৪)বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল
পরদিন দুপুর ২টার মধ্যেই হাজির হলাম উন্মেষে। উকিল জেঠু আমার জন্য অপেক্ষা
করছিলেন। আমি
পৌঁছতেই বললেন 'আশাকরি কাল স্বছন্দেই যেতে পেরেছ?আমি তোমার জন্য সেই ১টা থেকে অপেক্ষা করে আছি কারণ আমি দুপুরের খাওয়াটা ১২টা৩০
মধ্যে সেরে নিই,এরপর আধ ঘন্টা ব্জ্রাসনে বিশ্রাম।আমার খাওয়ার মেনুটা অবশ্য তোমাদের
রুচি হবেনা,কারণ আমি সব সব্জীটা কাঁচা খাই। প্রাকৃতিক চিকিতসা বিজ্ঞানে
দার্শণিক সক্রেটিসের বাণী'Diet is health,diet is Medicine'মানে পথ্য ই স্বাস্থ্য পথ্যই ঔষধ, খুউব মেনে চলা হয়।ভারতীয় মুনীঋষি গন এটাই করতেন,প্রাকৃতিক পথেজীবন যাপন করতে কাঁচা ফল মুল শাক সব্জী খেয়ে থাকাই বিধি,কারণ রান্না করা মানেইতো ডি-ভাইটালাইজড ডিনেচারড ফুড। মানুষের পাকস্থলী এই কাঁচা
ফলসব্জী খাবার উপযুক্ত-মানুষ মাংসাসী প্রাণী নয়,মানুষের পাকস্থলী রান্নাঘর নিজেই রান্না করেনেয়- তাকে রান্না করা খাদ্য দেওয়ার
অর্থ তাকে নিস্ক্রিয় করে রাখা। এই
অভ্যাস আস্তে আস্তে রপ্ত করতে হয়,যে কোন পুরানো অভ্যাস
বদলানো বেশ কষ্টকর।এত
বয়সও আয়ুর্বেদীয় ঔষধ সঞ্জীবনী ট্যাব্লেট আছে এটা রক্তে ও কোষের আম্লিক মাত্রাকে নিয়ন্ত্রন ও রক্ষা করে,
রক্তে ক্ষারত্ব কমে গেলে শরীর রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা বাড়ে,এছাড়া সঞ্জীবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োজনানুসারে বাড়িয়েদেয়।
আমি প্রশ্ন করলাম-'
আপনি যখন বাইরে অন্যত্র কোথাও থাকেন এই নিয়ম মানেন কি করে? উত্তরে তিনি বলেন"আমার বিকল্প ব্যবস্থা নিজস্ব 'ইন্সটাফুড পিল' বা তাতক্ষণিক পরিপুর্ণ আহারের জন্য আমার
ভেষজ বটিকা'পুষ্টি' আমার সাথেই থাকে,এর একটা বটিকা ২৪ঘন্টা শরীরকে পূর্ণকর্মক্ষম রাখার জন্য যে শক্তি-পুষ্টি জোগানো
দরকার তা যোগান দেয়।এর
সব থেকে সুবিধা এটি খেতে সময় লাগবে বড়জোর ১থেকে৩মিনিট।যদি চুষে খাওয়া হয় তবে একটা ভুরিভোজের
যাযা জিনিষ সাধারণ ভাবে খাওয়া হয় যেমন,ভাজাভুজি
সুক্ত থেকে ডাল,তরকারি,চাটনি,পায়েস সবের স্বাদ একেক করে পাওয়া যাবে- সর্ব শেষে মুখ শুদ্ধিপান পর্য্যন্ত
অথচ এর কোনটাই ঐ বটিকার মধ্যে নেই। এরকোন কৃত্রিম স্বাদ গন্ধ মেশানো হয়না।কেবলমাত্র সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ভাবে
প্রতিটি ব্যঞ্জণের উপকরণের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধের নীতি অনুসারে
যত সুক্ষ্ম করা হয়াছে তাতে পুষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
যাক এসব বিষয়ে আমার লেখা থেকেই সব জানতে
পারবে।এখন
আমার প রীক্ষা গার ও সংগ্রহশালায় যাওয়া যাক। বারান্দার একপাশে যে দরজা আছে তা বোঝার
উপায়নেই,স্প্রীং দেওয়া দরজা ঠেলে ভেতরে যাওয়া যায়, আবার নিজে
থেকেই ফিরে এসে দেওয়ালে এমনভাবে বসেযায় লাগে থাকে দেওয়াল থেকে আলাদা করেবোঝা যায়না। ভিতরে ঢুকে দেখলাম বড়
হলঘর,
সুন্দর সাজানো সারা দেওয়ালে অসংখ্য খোপ খোপ তাকের সারি। প্রতিটি খোপেই জিনিষ ভর্তি।একপাশে সারি দিয়ে সাজানো কয়েকশত অডিও
ক্যাসেটের মতন ক্যাসেট।প্রতিটি
ক্যাসেটের গায় নাম্বার ও সাংকেতিকলেখা একটি ক্রমানুসারে সাজানো রয়েছে। জেঠু জানালেন এগুলিই তার
বই
,পুঁথী,নানা তথ্য সম্বলিত পুস্তিকার সংগ্রহ।এই মাইক্রোচিপ যা তার নিজস্ব সৃষ্টি,এই চিপ গুলিতে নিজস্ব ভাষায় সঞ্চিত করা আছে সব তথ্য।মাইক্রোরিডিং ডিকোডার যন্ত্রে এগুলি
লাগালে মনিটরে লেখা আর ছবি হুবহু দেখাযাবে, মুল বইতে
যেমন টি আছে।আবার
রিডিং সুইচ টিপলে প্রথমে মুল যেভাষায় বইটা লেখা সেই ভাষায় পাঠ শুনতে পাওয়া যাবে পরে
বাংলায় অনুবাদ ভাষ্য শুনতে পাওয়া যাবে ।এটা যেকোন ভাষায় ইচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্ট বা কপি করে
নেওয়া যায়,এক একটা ক্যাসেটে ১০ লক্ষ ফুল স্কেপ
কাগজের লেখা বা ছবি আছে।সংগ্রহে বর্ণপরিচয় থেকেশুরু করে নানা বিখ্যাত লেখকের রচনা সমগ্র ,বিশ্ববরেণ্য
শিল্পীদের আঁকা চিত্রাবলী, পৃথিবীর সব দেশের নাম করা সব সঙ্গীত
শিল্পীদের গান,নাচ, বাজনা সব কিছুই সঞ্চিত
আছে।"
আমি
আমার লেখা বই এর ডিসপ্লে, দেখলাম।তথ্যসুচী বর্ণানুক্রমিক সুচীপত্র সবই
আছে,সরাসরি যে বই বা যে বিষয়টা দেখতে চাই দেখার ব্যবস্থা আছে।কোন খোপে কোন ক্যাসেটে কি আছে তাও
সুইচ টিপে মনিটারে দেখাযায়।আমার
লেখা এযুগেও ডাইনোসরাসের মলাট থেকে শেষ পাতা পর পর স্ক্রীণে ফুটে উঠল সেই সাথে নিখুঁত
গুরু গম্ভীর উচ্চারণে ছেলে এবং মেয়ে কন্ঠে আমি বিস্মিত। আমি আশ্চর্য হওয়াতে জেঠু
বললেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই,এখন সারা
বিশ্বে মাইক্রোফ্লিমে সব নামী দামী বই এর একটা ফোটোকপি নকল তুলে রাখা হয়,যাতে পরে প্রোজেকশন করে দেখা যায়।তিনি জানালেন এই যন্ত্রের ক্ষমতা ওগুলোর
থেকে অনেক বেশী আর প্রয়োগ ক্ষেত্র বিশাল।এই যন্ত্রের মধ্যে এই বই এর সাথে সাদৃশ্যআছে তেমন সব
বই এর তথ্য,তুলনামুলক আলোচনা, সব দেশের,সব ভাষার পাওয়া যাবে আর কোন অনুরুপ বই তথ্য
না থাকলেও জানিয়ে দেবে।এছাড়া
অনুবাদ,
মিশ্রণ পরিবর্তণ সবই সম্ভব। এরপর ডাক্তার উকিল জেঠুর
সংগ্রহশালায় হাজারো বিস্ময়কর উদ্ভাবনের পরিচয় পেলাম যার বর্ণনা বা আলোচনা এই স্বল্প
পরিসরে উল্লেখ করাও সম্ভবপর নয়।এইসব
বিস্নয়কর যন্ত্রপাতি ও আবিস্কারের সাথে সাথে জড়িয়ে আছে নানা রোমাঞ্চকর ঘটনা-যেগুলি
পরবর্ত্তী কালে জেঠুর লেখা থেকে পরে পরে জেনাছি।যথা সময়ে পাথকের দরবারে পৌঁছে দেবার
ইচ্ছা রয়েছে।আমি
দিন চারেক ঝাড়্গ্রামে ছিলাম অধিকাংশ সময়ই আমি কাটিয়েছি ডাক্তার উকিল জেঠুর কর্মশালায়।আমার আগ্রহ দেখে উনি ঝাড়্গ্রাম থেকে
আমার আসার সময় ওনার সমূহ লিপিবদ্ধ ক রে রাখা তত্ত্ব,ও তথ্যের অনুলিপির বান্ডিল্টা উপহার দেন,সেই সাথে শর্তের
কথাটি আবার স্মরণ করিয়ে দেন যেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোন লেখা প্রকাশিত না হয়,আর প্রকৃত নাম পরিচয় কখনোই উল্লেখ করা চলবেনা।
আমি কারন জানতে চাওয়ায় উনি বলেছিলেন এই
সময়ের মধ্যে উনি ঝারগ্রামে কাজ শেষ করে অন্য অজ্ঞাত নুতন কোথাও গবেষণার জন্য চলে যাবেন,
উনি ঝাড়্গ্রাম থাকা কালে এই লেখা প্রকাশিত হলে অসুবিধা আছে। আমি পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি,
ডাক্তার জেঠু তার 'উন্মেষ' সরকারকে দান করে কোথায় চলে গেছেন কেউ জানেনা, গাছপালা,বাংলো আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতন ,সাধারণ, আসবাবপত্র কোন বিশেষত্ব নেই এই অবস্থাতেই সরকার দখল নিয়েছে।আমি জেঠুর দেওয়া সমস্ত পান্ডুলিপি
খুঁটিয়ে পড়েছিএবং সাজিয়ে কাহিনী আকারে লিখতে শুরু করেছি কিন্তু সঠিক স্থান,
কাল,পাত্রের উল্লেখ করা যাবেনা তাই ঘটনা গুলি আগের
পরের হলেও সব গুলি স্বতন্ত্র, কোন সমস্যা নেই।আমি সব ঘটনা গুলিই পর্য্যায়ক্রমে পাঠকের
দরবারে চাহিদা থাকলে পৌঁছে দেব সেই প্রয়াস নিয়েছি।

No comments:
Post a Comment