২) বিশ্বের বিস্ময় ডাক্তার উকিল (অনুগ্রহ
করেলেখাটা পড়ে মতামত দেবেন,কারন জানা দরকার পাঠকের
এই ধরনের লেখার চাহিদা আছে কিনা? আর আমার লেখা সঠিক হচ্ছে কিনা?)
ঝাড়্গ্রামে দীনুকাকার কটেজ
'অবসর' আমার খুউব মনের মতন জায়গা।রাস্তার ধারে পাঁচিল ঘেরা সুন্দর ছিমছাম পরিবেশ
,কেয়ার টেকার যদুনাথ সব গুছিয়ে পরিপাটি করে রেখেছে।ঝাড়্গ্রাম পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছিলো,কারন নভেম্বরের রাত ৭টাতে ফাঁকা।শাল বনে ঘেরা পুরানো ঝাড়্গ্রাম পৌঁছতে
অনেক রাত মনে হচ্ছিল ।যদুনাথ
সব রান্না করে রেখেছে তাই রাত না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে চারপাশটা একটু ঘুরেফিরে
দেখার জন্য বেরুলাম।পুরানো
ঝাড়্গ্রামের দিকে কিছুটা এগুতে দেখলাম রাস্তার ডান দিকে একটা বালী কাঁকড় বিছানো রাস্তা
দুপাশে শালবাগানের মধ্য দিয়ে ভিতর কোন ঘর চোখে
পড়েনা।বেশ
কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম বাঁ পাশে কাঁটা তারের ঘন বেড়া দেওয়া বাগান।সব রকম ফল,ফুলের গাছ ভরা ঐবাগানের মাঝে একটা সাদা বাংলো মতন বাড়ি দেখা যাচ্ছে।ঐ বাগানের মূল ফটকের কাছে এসে দেখলাম
মোটা মোটা দুটি থামের মাঝে একটা বড় লোহারগেট,বুঝলাম
এটাই বাগানের মধ্যে বাংলোয় যাবার প্রবেশ পথ।গেটের উপর বড় বড় করে লেখা "উন্মেষ"।বুঝলাম এটাই দীনু কাকার ডাক্তার উকিলের বাংলো।গেটের উপর একটা বিজ্ঞপ্তি বাংলা ও
ইংরাজীতে লেখা'অনুগ্রহ পুর্বক এই বাদানে প্রবেশের পূর্বে
গেটের ডানপাশের থামে যে কলিংবেলের সুইচটি আছে ওইটি টিপুন-প্রবেশ অনুমতি পাবার পরই গেট
ঠেলে বাগানে প্রবেশ করিবেন অন্যথায় বিপদের সম্ভাবনা।
আমি
একটু চিন্তায় পড়লাম ভাবলাম বিকালের দিকে এসে আলাপ করে যাব-যেহেতু যদুনাথকে বলে আসা
হয়নি। দীনু
কাকার কটেজ ১০-১৫ মিনিটের হাঁটা পথ, ফিরেগেলাম
অবসরে। দুপুরে
খেতে বসে ডাক্তার উকিল সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় যদুনাথ জানতে চাইল আমি ওই
'আজবদাদু'র বাড়ি যাব কিনা? আমি জানতে চাইলাম ওনাকে আজবদাদু কেন
বলছে?যদুনাথ বলল এমন আজব লোক এই দেশে আর একটিও আছে নাকি?ওনাকে সকাল সন্ধ্যায় নদীর ধারে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে ছাড়া কখনও বাইরে দেখতে
পাবেননা ।শুনেছি
উনি বাড়িতে কিসব ভয়ঙ্কর জন্তু জানোয়ার পোষেণ।ডাক শুনলে পিলে চমকে যাবে,বাঘ না হাতি,কেউ জানেনা।সারা রাত বাগানের চারপাশে তারের বেড়াতে
ইলেকট্রিক লাগানো থাকে,কারো সাধ্য নেই ভিতরে ঢোকে।একবার দুটো চোর বেড়া টপকাতে গিয়ে যা
নাকাল হয়ে ছিলো কি বলব ?প্রাণেমারা যায়নি তবে তিন
চার দিন ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলো,গলায় কোনো আওয়াজ ছিলোনা।কর্ত্তাবাবুর(দীনুকাকা)কাছে শুনেছি
ঐদাদু খুব পন্ডিত লোক।আমি
যদুনাথকে বললাম বিকালে ভাবছি ওনার সাথে দেখা করে দীনুকাকার চিঠিটা দিয়ে খোঁজ নিয়ে আসব।যদুনাথ জানালো তা বিকালে যেতে ফিরতে বেশী রাত যেন না করি কারন ওই পথটা ভীষণ অন্ধকার
ঘন শালবন,
নতুন লোক বিপদ হতে পারে।
বিকাল
৪টা নাগাদ গেটের কাছে পৌঁছে প্রথমে একটু নার্ভাস মনে হোলো নিজেকে,তারপর মন ঠিক করে নিলাম-দীনুকাকা যখন পাঠিয়েছেন তেমন বুঝলে চিঠিটা দিয়ে শুধু
খোঁজ নিয়ে চলে যাব। কলিংবেল টা টিপতেই একটা
গুরুগম্ভীর স্বর গেটের কাছ থেকে ভেসে এলো,"কোথাথেকে আসছেন?কারসাথে প্রয়োজন?"আমি চারপাশে তাকিয়েদেখতে চেষ্টা করলাম কার কন্ঠস্বর?ভদ্রলোক
কোথায়?কাউকে দেখতে পেলাম না,কি বলব?কাকে বলব?ভাবছি,তখন ই আবার শুনতে
পেলাম ,মনে হল আওয়াজটা একই জায়গা গেটের থামের মধ্য থেকে আসছে-"আমাকে
দেখতে পাবেন না ঐখান থেকে,কিন্তু আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি। আমি বাংলোর মধ্যে আছি-আপনি
বলুন আমি শুনতে পাবো।"আমি
নার্ভাস হয়েইছিলাম তাই একটু ধরা ধরা গলায় উত্তর দিলাম,
"আমি ডাক্তার উকিল মহাশয়ের সাথে দেখা করতে চাই,কোলকাতা থেকে দীনবন্ধু সান্যাল মহাশয় আমাকে পাঠিয়েছেন একটা চিঠি দেবার জন্য।"এবার ভিতরে যাবার
অনুমতি পেলাম'ভিতরে আসুন' ।
আমি লোহার গেটটা ভিতর দিকে ঠেলে ঢুকলাম,স্প্রীং লাগানোগেট আপনি বন্ধ হয়ে গেলো।ভিতরে সুন্দর নুড়ি বিছানো পথে বাংলোর
কাছে গেলাম।সুন্দর
কাঁচে ঘেরা বারান্দা ভিতরে ঢোকার জন্য কাঁচেরই ঠেলা দরজা ।দরজাঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখলাম,
সুন্দর পরিষ্কার সাজানো বিরাট বারান্দার মাঝে সাদা গোল সম্পূর্ণ কাঁচের
টেবিল,টেবিলের তিন পাশে তিনটে সুন্দর একই রকম সম্পূর্ণ কাঁচের চেয়ার।টেবিলে রাখা কাটগ্লাসের ফুলদানীতে
সুন্দর রকমারীফুল এমন সুন্দর রঙ আগে কখনো দেখিনি।টেবিলের পাশে দেওয়ালের দিকের চেয়ারে
একজন বৈদিক ঋষি তুল্য মানুষ বসে আছেন।সাদা
লম্বা দাড়ি কবিগুরুর মতন,মাথায় ধব ধবে সাদা চুল ঘাড়
অবধি। ভদ্রলোক
বসে আছেন তবুও বোঝাযায় বেশ লম্বা সুপুরুষ,টিকালো
নাক।উজ্বল
দুটি চোখ চশমার পুরুকাঁচের মধ্য দিয়েও প রিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বেশ সপ্রতিভ,তেজস্বী।দেখলে
বৈদিক ঋষি বলেই মনে হয়,বেশ সম্ভ্রম লাগে।আমি সামনে যেতেই বললেন,
বসুন। গলার
স্বর বেশ গাম্ভীর্যপূর্ণ।
আমি দীনুকাকার চিঠিটা এগিয়ে ওনার হাতে দিলাম।বুঝলাম ইনিই ডাক্তার উকিল।উনি সাদা ধুতি আর সাদা ফতুয়া পরে আছেন,পায়ে কাঠের খড়ম।বারান্দায়
ঢুকেই বুঝেছিলাম ভেতরে শীতের বিকালের কোন প্রভাব নেই,কারণ আমার গায়ে যে পাতলা সোয়রটার,
তাতেই বেশ গরম লাগছে।প্রথমে ভেবে ছিলাম নার্ভাসবলে গরম লাগছে,
পরে ডাক্তার উকিল কে দেখলাম পাতলা ফতুয়া পরে আছেন। ওনার কাজের লোকটিকেও একপলক
দেখলাম ভিতরের দরজা দিয়ে এসে একবার আমাদের দেখে গেলো-তার গায়েও পাতলা জামা বুঝলাম ভিতরে
সত্যই গরম। বারান্দায়
কোনো আসবাব পত্র বিশেষ চোখে পড়লনা,কেবল ডাক্তারউকিল
যেখানে বসে আছেন তার পাশে একটা শেলফে কতকগুলো স্টেবিলাইজারের বাক্সের মতন কোন যন্ত্র
বসানো আছে,তাতে লাল,নীল,সবুজ আলো জ্বলছে,কতকগুলি নব, সুইচ
রয়েছে।ভাবলাম
উন্নত মানের মিউজিক সিস্টেম হবে।
চিঠিটা পড়া হয়ে গেলে ডাক্তার উকিল আমায়
বললেন'আমি তোমায় তুমি বলেই বলছি,চিঠি থেকে যা বুঝলাম,
অনেক ছো্ট , আমি তোমাকে তুমি বললে অসন্মানবোধ
করবেনা।তুমি
বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্প্কাহিনী লেখ, তোমার লেখা মনে হয়
আমার সংগ্রহে গোটাচারেক আছে।লেখাগুলি
মন্দনয় তবে অতিকল্পনা প্রবনতা আছে।লেখাগুলি
বাচ্চা,কিশোরদের কাছে রোমাঞ্চকর মনে হলেও বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি নির্ভর হওয়াটা দরকার।আবার বেশী তথ্য নির্ভর হলে সেটা গল্পের
আকর্ষণ হারিয়ে ফেলবে । দীনবন্ধু
বলেছে তোমাকে সাহার্য্য করলে আগামী লেখাগুলি আরো চিত্তাকর্ষক হতে পারে।তা আমি তোমাকে নিশ্চই বিজ্ঞানের অগ্রগতি,তার সু প্রয়োগ আবার স্বার্থে অপ প্রয়োগ সংক্রান্ত কিছু বাস্তব ঘটনার উদাহরন
দেখাতে পারব।এরপর
তোমার কৃতিত্ব কেমন ভাবেসেটা পাঠকের কাছে পৌঁছেদেবে,তারা কতটা আগ্রহভরে তোমার লেখাটা নেবে।আমি যা কিছু জানাবো সবই আমার জীবনের
ঘটনা,তার সব ঘটনা সাজিয়ে গুছিয়ে হয়ত তোমার কাছে তুলে দিতে পারবনা। প্রফেসর শঙ্কুর মতন আমার
কোন লিখিত পঞ্জিকা বা খাতা নেই, আমি ওনাকে শ্রদ্ধাকরি
নমস্য ব্যক্তি
লেখা আছে ,কিছু
মাইক্রোফটো,অডিওরেকর্ডিং,থার্মাল ইমেজকপি
আছে। তবে
একটা শর্ত কোন অবস্থাতেই সঠিক তারিখ,সময়,স্থান,ব্যাক্তির নাম ধাম,যথাযথ উল্লেখ করতে পারবেনা।আর লেখাগুলি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোথাও প্রকাশ করতে
পারবেনা।কথা
দিলে তবেই আমি বিবেচনা করে দেখব লেখা গুলি তোমাকে দেওয়া যাবে কিনা?
" আমিতো তক্ষুনি রাজী ,বললাম "আপনি যা
নির্দেশ দেবেন সেই মতই চলব। আমার
অসীম ভাগ্য, আপনি যে আমার প্রতি এতো সহৃদয় হবেন
ভাবতেই পারিনি।"ডাক্তার
উকিল তখন বললেন'আমার লেখাগুলো যে আমার জীবনে সত্যসত্যই ঘটেছে বা আমার সষ্টি যেসব যন্ত্রপাতি,ঔষধপত্রাদির কথা জানাবো ওগুলো যে সত্যি সত্যি আছে তারতো একটা চাক্ষুষ প্রমান
পাওয়া দরকার, নইলে তোমার লেখায় আত্মবিশ্বাস আসবে কেন?ওগুলি নিছক কাল্পনিক রোমাঞ্চকাহিনী হয়ে যাবে।আমার এখানে যাকিছু দেখবে সবই আমার
নিজস্ব উদ্ভাবনা,প্রামান্য নিদর্শণ দেখতে
নিশ্চয় আগ্রহী?এর জন্য হাতে সময়নিয়ে আস্তে হবে।আমার এখানে রাতে থাকার কোনো অসুবিধা
নেই,
কিন্তু তোমার নিশ্চিন্ত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে তাই আজ রাতে অবসরে ফিরে যাও,কাল দুপুরে চলে আসবে।"
কথায়
কথায় কখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার অন্ধকার চারপাশে নেমে এসেছে বুঝতে পারিনি,
কাঁচের ঘেরা বারান্দাতে বসেও
,কারন আমি যখন এখানে এসে ঢুকে ছিলাম তখন বারান্দাতে ভেতরে যে রকম আলো
ছিলো তার কোনো রকম তারতম্য ঘটেনি,সুধু হাত ঘড়িতে দেখলাম দু ঘন্টা
পেরিয়ে গেছে।বাইরে
বাগানের দিকে হাল্কা আলো-আঁধার।দুরে
শালবনের দিকে গাঢ় অন্ধকার,যে পথটা সোজা বাইরে দিকেগেছে
সেই পথটা গেট অবধি আলোকিত ,অথচ কোথাও কোন আলোর বাতি চোখে পড়ছেনা।কাঁচঘেরা বারান্দায় মনে হচ্ছেযেন দেওয়াল
থেকে আলো বেরুচ্ছে অথচ দেওয়ালে কোন আলোর বাতি জ্বলছেনা।আবার আমাকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার
উকিল আমায় প্রশ্ন করলেন 'কি অবাক হয়ে আলোর উতস খুঁজছ?
না এখানে কোন প্রথাগত প্রচলিত বিজলী বাতি থেকে আলো জ্বলছেনা,এখানে আমার নিজস্ব অটোলুমিয়েন্স ব্যবস্থা যাতে চারপাশে আলোর উজ্বলতা যতোই বদলাকনা
কেন,আমার ঘরের মধ্যে আর এই পথে আলোর উজ্জ্বলতার মাত্রা বা লাক্স
লেভেল একই থাকে,তাই বাইরে আঁধার নামে, আমার
ঘরে এলাকার মধ্য আঁধার ঢুকতে দিইনা-অবশ্য আমি আলোর উজ্জ্বলতা যেমন চাইব তেমন নিয়ন্ত্রন
করতে পারি।কিন্তু
প্রয়োজন না থাকলে স্বয়ংক্রিয় মাত্রা নিয়ন্ত্রন(ALC)ব্যবস্থা, ওটা একই মাত্রায় ধরে রাখে।'
ক্রমশ-৩ ( লেখাটি বড় হওয়ায় ৪কিস্তিতে সমাপ্য
)

No comments:
Post a Comment