Wednesday, 25 November 2015

হাসির গল্প-৩- "পগারে শোল"

আজ একটি হাসির ছোট চুটকি, আমি বদলে গল্প বানিয়ে পোষ্ট  করলাম, সকলের ভালো লাগলে খুশী হব, মতামত  জানালে এই রকম লেখা  আবার দেবো,মতামত না জানালে ধরে নেবো এই লেখা ভালো লাগেনি
পগারে শোল' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ একটি মজার গল্প হাজির করছি
,ঘটনাটির সত্যতা কত খানি তা নিশ্চিত করে বলতে পারবোনা তবে গল্প টি যাঁর মুখ থেকে শোনা তিনি বলেছিলেন এটি তাঁর ই জীবনে ঘটেছিলো,তাই তিনি প্রত্যক্ষদর্শী যিনি এই গল্প টি আমাকে বলেছিলেন তিনি আমাদের থেকে বয়সে অনেক প্রায়  ২৫/৩০ বছরের বড় ছিলেন সবাই তাঁকে ভুলুদা বলেই ডাকতো ,আমরাও ডাকতাম ঐ ভুলুদা  বলেইভুলুদা ভারী সুন্দর করে গল্প বলতেন, আমরা অবাক হয়ে শুনতাম তিনি বেশী ভাগ গল্পই নিজের জীবনের সত্য কাহিনী বল্লেও আমরা জানি এগুলোর অনেক গল্প ই শোনা বা পড়া ঘটনা তাই আজকের লেখা কাহিনীটাও শোনা গল্প হতে পারে, তবে আমি অন্য কোথাও পাইনি গল্পটা ওনার মুখে যেমন শুনে ছিলাম সেই ভাবেই লেখার চেষ্টা করছি, জানিনা কত টা সফল হ'

আমাকে পাড়ার হাবু ভীষন ভাবে ধরলো ওর এক মাত্র ছেলে ভূষণ এর বিয়ে ঠিক হয়েছে বীরভুমের হাটগোবিন্দপুরে ভোলানাথ মাইতির মেয়ের সাথে, আমাকে বর যাত্রী,এক রকম বর কর্তা হিসাবে আমাকে যেতেই হব, কোনো আপত্তি চলবেনা হাবুরা দীর্ঘদিন আমাদের বাড়ির সাথে যুক্ত, বাগানের  দেখাশোনা ওর ই হাতে ওর ছেলে বৌ ও আমাদের বাড়ির লোক এক রকম হয়ে গেছিলোছেলে র এখন বছর কুড়ি বয়স,এখানে কাঠের কাজ করে কাঠ মিস্ত্রীআমাদের সপরিবারে সবাকার  বরযাত্রীর নিমন্ত্রণ থাকলেও, আমি একাই যাবো ঠিক করলামবোশেখ মাসের গরম বিয়ের আগের দিন সকাল ১০ টায় এখান থেকে বাসে চেপে গেলাম তারাপীঠের কাছে জায়গাটা সম্ভবত কৃষ্ণগঞ্জ, ওখানে বাসটা
থাকবে
আমরা নদী পেড়িয়ে ওপাড়ে গিয়ে একটু হেঁটে গেলেই ভোলানাথ বাবুর বাড়ি, খুউব পরিচিত মানুষ্‌ গ্রামে সরষে পেশাই এর ঘানী আছেতাছাড়া ওলিখিত সুদের কারবারি

আমরা সন্ধ্যার একটু আগেই পৌঁছেছিলাম
,ভোলানাথ বাবুরা আমাদের থাকার জন্য একটি মাটির  দোতলা বাড়ি, মাথায় খড়ের চাল , ব্যবস্থা করেই রেখে ছিলেন , আমরা জনা ১৫ দোতলার বড় ঘরে  চাটাই পেতে বিছানায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম আর জনা২৫ , তলার ঘেরাবারন্দার  সহ ঘরে আশ্রয় নিলো
যাওয়ার সাথে সাথে নারকোল মুড়ি খেলাম
,তারপর চা খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম, তারপর রাতের খাওয়াভাত,ডাল, ভাজাভুজি,আর লোকাল মাছের ঝোল বেশ গ্রাম্য  রান্না মাছের ঝোল টা পেঁয়াজ আদা আর লঙ্কার ঝালে নাক চোখ দিয়ে জল ঝরিয়ে ছেড়েছে খেয়ে দেয়ে সবাই সটান চাটাইতে শুয়ে পড়লাম, ঘরে একটা সামান্য কেরোসিনের চারপাশ ঘেরা লন্ঠন যাকে চৌপল বলে , টিম টিম করে  জ্বলছে যাতে আলোর চেয়ে আবছা অন্ধকার টাই যেন বেশী মনে হচ্ছিলো
শোয়ার কিছু ক্ষনের মধ্যেই সবাই ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো
, নানা সুরে নাক ডাকা চলছিলো বেশ কয়েক ঘণ্টা বাদে হঠাৎ খুউব খড়মড় করে আওয়াজ ঘরের কোণা থেকে, অনেকেই  জেগে উঠে পড়েছে , ঘরের এক কোণায় মস্ত একটা মাটির জালা যাকে ওরা মাইট বলে তার মধ্য থেকে প্রবল ঝটাপটির শব্দ , ভিতরে যেন যুদ্ধ বেধেছে , কোন জন্তু জানোয়ার হবে,বড় সাপ খোপ হতেই পারে, গ্রামাঞ্চল তায় প্রচণ্ড গরম পাশেই বড় বড়  ক্ষেত , তাই বলা যায় না এত লোক জনের চলাচলে ভয় পেয়ে ঘরে এসে সাপ খোপের আস্তানা অসম্ভব নয় তাই সাবধানে দরজার খিল বা ডাঁশা  দুজনে  দুটো বাগিয়ে আমার কাছে একমাত্র থাকা একটা ছোট দুসেলের টর্চ নিয়ে গুটি গুটি ঐ  মাটির  জালাটার কাছে এগুলাম আমি সবাইকে হটোপাটি না করে চুপচাপ সতর্ক থাকতে বললাম, আমি দলের প্রধান তাই আমি ই আগে এগুলাম টর্চ হাতে পাশে হাবুর কাকার ছেলে সনাতন কোলকাতায় কাপড়ের দোকানে কাজ করে সে ডাঁশা উঁচিয়ে তার পাশে হরি বলে এই গ্রামের ই একটি যুবক তার হাতেও ডাঁশা  আমি দম বন্ধ করে আধ খোলা চোখে মাদুর্গা কে জপতে জপতে মাটির জালার ঢাকা মাটির ই সরাটা সরিয়ে জালার মধ্যে টর্চের আলোটা সবে ফেলেছিওরে বাবারে প্রকাণ্ড মোটা মোটা হলদে কালো কুচকুচে ইয়া বড় বড় কেঁদো সাপ দেখেই প্রাণপন চিৎকার লাফ মারলাম সজোরে, জালা গেলো কাৎ হয়ে ভিতরের থেকে সাপ লাফিয়ে চাটাই এর উপর, হৈ চৈ হুলু স্থুলু ,হরি চেঁচিয়ে উঠলো একি কোরছেন আপনারা? এগুলো পগারে শোল,পালিয়ে গেলে বিপদ হবে, কাল দুপুরে খাবেন কি?
ভোলানাথ জেঠু অনেক কষ্টে গত এক মাস ধরে এইগুলান জোগার করে রেখেইছেন আপনাদের কে
খাওয়াবেন বুলে
, আর আপনারা এগুলান কে সাপ বুলছেন? এতো বড় মোটা পগারে শোল পাওয়া ভাগ্যির ব্যপার আছে,ছোটা মুটা দুচারটে পাওয়া যায়, এতো গুলান এতো বড়বড় এক সাথে পাওয়া যায়না
আমি আঁৎকে উঠলাম এগুলো খাবো মানে? হরি খপ করে চাটাই থেকে ঐ সাপের মতন
পগারে শোল ধরে আর জালায় ভরে সরা চাপা দেয়
গোটা ৮/১০ হবে বাইরে লাফিয়ে এসেছিলো
ওগুলোকে ভরার পর হরি নিশ্চিন্ত হয়ে হাঁফ ছেড়ে আমার কথার জবাব দিলো এই ভাবে
আপনারা তো সবাই রাতে চেটে পুটে যে মাছের ঝোল খেলেন ওটাই তো পগারে শোলের ঝোল আজ রাতে ভালো খেয়েছেন কাল দুপুরেও খাবেন ক্যানে তাইতো মেটেতে ভরে রেখেইছে না থাকলে কাল পাবেন কুথাকে? ব্যাস আমার শুরু হোলো ওয়াক পারা খবর পেয়ে ভোলানাথ বাবু, হাবু সহ অনেকে এসে হাজির সবাই আমাকে বোঝাতে লাগলো পগারে শোলের মাহাত্য যেম্ন সুস্বাদ তেমন উপাদেয়, ডাক্তার বাবুরা খেতে ব্লেন রক্ত হওয়ার লিগেশিঙ্গি মাগুর হার মিনে যাবে শহরে এতো বড় গুলান পাওয়া যায় না ছোট গুলান অন্য পারা নাম কুঁচেমাছ আছে এগুলান ঐ মতন ই তবে জাত আলাদা বটেক, এগুলা  দঁকে/পগারে থাকে আপনারা  পাঁক বলেন  পাঁকের মাছ পাঁকাল যিমন আছে এই পগারে শোল ও আছেতা বাবু খেতে কি খারাপ আছে? সব্বাই তো চেটেপুটেই খেয়েছেন রাতে
আমার এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে



No comments:

Post a Comment