ডাক্তার উকিল ও কম্পিউটারের স্মৃতি
ভ্রংশ রহস্য ঃ তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আমি আজ যে ঘটনাটি প্রকাশ করতে চলেছি এটা'ডাক্তার উকিল ও কম্পিউটারের স্মৃতিভ্রংশ রহস্য' হিসাবেই বর্ণনা করব।এই লেখার প্রকাশিত তত্ত্ব ও তথ্য যেহেতু ডাক্তার উকিল মহাশয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত তত্ত্ব ও তথ্য পঞ্জিকা থেকে নেওয়া , তাই এই লেখাটা ওনার নিজস্ব রচনার ভঙ্গিতেই প্রকাশ করলাম।ডাক্তার উকিলের দেওয়া শর্তানুযায়ী,সময়,স্থান,কাল পাত্র কোনটাই সঠিক নয়,মুল রচনার সাথে মিল নেই, কেবল মাত্র ঘটনা আর তার মুল তত্ত্ব ও ব্যাখাটি অবিকল রাখা হয়েছে।আনুমানিক চল্লিশ বছরআগে ১৯৭৪ সালে ঝাড়্গ্রামে ডাক্তার উকিলের সাথে পরিচিত হই,তখন ই তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পঞ্জিকা গুলি পাই। আমি লেখা শুরু করেছিলাম ১৯৮০ সালে কিন্তু আমার সরকারী কাজের চাপে আর পারিবারিক নানা ঘটনায় লেখাটা সম্পূর্ণ করতে পারিনি।অসম্পূর্ণ লেখা আর ডাক্তার জেঠুর দেওয়া লিখিত তথ্যের পাণ্ডুলিপিটি চাকুরীর স্থানান্তরিত হওয়ার সময় হারিয়ে যায়।
২০১০ সালে অক্টোবার মাসে চাকুরীর থেকে অবসর নেওয়ার পর পাণ্ডুলিপিটির অনুসন্ধান শুরু করি।সাম্প্রতিক ঐ অসম্পূর্ণ লেখা যার অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে,মূলপাণ্ডুলিপিটির অনেক টা অংশ হারিয়ে গেছে। তাই লেখাগুলির কিছু অংশ মূল লেখার থেকে আলাদা হয়ে মিশে গেছে আমার নিজস্ব রচনা,আমি স্মৃতি থেকে যেটুকু মনে করতে সক্ষম হয়েছি,অনেক ক্ষেত্রে হয়ত তাই আধুনিক কিছু তথ্য, জিনিস পত্রের নাম এসে গেছে,যে গুলো মূল রচনায় অন্য নামে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করা ছিলো।এই চল্লিশ বছরের ব্যবধানে বহু নতুন নতুন আবিষ্কার,যন্ত্রপাতি,সরঞ্জাম বাজারে এসেছে,ডাক্তার উকিলের সাথে আলাপের সময় কেউ এগুলি কল্পনাও করতে পারতনা।তখন ছিলো অজ্ঞাত,আজকে কিছু কিছু জিনিস ঘটনা বিস্ময়কর না মনে হতে পারে কিন্তু তখন ছিলো অকল্পনীয়।ডাক্তার উকিলের পাণ্ডুলিপি থেকে যেভাবে পেয়ে ছিলাম লেখাগুলো সেই ভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। লেখাটি একটু নীরস তাত্ত্বিক মনে হতে পারে, এজন্য আমি দুঃখিত)
আমি আজকের ডাকে কলেজের সহ পাঠী পি,এল।দোশীর কাছ থেকে এই চিঠিটা পেলাম। দোশী ইলেক্ট্রণিক্স নিয়ে পড়াশুনা করেছে,খুউব ইন্টালিজেন্ট অল্প দিনের মধ্যেই ও ভারত সরকারের ইলেক্ট্রণিক্স বিভাগে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারিক হয়ে দিল্লীতেই আছে। ও প্রায় ই নানা বিষয়ে আমার পরামর্শ নিয়ে থাকে।ওরসাথে মোটামুটি পত্র মাধ্যমে যোগাযোগটাও আছে। আমি দুবার বিশেষ প্রয়োজনে দিল্লীতে গেছিলাম তখন ওর সাথে দেখা হয়েছিলো।ও আমাকে চাক্ষুষ দেখে প্রথমে একটু চমকে গেছিলো কারন ও জানত আমি প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে গবেষণা করছি,কিন্তু আমি যে নিজের আচার আচরন ও বৈদিক ঋষিদের মতন নিয়ম নিষ্ঠা মেনে ঐ রকম পোষাক ব্যবহার করছি,ঐ রকম আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি এটা ওর জানা ছিলোনা।চিঠিতে দোশী যা লিখেছে তার মুল বক্তব্য অবিলম্বে আমাকে একবার দিল্লী যেতে হবে,ওখানে এক ভীষণ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে-শহরে সমস্ত কম্পিউটার আপনা আপনি অচল হয়ে পড়ছে,বিশেষ করে নামী নামী কোম্পানীর তৈরী যেগুলো। কোন কারন বোঝা যাচ্ছেনা আকস্মিক ভাবে মুল প্রসেসর গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সমস্ত কোম্পানী থেকে এর অনুসন্ধান করেও কোন সুত্র বার করতে পারিনি,তাই আমার সাহায্য একান্ত ভাবে দরকার।অবিলম্বে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করতেই হবে।বিশেষ অনুরোধ করে আমাকে যাবার জন্য লিখেছে।
আজ দোশীর সাথে দেখা করলাম।আমায় দেখে ভীষণ খুশী,ওর একান্ত বিশ্বাস যে আমি সমস্যার সমাধান করে ফেলবো। আমি দোশীকে সমস্যার একটা বিশদ বিবরণ দিতে বললাম।দোশী যা বললো তাতে জানা যায় আজ মাস খানেক যাবৎ এই শহরে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছেভয়ঙ্কর সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।অফিসে,কারখানায়,দোকানে , বাড়িতে যেখানে যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়,প্রায় সর্বত্র কম্পিউটার গুলি চলতে চলতে হঠাত মনিটরে সিগন্যাল চলে যাচ্ছে,আর ঠিক হচ্ছেনা।।সমস্ত নামী কোম্পানী থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানিয়েছে তারা কোন কারণ বুঝতে পারছেনা,কি জন্য মুল প্রসেসর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কোম্পানীর বিশেষজ্ঞগন, যেখানে কম্পিউটারগুলি ব্যবহার করা হয়েছে সে সমস্ত জায়গাগুলিও পরীক্ষা আমি জানতে চাইলাম শহরে সমস্ত কম্পিউটার ই কি বিকল হয়ে আছে?দোশী জানালো স্কুলের কম্পিউটার গুলি মোটামুটি ঠিক আছে,আর কতকগুলি সরকারী অফিসের কম্পিউটার ঠিক আছে।আর আশ্চর্য্যের বিষয় লোকাল এসেমব্লেড কিছু কম্পিউটার ঠিকঠাক চলছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম লোকাল এসেমব্লেড কম্পিউটারগুলি কি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে ওগুলির কোন বিশেষত্ব আছে কিনা?উত্তরে মিঃদোশী জানালেন হ্যাঁ তাও দেখা হয়েছে,তেমন কোন বিশেষত্ব কিছুই নেই-বাজারে যে সমস্ত মাদার বোর্ড,প্রসেসর ও অনান্য এক্সেসরিজ কিনতে পাওয়া যায় সেগুলি দিয়েই তৈরী।
এবার আমি জানতে চাইলাম যে সব কম্পিউটার গুলিতে কি ইন্টারনেট সংযোগ আছ?কোন বিশেষ সময়ে বা কোন বিশেষ প্রোগ্রাম চালানোর সময় কি এমন কাণ্ড ঘটছে?উত্তরে যা জানা গেলো-দুটি খটকা মনে দেখা দিলো-প্রথম টা হোলো কম্পিউটারগুলি হয় সকালের দিকে নয়ত রাতের দিকে কাজ করার সময় এমন ঘটনা ঘটেছে, দ্বিতীয় খটকা সব ক ম্পিউটারের ক্ষেত্রে মনিটর আর মুল CPUটা পরীক্ষা করা হয়েছে।ইনপুট সিগন্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে, ইনপুট ডিভাইসগুলো থেকে। পাওয়ার ইনপুট ডিভাইস গুলো কেঊ পরীক্ষা করেনি।আমি মিঃ দোশীকে বললাম খারাপ হয়ে যাওয়া কম্পিউটারের পুরো সেটআপ আর লোকাল এসেমব্লেড কম্পিউটারের পুরো সেটআপ যেটা ভালো আছে আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
মিঃ দোশী আমায় নিরিবিলিতে যাতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিলেন।আমি প্রথমে ঠিক করে ছিলাম মেন পাওয়ার লাইন,পাওয়ার ইনপুটটা চেক করে দেখব যে কোন অস্বাভাবিকত্ব আছে কিনা?যদি থাকে তাহলে লোকাল এসেমব্লেড কম্পিউটারগুলির উপর এর প্রভাব কি ? পরীক্ষায় একটা অদ্ভুত জিনিস পাওয়া গেলো।সকাল ৪টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল মেন লাইনে খুউব অল্প সময়ের জন্য একটা কম্পন ধরা পড়ছে,যেটা খুউব অস্বাভাবিক আচরণএই কম্পনটা খারাপ হয়ে যাওয়া কম্পিউটারের UPS এর ইনপুট এবং আউটপুটে থাকছে,কিন্তু যে কম্পিউটারগুলি লোকাল এসেমব্লেড তার ক্ষেত্রে UPS এর ইনপুট থাকলেও আউটপুটে কোন অস্বাভাবিক কম্পন থাকছেনা।ব্যাস পাওয়া গেলো কম্পিউটার খারাপ হওয়ার মুলে কি কারন স্থল উৎস।
কিন্তু কিভাবে কম্পনটা মেন ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার লাইনে আসছে? কোথা থেকে কিভাবে আসছে?এর পিছনে কোন ষড়যন্ত্র নেইতো?থাকলে তার কারন কি?আমি দোশী কে আমার পর্য্যবেক্ষণের ফলটা জানালাম।আর বললাম।এই কম্পনের উৎস বার করতে তার দপ্তরের পুর্ণ সহায়তা দরকার। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কতকগুলি বিশেষ পরীক্ষার যন্ত্র দরকার।মিঃ দোশী আমার চাহিদা মতন সব যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে দিলো।খুউব ভালো করে দিন রাত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম।দেখতে পেলাম একটি অতি উচ্চ কম্পন থেকে অতি নিন্ম কম্পন(তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ) পর্য্যায় ক্রমে খুব অল্প সময়ের জন্য সকালের দিকে আর রাত্রের দিকে দুবার মেন ইলেকট্রিক্যাল লাইনে ধরা পড়ছে।এই কম্পন সাধারণ স্পাইক,সার্জ প্রোটেকটারে আটকানো শক্ত বিশেষ ধরনের প্রোটেক্টটর দরকার।এর জন্য যে LCR প্রয়োজন তা বাজারে চলতি পাওয়া যাবেনা।এবার পরীক্ষা করলাম এসেমব্লেড কম্পিউটারগুলির মেন লাইন ইনপুট সকেটটা। সাধারণ ভাবে দেখলে অনান্য সকেটের মতন কিন্তু একটু লম্বায় বড়,মোটা শক্ত পোক্ত দেখতে।সকেট টা খুলে নিয়ে পরীক্ষা করতেই দেখা গেলো ঐ সকেটের মধ্যেই রয়েছে অতি ক্ষুদ্র বিশেষ LCR সাথে সুক্ষ্মএক্টিভ সার্কিট যা লাইনের ওই বিশেষ কম্পনকে আটকে দেয়।এবার আমার মনে একটা প্রশ্ন দেখা দিলো-এই এসেমব্লেড কম্পিউটারে হঠাৎ এইLCR লাগানো সকেট কেন ব্যবহার করা হয়েছে?আরো চারটে এসেমব্লেড কম্পিউটার যেগুলি খারাপ হয়নি পরীক্ষা করে দেখা গেলো-সব গুলি একটি ই সংস্থার তৈরী এবং ঐ কোম্পানী যে UPSকম্পিউটারের সাথে দেয় তার পাওয়ার আউটপুট সকেটেও বিশেষ এইLCR লাগানো যা এমনি দেখলে বোঝা যাবেনা।এই সংস্থাটি জানতো ইলেকট্রিকের মেন লাইনে ঐ অস্বাভাবিক তড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গের উপস্থিতির কথা,কিন্তু কেন আর কি ভাবে জানলো?
আমি মিঃ দোশীকে এই কোম্পানীর বিগত তিন মাস ধরে কেমন কম্পিউটার বিক্রয় হচ্ছে তা জানাতে বললাম আর ছয়মাস আগের এদের কোন কম্পিউটার পরীক্ষা করতে চাইলাম । মিঃ দোশী আমার চাহিদা মতোন তথ্য জোগার করে দিলেন।দেখা যাচ্ছে,বিগত দুমাসে যেখানে ১০(দশ)টি কম্পিউটার বিক্রী করেছে সেখানে এক মাসে বিক্রী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ তে এর মধ্যে বিগত ১৫ দিনেই ১৫২ টি।বুঝতে অসুবিধা হোলোনা যে এইসংস্থার কম্পিউটার যে বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম এটা প্রচারিত হয়েছে।ছয় মাস আগের কম্পিউটারে পরীক্ষা করে দেখা গেলো এইLCRপ্রতিরোধ ব্যবস্থা লাগানো হয়নি-এইLCRকম্পিউটারে পরবর্ত্তী কালে লাগানো হয়েছে। এবং বিজ্ঞাপনে লেখা হচ্ছে এই কম্পিউটার সাম্প্রতিককম্পিউটার বিপর্যয়তে কোন ক্ষতি হবেনা গ্যারান্টিযুক্ত। মিঃ দোশীকে বললাম এইসংস্থার কারখানার উপর বিশেষ গোপনে নজর রাখতে। আমার সন্দেহ এই সংস্থাটি তাদের এসেমব্লেড কম্পিউটার বিক্রির জন্য নিশ্চয় এই দুরভিসন্ধিমুলক চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে। এইসংস্থাই কোন বিশেষ উপায়ে মেন ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাই লাইনে পরিবর্তনশীল শক্তি শালী তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ কে মিশ্রিত করে ক্ষণিকের জন্য প্রতিদিন দুবার পাঠাচ্ছে-সময়টা সাধারণ কার্য্যকাল ১০টা থেকে ৬টা বাদ রেখে, কারণ এই সময়ে তড়িত লাইনে নানা রকম কাজ হয়,বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাই ঝুঁকি এড়াতে সকাল আর রাত্রি বেছে নেওয়া হয়েছে, আর এই জন্যই স্কুলের কম্পিউটার,অনেক অফিসের কম্পিউটার,এই বিপর্যয়ে আক্রান্ত হয়নি।আমার অন্য কাজের বিশেষ তাড়া থাকায় তিন দিন থেকেই ফিরে এলাম কোলকাতায়-সেখান থেকে ঝাড়্গ্রামের উন্মেষে।মিঃ দোশী কে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছিলাম কি করতে হবে।আমি ফিরে আসার সাত দিনের মধ্যে অশেষ ধন্যবাদ,কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিঃ দোশীর পাঠানো পত্র পেলাম, তাতে উনি জানিয়েছেন ঐ কোম্পানী ধরা পড়েছে তাদের হাই লো অটো ভেরিয়েবল ফ্রিকোয়েন্সী তড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গ জেনারেটর,মডুলেটরযন্ত্রে যার সাহায্যে ইলেক ট্রিকের মুল ফ্রীকোয়েন্সীর সাথে এই মডুলেটেড ফ্রীকোয়েন্সীর তরঙ্গটা মেশানো হোতো আটক করা হয়েছে। ওইসংস্থার মালিক ভূষণ লাল কেজিওয়ালা সব স্বীকার করেছে।এখন আর কোন সমস্যা নেই-সব স্বাভাবিক হয়েছে। কম্পিউটারের স্মৃতিভ্রংশ আর ঘটছেনা।
(প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সামরিক বিভাগ,প্রশাসন ,বিভিন্ন এলাকায় সিগন্যাল জ্যামার ব্যবহার করে নিরাপত্তার জন্য,এগুলিতে মূলত রেডিও ফ্রীকোয়েন্সী, তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় )
আমি আজ যে ঘটনাটি প্রকাশ করতে চলেছি এটা'ডাক্তার উকিল ও কম্পিউটারের স্মৃতিভ্রংশ রহস্য' হিসাবেই বর্ণনা করব।এই লেখার প্রকাশিত তত্ত্ব ও তথ্য যেহেতু ডাক্তার উকিল মহাশয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত তত্ত্ব ও তথ্য পঞ্জিকা থেকে নেওয়া , তাই এই লেখাটা ওনার নিজস্ব রচনার ভঙ্গিতেই প্রকাশ করলাম।ডাক্তার উকিলের দেওয়া শর্তানুযায়ী,সময়,স্থান,কাল পাত্র কোনটাই সঠিক নয়,মুল রচনার সাথে মিল নেই, কেবল মাত্র ঘটনা আর তার মুল তত্ত্ব ও ব্যাখাটি অবিকল রাখা হয়েছে।আনুমানিক চল্লিশ বছরআগে ১৯৭৪ সালে ঝাড়্গ্রামে ডাক্তার উকিলের সাথে পরিচিত হই,তখন ই তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পঞ্জিকা গুলি পাই। আমি লেখা শুরু করেছিলাম ১৯৮০ সালে কিন্তু আমার সরকারী কাজের চাপে আর পারিবারিক নানা ঘটনায় লেখাটা সম্পূর্ণ করতে পারিনি।অসম্পূর্ণ লেখা আর ডাক্তার জেঠুর দেওয়া লিখিত তথ্যের পাণ্ডুলিপিটি চাকুরীর স্থানান্তরিত হওয়ার সময় হারিয়ে যায়।
২০১০ সালে অক্টোবার মাসে চাকুরীর থেকে অবসর নেওয়ার পর পাণ্ডুলিপিটির অনুসন্ধান শুরু করি।সাম্প্রতিক ঐ অসম্পূর্ণ লেখা যার অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে,মূলপাণ্ডুলিপিটির অনেক টা অংশ হারিয়ে গেছে। তাই লেখাগুলির কিছু অংশ মূল লেখার থেকে আলাদা হয়ে মিশে গেছে আমার নিজস্ব রচনা,আমি স্মৃতি থেকে যেটুকু মনে করতে সক্ষম হয়েছি,অনেক ক্ষেত্রে হয়ত তাই আধুনিক কিছু তথ্য, জিনিস পত্রের নাম এসে গেছে,যে গুলো মূল রচনায় অন্য নামে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করা ছিলো।এই চল্লিশ বছরের ব্যবধানে বহু নতুন নতুন আবিষ্কার,যন্ত্রপাতি,সরঞ্জাম বাজারে এসেছে,ডাক্তার উকিলের সাথে আলাপের সময় কেউ এগুলি কল্পনাও করতে পারতনা।তখন ছিলো অজ্ঞাত,আজকে কিছু কিছু জিনিস ঘটনা বিস্ময়কর না মনে হতে পারে কিন্তু তখন ছিলো অকল্পনীয়।ডাক্তার উকিলের পাণ্ডুলিপি থেকে যেভাবে পেয়ে ছিলাম লেখাগুলো সেই ভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। লেখাটি একটু নীরস তাত্ত্বিক মনে হতে পারে, এজন্য আমি দুঃখিত)
আমি আজকের ডাকে কলেজের সহ পাঠী পি,এল।দোশীর কাছ থেকে এই চিঠিটা পেলাম। দোশী ইলেক্ট্রণিক্স নিয়ে পড়াশুনা করেছে,খুউব ইন্টালিজেন্ট অল্প দিনের মধ্যেই ও ভারত সরকারের ইলেক্ট্রণিক্স বিভাগে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারিক হয়ে দিল্লীতেই আছে। ও প্রায় ই নানা বিষয়ে আমার পরামর্শ নিয়ে থাকে।ওরসাথে মোটামুটি পত্র মাধ্যমে যোগাযোগটাও আছে। আমি দুবার বিশেষ প্রয়োজনে দিল্লীতে গেছিলাম তখন ওর সাথে দেখা হয়েছিলো।ও আমাকে চাক্ষুষ দেখে প্রথমে একটু চমকে গেছিলো কারন ও জানত আমি প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে গবেষণা করছি,কিন্তু আমি যে নিজের আচার আচরন ও বৈদিক ঋষিদের মতন নিয়ম নিষ্ঠা মেনে ঐ রকম পোষাক ব্যবহার করছি,ঐ রকম আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি এটা ওর জানা ছিলোনা।চিঠিতে দোশী যা লিখেছে তার মুল বক্তব্য অবিলম্বে আমাকে একবার দিল্লী যেতে হবে,ওখানে এক ভীষণ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে-শহরে সমস্ত কম্পিউটার আপনা আপনি অচল হয়ে পড়ছে,বিশেষ করে নামী নামী কোম্পানীর তৈরী যেগুলো। কোন কারন বোঝা যাচ্ছেনা আকস্মিক ভাবে মুল প্রসেসর গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সমস্ত কোম্পানী থেকে এর অনুসন্ধান করেও কোন সুত্র বার করতে পারিনি,তাই আমার সাহায্য একান্ত ভাবে দরকার।অবিলম্বে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করতেই হবে।বিশেষ অনুরোধ করে আমাকে যাবার জন্য লিখেছে।
আজ দোশীর সাথে দেখা করলাম।আমায় দেখে ভীষণ খুশী,ওর একান্ত বিশ্বাস যে আমি সমস্যার সমাধান করে ফেলবো। আমি দোশীকে সমস্যার একটা বিশদ বিবরণ দিতে বললাম।দোশী যা বললো তাতে জানা যায় আজ মাস খানেক যাবৎ এই শহরে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছেভয়ঙ্কর সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।অফিসে,কারখানায়,দোকানে , বাড়িতে যেখানে যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়,প্রায় সর্বত্র কম্পিউটার গুলি চলতে চলতে হঠাত মনিটরে সিগন্যাল চলে যাচ্ছে,আর ঠিক হচ্ছেনা।।সমস্ত নামী কোম্পানী থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানিয়েছে তারা কোন কারণ বুঝতে পারছেনা,কি জন্য মুল প্রসেসর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কোম্পানীর বিশেষজ্ঞগন, যেখানে কম্পিউটারগুলি ব্যবহার করা হয়েছে সে সমস্ত জায়গাগুলিও পরীক্ষা আমি জানতে চাইলাম শহরে সমস্ত কম্পিউটার ই কি বিকল হয়ে আছে?দোশী জানালো স্কুলের কম্পিউটার গুলি মোটামুটি ঠিক আছে,আর কতকগুলি সরকারী অফিসের কম্পিউটার ঠিক আছে।আর আশ্চর্য্যের বিষয় লোকাল এসেমব্লেড কিছু কম্পিউটার ঠিকঠাক চলছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম লোকাল এসেমব্লেড কম্পিউটারগুলি কি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে ওগুলির কোন বিশেষত্ব আছে কিনা?উত্তরে মিঃদোশী জানালেন হ্যাঁ তাও দেখা হয়েছে,তেমন কোন বিশেষত্ব কিছুই নেই-বাজারে যে সমস্ত মাদার বোর্ড,প্রসেসর ও অনান্য এক্সেসরিজ কিনতে পাওয়া যায় সেগুলি দিয়েই তৈরী।
এবার আমি জানতে চাইলাম যে সব কম্পিউটার গুলিতে কি ইন্টারনেট সংযোগ আছ?কোন বিশেষ সময়ে বা কোন বিশেষ প্রোগ্রাম চালানোর সময় কি এমন কাণ্ড ঘটছে?উত্তরে যা জানা গেলো-দুটি খটকা মনে দেখা দিলো-প্রথম টা হোলো কম্পিউটারগুলি হয় সকালের দিকে নয়ত রাতের দিকে কাজ করার সময় এমন ঘটনা ঘটেছে, দ্বিতীয় খটকা সব ক ম্পিউটারের ক্ষেত্রে মনিটর আর মুল CPUটা পরীক্ষা করা হয়েছে।ইনপুট সিগন্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে, ইনপুট ডিভাইসগুলো থেকে। পাওয়ার ইনপুট ডিভাইস গুলো কেঊ পরীক্ষা করেনি।আমি মিঃ দোশীকে বললাম খারাপ হয়ে যাওয়া কম্পিউটারের পুরো সেটআপ আর লোকাল এসেমব্লেড কম্পিউটারের পুরো সেটআপ যেটা ভালো আছে আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
মিঃ দোশী আমায় নিরিবিলিতে যাতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিলেন।আমি প্রথমে ঠিক করে ছিলাম মেন পাওয়ার লাইন,পাওয়ার ইনপুটটা চেক করে দেখব যে কোন অস্বাভাবিকত্ব আছে কিনা?যদি থাকে তাহলে লোকাল এসেমব্লেড কম্পিউটারগুলির উপর এর প্রভাব কি ? পরীক্ষায় একটা অদ্ভুত জিনিস পাওয়া গেলো।সকাল ৪টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল মেন লাইনে খুউব অল্প সময়ের জন্য একটা কম্পন ধরা পড়ছে,যেটা খুউব অস্বাভাবিক আচরণএই কম্পনটা খারাপ হয়ে যাওয়া কম্পিউটারের UPS এর ইনপুট এবং আউটপুটে থাকছে,কিন্তু যে কম্পিউটারগুলি লোকাল এসেমব্লেড তার ক্ষেত্রে UPS এর ইনপুট থাকলেও আউটপুটে কোন অস্বাভাবিক কম্পন থাকছেনা।ব্যাস পাওয়া গেলো কম্পিউটার খারাপ হওয়ার মুলে কি কারন স্থল উৎস।
কিন্তু কিভাবে কম্পনটা মেন ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার লাইনে আসছে? কোথা থেকে কিভাবে আসছে?এর পিছনে কোন ষড়যন্ত্র নেইতো?থাকলে তার কারন কি?আমি দোশী কে আমার পর্য্যবেক্ষণের ফলটা জানালাম।আর বললাম।এই কম্পনের উৎস বার করতে তার দপ্তরের পুর্ণ সহায়তা দরকার। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কতকগুলি বিশেষ পরীক্ষার যন্ত্র দরকার।মিঃ দোশী আমার চাহিদা মতন সব যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে দিলো।খুউব ভালো করে দিন রাত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম।দেখতে পেলাম একটি অতি উচ্চ কম্পন থেকে অতি নিন্ম কম্পন(তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ) পর্য্যায় ক্রমে খুব অল্প সময়ের জন্য সকালের দিকে আর রাত্রের দিকে দুবার মেন ইলেকট্রিক্যাল লাইনে ধরা পড়ছে।এই কম্পন সাধারণ স্পাইক,সার্জ প্রোটেকটারে আটকানো শক্ত বিশেষ ধরনের প্রোটেক্টটর দরকার।এর জন্য যে LCR প্রয়োজন তা বাজারে চলতি পাওয়া যাবেনা।এবার পরীক্ষা করলাম এসেমব্লেড কম্পিউটারগুলির মেন লাইন ইনপুট সকেটটা। সাধারণ ভাবে দেখলে অনান্য সকেটের মতন কিন্তু একটু লম্বায় বড়,মোটা শক্ত পোক্ত দেখতে।সকেট টা খুলে নিয়ে পরীক্ষা করতেই দেখা গেলো ঐ সকেটের মধ্যেই রয়েছে অতি ক্ষুদ্র বিশেষ LCR সাথে সুক্ষ্মএক্টিভ সার্কিট যা লাইনের ওই বিশেষ কম্পনকে আটকে দেয়।এবার আমার মনে একটা প্রশ্ন দেখা দিলো-এই এসেমব্লেড কম্পিউটারে হঠাৎ এইLCR লাগানো সকেট কেন ব্যবহার করা হয়েছে?আরো চারটে এসেমব্লেড কম্পিউটার যেগুলি খারাপ হয়নি পরীক্ষা করে দেখা গেলো-সব গুলি একটি ই সংস্থার তৈরী এবং ঐ কোম্পানী যে UPSকম্পিউটারের সাথে দেয় তার পাওয়ার আউটপুট সকেটেও বিশেষ এইLCR লাগানো যা এমনি দেখলে বোঝা যাবেনা।এই সংস্থাটি জানতো ইলেকট্রিকের মেন লাইনে ঐ অস্বাভাবিক তড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গের উপস্থিতির কথা,কিন্তু কেন আর কি ভাবে জানলো?
আমি মিঃ দোশীকে এই কোম্পানীর বিগত তিন মাস ধরে কেমন কম্পিউটার বিক্রয় হচ্ছে তা জানাতে বললাম আর ছয়মাস আগের এদের কোন কম্পিউটার পরীক্ষা করতে চাইলাম । মিঃ দোশী আমার চাহিদা মতোন তথ্য জোগার করে দিলেন।দেখা যাচ্ছে,বিগত দুমাসে যেখানে ১০(দশ)টি কম্পিউটার বিক্রী করেছে সেখানে এক মাসে বিক্রী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ তে এর মধ্যে বিগত ১৫ দিনেই ১৫২ টি।বুঝতে অসুবিধা হোলোনা যে এইসংস্থার কম্পিউটার যে বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম এটা প্রচারিত হয়েছে।ছয় মাস আগের কম্পিউটারে পরীক্ষা করে দেখা গেলো এইLCRপ্রতিরোধ ব্যবস্থা লাগানো হয়নি-এইLCRকম্পিউটারে পরবর্ত্তী কালে লাগানো হয়েছে। এবং বিজ্ঞাপনে লেখা হচ্ছে এই কম্পিউটার সাম্প্রতিককম্পিউটার বিপর্যয়তে কোন ক্ষতি হবেনা গ্যারান্টিযুক্ত। মিঃ দোশীকে বললাম এইসংস্থার কারখানার উপর বিশেষ গোপনে নজর রাখতে। আমার সন্দেহ এই সংস্থাটি তাদের এসেমব্লেড কম্পিউটার বিক্রির জন্য নিশ্চয় এই দুরভিসন্ধিমুলক চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে। এইসংস্থাই কোন বিশেষ উপায়ে মেন ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাই লাইনে পরিবর্তনশীল শক্তি শালী তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ কে মিশ্রিত করে ক্ষণিকের জন্য প্রতিদিন দুবার পাঠাচ্ছে-সময়টা সাধারণ কার্য্যকাল ১০টা থেকে ৬টা বাদ রেখে, কারণ এই সময়ে তড়িত লাইনে নানা রকম কাজ হয়,বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাই ঝুঁকি এড়াতে সকাল আর রাত্রি বেছে নেওয়া হয়েছে, আর এই জন্যই স্কুলের কম্পিউটার,অনেক অফিসের কম্পিউটার,এই বিপর্যয়ে আক্রান্ত হয়নি।আমার অন্য কাজের বিশেষ তাড়া থাকায় তিন দিন থেকেই ফিরে এলাম কোলকাতায়-সেখান থেকে ঝাড়্গ্রামের উন্মেষে।মিঃ দোশী কে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছিলাম কি করতে হবে।আমি ফিরে আসার সাত দিনের মধ্যে অশেষ ধন্যবাদ,কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিঃ দোশীর পাঠানো পত্র পেলাম, তাতে উনি জানিয়েছেন ঐ কোম্পানী ধরা পড়েছে তাদের হাই লো অটো ভেরিয়েবল ফ্রিকোয়েন্সী তড়িত চুম্বকীয় তরঙ্গ জেনারেটর,মডুলেটরযন্ত্রে যার সাহায্যে ইলেক ট্রিকের মুল ফ্রীকোয়েন্সীর সাথে এই মডুলেটেড ফ্রীকোয়েন্সীর তরঙ্গটা মেশানো হোতো আটক করা হয়েছে। ওইসংস্থার মালিক ভূষণ লাল কেজিওয়ালা সব স্বীকার করেছে।এখন আর কোন সমস্যা নেই-সব স্বাভাবিক হয়েছে। কম্পিউটারের স্মৃতিভ্রংশ আর ঘটছেনা।
(প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সামরিক বিভাগ,প্রশাসন ,বিভিন্ন এলাকায় সিগন্যাল জ্যামার ব্যবহার করে নিরাপত্তার জন্য,এগুলিতে মূলত রেডিও ফ্রীকোয়েন্সী, তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় )