Saturday, 21 November 2015

কল্পবিজ্ঞাণের কাহিনী ঃডাক্তার উকিল ও মগজ চালান


 

'বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল 'লেখাটা অনেক বন্ধুর ভালো লাগায়, আমি কল্পবিজ্ঞানের দ্বিতীয়  কাহিনী শুরু করলাম , পাঠকদের ভাল লাগলে পরবর্তী কাহিনী গুলি  প্রকাশিত হবে‌ মতামত জানাবেন   লেখাগুলি অনেক আগের তাই এখন প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় লেখাগুলির আকর্ষণ কম লাগতে পারেযথা সময়ে প্রকাশ করতে না পারাটা আমার ব্যর্থতা                                                                                
ডাক্তার উকিল ও মগজ চালান    তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়                                           
 আমি প্রথম বার যখন ঝাড় গ্রামে ডাক্তার উকিল জেঠুর উন্মেষ এ গেছিলাম, তখন ই ডাক্তার জেঠু আমাকে এই বিষয়টার একটা প্রাথমিক বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন আগামী দিনে এই পৃথিবীতে দেখবে হাজারটা রবীন্দ্রনাথ,হাজারটা আইন স্টাইন সৃষ্টি করা সম্ভবপর হচ্ছে-হয়ত রবীন্দ্রনাথ বা আইন  স্টাইনের মতন হুবহু নয় কিন্তু তখন পৃথিবীতে একই রকম প্রতিভাধরের একাধিক রেপ্লিকা দেখতে পাবে
আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম ঠিক বুঝতে পারছিনা,আপনি যদি একটু বুঝিয়ে বলেন তখন ডাক্তার জেঠু মৃদু হেসে বলেছিলেন-ঠিকই বলেছ,জিনিষটা শুনলে ঠিক বোঝা যাবেনা তবে চাক্ষুষ দেখতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে উনি বললেন,পৃথিবীর নানা প্রান্তে গবেষণা চলছে,কোথাও কোথাও গোপনে অনেক দূর এগিয়েছে, তবে বিষয়টি এখন ও তেমন আলোড়িত হয়নি
ডাক্তার জেঠু বললেন
,আমি রাশিয়ার একটি স্কুলে দুটি ছাত্রের মধ্যে কথাবার্তা শুনে বেশ স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম-ওদের ধারনা হয়ে ছিলো যে আমি রাশিয়ান ভাষা  বুঝিনা কিম্বা ওরা আমাকে তেমন আমল দিতে চায়নি,ভেবেছে বিজ্ঞানের এই গোপন জটিল বিষয় আমার বোধগম্য  হবে নাআজকের দিনে যেমন হার্ডডিস্ক বা কমপ্যাক্ট ডিস্কে তথ্য কপি করে রাখা হয়- একই জিনিষের বহু কপি তৈরি করা যায় নিমেষে ঠিক তেমনি মানুষের মস্তিষ্কে থাকা সম্পূর্ণ তথ্য ,মস্তিষ্কের গঠন এর হুবহু  নকল তৈরী সম্ভব  যেহেতু মানুষের মস্তিষ্ক ঐ বৈদ্যুতিন (ইলেকট্রণিক)  যন্ত্রের মতনই এক প্রক্রিয়ায় কাজ ক রে থাকে
ওখানে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে পাঠানো তথ্য বা সংকেত শিরা ধমনী বাহিত হয়ে মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠে যায়-ওখানে ওই তথ্য বিশ্লেষণ করে তেমন তেমন অনুভূতি সৃষ্টি হয়-শরীরের বিভিন্ন অংশে সেই সব বিশ্লেষিত তথ্যের সংকেত চলে যায়যদি মানুষের মস্তিষ্ক ঠিক ঠিক ভাবে কাজ করে, তথ্যগুলো  সংকেত কিভাবে গ্রহণ করে,বিশ্লেষণ করে্‌বোঝা যায়,তা হলে ওই মস্তিষ্কের সঞ্চিত তথ্য সমুহের নকল করা সম্ভবপর হবেইছাত্র দুজন এও আলোচনা করছিলো মানুষ চিন্তা ভাবনা করলে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কম্পন , বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তাই চিন্তা করলে মাথা ঘামে,মাথা ভার ভার মনে হয়এই বিদ্যুৎ তরঙ্গ যে কম্পন সৃষ্টি করে সেই কম্পন কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের মতন মানুষের মস্তিষ্কে মগজে লিপিবদ্ধ হয়মানুষের মস্তিষ্কেও দু রকম স্মৃতি ভান্ডার আছে, একটা তাতক্ষণিক সাময়িক,অপরটি স্থায়ী
ছাত্র দুজন কৃত্রিম জেলীর রুপান্তর ঘটিয়ে  তার মধ্যে বৈদ্যুতিন (ইলেকট্রণিক)  সংকেত গ্রহণ ও  বিশ্লেষণ করার প্রচেষ্টা চালাছে
তাদের কথা থেকে এটাও বুঝতে পারলাম যে তাদের একটা নিজস্ব গোপন পরীক্ষাগারে-গবেষণা  করে, গিনিপিগের উপর  পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেছাত্র দুজন হাতে একটা ফাইল নিয়ে আলোচনা করছিলো-আমি দূর থেকেই আড়চোখে লক্ষ করছিলাম, ঐ ফাইলে কয়েক টা ফটোগ্রাফ আছে,যেখানে সারি সারি গিনিপিগ পরীক্ষাগারে টেবিলে মোমের ট্রের উপর শোয়ানো মস্তিষ্কে সারা দেহে বহু তারের   সংযোগ বড়,বড় বাক্সের মতন যন্ত্র, তাতে বহুমিটার, এল,,ডি, বাজার লাগানো আছে-বোঝা যাচ্ছে গিনিপিগ গুলোর মস্তিষ্ক সহ সারা দেহের অনুভুতি,বাহ্যিক প্রভাবের পরীক্ষা গবেষণা  চলছে
আমি এরপর ছেলে দুটিকে দূর থেকে অনুসরণ করে তাদের গবেষণাগারের অনুসন্ধান পেলাম
গাছপালা ঘেরা একটা পরিত্যক্ত বাগানের মধ্যে একটি পুরানো জনশূন্য বাড়ির মধ্যেই গড়ে উঠেছে গবেষণাগার ৮-১০ জন তরুন যুবক ডাক্তারবাবু অপারেশনের সময় যেমন এপ্রোন পরে থাকেন সেই রকম এপ্রোন পরে গবেষণাগারে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে একান্ত গবেষণায় মগ্ন কারো কারো কানে বড় হেডফোন লাগানো-সামনে রেকর্ডিং স্টুডিওর মত যন্ত্রপাতি,হাজারো সুইচ,লাইট মিটার ঐ যুবক দুজন আসতে সকলে তাদের ঘিরে ফেললোযুবক দুজন সবাইকে  যে নির্দেশ দিলো সেটা এই রকম , শহরে মোবাইল ভ্যান নিয়ে চারপাশে নিরাপত্তা বাহিনী যখন টহল দিচ্ছে, তাদের কোন একটি যন্ত্রে এই অঞ্চলে টহল দেওয়ার সময় একটি অতি উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গের উপস্থিতি ধরা পড়েছেতারা সন্দেহ করছে কোন গোপন জঙ্গী বাহিনী এখানে গোপনে  কার্য্য কলাপ চালাচ্ছে,তাদের উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার সংযোগ ব্যাবস্থা ,যোগাযোগ রাখছে-এখন ও সঠিক স্থান ও উতস বার করতে পারিনিসর্তক হওয়া প্রয়োজন, নইলে গবেষণার বিষয় জানাজানি হয়ে যাবে
সকলে জানতে চাইলো এখন তাহলে কি করণীয়
?ঐ যুবকের মধ্যে একজন বলল- আমাদের থিংক রিডার, পালস ডিকোডার যন্ত্রটি একমাত্র উচ্চ কম্পাঙ্ক সৃষ্টি করে -অবিলম্বে ওই যন্ত্রদুটিকে তরঙ্গ নিরোধক আবরণ তৈরী করে ,তরঙ্গের বিকিরণ ও বিস্তার আটকাতে হবেএটা কি করে সম্ভব? জানতে চাইলে অপর যুবকটি জানালো একটি ধাতব আবরণের মধ্যে সমগ্র যন্ত্রটি রেখে বাইরে একটি বর্তুলাকার তড়িত চুম্বকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা দরকার এই ক্ষেত্রের মধ্যেই ঐ বিকিরিত তরঙ্গ বাধাপ্রাপ্ত হবে
এক ঘন্টার মধ্যে এরকম ব্যবস্থা তারা করে ফেললোআমি একটা ঝোপ ঝাড়ে ঢাকা গাছের উপর উঠে লুকিয়ে সব লক্ষ কর ছিলাম যুবকেরা নিজেদের কাজ নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিলো আমার উপস্থিতি তারা
 বুঝতে পারিনি-তাছাড়া এমনটা হতে পারে তারা ভাবতেও পারিনি
আমি আমার গোপন মাইক্রো
 ইনফ্রারেড ক্যামেরা ,রেকর্ডিং যন্ত্র ও শক্তিশালী বেতার শব্দ ও সংকেত প্রেরণের যন্ত্রটা যেটা একটা ছোট দেশলাইএর বাক্সের চেয়েও ছোট, ঐ ঘরটির কাছে রেখে চলে এলাম আমার হোটেলে নিজের ঘরে
ঐযন্ত্রটির মধ্যেই সমস্ত কিছু রেকর্ড হয়ে থাকর ব্যবস্থা আছে আমি ঠিক করলাম সন্ধ্যার পর গিয়ে গোপনে যন্ত্রটি নিয়ে আসবো, আর ঘরে বসে দেখে নেব গবেষণার হাল তক পরিস্থিতি  সিধান্ত মোতাবেক সন্ধ্যাবেলা গোপনে ঐ গবেষণাগারের কাছ থেকে নিয়ে এলাম আমার যন্ত্রটা আমার যন্ত্রটা এনে আমার নিজস্ব বিশ্লেষক যন্ত্রে লাগাতেই যে তথ্য  চিত্রসহকারে সামনে ফুটে উঠল তাতে আমি বিস্ময়ে হতবাক জোড়া গিনিপিগ টেবিলে শোয়ানো আছে দুটি করে গিনিপিগের পরস্পর  মস্তিষ্কের মধ্যে বহু তার যুক্তএকটি গিনিপিগের মস্তিষ্ক থেকে অদ্ভুত অজস্র সংকেত প্রেরিত হচ্ছে অন্য গিনিপিগের মস্তিষ্কে,আর অদ্ভুত ভাবে সেই মস্তিষ্কটির যে পরিবর্তন ঘটছে বোঝা যাচ্ছে এরপর ঘন্টা তিনেক পর দুটি করে গিনিপিগ নিয়ে গবেষকগন পরীক্ষাকরে দেখছেন-দুটো গিনিপিগের মধ্যে আশ্চর্য্যমিলঠিক একটা অন্যটার হুবহু নকল,চলাফেরা কোন  কিছু দেখে তার প্রতিক্রিয়া সব এক, দুটোর মধ্যেবুঝলাম দুটো গিনিপিগের মস্তিষ্ক একই ভাবে কাজ করছে, দুটো হুবহু এক হয়ে গেছে

এরপর আরো বিস্ময়কর ভাবে পরদিন একইভাবে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছি মস্তিষ্ক সংযোজনের আগে দুটো গিনিপিগের আচরণ একরকম থাকেনাকোন টা অতি চঞ্চল অপরটি শান্তএকটা
খাবার জন্য পাগল
,অপরটা অতো লোভী নয়একটা লম্বা লম্বা লাফ দেয়, অন্যটা সেই তুলনায়
 কম লাফায়
  কিন্তু মগজ চালানের পর দুটোই হুবহু এক আচরণ করেগবেষকগন মস্তিষ্ক
 পরস্পর  সংযোজনের আগে একটি যন্ত্রে গিনিপিগ গুলোর নানা পর্যবেক্ষণ তথ্য পরীক্ষাকরে
সমস্ত তথ্য রেকর্ডভুক্ত করে রাখছে
মগজ চালানের পর আবার দুটোর   পরীক্ষাকরে সমস্ত
 তথ্য রেকর্ডভুক্ত করে রাখছে
। 

 গবেষকগনের কথাবার্ত্তা আলোচনা শুনে বুঝেছি তারা প্রবলভাবে উতসাহিত খুশী ,এই
 পরীক্ষায়  তারা
এরপর উন্নত জীব এমনকি মানুষের মস্তিষ্ক নকল করতে সক্ষম শীঘ্রই এটা সম্ভবপর হবে তখন একই চিন্তা ভাবনা আচার আচরণ সম্পন্ন বহু মানুষ সৃষ্টি সম্ভব,তৈরী হবে একাধিক নিঊটন,আইনস্টাইন,রবীন্দ্রনাথ , শিল্পী, সাহিত্যিক,অভিনেতা, খেলোয়ারদুর্ভাগ্য
বশঃত আমার সংগৃহীত সব তথ্য দেশে ফেরার পর যখন আমি আমার মুল তথ্য সংগ্রাহক
 যন্ত্রে নথী ভুক্ত করে রাখতে যাই
, সেই সময় বাড়িতে ব্জ্রপাত জনিত কারণে (ঐ সময়
ব্জ্রনিরোধক যন্ত্রটি ক্ষতি গ্রস্থ ছিলো
, আমার না জানা থাকায়) এই তথ্য সংগ্রহ ও চালান
 ব্যবস্থাটা ক্ষতি গ্রস্থ হয়
অন্য তথ্য যেগুলি আগে থেকে সাবধানে সঞ্চিত  ছিলো সেগুলি
অক্ষত থাকে
কিন্তু এই তথ্য গুলি আমি বিশদে বিশ্লেষণ করতে পারিনি অপেক্ষায় আছি কবে
ওই বিস্ময়কর আবিষ্কারের কথা সারা বিশ্ব -সমাজ জানতে পারবে
(ডাক্তার উকিল জেঠুর
ডায়েরী থেকে প্রাপ্ত)

No comments:

Post a Comment