিয়ে থাকতে হবে নয়ত কোন ছোট ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ট্রেণীং দেওয়া বানর জাতীয় জন্তুকে ঢুকিয়ে দরজা খুলিয়ে নেওয়া তবে যদি শিকল বা খিল দেওয়া দরজা হয় তবেই সম্ভব কাকলি দের বাড়িতে দেখলাম সিঁড়ির ওপর টালীর চাল, সেখানে ঐ চালের ফাঁক দিয়ে ছোট জন্তু ঢোকানো সম্ভবএটা আগে শুনেছিলাম, তাছাড়া আমাদের বাড়ির জানলার গরাদের ছোট ফাঁক দিয়ে হনুমানের বাচ্চা ঢুকে  রান্না ঘর থেকে প্রায় ই খাবার দাবার এটা ওটা সেটা নিয়ে পালিয়ে যায়হনুমান কে তাড়া করে দেখেছি দরজার শিকল খুলে পালিয়ে যেতেতাওতো এই হনুমানগুলোর কোনো ট্রেণীং নেইএবার ছাদের পাশেই লাগোয়া বেলগাছে ছেঁড়া জামার টুকরোটা দেখেই চিনতে পেরেছিলাম ওটা ঐ রঙ মিস্ত্রীর ,ওর হাত টানের স্বভাবের কথা আগে শুনেছিলাম ক দিন আগে  কাকলিদের বাড়িতে রঙ হয়েছে, তখন ওই রঙ মিস্ত্রীকে এই জামাটা পরে কাজ করতে দেখেছি এখানে ওই রং মিস্ত্রীর যে ছোট পোষ মানানো একটা বাঁদর ছানা আছে সবাই জানেএবার রাতে চুরি  করে জঙ্গল পথে সোজা জি,টি রোডে পৌঁছানো খুউব সোজাঘরের সব আগেথেকে জানা না থাকলে কখনো চোর এইভাবে চুরি করতে পারেনাসে নিশ্চয় এবাড়িতে আগে এসেছে সব কিছু জানেআমি আগেই জেনে নিয়েছিলাম রাতে শোবার আগে সারা বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ আছে কিনা, প্রতিটি ঘর ভালো মতন দেখা ভেতরে কেউ লুকিয়ে আছে কিনা এটা দেখা হয়এবার আমার অঙ্ক মিলে গেলো
আমরা সমস্বরে চিৎকার করে বললাম লালদাদা জিন্দাবাদ

রহস্য গল্প (২) কিষাণগঞ্জের বাগানবাড়ির রহস্য'













অনেকদিন পর একটা বড়

রহস্য গল্প পোস্ট কোরছি ,৬ কিস্তিতে লেখাটা সমাপ্য
কিষাণগঞ্জের বাগানবাড়ির রহস্য
' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল নটা বাজতে দশ , সদর দরজার কলিং বেল টা বেজে উঠতেই খবরের কাগজ পড়ার থেকে মুখটা তুলে দরজার দিকে তাকালো কৌশিক,ততক্ষণে আমি অর্ক মানে কৌশিক রায়ের মাসতুতো ভাই সদর দরজায় হাজির, কৌশিকদার ইশারায় অনুমতি পাওয়ায়,দরজার ছিটকানিটা খুলে দরজার পাল্লা খুলতেই দেখি এক পৌঢ় ভদ্রলোক বয়স ৪৫/৫০ এর কাছা কাছি হবে,পরনে  হাফ হাতা শার্ট আর ধুতি, জোড় হাতে নমস্কার জানিয়ে জিজ্ঞাসা কোরলেন আচ্ছা এটা কি প্রাইভেট ডিটেক্টিভ মিস্টার কৌশিক রায়ের আবাস?আমি প্রতি নমস্কার জানিয়ে বোল নাম হ্যাঁ আপনি ঠিকই ধরেছেন উনি এখনেই থাকেনভদ্রলোক অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানতে চাইলেন এখন কৌশিক বাবুর সাথে দেখা হবে কি? হ্যাঁ নিশ্চয় হবে ভিতরে আসুন বলে ভদ্রলোক কে ভিতরে এনে বসালাম ,ততক্ষনে কৌশিক দা ভিতরে গিয়ে গায়ে পাঞ্জাবী গলিয়ে এসেছেন, আমি ভদ্রলোক টিকে বোললাম কোশিক দাকে দেখিয়ে ইনি হলেন কৌশিক রায়,যাকে আপনি চাইছেন ভদ্রলোক কৌশিক দাকে হাতজোর করে নমস্কার জানিয়ে বোললেন 'নমস্কার আমি ভুপেন্দ্র নাথ দত্ত  চন্দননগরে থাকি আমার বাজারে  কাপড়ের দোকান আছে অনেক দিনের ব্যবসামোটামুটি  ব্যাবসায় ভালো ই চলে যায় আমার এমনি কোন সমস্যা নেই কিন্তু একটা অন্য ব্যাপার, আমার একটি উত্তর দিনাজপুরে বিহারের কিষাণগঞ্জের লাগোয়া জাতীয় সড়ক যেটা ডালখোলা থেকে শিলিগুড়ি গেছে পাঁজিপাড়ার মধ্যে ওটা কিষাণ গঞ্জ ও বলা চলে আমার একটা বহু দিনের পুরানো বাগান বাড়ি আছে, ঠিক মত রক্ষণা বেক্ষণের অভাবে খুউব ই ভগ্ন দশা স্থানীয় একজন  দেখা শোনা করে  দুটি ঘর একটি রান্না ঘর বাথরুম পায়খানা সবই ই ছিলো এখন ভাঙ্গাচোরা ভাঙ্গাআমি বছর তিনেক আগে পুজার সময় দুচারদিন থাকবো বলে গেছিলাম কিন্তু ঘর দোরের যা অবস্থা তায় ইলেক্ট্রিক নেই রাতে হাজার রকম পোকা মাকড়,জন্তু জানোয়ার, পিছনে জঙ্গল রাস্তার ধারে কোনো লোকজনের ঘর বাড়ি তেমন নেই , দোকান পাট সব সন্ধ্যার পর পর ই বন্ধ হয়ে যায় জায়গাটা একটু নির্জনএকটা ঘরেচৌকি পাতা আছে শোবার জন্য অন্য ঘরে ঢাঁই করা ভাঙ্গা পুরানো আসবাব পত্র এই টেবিল,চেয়ার, শেলফ আলমারী বাস্ক তোরঙ্গ এইসব ঘরে পা দেওয়ার উপায় নেই রান্না ঘরটা বন্ধ, যাওয়ার পথ আগাছায় ঢাকাবাইরে দোকানের থেকে রাতে খাওয়ার জন্য রূটি আর তরকারী আনাই ছিলো খেয়ে বেশী রাত না করে ৯টা নাগাদ শুয়ে পড়ে ছিলাম হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো একটা গোঙ্গানী আওয়াজে, পাশের ঘর থেকে আসছে চাপা আওয়াজ, আমি কান খাড়া করে বিছানায় ঊঠে বোসলাম, এরপর ফুঁপিয়ে কান্না,আমার ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাবার জোগার, ভুতের ভয় নয় কোনো সমাজ বিরোধীদের কাজ নাকি?কাউকে ধরে এনে আটকে রেখেছে? আমি টর্চ নিয়ে সাবধানে এগুলাম হাতে বড় একটা লোহার রড নিলাম আগেই জোগার করে রেখে ছিলাম পাশের ঘরের দরজার কাছে পৌঁছানোর আগেই শুরু হোলো অট্টহাসি, আমি টর্চএর আলো ফেললাম ঘরের মধ্যে সর সর ক রে আওয়াজ করে কি একটা ভামের মতন জন্তু চলে গেলোঘরে অগোছালো ভাঙ্গা আসবাব ছাড়া কিছু দেখতে পেলাম না চার পাশে টর্চেরআলোয় দেখে আবার পাশের ঘরে চৌকিতে শুলাম ব্যাস আবার শুরু হোলো এবার চিৎকার মেয়েলী কন্ঠে আমায় মেরো না পায়ে পড়ি জাতীয়, ঠিক বাঙলানয় আবার হিন্দী ও নয়, বোঝা যাচ্ছে খুউব অসুবিধা হচ্ছে না এবার চুপি চুপি এগিয়ে সবে দরজার কাছে গেছি  হঠাৎ পিছন থেকে দুটো ঠাণ্ডা বরফের মতো হাত আমার চোখ মুখ চেপে ধরে ওই ঘরে ঘাড় গুঁজরেঠেলে ঢুকিয়ে দিলো টর্চ কোথায় ছিটকে গেলো জানিনাআমি ঘরের মধ্যে পড়ে যেতেই  মনে হোলো দোয়াল ভেদ কোরে একটা সাদা চাদরে মোড়া দেহ এগিয়ে আসছে আমার দিকে, তীব্র চোখ ধাঁধানো আলো চোখে পড়ায় সব অন্ধকার মাথা ঝিম ঝিম কোরতে লাগলো মনে হোলো অন্ধ হয়ে যাচ্ছি, কানের কাছে তালা লাগানোর মতন তীক্ষ্ণ কিন্তু জোরে নয় শিষের আওয়াজ,শরীর টা ক্রমশ অবসন্ন হয়ে আসতে লাগলো ঘরে একটা ঝাঁজালো গন্ধে,একটাধোঁয়া নাকে মুখে ঢুকতে লেগেছে, কাশি হোলো বার কয়েক এরপর ঘরের মাঝে নানান ভয়ঙ্কর দৃশ্য, বিভৎস জন্তু জানোয়ারের মুখ এ দেওয়ালে ও দেওয়ালে ভেসে উঠতে লাগলো এর মাঝে  ছিটকে আমার গায় হাতে টাটকা রক্ত এসে লাগলো অথচ ঘরে কেউ নেই, আধ ঘণ্টা হবে আমি জ্ঞান হারাইআমারজ্ঞানফেরে পরদিন সকালে আমাদের কেয়ার টেকার রাম বিলাস এসে চোখে মুখে জলের ঝাপ্টা দেওয়ায়, আমি পাশের ঘরের চৌকাঠে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলামআমাকে রাম বিলাস বোললো বাবু ইসি লিয়ে আপকো হিঁয়া রাতমে রহনে  মানা কিয়া ,বহুত ভুতপিরেত হ্যায়, এ মকান ভুত পিরেত কে মকান এর পর রাম বিলাস যা বোললো রাতে এখানে নানা রকম আওয়াজ শোনা যায়, কালো কালো ছায়ার মতোন ভুত ঘোরা ঘুরি করে ঘরে বাগানে, আলোতে সব মিলিয়ে যায় সবাই এই বাড়িকে এড়িয়ে চলে এটা সবাই জানে ভুতের বাড়িবাড়িটা বিক্রী করে দেবার চেষ্টা করেছিলাম কেঊ দাম দিতে চায়না, ভেবেছিলাম থাক পরে দেখা যাবে গত মাসে আমার এক ভাগ্নে আমাকে এসে খুউব অনুরোধ কোরলো বাড়িটা কিছু দিনের জন্য যদি ওকে  থাকতে দি ও ওখানে থেকে বিহার থেকে ঘি এনে স্টক কোরে এখানে সাপ্লাই কোরবে, এছাড়া ওখানের থেকে , বাংলা দেশের মশারী, তাঁতের কাপড়,নেপালের নানা জিনিস এনে এখানে ভালো দামে বিক্রী হবে ,পুর্বে বাংলাদেশ, উত্তরে শিলিগুড়ি পাশে নেপাল তাই দারুন ব্যবসার জায়গা আমি সাগ্রহে রাজী হলাম যদি বাড়িটার গতি হয়কিন্তু বরাত ভাগ্নে তিন রাত্রি ও কাটাতে পারেনি ওকেতো তুলেই নিয়ে যাচ্ছিলো ওর জ্ঞান ছিলোনা পাঁচিলের ধারে পড়ে ছিলো, রাম বিলাস ই ওকে উদ্ধার করে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে ভাগ্নে নাক কান মুলেছে আর অ মুখো হবেনা কোনোদিনব্যবসায়ী
                                                                                                         (ক্রমশ-২)
পর্ব-২
[ পুর্ব সুত্র ঃ চন্দননগরের কাপড় ব্যবসায়ী ভুপেন্দ্র নাথ দত্ত সকালে প্রাইভেট ডিটেক্টিভ কৌশিক রায়েরবাড়িতে এসে জানালেন যে তাঁর একটি পুরাতন বাগানবাড়ি উত্তর দিনাজ পুর আর বিহারের কিষাণগঞ্জএর লাগোয়া পাঁজিপাড়া অঞ্চলে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে
উনি বাড়িটি বিক্রয় করিতে ইচ্ছুক কিন্তু বাড়িটিতে  অদ্ভুত সব ভুতুরে কাণ্ড, উদ্ভট কাণ্ড ঘটায়
ভুতেরবাড়ি নামে অপবাদ রটেছে,তিনি নিজে ও বছর তিনেক আগে গিয়ে দেখে এসেছেন,
এক রাতের বেশী থাকতে পারেন নি
ওনার ভাগ্নে কিছুদিন আগে গিয়ে তিন দিনের বেশী থাকতে পারেনি প্রান নিয়ে ফিরেছে ওমুখো হবেনা বাড়িটি একজন কেয়ার টেকার দেখাশুনা করে]
কৌশিক রায় সব শুনে বললো, এই কেসে আমার কি করনীয় ? ভুতুড়ে কাণ্ড যখন তখন ভালো ওঝার কাছে যান
এই শুনে ভুপেন্দ্র বাবু জোড় হাত করে বোললেন ও কথা বোলবেননা স্যার,এ যুগে মানুষ চাঁদে পৌঁচেছে, মঙ্গলে যাচ্ছে তখন ভুতের কাণ্ড অসম্ভব , এর পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য  আছে যেটা আপনি ই পারেন ভেদ কোরতে, থানা পুলিশ কোরে ছি কোনো লাভ হয়নি সবাই বিষয় টা মজা কোরে উড়িয়ে দিয়েছে  বোলেছে ফাঁকা বাড়িতে নেশা করে ভুত দেখেছি
কৌশিক  সব শুনে ভুপেন্দ্র বাবুকে বোললো আমি একবার আপনার ভাগ্নের সাথে সাক্ষাতে কথা বোলতে চাই
, তারপর ঠিক কোরবো কি করনীয় ওখানে যেতে হোলে কবে যাবো? আপনার ভাগ্নে কবে এখানে কখন আস তে পারবে? আমায় ফোন করে জানিয়ে দেবেন এই নিন আমার পরিচয় পত্র,এই বলে টেবিল থেকে বাক্স থেকে বার করে একটা ভিজিটিং কার্ড ভুপেন্দ্র বাবুর হাতে তুলে দিলো ভুপেন্দ্রবাবু হাতে কার্ডটা নিতে নিতে বোললেন কাল সকালেই ৯টায় আমার ভাগ্নেকে নিয়ে আমি নিজেই চলে আসবো,আপনি অনুগ্রহ করে দেখবেন স্যার যাতে আমি উদ্ধার হই, আমি ঐ বাড়ি বিক্রী করে গঙ্গাস্নান করে মায়ের পুজা দিয়ে আসবোকৌশিক হেসে বোললো দেখি যদি মানুষ ভুতের কাণ্ড হয় তবেই আমি ছাড়াতে পারবো নইলেতো ওঝাই লাগবে
ভুপেন্দ্র বাবু চলে যাবার পর আমি কৌশিকদাকে জিজ্ঞাসা কোরলাম
, কি বুঝছো? কৌশিকদাবোললো   কি আর বুঝবো ? আগে ভাগ্নে বাবু আসুন একটু শুনি জায়গাটা যে সুবিধার নয় বোঝাই যাচ্ছে চার পাশেই অবৈধ কারবারের কেন্দ্র ,রাজ্য ও রাষ্ট্রের সীমান্ত এলাকা যত রকম অনৈতিক কাজকারবার চলে এইসব এলাকায়এই ভুতেরা আন্তর্জাতীক অপরাধী হওয়া বিচিত্র নয়,দেখি বাবা জীবনদের
পর দিন সকাল ঠিক ন' টায় ভুপেন্দ্রবাবু সাথে ভাগ্নেকে নিয়ে হাজির হলেন
ভাগ্নের বয়স ৩০শের মধ্যে ভালো চেহারা সুস্বাস্থের অধিকারী দেখে মনে হয়, নাম অলকেশ মিত্রবেশ চটপটে ওর সাথে কথা বলে যা জানা গেলো তা সংক্ষেপে এই রকমগত মাসের ৭ তারিখে বেলা ৩টা নাগাদ বিহারের কিষাণগঞ্জ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের জাতীয় সড়ক যেটা ডালখোলা থেকে শিলিগুড়ির দিকে গেছে NH-31 পরস্পর লাগোয়া সেই খানেই ভুপেন্দ্রবাবুর পোড়ো বাগান বাড়ি অবহেলা অযত্নে আগাছা গাছপালা জঙ্গলে ঢাকা জাতীয় সড়কের ধারেই, তবে রাস্তার ধারে দখল করে মোটর সাইকেল, ,গাড়ি সারানোর দোকান ,চায়ের ,পুরী তেলেভাজার দোকান   বাগান বাড়ি প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে পাঁচিলের চার পাশে বড় বড় গাছ পালা, না জানা থাকলে বোঝা শক্ত ওখানে পাঁচিলঘেরা কোনো বাড়ি আছেআগে থেকে খবর দেওয়া থাকায় রাম বিলাস বাসস্ট্যাণ্ড থেকে অলকেশকে নিয়ে আসে ওই বাগান বাড়িতে চৌকিটা ঝেড়ে মুছে সামান্য সাফ করা ঘরে ঝুল, মাকড়সার জাল, চামচিকে, বাদুর সব ই আছে, রামবিলাসের কথায় কি কোরবেন বাবু এই  ভুত পিরেতের বাড়িতে কেঊ কাক পক্ষীও আস্তে চায় না,সবার ই তো প্রাণের ভয় আছেঅলকেশ কে দুপুরের খাবার ১২টায় আর রাতের খাবার সন্ধ্যার ঠিক আগে দিয়ে যাবে, সকাল আর বিকালের চা, বিস্কুট ঐ রাস্তার ধারের দোকানে মিলবে ঘরে মোটা বাঁশের লাঠি, একটা টাঙ্গি , হ্যারিকেন খাবার জলের গোটা চারেক বোতল ,দেশ্লাই ইত্যাদি গুছিয়ে রেখেছিলো সন্ধ্যার খাবার পৌঁছাতে এসে বার বার সতর্ক করে দিয়ে যায় , চার পাশে কোন লোক বসতি নেই তাই রাত বিরেতে যেন ভুলেও না বের হই প্রথম দিন  ক্লান্ত ছিলাম রাত ন' টার মধ্যেই  শুয়ে পড়ে কিন্তু রাত ১২টা থেকে নানা রকম আওয়াজ ভারী জিনিস পত্র টানা টানি, বাক্স প্যাঁটরা তোলা পাড়া, হাতুড়ি পেটানো এইসব, যেই উঠে বোসতে যাবে, মুখের উপর ঠাণ্ডা বরফের মত হাত চেপে ধরলো, তারপর মনে নেইঘুম ভেঙ্গেছিলো বেলা করে, রাতের ঘটনা কাঊকে কিছু বলেনি সকালে ওই বারি থেকে বেরূতে দেখে গ্যারেজের লোক,চায়ের   দোকানের মালিক ও অন্য কয়েক জন আগ্রহ ভরে জানতে চেয়ে ছিলো, কিজন্য এসেছি ক'দিন থাকবো? বাড়ির খদ্দের পেয়েছি কিনা এই সব প্রশ্ন গুলোর ঊত্তর কোন রকমে দিয়ে ঘরে এসে বোসতেই গোটা তিনেক স্থানীয়  মস্তান গোছের লোক এসে জিজ্ঞাসা বাদ শুরু কোরলো বাড়িটা নিয়ে আমরা কি ভাবছি ? কত টাকা পেলে বেচবো?দলিল কাগজ সব ঠিক আছে কি না? ওখানে বড় বিজনেজ শপিং সেন্টার করার পরিকল্পনা, তাই চটপট যেন সিধান্ত নিয়ে বেচে দেই, দু দিন বাদে আবার আসবো বলে চলে গেলো
                                                                                                           ক্রমশঃ-৩
পর্ব-৩ [পুর্ব সুত্র ঃ চন্দননগরের কাপড় ব্যবসায়ী ভুপেন্দ্র নাথ দত্ত  প্রাইভেট ডিটেক্টিভ কৌশিক রায়কে জানালেন যে তাঁর একটি পুরাতন বাগানবাড়ি উত্তর দিনাজ পুর আর বিহারের কিষাণগঞ্জএর লাগোয়া পাঁজিপাড়া অঞ্চলে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে বাড়িটি বিক্রয় করিতে ইচ্ছুক কিন্তু বাড়িটিতে  অদ্ভুত সব ভুতুরে কাণ্ড, উদ্ভট কাণ্ড ঘটায় ভুতেরবাড়ি নামে অপবাদ রটেছে, তিনি ও তাঁর ভাগ্নে দেখে এসেছেন,কিন্তুকেঊ তিন রাত্রি ও কাটাতে পারেনি
কৌশিক রায় নিজে ভাগ্নের সাথে কথা বোলতে চাওয়ায় চটপটে ৩০/৩৫ বছরের ঐ   ভাগ্নের মুখ থেকে জানলেন, ঘন জঙ্গলে ঘেরা পুরানো ভাঙ্গা বাড়ি,চার পাশে কোন লোক বসতি নেই,  রাতে নানা রকম বিচিত্র আওয়াজ,স্থানীয় মস্তান এসে জানতে চেয়েগেছে বাড়িটি বিক্রী হবে কিনা? ওখানে সপিং মল হবে  ]
ওই দিন রাত্রে ঘটলো প্রথমে পাশের ঘরে সেই ভৌতিক আলো শব্দ হাসি তার পর এখানের সব বন্ধ রান্না ঘর আর পিছনের দিকে ধুপ ধাপ ভারী মাল পত্র ফেলার শব্দ কালো কালো কতক গুলো ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে
আমি হাত বাড়িয়ে টর্চ খুঁজতে গিয়ে দেখি আমি বারান্দায় মেঝেতে শুয়ে আছি মাথা ভার তুলতে পারছিনা,হাত দুটো ভারী জিনিস দিয়ে চাপা দেওয়া পাদুটো ও তাই
 আমি আবার আচ্ছন্ন মতন হয়ে পড়ি

সকালে রোদ এসে মুখে পড়ায় স্মবিৎ ফিরে আসে দেখি আমি বারান্দায় চিৎ হয়ে শুয়ে আমার দুহাত মাথার দুপাশে ছড়ানো পাদুটো সোজা
, পায়ের পাশে একটা ভাঙ্গা কাঠের বেঞ্চ আর
 হাতের দুপাশে দুটোভাঙ্গা চেয়ার  মনে হয় পাশের ঘর থেকে আনা হয়েছে কাল রাতেও
 শোবার আগে দেখিনি
আমি কোন রকমে উঠে আস্তে আস্তে ঘরে চৌকিতে গিয়ে বোসলাম, মাথাটা ভার ভার লাগছেমনে মনে ঠিক কোরলাম আজ রাতে ব্যাপারটার শেষ দেখে ছাড়বো তারপর না হয় রায়গঞ্জে আমার কলেজের বন্ধু তাপস শীলের বাড়ি ও সরকারী সেচদপ্তরে কাজ করে ওর সাহার্য্য নেওয়া যাবে আজ কে রাতে ঘুমাবোনাসন্ধ্যা সবে হয়েছে চারপাশে অন্ধকার হয়েছে এমন সময় দেখি বাইরের গেট খোলার আওয়াজ জনা চারেক লোক আমার ঘরের
 দিকেই আসছে
, কাছে আস্তে ওদের দিকে চেয়ে আমার ভয়ে প্রাণ জানি উড়ে গেলো,ওরা
 যে এক একটি দাগী আসামী দেখলেই বোঝা যায়
,যেমন গুণ্ডার মতোন চেহারা তেমনিপোষাকআষাক, এসে সোজা আমাকে হুমকি'  বলি কি কোরতে এই ভুতের বাসায়
এসেছো চাঁদ মতলবটা কি
? এমনি তো কেঊ প্রাণ হারাতে এখানে এসে থাকেনা ? রাত্রিতে
 কেঊ বিগত দশ বছরে এখানে কাটাই নি 
কোনো বদ মতলব না থাকলে সুখে থাকতে ভুতে কিলোতে কেঊ আসে? জঙ্গী ?, আতঙ্কবাদী  ?,লাস এখানে পড়ে থাকবে কেঊ টের পাবেনা
 বলে দিলুম
, ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ো, ভুতের বাড়ি যেমন আছে থাক , কুমতলবে
এখানে আস্তানা গেড়ো না
, আমাদের এলাকায় কোনো অশান্তি নেই ,এই তোমার জন্য কিছু
 হলে ছাড়বোনা জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবো
আর তোমরা যদি এই বাড়ির মালিক হও তা হলে
 জেনে রাখো এ বাড়ি যেমন আছে তেমন ই থাকবে বিক্রী বাট্টা চোলবেনা
, ভুতেদেরতো
 থাকার একটা আস্তানা চাই? সব কেড়ে নিলে চোলবে কেনো ?তখন ওরা লোকালয়ে
 ঝামেলা কোরবে
, বস্তিতে মড়ক লাগবে,একে ওকে ভুতে ধোরবে ,ঘাড় মটকাবে
তাই বলি
 ভালো চাও তো বাপু আজ রাতে না হলে কাল ভোরে এখান থেকে কেটে পড় বাপু
,কাল
বেলায় যদি তোমায় এখানে দেখি তাহলে ভুতে নয় আমরা ই তোমায় নিকেষ করে দেবো
,
 মনে থাকে যেন, এই বলে লোক গুলো
যেমন হুড়মুড়িয়ে এসেছিলো তেমন ই দুড়দাড় করে নিমেষে বেড়িয়ে চলে গেলো
আমি
ভয়ে আতঙ্কে হতভম্ব হয়ে গেলাম
তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া খেয়ে নিলাম, এবার দেখলাম চোখের পাতা আপনি ভারি ভারি হয়ে আসছে, ঘুমে ঢুলে পড়ে যাচ্ছি, চৌকিতে শুয়ে পড়তে
 বাধ্য হলাম
মাঝ রাতে মনে হোলো আমায় কয়েকজন মিলে চ্যাঙদোলা করে ঘর থেকে বার করে নিয়ে যাচ্ছেআমি চোখ চাইবার চেষ্টা কোরলাম, বুঝলাম চোখ বাঁধা,মুখটাও বাঁধা আমাকে নিয়ে গিয়ে কোথাও নামিয়ে শোয়ালো মনেহয় মাটিতে ঘাস পাতার উপর তারপর মনে নেই আবার অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিলাম , যখন জ্ঞান ফিরলো দেখি রামবিলাস আরো অনেক লোক আমাকে ঘিরে, মাথায় চোখে মুখে জল দিয়েছে আমি পাঁচিলের পাশে বাগানে শুয়ে আছি রামবিলাস বারবার আমায় ওখান থেকে চলে আসার জন্য বোললো, গ্রামের লোক ক্ষেপে গেলে মুস্কিল হবে ওরা এক রোখা মানুষআমিতাই ঐ দিন ই এখানে ফিরে আসার গাড়ি ধরে চলে আসি যব্বর শিক্ষা হয়েছে, আরও মুখো হচ্ছিনা, এই পর্য্যন্ত বলে অলকেশ বাবু থামলে কৌশিকদা জানতে চাইলোআচ্ছা রামবিলাস কত দূরে থাকে? ভুপেন্দ্র বাবু বোললেন ১/২ কিলো মিটার দুরের বস্তিতে থাকে ওরা বরাবরের বংশানুক্রমিক ভাবেই ওই বাড়ির কেয়ার টেকার, ৩০ বছর আগে ভুপেন্দ্রবাবুর বাবা কিষাণগঞ্জে রেলের চাকুরী সুত্রে ছিলেন তখন সস্তায় এই বাগান বাড়িটি কেনেন,
বছর পাঁচেক ছিলেন এই বাড়িতে তারপর এই হাওড়াতে বদলী হয়ে এসে রিটায়ার করেন

এরপর বার দুয়েক ঐ বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দু দশ দিন কাটিয়ে এসেছেন তা বাবা আজ মারা গেছেন বাইশ বছর এরপর আর ওখানে গিয়ে তেমন থাকা হয়নি, রাম বিলাস কে লোকমাফত বছরে একটা টাকা দেওয়া হয় দেখা শোনা আর ওর পারিশ্রমিক বাবদবিগত ১০/১২ বছর যাবার ফুরসৎ মেলেনি বছর তিনেক আগে আমি একদিনের জন্য যা গেছিলাম আর এই মাস খানেক আগে ভাগ্নে ব্যাসআমাদের অভিজ্ঞতা তো শুনলেন এবার আপনি এই রহস্য সমাধান করে
বাঁচান
কৌশিক রায় কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বোললেন ঠিক আছে আজ সোমবার আগামী
 বুধবার আমি আর আমার ভাইপো যে আমার সহযোগী বোলতে পারেন ওই বাগান বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছি আসা করি আগামী রবিবারের মধ্যে একটা কিছু ফলাফল আশা কোরতে
 পারেন
আপনি রামবিলাস কে শুধু বাড়িটা পরিস্কার করে রাখতে বোলবেন আর বাড়ির
 চাবিটা বুঝিয়ে দিয়ে যেতে বোলবেন
, আমাদের পরিচয় আমি আপনার শ্বশুর বাড়ির দিকের আত্মীয় গল্পের বই পত্র লিখি এবার পুজোয় ভুতের গল্প লিখছি তাই কয়েকটা দিন সত্যিকারের ভুতের বাড়িতে থেকে লিখতে চাই সাথে খাবার দাবার আনারজন্য সবসময় কাছে থাকার
 জন্য ভাইপো থাকছে
ভুলেও নামধাম পরিচয় কোথাও কাঊকে জানানো চোলবেনা
আমরা নিজেরা ঠিক পৌঁছে যাবো অই বাগান বাড়িতে
রাম বিলাস যেন ঐখানেই অপেক্ষা
করে, বুধবার বিকাল ৪টায়
ভুপেন্দ্র বাবুরা চলে যেতে আমিবোল্লাম কৌশিকদা এবার বলো কি ব্যাপার তোমার কি মনে হচ্ছে? কৌশিকদা গম্ভীর ভাবে বোল্লেন বিষয় টা গণ্ডোগোলাস মানে
 কেস জণ্ডিস , মনে হচ্ছে  সরষেতেই ভুত, খুউব সাবধান জায়গাটা মোটেই নিরাপদ নয়, আমাকে কালকের মধ্যেই কতোকগুলি দরকারি কাজ সারতে হবে, অনেক টুকি টাকি মাল জোগার কোরতে হবে সব পাবো কিনা জানি না? বেশ কিছু জায়গায় খবরা খবর দেওয়ার আছে খবর নেওয়ার আছে চটপট সারতে হবে

                                                                                                          
ক্রমশঃ-

পর্ব-৪ [পুর্ব সুত্র ঃ চন্দননগরের কাপড় ব্যবসায়ী ভুপেন্দ্র নাথ দত্ত  প্রাইভেট ডিটেক্টিভ কৌশিক রায়কে জানালেন যে তাঁর একটি পুরাতন বাগানবাড়ি উত্তর দিনাজ পুর আর বিহারের কিষাণগঞ্জএর লাগোয়া পাঁজিপাড়া অঞ্চলে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে বাড়িটি বিক্রয় করিতে ইচ্ছুক কিন্তু বাড়িটিতে  অদ্ভুত সব ভুতুরে কাণ্ড, উদ্ভট কাণ্ড ঘটায় ভুতেরবাড়ি নামে অপবাদ রটেছে, তিনি ও তাঁর ভাগ্নে দেখে এসেছেন,কিন্তুকেঊ তিন রাত্রি ও কাটাতে পারেনি
একদল মস্তান এসে বাড়িবিক্রীর প্রস্তাব দেয় সপিং মল কোরবে বলে আরেক দল এসে হুমকি দেয় চটপট বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার জন্য রাতে কারা তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞান অবস্থায় উধার করে কেয়ার টেকার , সব শুনে কৌশিক রায় ঐ
বাগান বাড়িতে যাওয়া মনস্থ করেন
]
বুধবার বিকাল ৪টার মধ্যেই আমি আর কৌশিকদা বিহারের কিষাণগঞ্জের আর ঊত্তর
 দিনাজপুরের
, ইসলামপুর মহকুমার গোয়ালপোখর থানার সীমানা বরাবর জাতীয় সড়কের
ধারে একটু ভিতরে  গ্যারেজ
,দোকান গাছপালার আড়ালে পোড়ো বাগান বাড়িতে পৌঁছে
গেলাম
, রামবিলাস আগেই হাজির তাই কোনো অসুবিধা হোলো না, আমাদের খাবার
 দাবারের ব্যবস্থা কোরতে হবেনা বলাই ছিলো তাই আমাদের ঘর আর চাবি বুঝিয়ে দিয়ে রাম বিলাস চলেগেলো যাবার সময় যথারীতি ভুতের ব্যাপারে সতর্ককরে দিয়ে গেলো
, ঘরের বাইরে যেন সন্ধ্যার পর না বের হই
কোন শব্দ বা আলো দেখলেওযেন ঘর থেকে বারান্দাতেও না আসি জানালাতে সব লোহার জাল দেওয়াই আছে বাইরের কোন জন্তু জানোয়ার ঘরে ঢুকতে পারবে না নিরাপত্তার জন্য বাঁশের লাঠি, টাঙ্গী, আছে রাতে বাথ্রুমের একান্ত প্রয়োজনে ঘরের লাগোয়া দড়মা ঘিরে একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে সাম্প্রতিক অস্থায়ী ব্যবস্থা কাল সকালে খোঁজ নিতে আসবে এই বলে রাম বিলাস চলে গেলো তখন ও পুরো অন্ধকার নামেনি আমি আর কৌশিকদা চট করেদুটো ঘর আর চার পাশটা দেখে নিলাম , আমাদের ঘরে বাইরে থেকে ঢোকার কোনো পথ ফাঁক ফোকর আছে কিনা? ভালও করে দেখে নিলাম ঘরের চৌকিটা দেওয়ালের  জানলার পাশ থেকে টেনেঅন্য দিকের দেওয়ালের কাছে নিয়ে গেলামকৌশিকদা আমাকে বোললো কটা দিন কপালে দুর্ভোগ, কষ্টআছে রাতে জানলাও খোলা যাবেনা কৌশিক দা ব্যাগ থেকে দু তিনটে ছোটো দেশ্লাই বাক্সের মতোন আর একটামোটা কালির কলম বার করে আবছা অন্ধকারেই পাশের ঘরে গিয়ে  ভাঙ্গা আসবাব গুলোরমধ্যে লুকিয়ে রেখে এলো আমি আর কৌশিকদা বাগান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সড়ক পথে কিছুটা গিয়ে একটা রাস্তার পাশে ধাবায় গিয়ে রাতের রুটি তড়কা নিয়ে চলে এলাম এই ফাঁকে কৌশিকদা কথায় কথায়জেনে নিলো, এই বাগান বাড়ির সামনে যে মোটর মেরামতীর গ্যারেজ, আর চায়ের দোকান ওটা রাম বিলাসের দুই ছেলের, রাতে গ্যারেজে এক ছেলে থাকলেও সন্ধ্যার পর গ্যারেজ বন্ধ করে বাড়ি যায় রাতে শুতে আসে, এই গ্যারেজে রাতে ওদের একটা ম্যাটাডোর গাড়ি ভাড়ায় খাটে সেটা ভাড়া না থাকলে সেটা থাকে ভুতের বাড়ির চার পাশেই জঙ্গল পিছনের জঙ্গল একদম গভীর সেই কিষাণগঞ্জের মহানদীআর পুর্ণিয়া যাবার সড়ক অব্ধি, হিংস্র জন্তু জানোয়ার ও আছেরাতে কেউ এদিকে আসেনাদিনেও খুউব কম লোকই আসেকৌশিক দা আর বেশী কথা না বোলে ,আমরা দুদিনের জন্য বিশেষ বিপদে পড়ে এসেছি ফাঁকায় থাকতে, কাজটা মিটে গেলে পরশু চলে যেতে পারি, এই ক দিন দুপুরে রাতে থাকলে খেতে আসতে পারি, এই বলে খাবার নিয়ে ফিরলাম রাতের খাবার খেয়ে  ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম ঘুম ভাঙ্গলো মাঝ রাতে সেই পাশের ঘরে নানা বিকট আওয়াজে কৌশিকদার ইশারায় চুপচাপ ঘাপ্টি মেরে শুয়ে রইলাম রাত কেটে ভোর হোলো ভোর হতেই পাশেরঘর থেকে কৌশিকদা কালকের লুকিয়ে রাখা জিনিস গুলো  নিয়ে এলো সকাল ন টা নাগাদ  রাম বিলাস এসে আমাদের খবরা খবর নিলো রাতে ভয়পেয়েছি কিনা,কিছুও ঘটনা ঘটেছে কিনা? আমরা কেমন ছিলাম এই সবকৌশিকদা বোললো আমরা রাতে মড়ার মতন ঘুমাই বাইরে প্রলয় হোলেও টের পাইনা, এটা চির দিনের অভ্যাসআমরা আর দুটো দিন থাকবো মনে হয় এর মধ্যে লেখার কাজ মিটে যাবে রাম বিলাস কে আর কষ্ট কোরে কালঅবধি আসতে হবেনা একদম পরশু সকালেএলেই চোলবে, আমরা কখনবেরূবো বলে দেবো সময় পেলে এই চার পাশ দিনের বেলাএকটু ঘুরে দেখবো কোলকাতায় তো এমন  পরিবেশ গাছপালা ফাঁকা জায়গা দেখা যায়না তাই প্রান ভরে বাতাস নিয়ে নিচ্ছি
                                                                                              
ক্রমশঃ-
পর্ব-৫ [পুর্ব সুত্র ঃ চন্দননগরের কাপড় ব্যবসায়ী ভুপেন্দ্র নাথ দত্ত  প্রাইভেট ডিটেক্টিভ কৌশিক রায়কে জানালেন যে তাঁর একটি পুরাতন বাগানবাড়ি উত্তর দিনাজ পুর আর বিহারের কিষাণগঞ্জএর লাগোয়া পাঁজিপাড়া অঞ্চলে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে বাড়িটি বিক্রয় করিতে ইচ্ছুক কিন্তু বাড়িটিতে  অদ্ভুত সব ভুতুরে কাণ্ড, উদ্ভট কাণ্ড ঘটায় ভুতেরবাড়ি নামে অপবাদ রটেছে, তিনি ও তাঁর ভাগ্নে দেখে এসেছেন,কিন্তুকেঊ তিন রাত্রি ও কাটাতে পারেনি একদল মস্তান এসে বাড়িবিক্রীর প্রস্তাব দেয় সপিং মল কোরবে বলে আরেক দল এসে হুমকি দেয় চটপট বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার জন্য  অজ্ঞান অবস্থায় উধার করে কেয়ার টেকার , সব শুনে কৌশিক রায় ও মাসতুত ভাই অর্ক কিষাণ গঞ্জেরবাগান বাড়িতে যান চারপাশ দেখে সতর্ক হয়ে থাকেন ,কতক গুলি ছোট জিনিষ পাশের ঘরে লুকিয়ে রাখা হয় , সামনে কেয়ার টেকারের ছেলের মোটর মেরামতীর গ্যারেজ  রাতে কেউ থাকেনা]
রাম বিলাসের পরিবারেরসব কে কি করে ? জানতে চাইলে রাম বিলাস আক্ষেপ করে জানায় সব  কপাল বাবুজী ,তার কথা থেকেঅনুসারে রামবিলাসের তিন ছেলে দুই মেয়ে, মেয়ে দু জনের বিয়ে হয়ে গেছে ,বড় জামাই ক্ষেতী আছে চাষাবাদ করে কোনো রকম চলে যায় ,বাহাদুর গঞ্জের কাছে থাকে, মাঝে সাঝে আসে নাত নাতনী নিয়ে,ছোটজামাই এই কিষেণগঞ্জে থাকে তার একটি ছেলে ছোটো এক বন্ধুর লেদের কারখানায়  মাঝে মাঝে কাজ করে, আয় ভালো নয়, খুউব নাকি খাটুনী,ছোট মেয়ে প্রায় ই আমার এখানে এসে থাকেছোট জামাইএর ঐ বন্ধুর একটাসেকেণ্ড হ্যাণ্ড ভালো স্কুরপিও ভ্যান গাড়ি আছে ওটা জামাই চালায় ভাড়া খাটে ,নানা জায়গায় ঘোরে,এখানে এলে রাতের দিকে আসে রাতেই ফিরে যায় এখানে সে থাকেনা   আমার বড় ছেলে মোটর গ্যারেজের কাজ শিখে এই রাস্তার ধারে মোটর সারাই এর গ্যারেজ খুলেছে একটা পুরানো ম্যাটাডোর কিনেছে নিজেই সারাই সোরাই করে ভাড়া খাটায় ওর দুটি ছেলে মেয়ে স্কুলে পড়ে মেজছেলে ঐ ম্যাটাডোর চালায়  ওর বৌ  গ্যারেজের পাশে চায়ের দোকান চালায়  ওর এক মেয়ে  স্কুলে পড়ে , ছোট ছেলেটাই তেমন কিছুই কোরে ঊঠতে পারিনি ও ভালো লেদের কাজ জানে কিছুদিন শিলিগুড়িতে কাজ ও কোরেছে তারপর মাথায় ভুত চাপলো কিছুদিন রাজনীতি কোরলো দলে পড়ে এক বছর জেল খাটলো,ফিরে এসে অন্য মানুষ, শুনেছি বাড়ি  তে প্রায় থাকেই না কখন আসে কখন যায় , কৌশিকদা মনদিয়ে সব শুনে বোললো,ছোট ছেলে লেখা পড়া কোরেছে? রাম বিলাস জানায় হ্যাঁ স্কুলের লিখা পড়া শেষ কোরে হাতের কাজের কালেজে ওই আই টি না কি বলে ওখানে লেদের কাজ শেখে ,সেখান থেকেই শিলিগুড়ির কাজটা পেয়েছিলো,শিলিগুড়িতে কিছু বাজে বন্ধু জুটে যায়  বিশেষ করে ফাগুয়া যাদব বাড়ি মুঙ্গের ওর সাথে মুঙ্গের গিয়ে কি ঝামেলায় পুলিশ ধরে জেল খাটে, তার পর থেকেই বদলে গেছে এই বাড়িতে আর আগের মতন থাকেনা ,খায় দায়না অন্য মানুষ বনে গেছেতখন লোক মুখে শুনেছি কিষাণগঞ্জে মেসে থাকেওকিছুদিন ওই জামাইএর বন্ধুর লেদের দোকানে কাজ করে ছিলো ওখানে কোথায় কোথায় ঘোরে ? মাসের মধ্যে অর্দ্ধেকদিনই কোথায় থাকে কেঊ জানে না বিয়ে থা করেনি এখন কোথায় আছে জানেনা তিন বছর বাড়ি আসে নিআমি  ওর মুখ দেখিনি কতকাল কৌশিকদা হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে নিয়ে রামবিলাসকে প্রশ্ন করেন আচ্ছা এই ভুতের বাড়িটা কি বিক্রী হয় না? সস্তায় পেলে প্রোমোটাররাতো লুফে নেবে এতো ভালো জায়গায় রাম বিলাস বলে তা হতে পারে লেকিন পিরেতের কথা সবাই জানে.ওখানে বড় মকান, দোকান, হোটেল হলে সবসে বড় ক্ষতি ভি হবে আমার ছেলেদের ওদের ব্যবসা ভি বন্ধ হয়ে যাবে, আর ক দিন বাদে আমার ছেলেরা কিনে নিতে পারবে ,এখন রূপেয়ার অসুবিধা আছে, লেকিন ছোটো জামাই বোলেছে ওর বন্ধু সাথে রুপিয়া লিয়ে কিনে নেবেকৌশিক দা বোল্লেন বাঃ ভালো কথা এটা তোমরা নিলেই ভালো, আমি ফিরে গিয়ে ভুপেন্দ্র দাকে তাই বোলবো
রাম বিলাস চলে যেতে বাইরের গেট বন্ধ কোরে আমরা ঘরে এসে  বোসলাম, কৌশিক দা কালকে পাশের ঘরে লুকিয়ে রাখা যন্ত্র পাতি নিয়ে তার ছোট্ট ল্যাপ্টপে লাগিয়ে চালাতেই তাজ্জব কত বিচিত্র আওয়াজ, সাথে কত রং বে রং এর ভৌতিক ছবি ঘরের দেওয়ালে র গায় ফুটে উঠলো
ঘরে দেওয়াল থেকে কিছুটা সামনে একটা সেলোফেনের মতো পাতলা পরদার মতন ঝুলছে তার উপর শুণ্যে ভুতের খেলা , হাসি কান্না এক অদ্ভুত পরিবেশ গাছম ছম করে কৌশিক দা বোললেন সব লেজারের হলোগ্রাফি, দূর থেকে রিমোট অপারেটেড দুপুরে খেয়ে এসে আমরা পাশের ঘরে সিলিং এ খুউব কায়দা করে লাগানো রিভলভিং দুটো লেজার প্রোজেক্টর আর ঘরের চার দিকের আসবাবের মধ্যে মিনি প্রচণ্ড পাওয়ারফুল   সাউন্ড সিস্টেম খুঁজে বার কোরলাম কিছু নাড়া চাড়া কোরলাম না বাগানটা ঘুরে দেখলাম পিছনের দিকে পাঁচিলের কিছুটা অংশ ভাঙ্গা ওখান দিয়ে অনায়াসে লোকজন যাতায়াত কোরতে পারে নিশ্চয় করে কারনবাগানের ওই খানে মাটিতে
ঘাস গাছপালা নেই হাঁটা চলার ছাপ স্পষ্ট
, ভারী মালপত্র টেনে নিয়ে যাওয়ার
ছাপ সুস্পষ্ট
বাগান বাড়ির রান্নাঘরআষ্টেপিষ্টে বন্ধ অথচ ঐ ঘরেরর কাছ থেকেই মাটিতে ভারী
মাল টেনে নেওয়ার দাগ
কৌশিকদা আমায় জিজ্ঞাসা কোরলো কি বুঝছিস? আমি বোল্লাম ব্যাপারটা গণ্ডগোলাস মানেকেস জণ্ডিস কৌশিকদা গম্ভীর ভাবে বোললেন হুমআজ অপারেশন রান্না ঘর সন্ধ্যার আগে কালকের পাশের ঘরে রাখা যন্ত্র গুলো আজ রান্না ঘরের টিনের চালের নীচে লুকিয়ে রাখা হোলো ভাঙ্গা পাঁচিলের  ধারে একটা বড় কামিনী ফুলের গাছ তাতেও কৌশিকদা একটা যন্ত্র লাগিয়ে রাখলো আমরাও গত রাত্রের মতন দরজা জানলা বন্ধ রেখে রাত কাটিয়ে দিলাম ধুপ ধাপ কত আওয়াজ পেলাম টু শব্দ না করে মড়ার মতন পরে রইলাম সারা রাতপরদিন সকালে যথারীতি রাম বিলাস খোঁজ নিয়ে গেলো রাতে কেমন ছিলাম
কৌশিকদা জানালেন আমরা ভালোই কোনো চিন্তা নেই কাজ শেষ সকালে একবার ইসলামপুরে এক বন্ধু আছেন তাঁর সাথে দেখা কোরে সন্ধ্যার মধ্যে চোলে আসবো
, রাতে থেকে  কাল সকাল সকাল বাড়ি ফেরার জন্য বেড়িয়ে পড়বো স ক্কাল বেলাই যেন চাবি নিয়ে যায় কৌশিকদা রাম বিলাসের হাতে পাঁচশ টাকা দিয়ে বোললেন তোমার নাতি নাতনী বৌমাদের মিস্টি খেতে দিলাম এবার তোমার বাড়ি যাওয়া হোলোনা পরে এলে নিশ্চয় যাবো
                                                                                                  
ক্রমশঃ-
পর্ব-৬  [পুর্ব সুত্র ঃ চন্দননগরের কাপড় ব্যবসায়ী ভুপেন্দ্র নাথ দত্ত  প্রাইভেট ডিটেক্টিভ কৌশিক রায়কে জানালেন যে তাঁর একটি পুরাতন বাগানবাড়ি উত্তর দিনাজ পুর আর বিহারের কিষাণগঞ্জএর লাগোয়া পাঁজিপাড়া অঞ্চলে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে বাড়িটি বিক্রয় করিতে ইচ্ছুক কিন্তু বাড়িটিতে  অদ্ভুত সব ভুতুরে কাণ্ড, উদ্ভট কাণ্ড ঘটায় ভুতেরবাড়ি নামে অপবাদ রটেছে, তিনি ও তাঁর ভাগ্নে দেখে এসেছেন,কিন্তুকেঊ তিন রাত্রি ও কাটাতে পারেনি একদল মস্তান এসে বাড়িবিক্রীর প্রস্তাব দেয় সপিং মল কোরবে বলে আরেক দল এসে হুমকি দেয় চটপট বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার জন্য  অজ্ঞান অবস্থায় উধার করে কেয়ার টেকার , সব শুনে কৌশিক রায় ও মাসতুত ভাই অর্ক কিষাণ গঞ্জেরবাগান বাড়িতে যান ওই বাগান বাড়িতে বাইরের থেকে লোকজন যাতায়াত কোরতে পারে কেয়ার টেকারের  বড় ছেলের মোটর গ্যারেজ,মেজ গাড়ি চালায়, ছোট ছেলে কোথায় জানা নেই পাশের ঘরে লেজার হলোগ্রাফি আর সাউণ্ড সিস্টেম লুকানো আছে রান্না ঘরের চালে ও বাগানে
গোপন অনুসন্ধান যন্ত্র লুকিয়ে রাখলেন কৌশিক রায় ]
রাম বিলাস চলে যেতে কালকের মতন ঐ যন্ত্রপাতিগুলো রান্নাঘর আর কামিনি গাছ থেকে খুলে এনে সেই ল্যাপ্টপে লাগাতেই চক্ষু চড়ক গাছ
একি দেখছি? রান্না ঘরটা একটা  কারখানা মেঝেতে শয়েশয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বিছানো তিন জন লোক কালো পোষাকে আপাদমস্তক ঢাকা দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত নানা রকম যন্ত্রাংশ জুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র বানিয়ে চোলেছে একজন সেগুলো বাক্সে সাজিয়ে রাখছে থরেথরে বাক্স বঝাই হলে একটা চাকা লাগানো হাতে টানা ট্রলীতে চাপিয়ে পাঁচিলের ঐ ভাঙ্গা জায়গাটার কাছে নিয়ে যাচ্ছে পাঁচিল টপকে ওপাশে দিচ্ছে, এই ভাবে রাত ১২টা থেকে ৩টা অবধি কত যে প্যাকেট বন্দী অস্ত্র এখানে তৈরী হয়ে পাচার হোলো ইয়ত্তা নেইরাত ৩টার পর রান্নাঘর বন্ধ করে সবাই চলে গেলো আবার সব শুনসান কৌশিকদা ল্যাপ্টপ থেকে পেনড্রাইভে সব তুলে নিয়ে চটপট ল্যাপ্টপ ফাঁকা কোরে ওখানে একটা অন্য পেন ড্রাইভ থেকে কিছু অসমাপ্ত গল্প, লেখা কবিতা লোড করে রেখে গেলো যন্ত্রপাতি গুলো হ্যান্ডব্যাগে নিয়ে পেন ড্রাইভ গুলো নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম,সোজা ইসলামপুর, ওখানে
কৌশিকদার বন্ধু শ্যামল পাণ্ডে মহকুমার পুলিশ আধিকারিক তাঁকে সব আগে থেকেই  কৌশিক দা জানিয়ে রেখেছিলো তাই আমরা তাঁর সাথে পুলিশ কোয়াটারে নয়  অন্য একটা হোটেলে দেখা কোরলাম
শ্যামল বাবু পেন ড্রাইভ থেকে দূটো সিডি করিয়ে একটা  আমাদের দিয়ে দিলেন সাথে রাখার জন্য, একটা নিজের জন্য রাখলেন, এরপর কৌশিকদার সাথে কিছু কথাবার্তা হোলো বোললেন চিন্তা নেই যথাঠসময়ে যথা যথ ব্যবস্থা হয়ে যাবে আমরা বিকাল ৫টার আগেই বাগান বাড়িতে ফিরে এলাম যা ভেবে ছিলাম তাই এসে দেখি আমাদের ঘরে এসে সব হাঁটকেছে, ল্যাপ্টপ ও নাড়াচাড়া কোরেছে, কিছু ক্ষতি করেনি
কৌশিকদা বুঝে  ছিলেন আমাদের সন্দেহ কোরতে পারে পিছনে চর লাগাতে পারে তাই ইসলামপুরে গিয়ে ঠাকুর বাড়ি ঘুরে,হোটেলেও ছদ্ম নামে ঘরনেয়  ওখানে বই পাবলিসারের খোঁজ করে, এবং হোটেল থেকে একটু ঘুরতে বের হয়
এর মধ্যে শ্যামল বাবু ও ছদ্মবেশে পাব্লিশার সেজে ওখানে আমাদের খোঁজে গিয়ে অপেক্ষা করেন হোটেলে দুজন লোক এসে খাতা চেক করে ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করে জেনে যায় আমরা কোথা থেকে কিজন্য এসেছি,ক দিনের জন্য ঘর নিয়েছি ইত্যাদি, ওরা শ্যামল বাবু কে চিনতে পারিনি তাই শ্যামল বাবু ওদেরকে বোলেছেন যে আমরা বই পাব্লিশিং এর জন্য এসেছি উনি আমাদের জন্য ই অপেক্ষা কোরছেন লোক দুটো এইজন্য বিশ্বাস করে চলে গেছে শ্যামল বাবুর সামনেই কাকে ফোনে এই খবরটাও দিয়েছে বোলেছে খবর পাক্কা চিন্তা নেই
আমরা অন্য দিনের মতন রাতের খাবার এনে খেয়ে দেয়ে দরজা লাগিয়ে অপেক্ষা কোরতে লাগলাম, কি হয়? রাত তখন প্রায় ১ টা আমাদের দরজায় ধাক্কা আর কৌশিকদার নাম ধরে ডাকছেন দরজা খুলুন কৌশিক বাবু  অপারেশন কমপ্লিট সাক্সেস ফুল সব ক্রিমিনাল বমাল সমেত ধরা পড়েছে, বহু বিদেশী স্মাগল গুডস, আরমস,পাওয়া গেছে, কিষাণগঞ্জে ওদের আস্তানাখুঁজে রেড করা হয়েছে সেখানেও বড়কারখানা লেদে সব পার্টস বানানো হোতো,এখানে এনে এসেম্বেল করা হোতো
ওরা নিজেদের স্কোরপিও গাড়ি করে মাল আনা নেওয়া কোরতো  ফাগুয়া যাদব মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল এরা বহু জায়গায় এমনকি বাংলাদেশ, নেপাল সহ শ্রীলঙ্কা অবধি বিস্তৃত রাম বিলাসের ছোট ছেলেকে পাওয়া যায়নি ও  কিষাণগঞ্জ মেসে ফাগুয়ার সাথে অল্প কয়েকদিন ছিলো, মত বিরোধ হওয়ায় দীর্ঘকাল কোথায় চলে  গেছে,কিন্তু ছোট জামাই, তার বন্ধু যার লেদ আর গাড়ি আছে, সেখানের পার্টনার ফাগুয়া যাদব সহ ধ রা পড়েছেছোটজামাই রামবিলাসের মেয়েকে ভয় দেখিয়ে শ্বশুর বাড়িকে দমিয়ে রেখেছিলো,যত সমাজবিরোধীদের সাথে দহরম মহরম তাই সবাই জেনেও ভয়ে চুপ করে ছিলোএর পরের অংশ সংক্ষিপ্ত শ্যামল বাবু কৌশিকদা আর আমাকে সাদরে ইসলাম পুরে নিয়ে গিয়ে সম্বর্ধনা দিয়ে রাজার হালে এখানে ফেরার ব্যবস্থা করে দেন কৌশিকদা ভুপেন্দ্র বাবুকে বাগান বাড়িটা রাম বিলাসকে বিক্রী করার জন্য অনুরোধ জানান, রামবিলাস ছোট জামাইকে বাড়ি থেকে দূর করে দিয়েছে