অনেক ছড়া কার্টুন হোলো এবার কয়েক টা নানা স্বাদের গল্প কেমন লাগছে জানালে খুশী হ'ব । প্রথমে
একটা ভূতে ধরা কাহিনী আমার চোখে দেখা।
এখনে
সবাই আমার বয়সের তারা জানে, স্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকাতে
বেড়িয়ে ছিলো।
বিশ্বাস
অ বিশ্বাস পাঠকের নিজস্ব আমার সে বিষয়ে কোন মতামত নাই,
শুধু এই ঘটনার বহু সাক্ষী আছে প্রতক্ষ্য দর্শী এটুকুই বোলবো।
'ভুতে ধরা'"বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলেনা " তপন কুমার বন্দ্যো পাধ্যায়
আজ আমি যে ঘটনার উল্লেখ করছি এটা আমার স্বচোক্ষে দেখা আমাদের ই একটি বাড়িতে ঘটেছিলো, পাড়ার বহু লোকের উপস্থিতিতে, স্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকাতেও ঘটনাটা 'বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলেনা' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিলো।এখন বিশ্বাস অ বিশ্বাস পাঠকের নিজস্ব ব্যাপার। সত্য কি মিথ্যা বিতর্কে যাবোনা।আমি গল্পাকারে নয় খুব ছোট করে ঘটনাটাই লিখছি ।
আমাদের নিজের বসত বাড়ির প্রায় লাগোয়া আমাদের ই আর একটা দোতলা বাড়ি যেটাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাড়া দেওয়া হত। । বাবা চাইতেন বাড়ির পাশে ভালো প্রতিবেশী থাকুন । ঐ বাড়ির উপরতলায় পুলিশের একজন বড় অফিসার অধীর চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত) দুই ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রী এই পরিবার সহ আর নীচে ছিলেন অবসর প্রাপ্ত সেনা বিভাগের ডাক্তার সারদা কান্ত তরফদার (নাম পরিবর্তিত) , বড় চার ছেলে,তিন মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে বড় পরিবার ভাড়া থাকতেন।
এই ডাক্তার বাবুর ছোট ছেলে ছিলো আমার সমবয়সী বন্ধু। সালটা সম্ভবত ১৯৬১/৬২ ।
আমাদের পাড়ার ই একজন মাঝ বয়সী লোক গণেশ হালদার( নামটি পরিবর্তিত) চৈত্র মাসে শিবের সন্ন্যাস নিয়ে ভোক্তা হয়েছিলেন, তিনি ভোক্তা থাকা কালীন মাথা খারাপ হয়ে যায় (কেউ কেউ বলেন অতিরিক্ত নেশা করায় ,নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ) ঐ সন্ন্যাস বেশেই একদিন রাতে কাছের একটা রাস্তার ইলেকট্রিক লাইট পোস্টবেয়ে উঠে ইলেকট্রিকের লাইনের তার ধরে মারা যান।
এর কিছুদিন পরে ১লা বৈশাখ,তখন সন্ধ্যাবেলা,আমরা পাড়ার দোকানে হালখাতা করতে যাব ,ভালো জামা কাপড় পরে তৈরি হচ্ছিলাম,বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি একটু আগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া দেওয়াতে ইলেকট্রিক পাওয়ার চলে গিয়ে চারপাশ অন্ধকার। এমন সময় হঠাৎ পাশের বাড়ি থেকে একটা তীব্র আর্তনাদ শুনে আমরা সহ চারপাশের বাড়ি থেকে লোকজন ছুটে ওই বাড়িতে হাজির। দেখি আমাদের সেই পাশের বাড়ির নীচের তলা থেকে ঐ চিৎকার আমার সেই বন্ধুর ।
ইতি মধ্যে উপর তলা থেকে সেই পুলিশ অফিসার কাকু অধীর চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত) নেমে এসে আমার বন্ধু হাবুলের(নাম পরিবর্তিত ) হাত টা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে তিনি লম্বাচওড়া শক্তিশালী মানুষ,অথচ হাবুল এক ঝটকায় তাঁকে ঠেলে ছিটকে দিচ্ছে, চারপাশে পাড়ার অনেকে ভীড় করে রয়েছে।ঐ পুলিশ কাকু হাবুলের হাত চেপে ধরে বলছেন "আমি ব্রাহ্মণ, এই দ্যাখ আমার গলায় পৈতে আছে,তুই আমার কিছুই করতে পারবিনা তোর নাম বল?" ওদিকে ডাক্তার বাবু তাঁর ঔষধ পত্র ছেলেকে দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব দেখছেন, এম্বুল্যান্সে ফোন করার ব্যবস্থা হয়েছে, আর ঐ পুলিশ অফিসারের আর্দালী রমনী (নাম পরিবর্তিত ) আমাদের ই বাড়ির লাগোয়া আমাদের বড় বাগানের একধারে পাঁচটা টালির চালার লাইন ঘর, যেখানে আমাদের রিক্সাঅয়ালা, বাড়ির কাজের লোক থাকত সেই খানেই থাকত। ওই রমনী সোজা পুলিশ লাইনে তখন কাজ করত কনস্টেবল যদু নাম করা ওঝা তাকে ডাকতে চলে গেছে সাইকেল নিয়েছে তাড়াতাড়ি আসবে বলে। অনেক লোক জনের ভীড় হঠাৎ দেখি হাবুল লাফাতে শুরু করেছে আর চেঁচাচ্ছে , ওকে চলে যেতে বল ও যেদিকে তাকিয়ে বলছে সেদিকে তাকিয়ে দেখি, রমনী বাবু এক জন মাঝারি উচ্চতার গাট্টা গোট্টা ভালো চেহারার লোক খালি গায় গলায় রুদ্রাক্ষ আরো অনেক মালা মাথায় লাল সিঁদুরের বড় টিপ, কাঁধে বড় ঝোলা নিয়ে ঢুকছেন দরজা দিয়ে।হাবুল একে দেখেই ওই রকম ক্ষেপে উঠেছে। এরপর ই আসল খেল দেখলাম। আমাদের কাছে যেতে দিচ্ছেনা বড় রা ,আমরা পেছনে লোকেদের ফাঁক থেকে যেটুকু দেখেছি। ঐ বাড়ির নীচ তলার একদম উত্তর দিকের যেটা বাইরে যাবার ঘর, সেই ঘরের জানলা, দরজা বন্ধ করে একটা ছোট হোমের জায়গার মত করে আগুন জ্বালা হোলো, ধুপ, ধুনো জ্বালানো হোলো। ঘরে বেশ ধোঁয়া। হাবুলের হাত শক্তকরে ধরা আছে পুলিশ কাকুর হাতে।এবার দুরবোদ্ধ মন্ত্র হ্রীং, ব্রীং সাথে একটা ছপটি দিয়ে মাটিতে মারছেন যদু বাবু আর তত হাবুল লাফাচ্ছে ছেড়েদাও ছেড়েদাও বলে, এবার যদু তান্ত্রিক প্রশ্ন শুরু করেন, প্রঃ তোর নাম কি? হাবুল উত্তর দেয় আমার নাম গণেশ হালদার।
প্রঃ তোর বাড়ি কোথায়? উঃ এই গ্রামে। প্রঃতুই কেন একে ধরেছিস? উঃ ও কেন আমার ঘরে আগুন নিয়ে এলো? উঃ আমি জামা কাপড় নিতে ঢুকে ছিলাম (সন্ধ্যার সময় ইলেক্ট্রিক না থাকায় হাবুল জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে এই বাইরর ঘরেই আলমারী থেকে হালখাতা করতে যাবার জন্য জামা কাপড় বার করতে এসেছিলো ঘরে ঢুকেই আর্তনাদ করে উঠে ছিলো)
প্রঃ তোর কোনো অভিযোগ আছে? উঃ আমার প্রাইজের মেডেল, কাপ গুলো কেনো বেচে দিয়েছে ?(গণেশ ভালো সাইক্লিস্ট ছিলো অনেক প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে মেডেল, কাপ পেয়েছিলো ,সম্ভবত ও গুলো বাড়ির লোক বিক্রী করে দিয়ে ছিলো অভাবের সংসার ওদের)
প্রঃ তুই একে ছেড়ে যাবি কিনা বল? প্রশ্নের সাথে সাথে ছপটির মার মেঝেতে,আর হাবুলের আর্তনাদ যাচ্ছি যাচ্ছি আমাকে ছেড়ে দাও। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমি খাবো।
প্রঃ কি খাবি বল? উঃ কলা দিয়ে ভাত
তক্ষুনি পাশে আমাদের কলা বাগান থেকে গাছের থেকে কাঁচা কাঁচা কয়েকটা কলা ভেঙ্গে নিয়ে এসে কলাপাতায় বাড়িথেকে রাতের রান্না ভাত,নুন আর তেল সাথে দেওয়া হলে সব একসাথে হাবুল চটকে মেখে গোগ্রাসে কয়েক গ্রাস খেলো,তারপর উঠে দাঁড়াতেই, যদু তান্ত্রিক আবার ছপটি মেরে জিজ্ঞাসা করে কিরে যাবি? উঃ হ্যাঁ যাব।
প্রঃ কি নিয়ে যাবি? কিভাবে যাবি? উঃ এক ঘড়া জল দাঁতে করে নিয়ে যাব।
ব্যাস তক্ষুণি পাশে আমাদের বাড়ি থকে পিতলের চাদরের মাঝারি ঘড়া ৮/১০ লিটার জল ধরে নিয়ে আসা হোলো জলভর্তি , হাবুলের সামনে মেঝেতে রেখে যদু তান্ত্রিকের আদেশ নে ওঠা অমনি হাবুল হেঁট হয়ে দাঁত দিয়ে ঘড়াটার কানা কামড়ে ধরে সোজা উঠে দাঁড়ালো, দুটো হাত দুপাশে ঝুলছে, দাঁতে ঝুলছে জল ভর্তি ঘড়া। এবার তান্ত্রিকের আদেশ চল, দেখি হাবুল সোজা ঐ ঘর থেকে বেড়িয়ে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় এবার হাবুল হাঁটতে থাকে দুটো হাত দুপাশে সোজা ঝুলছে, দাঁতে জল ভর্তি ঘড়া ঝুলছে সজা গট গট করে হেঁটে চলেছে পিছনে বহু মানুষ আমরাও চলেছি।হাবুল ৩০-৩৫গজ ডান দিকে বেঁকে বড়পুকুরের পাড়ে রাস্তা দিয়ে চলল সোজা সেই রাস্তার ধারের ইলেকট্রিকের লাইট পোস্টটার কাছে,আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম হাবুল ঐ লাইট পোস্ট টার নীচে গিয়ে ঘড়াটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল পাশে তান্ত্রিকের গায়। এরপর হাবুল কে পাঁজাকোলে করে বাড়িতে এনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হোলো, হাবুল অচেতন ভাবে ঘুমিয়ে থাকলো। ঘুম ভাঙ্গার পর ওর কিছুই মনে নেই। আমার মা আমাদের ঐ ঘড়াটা ভুতে ধরার ঘড়া বলে কাঁসারি ডেকে বদলে নেন। এই ঘটনা হাবুলের বিন্দু মাত্র মনে ছিলোনা। পাড়ার লোকজন বহু মানষ স্বচক্ষে দেখেছে পুরো ঘটনাটা।
নানান জন নানা ভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করেন, কেউ বলেন হিস্টিরিয়া,কেউ বলেন এটা এক রকম মানসিক রোগ অথচ আমাদের বন্ধু হাবুলকে আমরা চিন্তাম,ওর কোনো অসুখ ছিলোনা, ওরা পাড়ায় নতুন গণেশের প্রাইজ পাওয়ার কথা আমাদের সবার অজানা, ও যে যে কথা বলেছে গণেশ হিসাবে এই সব তথ্য ওর জানার কথাই নয়। আমি আজ ও এই ঘটনার কথা মনে পড়লে বিস্মিত হই, ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনা ।এর অনেকজন স্বাক্ষী আছেন এখানে।
আজ আমি যে ঘটনার উল্লেখ করছি এটা আমার স্বচোক্ষে দেখা আমাদের ই একটি বাড়িতে ঘটেছিলো, পাড়ার বহু লোকের উপস্থিতিতে, স্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকাতেও ঘটনাটা 'বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলেনা' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিলো।এখন বিশ্বাস অ বিশ্বাস পাঠকের নিজস্ব ব্যাপার। সত্য কি মিথ্যা বিতর্কে যাবোনা।আমি গল্পাকারে নয় খুব ছোট করে ঘটনাটাই লিখছি ।
আমাদের নিজের বসত বাড়ির প্রায় লাগোয়া আমাদের ই আর একটা দোতলা বাড়ি যেটাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাড়া দেওয়া হত। । বাবা চাইতেন বাড়ির পাশে ভালো প্রতিবেশী থাকুন । ঐ বাড়ির উপরতলায় পুলিশের একজন বড় অফিসার অধীর চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত) দুই ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রী এই পরিবার সহ আর নীচে ছিলেন অবসর প্রাপ্ত সেনা বিভাগের ডাক্তার সারদা কান্ত তরফদার (নাম পরিবর্তিত) , বড় চার ছেলে,তিন মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে বড় পরিবার ভাড়া থাকতেন।
এই ডাক্তার বাবুর ছোট ছেলে ছিলো আমার সমবয়সী বন্ধু। সালটা সম্ভবত ১৯৬১/৬২ ।
আমাদের পাড়ার ই একজন মাঝ বয়সী লোক গণেশ হালদার( নামটি পরিবর্তিত) চৈত্র মাসে শিবের সন্ন্যাস নিয়ে ভোক্তা হয়েছিলেন, তিনি ভোক্তা থাকা কালীন মাথা খারাপ হয়ে যায় (কেউ কেউ বলেন অতিরিক্ত নেশা করায় ,নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ) ঐ সন্ন্যাস বেশেই একদিন রাতে কাছের একটা রাস্তার ইলেকট্রিক লাইট পোস্টবেয়ে উঠে ইলেকট্রিকের লাইনের তার ধরে মারা যান।
এর কিছুদিন পরে ১লা বৈশাখ,তখন সন্ধ্যাবেলা,আমরা পাড়ার দোকানে হালখাতা করতে যাব ,ভালো জামা কাপড় পরে তৈরি হচ্ছিলাম,বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি একটু আগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া দেওয়াতে ইলেকট্রিক পাওয়ার চলে গিয়ে চারপাশ অন্ধকার। এমন সময় হঠাৎ পাশের বাড়ি থেকে একটা তীব্র আর্তনাদ শুনে আমরা সহ চারপাশের বাড়ি থেকে লোকজন ছুটে ওই বাড়িতে হাজির। দেখি আমাদের সেই পাশের বাড়ির নীচের তলা থেকে ঐ চিৎকার আমার সেই বন্ধুর ।
ইতি মধ্যে উপর তলা থেকে সেই পুলিশ অফিসার কাকু অধীর চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত) নেমে এসে আমার বন্ধু হাবুলের(নাম পরিবর্তিত ) হাত টা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে তিনি লম্বাচওড়া শক্তিশালী মানুষ,অথচ হাবুল এক ঝটকায় তাঁকে ঠেলে ছিটকে দিচ্ছে, চারপাশে পাড়ার অনেকে ভীড় করে রয়েছে।ঐ পুলিশ কাকু হাবুলের হাত চেপে ধরে বলছেন "আমি ব্রাহ্মণ, এই দ্যাখ আমার গলায় পৈতে আছে,তুই আমার কিছুই করতে পারবিনা তোর নাম বল?" ওদিকে ডাক্তার বাবু তাঁর ঔষধ পত্র ছেলেকে দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব দেখছেন, এম্বুল্যান্সে ফোন করার ব্যবস্থা হয়েছে, আর ঐ পুলিশ অফিসারের আর্দালী রমনী (নাম পরিবর্তিত ) আমাদের ই বাড়ির লাগোয়া আমাদের বড় বাগানের একধারে পাঁচটা টালির চালার লাইন ঘর, যেখানে আমাদের রিক্সাঅয়ালা, বাড়ির কাজের লোক থাকত সেই খানেই থাকত। ওই রমনী সোজা পুলিশ লাইনে তখন কাজ করত কনস্টেবল যদু নাম করা ওঝা তাকে ডাকতে চলে গেছে সাইকেল নিয়েছে তাড়াতাড়ি আসবে বলে। অনেক লোক জনের ভীড় হঠাৎ দেখি হাবুল লাফাতে শুরু করেছে আর চেঁচাচ্ছে , ওকে চলে যেতে বল ও যেদিকে তাকিয়ে বলছে সেদিকে তাকিয়ে দেখি, রমনী বাবু এক জন মাঝারি উচ্চতার গাট্টা গোট্টা ভালো চেহারার লোক খালি গায় গলায় রুদ্রাক্ষ আরো অনেক মালা মাথায় লাল সিঁদুরের বড় টিপ, কাঁধে বড় ঝোলা নিয়ে ঢুকছেন দরজা দিয়ে।হাবুল একে দেখেই ওই রকম ক্ষেপে উঠেছে। এরপর ই আসল খেল দেখলাম। আমাদের কাছে যেতে দিচ্ছেনা বড় রা ,আমরা পেছনে লোকেদের ফাঁক থেকে যেটুকু দেখেছি। ঐ বাড়ির নীচ তলার একদম উত্তর দিকের যেটা বাইরে যাবার ঘর, সেই ঘরের জানলা, দরজা বন্ধ করে একটা ছোট হোমের জায়গার মত করে আগুন জ্বালা হোলো, ধুপ, ধুনো জ্বালানো হোলো। ঘরে বেশ ধোঁয়া। হাবুলের হাত শক্তকরে ধরা আছে পুলিশ কাকুর হাতে।এবার দুরবোদ্ধ মন্ত্র হ্রীং, ব্রীং সাথে একটা ছপটি দিয়ে মাটিতে মারছেন যদু বাবু আর তত হাবুল লাফাচ্ছে ছেড়েদাও ছেড়েদাও বলে, এবার যদু তান্ত্রিক প্রশ্ন শুরু করেন, প্রঃ তোর নাম কি? হাবুল উত্তর দেয় আমার নাম গণেশ হালদার।
প্রঃ তোর বাড়ি কোথায়? উঃ এই গ্রামে। প্রঃতুই কেন একে ধরেছিস? উঃ ও কেন আমার ঘরে আগুন নিয়ে এলো? উঃ আমি জামা কাপড় নিতে ঢুকে ছিলাম (সন্ধ্যার সময় ইলেক্ট্রিক না থাকায় হাবুল জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে এই বাইরর ঘরেই আলমারী থেকে হালখাতা করতে যাবার জন্য জামা কাপড় বার করতে এসেছিলো ঘরে ঢুকেই আর্তনাদ করে উঠে ছিলো)
প্রঃ তোর কোনো অভিযোগ আছে? উঃ আমার প্রাইজের মেডেল, কাপ গুলো কেনো বেচে দিয়েছে ?(গণেশ ভালো সাইক্লিস্ট ছিলো অনেক প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে মেডেল, কাপ পেয়েছিলো ,সম্ভবত ও গুলো বাড়ির লোক বিক্রী করে দিয়ে ছিলো অভাবের সংসার ওদের)
প্রঃ তুই একে ছেড়ে যাবি কিনা বল? প্রশ্নের সাথে সাথে ছপটির মার মেঝেতে,আর হাবুলের আর্তনাদ যাচ্ছি যাচ্ছি আমাকে ছেড়ে দাও। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমি খাবো।
প্রঃ কি খাবি বল? উঃ কলা দিয়ে ভাত
তক্ষুনি পাশে আমাদের কলা বাগান থেকে গাছের থেকে কাঁচা কাঁচা কয়েকটা কলা ভেঙ্গে নিয়ে এসে কলাপাতায় বাড়িথেকে রাতের রান্না ভাত,নুন আর তেল সাথে দেওয়া হলে সব একসাথে হাবুল চটকে মেখে গোগ্রাসে কয়েক গ্রাস খেলো,তারপর উঠে দাঁড়াতেই, যদু তান্ত্রিক আবার ছপটি মেরে জিজ্ঞাসা করে কিরে যাবি? উঃ হ্যাঁ যাব।
প্রঃ কি নিয়ে যাবি? কিভাবে যাবি? উঃ এক ঘড়া জল দাঁতে করে নিয়ে যাব।
ব্যাস তক্ষুণি পাশে আমাদের বাড়ি থকে পিতলের চাদরের মাঝারি ঘড়া ৮/১০ লিটার জল ধরে নিয়ে আসা হোলো জলভর্তি , হাবুলের সামনে মেঝেতে রেখে যদু তান্ত্রিকের আদেশ নে ওঠা অমনি হাবুল হেঁট হয়ে দাঁত দিয়ে ঘড়াটার কানা কামড়ে ধরে সোজা উঠে দাঁড়ালো, দুটো হাত দুপাশে ঝুলছে, দাঁতে ঝুলছে জল ভর্তি ঘড়া। এবার তান্ত্রিকের আদেশ চল, দেখি হাবুল সোজা ঐ ঘর থেকে বেড়িয়ে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় এবার হাবুল হাঁটতে থাকে দুটো হাত দুপাশে সোজা ঝুলছে, দাঁতে জল ভর্তি ঘড়া ঝুলছে সজা গট গট করে হেঁটে চলেছে পিছনে বহু মানুষ আমরাও চলেছি।হাবুল ৩০-৩৫গজ ডান দিকে বেঁকে বড়পুকুরের পাড়ে রাস্তা দিয়ে চলল সোজা সেই রাস্তার ধারের ইলেকট্রিকের লাইট পোস্টটার কাছে,আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম হাবুল ঐ লাইট পোস্ট টার নীচে গিয়ে ঘড়াটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল পাশে তান্ত্রিকের গায়। এরপর হাবুল কে পাঁজাকোলে করে বাড়িতে এনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হোলো, হাবুল অচেতন ভাবে ঘুমিয়ে থাকলো। ঘুম ভাঙ্গার পর ওর কিছুই মনে নেই। আমার মা আমাদের ঐ ঘড়াটা ভুতে ধরার ঘড়া বলে কাঁসারি ডেকে বদলে নেন। এই ঘটনা হাবুলের বিন্দু মাত্র মনে ছিলোনা। পাড়ার লোকজন বহু মানষ স্বচক্ষে দেখেছে পুরো ঘটনাটা।
নানান জন নানা ভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করেন, কেউ বলেন হিস্টিরিয়া,কেউ বলেন এটা এক রকম মানসিক রোগ অথচ আমাদের বন্ধু হাবুলকে আমরা চিন্তাম,ওর কোনো অসুখ ছিলোনা, ওরা পাড়ায় নতুন গণেশের প্রাইজ পাওয়ার কথা আমাদের সবার অজানা, ও যে যে কথা বলেছে গণেশ হিসাবে এই সব তথ্য ওর জানার কথাই নয়। আমি আজ ও এই ঘটনার কথা মনে পড়লে বিস্মিত হই, ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনা ।এর অনেকজন স্বাক্ষী আছেন এখানে।
No comments:
Post a Comment