Saturday, 21 November 2015

বিভিন্ন স্বাদের গল্পঃ ভেপুদার কাহিনী

ভেপুদা র গল্প ' চম্বলের সিংহ'  তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
ভেপুদাকে নিশ্চয় সবাই চেনো? হ্যাঁ হ্যাঁ ওই যে মাঠের ধারে একতলা টালীর চালের বাড়িটা, পাশে সব্জীর ক্ষেত একাই থাকেন, বয়স? ঊনি বলেন ৭৫ ,দেখলে মনে হয় ৫০এর বেশী হবেনাসংসার বোলতে কেঊ নেই, কখনো কাঊকে আস্তেও দেখিনি বিয়ে থা করেননি, চাকরী করেন না পাশের ক্ষেতে সব্জী চাষ করেন, শাক, কপি, মুলো,লাঊ, কুমড়ো, এইসব উনি গোবর,পাতা সার, খোল এইসব  ব্যবহার করেন কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না অথচ কি সুন্দর সব ফসল, যেমন চকচকে দেখতে তেমন ভালো সাইজকি চাহিদা এই সব্জীর বাড়ি থেকেই লোকে নিয়ে চলে যায়, দাম বেশী তাও এখন নয় স্বাস্থ্য সচেতন কিন্তু ভেঁপুদার ফসলের চাহিদা বরাবর ভেঁপুদা খুব মিশুকে তার কাছে গল্প শুনতে যেতাম , ভেঁপুদা নানা রকম সুন্দর সুন্দর গল্প বলেনরুপ কথার গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, পুরানের গল্প, ভুতের গল্প, হাসির গল্প ভেঁপুদা বলেন এই সব গল্প তাঁর বাবার মুখে শোনা, দাদুর মুখে শোনাভেঁপুদা বেশী দূর লেখা পড়া করেন নি, স্কুল ভালো লাগতোনাপাড়ার যারা ভেঁপুদার থেকে বয়স কম সবাই ভেঁপুদা বলেই ডাকে ভেঁপুদা নামের একটা কারন আছে উনি ছোট থেকে পেঁপে ডালের একদিকে পাতলা কাগজ বেঁধে নলে ফুটো করে ভেঁপু বাজাতেন, আম আঁটী ঘষে ভেঁপু বাজাতেন পরে দেখেছি ,মেলায় যে  ছোট ছোট বাঁশের তারের বেহালা পাওয়া যায় সেগুলোতে অদ্ভুত সুন্দর সব গান বাজাতে পারেনভেঁপু দার চায়ের ছাড়া কোনো নেশা নেইআমরা  কয়েক জন স্কুল ছুটির পর বিকালে প্রায়ই যেতাম ভেঁপুদার বাড়ি গল্প শোনার লোভে ভেঁপুদা আমাদের এই জনাচারেকছেলেকে লজেন্স দিতেন মাঝে মাঝে ভেঁপুদা আমাদের চম্বলের ডাকাত মান সিং, পুতলীবাঈ, মালখান সিং , বেহড়,বাগী , বন্দুকের কথা  বোলেছেন,  আমরা অবাক হয়ে শুনেছি সেইসব রক্তহিম করা কাহিনী
আজ চম্বলের ডাকাতের ই একটা ছোট গল্প শোনাবো ভেঁপুদার কাছেই শোনাভেঁপুদার দাদু মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে থাকতেন , ওখানে শিক্ষকতা কোরতেন, ভালো ছাত্র ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন কাছেই চম্বলনদী বয়ে গেছে পাহাড়ের আঁকা বাঁকা পথে খরস্রোতা নদী এই অঞ্চল দুর্গম    পাহাড়ি পথ চড়াই উতরাই ঘন জঙ্গলে ঘেরা দিনের বেলাও আলো আঁধারি ঘেরা খাঁ খাঁ করে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা থেকে গোয়ালিয়র যাওয়ার পথে  চম্বল নদীর উপত্যাকা অঞ্চলে দূরে মাটির পাহাড়ের গা বেয়ে থরে থরে নেমে এসেছে সংকীর্ণ  গিরি খাত এর মত, যাকে বলে র‍্যাভাইন চম্বল নদীর র‍্যাভাইনমোরেনা (Morena), ভিন্দ(Bhind),  শেহপুর (Sheopur) জেলার এই পথেই চারপাশে শক্ত কাদা মাটির  ১০'-২০' উচ্চতার প্রাচীরের মতন ঘেরা বহুজায়গা, এদের ঠিক টিলা বলা যাবেনা অনেকটা ছাদ বিহীন গুহার মতোন , এই ঘেরা গুলোকেই বলে বেহড়এই অঞ্চলেই শক্তি শালী যুবক যুবতী যারা কিশোর বয়সেই শপথ নেয় সমাজে উচ্চ বর্গীয় বিত্তশালী  অত্যাচারী সম্প্রদায়ের যাদের সাথে বরাবরের শত্রুতা  তাদের ধন সম্পত্তি ছিনিয়ে দরিদ্র লোকেদের মধ্যে বিলিয়ে দেবার ,তারা ঘর ছেড়ে বেহড়ে আশ্রয় নেয়, এদেরকে বলে বাগী,  এদের জীবন যোগী বা সাধুর মতন বাগীরা হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, বন্দুক,   দুরন্ত গতিতে আশ পাশের অঞ্চলে কখনো কয়েক মাইল দুরেও গিয়ে ডাকাতি করে নিয়ে আসেএরা সাধারণত দলবদ্ধ ভাবে ডাকাতি করে দূরে দূরে গাঁয়ের লোকেরা এদের ভয়ে আতঙ্কিতপুলিশ এদের কিছুই কোরতে পারেনা ,যেহেতু এই অঞ্চলের পথ খুউবই দুর্গম বহু শাখা প্রশাখা গুপ্ত চোরা পথ আর লুকানোর জায়গা যা বাগীদের নখ দর্পণে অথচ প্রশাসনের কাছে অজানাপুলিশ এই অঞ্চলে গেলে অতর্কিত চারপাশ থেকে আক্রমনে তারা প্রাণ হারায়বাগীরা বেহড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে বাগীদের বহু সংবাদ দাতা গোপন চর আছে, তাছড়া এরা দুঃস্থ গরীব লোকেদের কাছে পরিত্রাতা ভগবান, তাই তারাই সাহার্য্য করে এদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতেএরা সাধারণ পথচারী আর মহিলাদের কোনো জিনিস ছিন্তাই করেনি কোন দিন এরা চম্বলের সিংহ (Chambal ka sheer,i.e Lion of the Chambal) অনেক গান গাথা, নাটক আছে এদের নিয়েএই অঞ্চলেরঅধিকাংশ মানুষ বুন্দেলখন্ড ভাষী উচ্চারণ ঠিক হিন্দী নয় ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৫ চম্বলের ত্রাস  ডাকু মান সিং রাঠোর, রাজপুত ছিলেনইনি চম্বলের খেড়া রাঠোর (Khera Rathore) গ্রামে থাকতেন,সব থেকে বড় ১৭ জনের ডাকাতের দল ছিলো যার মধ্যে বেশীভাগ আত্মীয়, ছেলে, ভাই নবাব সিং,ভাইপো ,তার ছেলে সুবেদার সিং এই অঞ্চলে অপ্রতিরোদ্ধ  হয়ে উঠেছিলো ১৯৫৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর  কাকেকাপুরা(KakekaPura) তে কলা বাগানে গাছের নীচে গোর্খা রেজিমেন্টের হাতে মান সিং মারা যান মান সিং, রুপা পণ্ডিত, পুতলীবাই, ঐ সময়ের মধ্যে ১১১২টা ডাকাতি করে, ১৮৫টা খুন, ৯০ বারের বেশি পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় ৩২ জন পুলিশ আধিকারিক মারা যান পুতলীবাঈ ১৯৫৮ সালে মারা যায়
এদের নিয়ে অনেক রোমহর্ষক কাহিনী আছে, আজ একটা ছোট মান সিংকে নিয়ে শোনা কাহিনী বলি

একদিন সকালে মান সিং খাটিয়াতে বসেন সকালে নারিকেল মুড়ি খাচ্ছিলেন হঠাৎদেখেন এক তরুন যুবক তাঁর ডেরায়  একদম সামনা সামনি উপস্থিত
হাতে উদ্ধত রিভলবার, এসেই সোজা মান সিং এর দিকে তাক করে বলেন হাত তোলো আমি তোমাকে গ্রেফতার কোরছি মান সিং হেসে তাকে বলেন, সাহেব আপনি তো আমাকে ধরেই ফেলেছেন, আমারতো অনেক বয়স হয়েছে,ছেলেরাও সব বড় বড় হয়ে গেছে, অনেকদিন সংসার জীবন কাটালাম, আপনিতো নও যোয়ান, আপনার জীবন অনেক বাকী, আপনি ফিরে যান আমার লোক আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে ,নইলে এখান থেকে এক পাও যেতে পারবেন না প্রাণে মারা যাবেন, আমার অনুরোধ এই ভুল কোরবেন না , ফিরে যানঐ যুবক তখন নিজের পরিচয় জাহির করে জানান, তিনি জেনে শুনেই এখানে এসেছেন ভয় পাননা কিছু কেই, তাঁর সশত্র বাহিনী পিছনেই আছে, অতএব কোনো চালাকি নয়, হাত বাড়িয়ে দাও হ্যান্ড কাপ পড়িয়ে দিচ্ছি, মান সিং শেষ বারের মত অনুরোধ জানালেন বোললেন আমি এতো বোললাম আপনি শুনলেন না এখন আপনার বরাত আমার কিছু করার নেই আমি হাত এগিয়েই দিচ্ছি, এই বলে খাবারের থালাটা নীচে নামিয়ে  হাত টা পরিস্কার করার মতো করে দুবার ঝাড়লেন , মুহুর্তে চারপাশ থেকে গুলি এসে ঐ পুলিশের দেহটা ঝাঁঝড়া করে দিলো মান সিং বোললেন দুর্ভাগ্য
এই চম্বলের সিংহ ,মান সিং কে ও তাঁর দলকে ধরতে সৈন্য বাহিনী,সশস্ত্র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ১০,০০০ বেশী লোক নিয়োগ কোরতে হয়ে ছিলো

No comments:

Post a Comment