Sunday 29 November 2015

ক ল্প বিজ্ঞাণের কাহিনী ৪)বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল

৪)বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল
পরদিন দুপুর ২টার মধ্যেই হাজির হলাম উন্মেষে উকিল জেঠু আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আমি পৌঁছতেই বললেন 'আশাকরি কাল স্বছন্দেই যেতে পেরেছ?আমি তোমার জন্য সেই ১টা থেকে অপেক্ষা করে আছি কারণ আমি দুপুরের খাওয়াটা ১২টা৩০ মধ্যে সেরে নিই,এরপর আধ ঘন্টা ব্জ্রাসনে বিশ্রামআমার খাওয়ার মেনুটা অবশ্য তোমাদের রুচি হবেনা,কারণ আমি সব  সব্জীটা কাঁচা খাই প্রাকৃতিক চিকিতসা বিজ্ঞানে দার্শণিক সক্রেটিসের বাণী'Diet is health,diet is Medicine'মানে পথ্য ই স্বাস্থ্য পথ্যই ঔষধ, খুউব মেনে চলা হয়ভারতীয় মুনীঋষি গন এটাই করতেন,প্রাকৃতিক পথেজীবন যাপন করতে কাঁচা ফল মুল শাক সব্জী খেয়ে থাকাই বিধি,কারণ রান্না করা মানেইতো ডি-ভাইটালাইজড ডিনেচারড ফুড মানুষের পাকস্থলী এই কাঁচা ফলসব্জী খাবার উপযুক্ত-মানুষ মাংসাসী প্রাণী নয়,মানুষের পাকস্থলী রান্নাঘর নিজেই রান্না করেনেয়- তাকে রান্না করা খাদ্য দেওয়ার অর্থ তাকে নিস্ক্রিয় করে রাখা এই অভ্যাস আস্তে আস্তে রপ্ত করতে হয়,যে কোন পুরানো অভ্যাস বদলানো বেশ কষ্টকরএত বয়সও আয়ুর্বেদীয় ঔষধ সঞ্জীবনী ট্যাব্লেট আছে এটা রক্তে  ও কোষের আম্লিক মাত্রাকে নিয়ন্ত্রন ও রক্ষা করে, রক্তে ক্ষারত্ব কমে গেলে শরীর রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা বাড়ে,এছাড়া সঞ্জীবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োজনানুসারে বাড়িয়েদেয়
আমি প্রশ্ন করলাম-' আপনি যখন বাইরে অন্যত্র কোথাও থাকেন এই নিয়ম মানেন কি করে? উত্তরে তিনি বলেন"আমার বিকল্প ব্যবস্থা নিজস্ব 'ইন্সটাফুড পিল' বা তাতক্ষণিক পরিপুর্ণ আহারের জন্য আমার ভেষজ বটিকা'পুষ্টি' আমার সাথেই থাকে,এর একটা বটিকা ২৪ঘন্টা শরীরকে পূর্ণকর্মক্ষম রাখার জন্য যে শক্তি-পুষ্টি জোগানো দরকার তা যোগান দেয়এর সব থেকে সুবিধা এটি খেতে সময় লাগবে বড়জোর ১থেকে৩মিনিটযদি চুষে খাওয়া হয় তবে একটা ভুরিভোজের যাযা জিনিষ সাধারণ ভাবে খাওয়া হয় যেমন,ভাজাভুজি সুক্ত থেকে ডাল,তরকারি,চাটনি,পায়েস সবের স্বাদ একেক করে পাওয়া যাবে- সর্ব শেষে মুখ শুদ্ধিপান পর্য্যন্ত অথচ এর কোনটাই ঐ বটিকার মধ্যে নেই এরকোন কৃত্রিম স্বাদ গন্ধ মেশানো হয়নাকেবলমাত্র সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ভাবে প্রতিটি ব্যঞ্জণের উপকরণের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধের নীতি অনুসারে যত সুক্ষ্ম করা হয়াছে তাতে পুষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে
যাক এসব বিষয়ে আমার লেখা থেকেই সব জানতে পারবেএখন আমার প রীক্ষা গার ও সংগ্রহশালায় যাওয়া যাক বারান্দার একপাশে যে দরজা আছে তা বোঝার উপায়নেই,স্প্রীং দেওয়া দরজা ঠেলে ভেতরে যাওয়া যায়, আবার নিজে থেকেই ফিরে এসে দেওয়ালে এমনভাবে বসেযায় লাগে থাকে দেওয়াল থেকে আলাদা করেবোঝা যায়না ভিতরে ঢুকে দেখলাম বড় হলঘর, সুন্দর সাজানো সারা দেওয়ালে অসংখ্য খোপ খোপ তাকের সারি প্রতিটি খোপেই জিনিষ ভর্তিএকপাশে সারি দিয়ে সাজানো কয়েকশত অডিও ক্যাসেটের মতন ক্যাসেটপ্রতিটি ক্যাসেটের গায় নাম্বার ও সাংকেতিকলেখা একটি ক্রমানুসারে সাজানো রয়েছে জেঠু জানালেন এগুলিই তার বই ,পুঁথী,নানা তথ্য সম্বলিত পুস্তিকার সংগ্রহএই মাইক্রোচিপ যা তার নিজস্ব সৃষ্টি,এই চিপ গুলিতে নিজস্ব ভাষায় সঞ্চিত করা আছে সব তথ্যমাইক্রোরিডিং ডিকোডার যন্ত্রে এগুলি লাগালে মনিটরে লেখা আর ছবি হুবহু দেখাযাবে, মুল বইতে যেমন টি আছেআবার রিডিং সুইচ টিপলে প্রথমে মুল যেভাষায় বইটা লেখা সেই ভাষায় পাঠ শুনতে পাওয়া যাবে পরে বাংলায় অনুবাদ ভাষ্য শুনতে পাওয়া যাবে এটা যেকোন ভাষায় ইচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্ট বা কপি করে নেওয়া যায়,এক একটা ক্যাসেটে ১০ লক্ষ ফুল স্কেপ কাগজের লেখা বা ছবি আছেসংগ্রহে  বর্ণপরিচয় থেকেশুরু করে নানা বিখ্যাত লেখকের রচনা  সমগ্র ,বিশ্ববরেণ্য শিল্পীদের আঁকা চিত্রাবলী, পৃথিবীর সব দেশের নাম করা সব সঙ্গীত শিল্পীদের গান,নাচ, বাজনা সব কিছুই সঞ্চিত আছে"
 আমি আমার লেখা বই এর ডিসপ্লে, দেখলামতথ্যসুচী বর্ণানুক্রমিক সুচীপত্র সবই আছে,সরাসরি যে বই বা যে বিষয়টা দেখতে চাই দেখার ব্যবস্থা আছেকোন খোপে কোন ক্যাসেটে কি আছে তাও সুইচ টিপে মনিটারে দেখাযায়আমার লেখা এযুগেও ডাইনোসরাসের মলাট থেকে শেষ পাতা পর পর স্ক্রীণে ফুটে উঠল সেই সাথে নিখুঁত গুরু গম্ভীর উচ্চারণে ছেলে এবং মেয়ে কন্ঠে আমি বিস্মিত আমি আশ্চর্য হওয়াতে জেঠু বললেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই,এখন সারা বিশ্বে মাইক্রোফ্লিমে সব নামী দামী বই এর একটা ফোটোকপি নকল তুলে রাখা হয়,যাতে পরে প্রোজেকশন করে দেখা যায়তিনি জানালেন এই যন্ত্রের ক্ষমতা ওগুলোর থেকে অনেক বেশী আর প্রয়োগ ক্ষেত্র বিশালএই যন্ত্রের মধ্যে এই বই এর সাথে সাদৃশ্যআছে তেমন সব বই এর তথ্য,তুলনামুলক আলোচনা, সব দেশের,সব ভাষার পাওয়া যাবে আর কোন অনুরুপ বই তথ্য না থাকলেও জানিয়ে দেবেএছাড়া অনুবাদ, মিশ্রণ পরিবর্তণ সবই সম্ভব এরপর ডাক্তার উকিল জেঠুর সংগ্রহশালায় হাজারো বিস্ময়কর উদ্ভাবনের পরিচয় পেলাম যার বর্ণনা বা আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করাও সম্ভবপর নয়এইসব বিস্নয়কর যন্ত্রপাতি ও আবিস্কারের সাথে সাথে জড়িয়ে আছে নানা রোমাঞ্চকর ঘটনা-যেগুলি পরবর্ত্তী কালে জেঠুর লেখা থেকে পরে পরে জেনাছিযথা সময়ে পাথকের দরবারে পৌঁছে দেবার ইচ্ছা রয়েছেআমি দিন চারেক ঝাড়্গ্রামে ছিলাম অধিকাংশ সময়ই আমি কাটিয়েছি ডাক্তার উকিল জেঠুর কর্মশালায়আমার আগ্রহ দেখে উনি ঝাড়্গ্রাম থেকে আমার আসার সময় ওনার সমূহ লিপিবদ্ধ ক রে রাখা তত্ত্ব,ও তথ্যের অনুলিপির বান্ডিল্টা উপহার দেন,সেই সাথে শর্তের কথাটি আবার স্মরণ করিয়ে দেন যেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোন লেখা প্রকাশিত না হয়,আর প্রকৃত নাম পরিচয় কখনোই উল্লেখ করা চলবেনা

আমি কারন জানতে চাওয়ায় উনি বলেছিলেন এই সময়ের মধ্যে উনি ঝারগ্রামে কাজ শেষ করে অন্য অজ্ঞাত নুতন কোথাও গবেষণার জন্য চলে যাবেন, উনি ঝাড়্গ্রাম থাকা কালে এই লেখা প্রকাশিত হলে অসুবিধা আছে আমি পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ডাক্তার জেঠু তার 'উন্মেষ' সরকারকে দান করে কোথায় চলে গেছেন কেউ জানেনা, গাছপালা,বাংলো আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতন ,সাধারণ, আসবাবপত্র কোন বিশেষত্ব নেই এই অবস্থাতেই সরকার দখল নিয়েছেআমি জেঠুর দেওয়া সমস্ত পান্ডুলিপি খুঁটিয়ে পড়েছিএবং সাজিয়ে কাহিনী আকারে লিখতে শুরু করেছি কিন্তু সঠিক স্থান, কাল,পাত্রের উল্লেখ করা যাবেনা তাই ঘটনা গুলি আগের পরের হলেও সব গুলি স্বতন্ত্র, কোন সমস্যা নেইআমি সব ঘটনা গুলিই পর্য্যায়ক্রমে পাঠকের দরবারে চাহিদা থাকলে পৌঁছে দেব সেই প্রয়াস নিয়েছি

কল্প বিজ্ঞাণের কাহিনী ৩)বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল


৩)বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম উনি আমার মনের কথাগুলো টের পেয়ে যাচ্ছেন কি করে?আমার মনে জাগা প্রশ্নের উত্তর ও পেলাম এমনি অবাক করে দিয়ে-"আমি মনের কথা বুঝতে পারি-তুমি যতই চুপচাপ থেকে মুখের ভাব বদলে রাখার চেষ্টা করএটাী ইলেকট্রো টেলিপ্যাথি বুঝলে? সাধু,যোগী ঋষিগন পুরাকালে যোগবলে এই ক্ষমতা অর্জন করতেন থটরিডিং-আমি অর্জন করেছি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্সের প্রয়োগ কৌশলেমানুষ যা কিছু চিন্তা করুকনা কেন ?তার মস্তিষ্ক থেকে একপ্রকার তরঙ্গ নির্গত হয়,এই চিন্তাটাও শব্দ সৃষ্টি করেনা কিন্তু ঐ তরঙ্গ /কম্পন  সৃষ্টি করে আর সেই কম্পন ধরা পরে আমার টেলিপ্যথোডিকোডারেআমার চশমার ডাঁটিতে এই ব্যবস্থা লাগানো আছেএটাকে ইচ্ছামতন শক্তিশালী করে এর দুরত্ব বা রেঞ্জ বাড়ানো কমানো যায় আগেকারদিনে যোগী ঋষিরা অনেক বড় বৈজ্ঞানিক ছিলেন,তাঁরা যোগাসনে শরীরের নানাতন্ত্রকেএই রকম অতি শক্তিশালী কার্য্যক্ষম করে তুলতে পারতেন
 আমরা একে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতিকবলে ব্যাখ্যা করি আজকে আমরা যাকিছুই  আবিষ্কার করিনা কেন-এগুলো অতীতে ছিলো, মাঝে বিলুপ্ত হয়েছ্‌ কত জিনিষ আবার বিলুপ্ত হতে চলেছে-তার হিসাব রাখে কেউ?আমার মূল গবেষণামুলক কাজ শুরু হয়েছিলো-ভারতীয় ভেষজদ্রব্যের গুনাগুন আর তার প্রয়োগ নিয়েপরে এর সাথে রসায়ন, পদার্থবিদ্যার গবেষণা যুক্ত হয়সর্বশেষ ইলেক্ট্রণিক্সের মাধ্যমে সবের মধ্য একটা নিগুঢ় সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হই, তাই আমার উদ্ভাবিত জিনিষ গুলোর মধ্যে এগুলি ওতপ্রোতঃভাবে মিলে মিশে আছেকাল যখন আসবে তখন বিষয়টা বুঝিয়ে দেবতোমার মনে এখন অনেক কৌতুহল ,জিজ্ঞাসা দানা বাঁধতে শুরু করেছেআরো দানা বাঁধবে কালকে যখন চাক্ষুষ এইগুলির সাথে পরিচয় ঘটবেতখন যতটা পারি বুঝিয়েদেব বাদবাকীটা কিছুটা আমার লেখা থেকে আর কিছুটা নিজস্ব অনুসন্ধান দিয়ে বুঝে নিতে হবেআমি প রিপুর্ণভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে হাতে তুলে দেবনা,এতে যাকে দেওয়া হবে তার মস্তিষ্কের কাজ কমে যাবে,অলস পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে,স্বাধীন চিন্তাকরার ক্ষমতা হারাবেতাইআমি  অনেকটা হাতে সার্কিট, কম্পোনেনটস নিয়ে, প্রয়োজন মতন কার্য্যকারিতা বুঝে অদল বদল করে প্রয়োজনীয় জিনিস টা  নিজে বানিয়ে নেওয়ার মতন" আমি বললাম "বেশ এটাই ভালো
আমি মুগ্ধআজ হাতে সময় কম,বাইরে অন্ধকার নেমেছেদীনবন্ধু কাকার কেয়ার টেকার বেশী রাত করতে বারন করে দিয়েছে পথে সাপ খোপ, নানা জন্তু জানোয়ার থাকতে পারে, তাছাড়া জায়গাটা আমার কাছে নতুন অচেনা," আমি টর্চ আনতে ভুলে গেছি,শালবনের পথটা বেশ অন্ধকার ,আজ চলি বলেএগিয়ে গিয়ে ডাক্তারউকিলের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম আমি যখন বারান্দাথেকে বাইরে বেরুতে যাচ্ছি,উনি ডাকলেন 'অণির্বান- একটু দাঁড়াও' দেওয়ালের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন দু মিনিটের মধ্যেই ফিরে এলেন হাতে একটা চশমাতে রোদ আটকানোর জন্য যে এটাচি লাগানো হয় ঐরকম একটা এটাচিঐ এটাচির  কাঁচ দুটো একটা মোটা স্টীলের পাত দিয়ে আটকানোডাক্তারউকিল ঐ টা আমাকে দিয়ে বললেন তোমার চোখে চশমা আছে তাই ফ্রেমটা আনলামনা এটা চশমার উপর এটাচির মতন লাগিয়ে নাওআমি রাত্রি বেলা রোদ আটকানো এটাচি কেন লাগাব বুঝতে পারলাম না ডাক্তারউকিল মনের কথা বোঝেন  হেসে বললেন -এটা চশমায় লাগিয়া নাও টর্চলাগবেনা,সাপখোপ,পোকামাড়, জন্তু জানোয়ার তাড়ানোর লাঠি,অস্ত্র লাগবেনা, কেউ তোমার ৩০ গজের মধ্যে আসবেনা
আমি এটাচিটা চশমার উপর লাগিয়ে নিলামভারি আশ্চর্য্য ব্যপার বাইরে বেড়িয়ে দেখি কোথায় অন্ধকার?আমি পরিষ্কার দিন দুপুরে যেমন চারপাশ দেখতে পাই তেমন সব পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিআমি আস্তে আস্তে 'উন্মেষ' থেকে বেড়িয়ে শাল বনের পথ ধরলামএকটা মজার জিনিষ দেখলাম রাস্তার দুপাশে যেপোকামাকড় ছিলো সব আমি এগুনোর সাথেসাথে উর্দ্ধশ্বাসে পালাচ্ছেআমি ২০ মিনিটের মধ্যেই অবসরে ফিরে এলামঘরে আলো জ্বলছে,আমার মনে হোলো দিনের বেলা অযথা আলোজ্বলছে কোথাও অন্ধকার নেইঘরে এসে এটাচিটা খুলে রাখলাম কালকে ডাক্তার উকিল যাকে আমি জেঠু বলে ডাকতে শুরু করে দিয়েছি তাকে ফিরিয়ে দেব                                                ক্রমশ-৪  আগামী কিস্তিতেই সমাপ্য

ক ল্পবিজ্ঞাণের কাহিনী ২ বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল


২) বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল (অনুগ্রহ করেলেখাটা পড়ে মতামত দেবেন,কারন জানা দরকার পাঠকের এই ধরনের লেখার চাহিদা আছে কিনা? আর আমার লেখা সঠিক হচ্ছে কিনা?)
 ঝাড়্গ্রামে দীনুকাকার কটেজ 'অবসর' আমার খুউব মনের মতন জায়গারাস্তার ধারে পাঁচিল ঘেরা  সুন্দর ছিমছাম পরিবেশ ,কেয়ার টেকার যদুনাথ সব গুছিয়ে পরিপাটি করে রেখেছেঝাড়্গ্রাম পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছিলো,কারন নভেম্বরের রাত ৭টাতে ফাঁকাশাল বনে ঘেরা পুরানো ঝাড়্গ্রাম পৌঁছতে অনেক রাত মনে হচ্ছিল যদুনাথ সব রান্না করে রেখেছে তাই রাত না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম সকালে চারপাশটা একটু ঘুরেফিরে দেখার জন্য বেরুলামপুরানো ঝাড়্গ্রামের দিকে কিছুটা এগুতে দেখলাম রাস্তার ডান দিকে একটা বালী কাঁকড় বিছানো রাস্তা দুপাশে শালবাগানের মধ্য দিয়ে ভিতর  কোন ঘর চোখে পড়েনাবেশ কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম বাঁ পাশে কাঁটা তারের ঘন বেড়া দেওয়া বাগানসব রকম ফল,ফুলের গাছ ভরা ঐবাগানের মাঝে একটা সাদা বাংলো মতন বাড়ি দেখা যাচ্ছেঐ বাগানের মূল ফটকের কাছে এসে দেখলাম মোটা মোটা দুটি থামের মাঝে একটা বড় লোহারগেট,বুঝলাম এটাই বাগানের মধ্যে বাংলোয় যাবার প্রবেশ পথগেটের উপর বড় বড় করে লেখা "উন্মেষ"বুঝলাম এটাই     দীনু কাকার ডাক্তার উকিলের বাংলোগেটের উপর একটা বিজ্ঞপ্তি বাংলা ও ইংরাজীতে লেখা'অনুগ্রহ পুর্বক এই বাদানে প্রবেশের পূর্বে গেটের ডানপাশের থামে যে কলিংবেলের সুইচটি আছে ওইটি টিপুন-প্রবেশ অনুমতি পাবার পরই গেট ঠেলে বাগানে প্রবেশ করিবেন অন্যথায় বিপদের সম্ভাবনা
 আমি একটু চিন্তায় পড়লাম ভাবলাম বিকালের দিকে এসে আলাপ করে যাব-যেহেতু যদুনাথকে বলে আসা হয়নি দীনু কাকার কটেজ ১০-১৫ মিনিটের হাঁটা পথ, ফিরেগেলাম অবসরে দুপুরে খেতে বসে ডাক্তার উকিল সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় যদুনাথ জানতে চাইল আমি ওই 'আজবদাদু'র বাড়ি যাব কিনা? আমি  জানতে চাইলাম ওনাকে আজবদাদু কেন বলছে?যদুনাথ বলল এমন আজব লোক এই দেশে আর একটিও আছে নাকি?ওনাকে সকাল সন্ধ্যায় নদীর ধারে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে ছাড়া কখনও বাইরে দেখতে পাবেননা শুনেছি উনি বাড়িতে কিসব ভয়ঙ্কর জন্তু জানোয়ার পোষেণডাক শুনলে পিলে চমকে যাবে,বাঘ না হাতি,কেউ জানেনাসারা রাত বাগানের চারপাশে তারের বেড়াতে ইলেকট্রিক লাগানো থাকে,কারো সাধ্য নেই ভিতরে ঢোকেএকবার দুটো চোর বেড়া টপকাতে গিয়ে যা নাকাল হয়ে ছিলো কি বলব ?প্রাণেমারা যায়নি তবে তিন চার দিন ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলো,গলায় কোনো আওয়াজ ছিলোনাকর্ত্তাবাবুর(দীনুকাকা)কাছে শুনেছি ঐদাদু খুব পন্ডিত লোকআমি যদুনাথকে বললাম বিকালে ভাবছি ওনার সাথে দেখা করে দীনুকাকার চিঠিটা দিয়ে খোঁজ নিয়ে আসবযদুনাথ জানালো তা বিকালে যেতে   ফিরতে বেশী রাত যেন না করি কারন ওই পথটা ভীষণ অন্ধকার ঘন শালবন, নতুন লোক বিপদ হতে পারে
 বিকাল ৪টা নাগাদ গেটের কাছে পৌঁছে প্রথমে একটু নার্ভাস মনে হোলো নিজেকে,তারপর মন ঠিক করে নিলাম-দীনুকাকা যখন পাঠিয়েছেন তেমন বুঝলে চিঠিটা দিয়ে শুধু খোঁজ নিয়ে চলে যাব  কলিংবেল টা টিপতেই একটা গুরুগম্ভীর স্বর গেটের কাছ থেকে ভেসে এলো,"কোথাথেকে আসছেন?কারসাথে প্রয়োজন?"আমি চারপাশে তাকিয়েদেখতে চেষ্টা করলাম কার কন্ঠস্বর?ভদ্রলোক কোথায়?কাউকে দেখতে পেলাম না,কি বলব?কাকে বলব?ভাবছি,তখন ই আবার শুনতে পেলাম ,মনে হল আওয়াজটা একই জায়গা গেটের থামের মধ্য থেকে আসছে-"আমাকে দেখতে পাবেন না ঐখান থেকে,কিন্তু আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি আমি বাংলোর মধ্যে আছি-আপনি বলুন আমি শুনতে পাবো"আমি নার্ভাস হয়েইছিলাম তাই একটু ধরা ধরা গলায় উত্তর দিলাম, "আমি ডাক্তার উকিল মহাশয়ের সাথে দেখা করতে চাই,কোলকাতা থেকে দীনবন্ধু সান্যাল মহাশয় আমাকে পাঠিয়েছেন একটা চিঠি দেবার জন্য"এবার ভিতরে যাবার অনুমতি পেলাম'ভিতরে আসুন'
আমি লোহার গেটটা ভিতর দিকে ঠেলে ঢুকলাম,স্প্রীং লাগানোগেট আপনি বন্ধ হয়ে গেলোভিতরে সুন্দর নুড়ি বিছানো পথে বাংলোর কাছে গেলামসুন্দর কাঁচে ঘেরা বারান্দা ভিতরে ঢোকার জন্য কাঁচেরই ঠেলা দরজা দরজাঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখলাম, সুন্দর পরিষ্কার সাজানো বিরাট বারান্দার মাঝে সাদা গোল সম্পূর্ণ কাঁচের টেবিল,টেবিলের তিন পাশে তিনটে সুন্দর   একই রকম সম্পূর্ণ কাঁচের চেয়ারটেবিলে রাখা কাটগ্লাসের ফুলদানীতে সুন্দর রকমারীফুল এমন সুন্দর রঙ আগে কখনো দেখিনিটেবিলের পাশে দেওয়ালের দিকের চেয়ারে একজন বৈদিক ঋষি তুল্য মানুষ বসে আছেনসাদা লম্বা দাড়ি কবিগুরুর মতন,মাথায় ধব ধবে সাদা চুল ঘাড় অবধি ভদ্রলোক বসে আছেন তবুও বোঝাযায় বেশ লম্বা সুপুরুষ,টিকালো নাকউজ্বল দুটি চোখ চশমার পুরুকাঁচের মধ্য দিয়েও প রিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বেশ সপ্রতিভ,তেজস্বীদেখলে বৈদিক ঋষি বলেই মনে হয়,বেশ সম্ভ্রম লাগেআমি সামনে যেতেই বললেন, বসুন গলার স্বর বেশ গাম্ভীর্যপূর্ণ
আমি দীনুকাকার চিঠিটা এগিয়ে ওনার হাতে দিলামবুঝলাম ইনিই ডাক্তার উকিলউনি সাদা ধুতি আর সাদা ফতুয়া পরে আছেন,পায়ে কাঠের খড়মবারান্দায় ঢুকেই বুঝেছিলাম ভেতরে শীতের বিকালের কোন প্রভাব নেই,কারণ  আমার গায়ে যে পাতলা সোয়রটার, তাতেই বেশ গরম লাগছেপ্রথমে ভেবে ছিলাম নার্ভাসবলে গরম লাগছে, পরে ডাক্তার উকিল কে দেখলাম পাতলা ফতুয়া পরে আছেন ওনার কাজের লোকটিকেও একপলক দেখলাম ভিতরের দরজা দিয়ে এসে একবার আমাদের দেখে গেলো-তার গায়েও পাতলা জামা বুঝলাম ভিতরে সত্যই গরম বারান্দায় কোনো আসবাব পত্র বিশেষ চোখে পড়লনা,কেবল ডাক্তারউকিল যেখানে বসে আছেন তার পাশে একটা শেলফে কতকগুলো স্টেবিলাইজারের বাক্সের মতন কোন যন্ত্র বসানো আছে,তাতে লাল,নীল,সবুজ আলো জ্বলছে,কতকগুলি নব, সুইচ রয়েছেভাবলাম উন্নত মানের মিউজিক সিস্টেম হবে
                                                                                                                                                         চিঠিটা পড়া হয়ে গেলে ডাক্তার উকিল আমায় বললেন'আমি তোমায় তুমি বলেই বলছি,চিঠি থেকে যা বুঝলাম, অনেক ছো্‌ট , আমি তোমাকে তুমি বললে অসন্মানবোধ করবেনাতুমি বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্প্কাহিনী লেখ, তোমার লেখা মনে হয় আমার সংগ্রহে গোটাচারেক আছেলেখাগুলি মন্দনয় তবে অতিকল্পনা প্রবনতা আছেলেখাগুলি বাচ্চা,কিশোরদের কাছে রোমাঞ্চকর মনে হলেও বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি নির্ভর হওয়াটা দরকারআবার বেশী তথ্য নির্ভর হলে সেটা গল্পের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলবে দীনবন্ধু বলেছে তোমাকে সাহার্য্য করলে আগামী লেখাগুলি আরো চিত্তাকর্ষক হতে পারেতা আমি তোমাকে নিশ্চই বিজ্ঞানের অগ্রগতি,তার সু প্রয়োগ আবার স্বার্থে অপ প্রয়োগ সংক্রান্ত কিছু বাস্তব ঘটনার উদাহরন দেখাতে পারবএরপর তোমার কৃতিত্ব কেমন ভাবেসেটা পাঠকের কাছে পৌঁছেদেবে,তারা কতটা আগ্রহভরে তোমার লেখাটা নেবেআমি যা কিছু জানাবো সবই আমার জীবনের ঘটনা,তার সব ঘটনা সাজিয়ে গুছিয়ে হয়ত তোমার কাছে তুলে দিতে পারবনা প্রফেসর শঙ্কুর মতন আমার কোন লিখিত পঞ্জিকা বা খাতা নেই, আমি ওনাকে শ্রদ্ধাকরি নমস্য ব্যক্তি
 লেখা আছে ,কিছু মাইক্রোফটো,অডিওরেকর্ডিং,থার্মাল ইমেজকপি আছে তবে একটা শর্ত কোন অবস্থাতেই  সঠিক তারিখ,সময়,স্থান,ব্যাক্তির নাম ধাম,যথাযথ উল্লেখ করতে পারবেনাআর লেখাগুলি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোথাও প্রকাশ করতে পারবেনাকথা দিলে তবেই আমি বিবেচনা করে দেখব লেখা গুলি তোমাকে দেওয়া যাবে কিনা? " আমিতো তক্ষুনি রাজী ,বললাম "আপনি যা নির্দেশ দেবেন সেই মতই চলব আমার অসীম ভাগ্য, আপনি যে আমার প্রতি এতো সহৃদয় হবেন ভাবতেই পারিনি"ডাক্তার উকিল  তখন বললেন'আমার লেখাগুলো যে আমার জীবনে সত্যসত্যই ঘটেছে বা আমার সষ্টি যেসব যন্ত্রপাতি,ঔষধপত্রাদির কথা জানাবো ওগুলো যে সত্যি সত্যি আছে তারতো একটা চাক্ষুষ প্রমান পাওয়া দরকার, নইলে তোমার লেখায় আত্মবিশ্বাস আসবে কেন?ওগুলি নিছক কাল্পনিক রোমাঞ্চকাহিনী হয়ে যাবেআমার এখানে যাকিছু দেখবে সবই আমার নিজস্ব উদ্ভাবনা,প্রামান্য নিদর্শণ দেখতে নিশ্চয় আগ্রহী?এর জন্য হাতে সময়নিয়ে আস্তে হবেআমার এখানে রাতে থাকার কোনো অসুবিধা নেই, কিন্তু তোমার নিশ্চিন্ত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে তাই আজ রাতে অবসরে ফিরে যাও,কাল দুপুরে চলে আসবে"
 কথায় কথায় কখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার অন্ধকার চারপাশে নেমে এসেছে বুঝতে পারিনি, কাঁচের ঘেরা  বারান্দাতে বসেও ,কারন আমি যখন এখানে এসে ঢুকে ছিলাম তখন বারান্দাতে ভেতরে যে রকম আলো ছিলো তার কোনো রকম তারতম্য ঘটেনি,সুধু হাত ঘড়িতে দেখলাম দু ঘন্টা পেরিয়ে গেছেবাইরে বাগানের দিকে হাল্কা আলো-আঁধারদুরে শালবনের দিকে গাঢ় অন্ধকার,যে পথটা সোজা বাইরে দিকেগেছে সেই পথটা গেট অবধি আলোকিত ,অথচ কোথাও কোন আলোর বাতি চোখে পড়ছেনাকাঁচঘেরা বারান্দায় মনে হচ্ছেযেন দেওয়াল থেকে আলো বেরুচ্ছে অথচ দেওয়ালে কোন আলোর বাতি জ্বলছেনাআবার আমাকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার উকিল আমায় প্রশ্ন করলেন 'কি অবাক হয়ে আলোর উতস খুঁজছ? না এখানে কোন প্রথাগত প্রচলিত বিজলী বাতি থেকে আলো জ্বলছেনা,এখানে আমার নিজস্ব অটোলুমিয়েন্স ব্যবস্থা যাতে চারপাশে আলোর উজ্বলতা যতোই বদলাকনা কেন,আমার ঘরের মধ্যে আর এই পথে আলোর উজ্জ্বলতার মাত্রা বা লাক্স লেভেল একই থাকে,তাই বাইরে আঁধার নামে, আমার ঘরে এলাকার মধ্য আঁধার ঢুকতে দিইনা-অবশ্য আমি আলোর উজ্জ্বলতা যেমন চাইব তেমন নিয়ন্ত্রন করতে পারিকিন্তু প্রয়োজন না থাকলে স্বয়ংক্রিয় মাত্রা নিয়ন্ত্রন(ALC)ব্যবস্থা, ওটা একই মাত্রায় ধরে রাখে'

ক্রমশ-৩ ( লেখাটি বড় হওয়ায় ৪কিস্তিতে সমাপ্য )

ক ল্পবিজ্ঞাণের কাহিনী ১) বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল

১) বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল

(প্রারম্ভঃআমি ১৯৭৪ সালে অক্টোবর মাসে সরকারি চাকুরির সুবাধে কিছুদিন পুরানো ঝাড়্গ্রামে এক বাংলো বাড়িতে অল্প কয়েকদিন ভাড়াটে হিসাবে দুই বন্ধুদের সাথে গিয়ে ছিলাম,বন্ধুরা ১মাস থেকে চলে যায় ঐ বাংলোর মালিক আমাকে এমনিতেই ওনার বাংলোতে প্রয়োজনে থাকার জন্য বলেন, আমাকে খুব স্নেহ করতেন,আমার পরিচয় পাবার পর চুচুড়াতে আমাদের বাড়িতে একদিন এসে ছিলেন ওনার সাথে পরিচিত হবার পর  ওনাকে দেখেই এই লেখার সুচনা.১৯৬৫ সালে শ্রদ্ধেয় সত্যজিত রায়ের লেখা প্রথম প্রফেশর শঙ্কুর কাহিনী প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই এই চরিত্রটি মনে গাঁথা ছিলো তার প্রভাব আরোপিত হয় আমার লেখার মধ্যে. ১৯৫৪-৫৫ সালে এদেশে ক ম্পিউটারের আগমন,১৯৬৫সালেComputer society of India 6th march শুরু হলেও ১৯৭৩ সালে IBM370 computer দিয়েই IIT Madras পড়াশুনার বিভাগ চালু করেসুপার কম্পিউটারের প্রবেশ ও প্রসার  ঘটে ১৯৮০ র প রবর্ত্তী সময়আমার কম্পিউটারের কাহিনীগুলি ঐ ১৯৮২-৮৩ সালেরপূর্বের লেখাগুলি,জুল ভার্ণ,এইচ জি ওয়েলস,আর্থার সি ক্লার্ক,বিভুতি ভুষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের'চাঁদেরপাহাড়'আর সুকুমার রায়ের জীব জন্তু বিষয়ক লেখার প্রভাব আছেলেখাগুলি অনেক আগের তাই এখন প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় লেখাগুলির আকর্ষণ কম লাগতে পারেযথা সময়ে প্রকাশ করতে না পারাটা আমার ব্যর্থতাআমি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী শুরু করলাম  পাঠকদের ভাল লাগলে পরবর্তী কাহিনী গুলি প্রকাশিত হবে নইলে এইটাই শুধু  প্রকাশিত হবে )


বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল গত কয়েক দিন ধরে ভাবছিলাম দিন কয়েকের জন্য কাছে কোথাও ঘুড়ে আসি,কথাটা মাথায় আস্তেই দীনু কাকার  কথা মনে হোলো দীনু কাকার একটা  কটেজ আছে ঝাড়্গ্রামে অনেকবার ওখানে যাবার জন্য বলেছেন,সুন্দর ব্যবস্থা, কেয়ারটেকারও আছে,যদুনাথ ,আমাকে চেনেপুরানো ঝাড়্গ্রামে যাওয়ার পথে বাস রাস্তার ধারেই পাঁচিলঘেরা ছোট একতলা সাদা কটেজ  দীনুকাকা আসার সময় আমায় বলেছিলেন"ঝাড়্গ্রাম যখন যাচ্ছ,একবার ডাক্তারউকিলেরবাংলোতে গিয়ে ওনার সাথে আলাপ করে খোঁজ নিয়ে এসো,ওনার বাংলোর নাম উন্মেষ" দীনুকাকা একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললেন-জানিনা উনি এখনো বেঁচে আছেন কিনা?মনে হয় উনি সুস্থই থাকবেন, অবশ্য তাঁর অনেক বয়েস, এখন নব্বই পেরিয়ে গেছে দীনুকাকা ডাক্তার উকিল সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন,আমাকে বললেন,"তুমি আলাপ করলে দেখবে আশ্চর্য্য প্রতিভাবান মানুষ,জীবন্ত বিস্ময়  এই বাস্তব পৃথিবীতে যে এই রকম মানুষ জন্মেছে এটা ভাবলে অবাক হতে হয়দীনুকাকা খুব আবেগ প্রবন হয়ে উঠেছেন,বললেন 'আমি প্রথম পরিচয়েই বুঝেছিলাম উনি ভীষণ প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় ব্যক্তিত্ব পরে যত দেখেছি,জেনেছি ততই মুগ্ধহয়েছি ওনার সাথে প্রথম পরিচয় আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগেআমি তখন হ্যারিস এন্ড মার্টিন বুক সেলার্সএন্ড পাবলিকেশন প্রতিষ্ঠানে কাজ করিএই প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষার প্রায় সমস্ত বিষয়ের বই প্রকাশনা করত,তাছাড়া বিশ্বের নানা ভাষার মূল্যবানবই এরা বিক্রী করত, খুব নামী প্রতিষ্ঠানখুউব ব্যস্ত প্রতিষ্ঠান,ছাত্র-ছাত্রী,শিক্ষক,গবেষকদের ভীড় লেগেই থাকতআমি অবশ্য কাউন্টারে বসতামনা, আমার কাজ ছিলো বইএর যোগান ঠিক রাখাকাউন্টারে সেলস ম্যানেরা কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান থাকলে, আমার কাছে জেনে খরিদ্দারকে সেই মতন জানাতএক দিন বিকালের দিকে আমার কাছে কাউন্টার থেকেএকজন সেলস ম্যান এসে জানালো একজন ভদ্রলোক কতকগুলি প্রাচীন বইএর খোঁজ করছেন, যদি স্টকেনাথাকে তাহলে যোগার করেদেওয়া যাবে কিনা?কিম্বা কোথায় পাওয়াযাবে জানালে উনি সবিশেষ উপকৃত হবেন,এগুলি একান্ত জরুরীবইএর তালিকা হাতে নিয়ে দেখি প্রায় সবগুলি প্রাচীন সংস্কৃতপুঁথী বিষয়ক,তার সাথে আবার জার্মাণ থেকে প্রকাশিত অত্যাধুনিক মূল্যবান চিকিতসা ও কারিগরি প্রযুক্তি বিজ্ঞান বিষয়ক বইঐ ভদ্রলোককে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে বললাম ভদ্রলোককে প্রথমে দেখে কেমন জানি একটা সম্ভ্রম আদায়করা ব্যাক্তিত্ব বলে মনে হোলো,দেখলে শ্রদ্ধাজাগে,গলারস্বর বেশ গুরু গম্ভীরভদ্রলোকের সাথে আলাপে জানলাম উনি পদার্থবিদ্যা,রসায়ন নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর ডাক্তারি পড়ছিলেন এবং ডাক্তারির ফাইনাল পরীক্ষার মধ্যেই তাঁর বাবার মৃত্যু জীবনে এক আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়ে যায়ভদ্রলোকের নামে দুটি পেশার কারন জিজ্ঞাসা করায়,দীনুকাকা জানালেন ভদ্রলোকের নাম উপেন্দ্র কিশোর লসকর সংক্ষেপে উকিল আর বিশ্বেরযেকোন বিশিষ্ট ডাক্তার তুল্যজ্ঞান,পর্যবেক্ষণ,বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা তাই এই নামে পরিচিতিতিনি গবেষক বিজ্ঞানী,তাঁর গবেষণার বিষয়ওক্ষেত্র  বহু মুখী প্রাচীন ভেষজ চিকিতসা থেকে অত্যাধুনিক মহাকাশ গবেষণা সর্বক্ষেত্রেই অগ্রণী,তবে তিনি নিজের  কর্ম প্রতিভার জন্য বিন্দুমাত্র প্রচার বা প্রকাশ করতে কাউকে সুযোগ দেননিতিনি প্রকাশিত হন,চাননি এইজন্যই তিনি ঝাড়্গ্রামে একান্ত নিরিবিলিতে নিজস্ব পরিবেশের মধ্যে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেনতিনি বহু দেশীয়  ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বহু সমস্যার সমাধান করেছেন,কিন্তু তার নামযুক্ত হতে দেননি সেই সব মহান কাজের সঙ্গে আমাকে দীনুকাকা বললেন-"তুমি তো বিজ্ঞান ভিত্তিক অনেক কল্পকাহিনী লেখ,ডাক্তার উকিলের সাথে আলাপ হলে দেখবে এমন অনেক তথ্য পাবে যা কাজে লাগিয়ে তুমি সারা জীবনে বহু আকর্ষণীয় লেখা লিখতে পারবে" আমি দীনুকাকার কাছে ডাক্তার উকিলের সাথে দেখা করব  কথা দিয়ে চলে এলাম  ক্রমশ-২