Monday 24 October 2016

বিভিন্ন স্বাদের গল্প

বিভিন্ন স্বাদের গল্পঃ            প্রকাশনার তারিখ
                                          ফেসবুক               ব্লগ   অনান্য  
১)দীনুদাদুর আজব জন্তু
২)ভুতেধরা                          ১১/০৫/১৫
৩)যোগীর অভিশাপে             ২০/০৫/১৫
৪)অযোধ্যাপাহাড়ে                ২৭/০৫/১৫
৫)বিচিত্র অভিজ্ঞতা        ০১/০৬/১৫
৬)ঝাড়ফুঁক                         ০৪/০৬/১৫
৭)ভেপুদার গল্প              ০৩/০৮/১৫
৮)মতিভ্রম                          ১৮/০৮/১৫
৯)ত্রিলোচন বাবুর আক্কেল      ২০/০৮/১৫
১০) অণুগল্প ফিশান        ২০/০২/১৫
১১)ফিরেদেখা(১৯৭৪)০১/১২-০৭/১২/১৪
১২)হারিয়েগেছি আমি     ১১/০১-১২/০১/১৫




দীনুদাদুর আজব জন্তু' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
গল্পটা শুনেছিলাম আমার মায়ের দূরসম্পর্কের এক পিসতুত মামার মুখেআজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে দীনু দাদু বলেই ডাকতাম তিনি পুর্ব বঙ্গের মানুষ ছিলেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন ,বিয়ে থা করেননি , সারা পৃথিবী জুড়ে বেড়ানোর নেশাউনি পেশায় ছিলেন শিক্ষক,যা উপার্জন করতেন সব জমিয়ে বছরে ৩ বার ঘুরতে বেরুতেনওনার পৃথিবীর সব মহাদেশে যাওয়া হয়ে ওঠেনি ১৯৮৬ সালে মারা যান ৮৬ বছর বয়সেউনি আফ্রিকায় বেড়াতে গিয়ে কেনিয়ার জঙ্গলে এক বিস্ময়কর জন্তুর সন্ধান পেয়ে ছিলেনযার বিবরণ কোথাও কখনো    পাননি পরবর্ত্তী কালে উনি বহু জীব বিজ্ঞানীর নিকট চিঠি চাপাটি  করেও কোন সঠিক উত্তর পাননি সকলেই গালগল্প হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছেনএক মাত্র রাশিয়ান জীব বিজ্ঞানী ডক্টর এমুরাস স্কোভিক জানিয়েছিলেন,এই রকম জন্তু তিনি কখনো দেখেন নি বা কোন বইতেও পড়েন নি,তবে এই     জানিনা,জানলেও গুরুত্ব দিয়ে কোন রকম অনুসন্ধান বা গবেষণা করা হয়না, ফলে অজানাই থেকে  যায় এই সব বিশ্বের বিষ্ময় আমি অনেক গল্প ই দীনুকাকার মুখে শুনেছিউনি কিছু তাঁর শোনা কাহিনী কিছু তার নিজের চোখে দেখা কাহিনীদীনু কাকার কছে যেমন শুনেছি তার নিজের মুখে বলা বর্ণনা ভাবেই লেখার চেষ্টা করছি, জানিনা কতদুর সঠিক ভাবে বর্ণনা করতে পারব,অথচ এই কাহিনী আজ ও আমার কানের কাছে বাজছেআমি বিস্মিত হতবাক হয়ে মুগ্ধভাবে শুনেছি
পানীয় জলের সরবরাহ করবার জন্য আফ্রিকায় কেণিয়া
, উগাণ্ডায় যেতে হয়ে ছিলো যেহেতু আমাদের কোম্পানী সারাভাই এণ্টারপ্রাইসেস এই পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার কারিগরি প্রযুক্তি ও সম্পন্ন করার কাজের  দায়িত্ব পেয়েছিলোআমায় উগাণ্ডায় কাম্পেলা শহরে কাজ হয়ে যাবার পর পর ই হাঁটা পথে ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদ দেখার জন্য ভীষণ ইচ্ছা হয়আমার সাথী চেন্নাই এর ভেঙ্কটেশ গণেশন আমার বাসনার কথা শুনে সঙ্গে যাবার জন্য তক্ষুণি তৈরী হয়ে ব্যস্ত হয়ে তাগিদা দিতে শুরু করল আমি ওকে পথের  বিপদ সঙ্কুলতার কথা বললাম,ঘন জঙ্গল, অজানা ভয়ঙ্কর বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে কোন ধারনাই নেইহিংস্রজন্তু আর সাপ খোপ ভরা গভীরজঙ্গল মাঝে মাঝে পাহার ও আছেপাহার জঙ্গল ধাপে ধাপে সমতলে নেমে এসে মিশেছে অনেক জায়গায় জঙ্গল এমন গভীর, গাছপালা আকাশ ঢেকে রেখেছে-দিনের বেলায় ও রোদ পৌঁছায়না মাটিতেআমরা শুকনো খাবার,ঔষধপত্র,ছুরি কাঁচি,টর্চ,আর আমার আত্মরক্ষার্থে একটা রিভলভার নিয়ে বেড়িয়ে পড়লামপ্রথমে হালকা ঘনত্বের জঙ্গল তারপর ক্রমশঃ গভীর হতে লাগলোপায়ে হাঁটু অবধি জঙ্গলে হাঁটার জন্য হান্টার সু গাম বুটকোন সরিসৃপ প্রাণী যাতে চট করে হাঁটুর নীচে কামড়াতে না পারেঝড়াপাতা আর বুনো ঘাসের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে-মচমচ শব্দ হচ্ছেভিক্টোরিয়া পৌঁছতে ১৬-১৭ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে, জঙ্গলের পথে প্রায় ৮০ কিলোমিটার যেতে হবে- মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গলবিকাল ৩-৪টার সময় একটা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গা যেখানে বড় বড় ডালপালা ছড়ানো গাছ আছে এমন জায়গায় উপস্থিত হলামএই পর্য্যন্ত আসার পথে ,বহু সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী,চিনিনা এমন কালচে চাকাচাকাদাগ হাত ৪/৫লম্বা সাপ, সজারুর মতন প্রাণী ,কিছু বড়বড় ইঁদুর জাতীয় প্রাণী,খরগোশ এগুলো দেখলামরাত্রে থাকার ব্যবস্থা করতে হবেএকটা আমাদের দেশের আমগাছের মতন গাছ বেছে নিয়ে বেশ খানিকটা উঠে উঁচুতে টুকরো ডাল বেঁধে মাচা মতন বানালাম রাতটা দুজনে ঐ মাচায় বসেই কাটাবোজোরালো সাত সেলের টর্চ, রিভলবার, খাবার জলের বোতল,ধারালো বড় ছুড়ি সব হাতের কাছেই সাইড ব্যাগে রাখলামআধ ঘণ্টার মধ্যে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এলোচারপাশে ঘন অন্ধকারে ঢাকতেই জোনাকি জ্বলছে ,কিচির মিচির শব্দ গাছের মাথায় পাখীরা বাসায় ফিরে এসেছে আগেইজঙ্গলের মধ্যে আজানা সব পশুদের ডাক,দুরে একটা ঝটাপটির শব্দ মনে হয় কোন জন্তু শিকার ধরেছেআমরা দুজনেই বেশ সজাগ, নিজেদের গাছের ডালের সাথে বেঁধে নিয়েছি যাতে চোখে ঘুম এলে ঢুলে পড়ে না যাইহাতের রিস্টোয়াচে রেডিয়াম দেওয়া অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে কটা বাজে বোঝা যায়জঙ্গলের মধ্যে প্রচণ্ড ভয় আর আতঙ্ক,আমরা কেউ আগে কখন ও এভাবে জঙ্গলে থাকিনিবেড়াতে গিয়ে জঙ্গলে থাকা, নাইট সাফারির অভিজ্ঞতা থাকলেও সে অনুভুতি আর এইভাবে অপরিচিত ভয়ঙ্কর জঙ্গলে খোলা আকাশের নীচে গাছে রাত কাটানো-সম্পুর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা
তখন প্রায় রাত আড়াইটে বাজে-হঠাৎ ভয়ঙ্কর ভাবে গাছে থাকা পাখীরা আর বাঁনর গুলো চেঁচামেচি হুটোপাটি শুরু করল
আমি শিকার কাহিনীতে জঙ্গলের পশুদের আচার আচরণ পড়ে জেনেছি যে কোন ভয়ঙ্কর, হিংস্র জন্তু জানোয়ার দেখলে, কাছাকাছি কোথাও এলে পাখি, বানর এরকম প্রাণীরা ভয়ে চেঁচামেচি করে,ডাকে-সকল কে সতর্ক করে দেয়এদিকটায় বাঘ,সিংহ আছে কিনা আমার জানা নেই, তবে স্থানীয় লোকেদের মুখে শোনাযায় যে বাঘ, সিংহ এদিকটায় নেই বললেই চলে তবে ভয়ংকর 'বুগুডুম্পা'র সন্ধান মেলে, সেপ্রাণী আরো মারাত্মক খুউব ই ভয়ঙ্কর বুগুডুম্পা কি? জানতে চাইলাম-এ সাক্ষাৎ শয়তান-প্রাণী না উদ্ভিদ কেউ জানেনা-স্থানীয় আদিবাসীরা বলে এ সাক্ষাৎ শয়তান বহুরুপী,কখন ও গাছ, কখন ও গাছের  ডাল ,কখন মাছ, ডাঙ্গায় কোন বন বিড়ালের মতন জন্তু, কখন ও বুকে হাঁটা গোসাপের মতন, কখন ও নিছক নিস্প্রাণ পাথরের ঢিবির মতন নানা রুপ আকৃতি ধারন করে আসলে সে সব রুপ ধরতেই সক্ষম চারপাশের সাথে গিরগিটি,বহুরুপীর মতন রঙ বদলায়প্রচণ্ড হিংস্র বড়বড় জন্তু যেমন বুনো মোষ,সিংহ,হাতির মতন বড়বড় প্রাণীর দেহ থেকে খামচে,কামড়ে মাংস খেয়ে নেয়ঐ প্রাণীরাও বুগুডূম্পার আক্রমণে মারা যায় তাই সবাই ভীষণ ভয় পায় আতঙ্কে থাকে এই প্রাণীর দেখা পাওয়া দুষ্কর দিনের বেলা এরা কখনো  আক্রমণ করেনা, ঘুমায় এক জায়গায় হয়ত পাথরের সাথে মিশে বা গাছের ঝোঁপে কোন গাছ যেমন ফণী মনসা রুপ ধরে,চেনা যায়না ফলে কেউ দেখেছে এদের কাছ থেকে কিম্বা ছবি তুলেছে বলে জানা যায়নি তবে অনেক শিকারি,অনেক আদিবাসী এদের অস্তিত্ব বুঝতে পেরেছে-দুর থেকে দেখেছে কিন্তু কিছুই করতে পারিনি মনে হয় এই প্রাণী অনান্য প্রাণীর অস্তিত্ব দূর থেকে বুঝতে পারেআরো বুঝতে পারে প্রাণীটি কি প্রকৃতির, বিপদ বুঝলে লুকিয়ে পড়ে,নিজেকে ক্যামোফ্লেজ করে,নইলে আক্রমণ করেছোট ছোট পোকামাকড় ,জন্তু জানোয়ার ধরে খায় তার কোনো অবশেষ পড়ে থাকেনাএরা গাছ পালার আড়ালে,পাহাড়ের গর্ত্তে লুকিয়ে থাকেবহু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অনুসন্ধান করেও হদিশ পাওয়া যায়নি এজন্য বুগুডুম্পা একটা রুপ কথার কাল্পনিক প্রাণী, অলীক বস্তু বলেই সবার বিশ্বাস
পাখীর  আর বাঁদরের কিচিমিচি
,হৈ চৈতে সতর্ক হয়ে চারপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম আমাদের দুজনের কাছেই' নাইট ভিশন ' দুরবীন আছে রাত্রেও স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়,এগুলো ইনফ্রা রেড আলোয় দেখা যায়,সেনা বাহিনীর কাছে থাকে আমরা দুটো বন্ধুর কাছ থেকে জোগার করে নিয়ে এসেছিফিরে গিয়ে ফেরৎ দিয়ে দেব
হঠাৎ দেখি জঙ্গলের এক প্রান্ত যে দিকটা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা পাহাড়ের ঢাল এসে সমতলে মিশেছে
,ছোট ছোট গাছের ঝোঁপ, বড়বড় পাথরের খণ্ড ইতঃস্তত ছড়িয়ে আছে সেখানে বোধহয় দিনটাছিলো পূর্ণিমা-চাঁদের আলো এসে ঐ ফাঁকা জায়গাটাতে পড়েছে, দিনের মতনই স্পষ্ট দেখাযাচ্ছে চারপাশদেখলাম একটা ডিমের মতন পাথরের খণ্ড গড়িয় গড়িয়ে জঙ্গলেরই একপাশে আসছে পাথরের খণ্ডটা বেশ মাঝারি উচ্চতার চার ফ্যটের মতন লম্বা আর ফুট তিনেক চওড়াকোন জন্তু হবে হাত পা মুখ কিছুই নেই খণ্ডটার উপর দিকে দুটো বড়বড় চাকার মতন গোল লাল আলো জ্বলছে তীব্র আলো নয়-অনেকটা নিভন্ত কয়লার মতন বুঝলাম এটা নিশ্চয় কোন জন্তুই হবেচোখের ঐ লাল আভা-এর একটু  নীচে একটা গর্ত মতন যেখান দিয়ে মাঝে মাঝে একটা সাপের জিভের মতন সরু লিক লিকে চেরা জিভ বেরুচ্ছে লক লক চারপাশে ঘুরে আবার সাপের জিভের মতন ই ঢুকে যাচ্ছেওটাই  বোধ হয় শ্বাস প্রশ্বাস নেবার জন্য,অথবা খাদ্যের অনুসন্ধানের জন্যঐ প্রাণীটি বা বস্তুটি মাটি দিয়ে গড়িয়ে আসার মতন আসছে ধীরে ধীরে
খুউব মনযোগ সহকারে লক্ষ্য করছিলাম- ভয়ে আতঙ্কে নিঃশ্চুপ
আমাদের থেকে হাত পঞ্চাশেক দুরে যখন তখন দেখি ঐ জন্তুটার ভাল্লুকের মতন সারা দেহ ঘন কালো লোমে ঢাকা, পায়ের ওখানে গোল বলের মতন খেলনা গাড়ির চাকা লাগানোঐ বলের মতন অংশটা ঘুরছে আর জন্তুটা চলা ফেরা করছে হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে মর মর করে শুকনো পাতার ওপর দিয়ে কোন জন্তু বা কিছুর হেঁটে আসার শব্দ শুনতে পেলাম-আর অবাক কাণ্ড ঐ গোলাকার জন্তুটা মুহুর্তে উধাও হয়ে গেলো,ঐ জায়গায় একটা ফুট চারেকের কাঁটা ফণী মনসার মতন গাছ দাঁড়িয়ে আমরা অবাক বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি, এমন সময়  দেখি জঙ্গলের মধ্যে থেকে একটা বুনো শুয়োরের মতন প্রাণী তবে ঠিক কি প্রাণী বুঝতে পারলামনা -ধারালো দুটো দাঁট আছে, বুঝলাম খুউব ই হিংস্র প্রকৃতির প্রাণী ক্ষিপ্র গতিতে জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে ঐ মনসা গাছটার কাছে আসতেই মনসা গাছটা সপাটে প্রাণীটাকে জাপ্টে ধরলোতারপর দেখি কোথায় মনসা গাছ?প্রাণীটাকে ঢেকে রেখেছে একটা গাঢ় খয়েরী রং এর চাদরতারপর? কিছুক্ষণ বাদে দেখি ওটা আবার পাথরের খণ্ডের মতন হয়ে গেছে- আর গড়িয়ে গড়িয়ে পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমি হিতা হিত ভুলে গিয়ে রিভাল্ভারটা নিয়ে মুহুর্তে গুলি চালিয়ে দিলাম  পরপর টং করে একটা ধাতব শব্দ শুনলাম, তারপর দেখি ঐ পাথরের খণ্ড মুহুর্তে প্রকাণ্ড পাখী প্রাগৈতিহাসিক যুগের টেরোডাকটাইলের (বইতে চবি দেখেছি )মত হয়ে সোঁ সোঁ করে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে গেলো পাহাড়ের দিকেমুহুর্তে অদৃশ্য হয়ে গেলো
লোকশ্রুতি সত্যই বুগুডুম্পা আছে-আর তার অদ্ভুত ভৌতিক আচরণ
আমার কথা সভ্য জগতে কেউ বিশ্বাস করবেনা, করেওনি -তাই নানা উপহাস আর বিদ্রুপ শুনেছি-কেউ কেউ বলেছে আমি নেশাগ্রস্থ ছিলাম,কেউ বলেছে আতঙ্কে কল্পনায় মরিচিকা দেখেছি আমার সাথী আর আমি দুজনেই দেখেছি








২)ভুতেধরা

অনেক ছড়া  কার্টুন হোলো এবার কয়েক টা  নানা স্বাদের গল্প কেমন লাগছে জানালে খুশী হ' প্রথমে একটা ভূতে ধরা কাহিনী আমার চোখে দেখা এখনে সবাই আমার বয়সের তারা জানে, স্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকাতে বেড়িয়ে ছিলো বিশ্বাস অ বিশ্বাস পাঠকের নিজস্ব আমার সে বিষয়ে কোন মতামত নাই, শুধু এই ঘটনার বহু সাক্ষী আছে প্রতক্ষ্য দর্শী এটুকুই বোলবো
'ভুতে ধরা'"বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলেনা "    তপন কুমার বন্দ্যো পাধ্যায়
আজ আমি যে ঘটনার উল্লেখ করছি এটা আমার স্বচোক্ষে দেখা আমাদের ই একটি বাড়িতে ঘটেছিলো, পাড়ার বহু লোকের উপস্থিতিতে, স্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকাতেও ঘটনাটা 'বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলেনা' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিলোএখন বিশ্বাস        অ বিশ্বাস পাঠকের নিজস্ব ব্যাপার সত্য কি মিথ্যা বিতর্কে যাবোনাআমি গল্পাকারে নয়   খুব ছোট করে ঘটনাটাই লিখছি
আমাদের  নিজের বসত  বাড়ির  প্রায় লাগোয়া আমাদের ই  আর একটা দোতলা বাড়ি  যেটাতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাড়া দেওয়া হত বাবা চাইতেন বাড়ির পাশে ভালো প্রতিবেশী থাকুন বাড়ির  উপরতলায় পুলিশের একজন বড় অফিসার অধীর চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত)   দুই ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রী এই পরিবার সহ আর নীচে ছিলেন অবসর প্রাপ্ত সেনা বিভাগের ডাক্তার সারদা কান্ত তরফদার (নাম পরিবর্তিত)  , বড় চার ছেলে,তিন মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে বড় পরিবার ভাড়া থাকতেন 
এই ডাক্তার বাবুর ছোট ছেলে  ছিলো আমার সমবয়সী বন্ধু
  সালটা সম্ভবত ১৯৬১/৬২
আমাদের পাড়ার ই একজন মাঝ বয়সী লোক গণেশ হালদার
( নামটি পরিবর্তিত) চৈত্র  মাসে শিবের সন্ন্যাস নিয়ে ভোক্তা হয়েছিলেন, তিনি ভোক্তা থাকা কালীন মাথা খারাপ হয়ে যায় (কেউ কেউ বলেন অতিরিক্ত নেশা করায় ,নেশাগ্রস্থ অবস্থায় )  ঐ সন্ন্যাস বেশেই একদিন রাতে কাছের একটা রাস্তার ইলেকট্রিক লাইট পোস্টবেয়ে উঠে ইলেকট্রিকের লাইনের তার ধরে মারা যান
এর কিছুদিন পরে ১লা বৈশাখ,তখন সন্ধ্যাবেলা,আমরা পাড়ার দোকানে হালখাতা করতে যাব ,ভালো জামা কাপড় পরে তৈরি হচ্ছিলাম,বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি একটু আগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া দেওয়াতে ইলেকট্রিক পাওয়ার চলে গিয়ে চারপাশ অন্ধকার
এমন সময় হঠাৎ পাশের বাড়ি থেকে একটা তীব্র আর্তনাদ শুনে আমরা সহ চারপাশের বাড়ি থেকে লোকজন ছুটে ওই বাড়িতে হাজির দেখি আমাদের সেই পাশের বাড়ির নীচের তলা থেকে ঐ চিৎকার আমার সেই বন্ধুর
ইতি মধ্যে উপর তলা থেকে সেই পুলিশ অফিসার কাকু অধীর চক্রবর্তী (নাম পরিবর্তিত)  নেমে এসে আমার বন্ধু হাবুলের(নাম পরিবর্তিত ) হাত টা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে তিনি লম্বাচওড়া শক্তিশালী মানুষ
,অথচ হাবুল এক ঝটকায় তাঁকে ঠেলে ছিটকে দিচ্ছে, চারপাশে পাড়ার অনেকে ভীড় করে রয়েছেঐ পুলিশ কাকু হাবুলের হাত চেপে ধরে বলছেন "আমি ব্রাহ্মণ, এই দ্যাখ আমার গলায় পৈতে আছে,তুই আমার কিছুই করতে পারবিনা তোর নাম বল?" ওদিকে ডাক্তার বাবু তাঁর ঔষধ পত্র ছেলেকে দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব দেখছেন, এম্বুল্যান্সে ফোন করার ব্যবস্থা হয়েছে, আর ঐ পুলিশ অফিসারের আর্দালী রমনী (নাম পরিবর্তিত )  আমাদের ই বাড়ির লাগোয়া আমাদের বড় বাগানের একধারে পাঁচটা টালির চালার লাইন ঘর, যেখানে আমাদের রিক্সাঅয়ালা, বাড়ির কাজের লোক থাকত সেই খানেই থাকত ওই  রমনী সোজা পুলিশ লাইনে তখন কাজ করত কনস্টেবল যদু নাম করা ওঝা তাকে ডাকতে চলে গেছে সাইকেল নিয়েছে তাড়াতাড়ি আসবে বলে অনেক লোক জনের ভীড় হঠাৎ দেখি হাবুল লাফাতে শুরু করেছে আর চেঁচাচ্ছে , ওকে চলে যেতে বল ও  যেদিকে তাকিয়ে বলছে সেদিকে তাকিয়ে দেখি, রমনী বাবু এক জন মাঝারি উচ্চতার গাট্টা গোট্টা ভালো চেহারার লোক খালি গায় গলায় রুদ্রাক্ষ আরো অনেক মালা মাথায়  লাল সিঁদুরের বড় টিপ, কাঁধে বড় ঝোলা নিয়ে ঢুকছেন দরজা দিয়েহাবুল একে দেখেই ওই রকম ক্ষেপে উঠেছে এরপর ই আসল খেল দেখলাম আমাদের কাছে যেতে দিচ্ছেনা বড় রা ,আমরা পেছনে লোকেদের ফাঁক থেকে যেটুকু দেখেছি ঐ বাড়ির নীচ  তলার একদম উত্তর দিকের যেটা বাইরে যাবার ঘর, সেই ঘরের জানলা, দরজা বন্ধ করে একটা ছোট হোমের জায়গার মত করে আগুন জ্বালা হোলো, ধুপ, ধুনো জ্বালানো হোলো ঘরে বেশ ধোঁয়া হাবুলের হাত শক্তকরে ধরা আছে পুলিশ কাকুর হাতেএবার দুরবোদ্ধ মন্ত্র হ্রীং, ব্রীং  সাথে একটা ছপটি দিয়ে মাটিতে মারছেন যদু বাবু আর তত হাবুল লাফাচ্ছে ছেড়েদাও ছেড়েদাও বলে, এবার যদু তান্ত্রিক প্রশ্ন শুরু করেন, প্রঃ তোর নাম কি? হাবুল উত্তর দেয় আমার নাম গণেশ হালদার
প্রঃ তোর বাড়ি কোথায়
উঃ এই গ্রামে প্রঃতুই কেন একে ধরেছিসউঃ ও কেন আমার ঘরে আগুন নিয়ে এলো?   উঃ আমি জামা কাপড় নিতে ঢুকে ছিলাম       (সন্ধ্যার সময় ইলেক্ট্রিক না থাকায় হাবুল জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে এই বাইরর ঘরেই আলমারী থেকে হালখাতা করতে যাবার জন্য জামা কাপড় বার করতে এসেছিলো ঘরে ঢুকেই আর্তনাদ করে উঠে ছিলো)
প্রঃ তোর কোনো অভিযোগ আছে
? উঃ আমার প্রাইজের মেডেল, কাপ গুলো কেনো বেচে দিয়েছে ?(গণেশ ভালো সাইক্লিস্ট ছিলো অনেক প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়ে মেডেল, কাপ পেয়েছিলো ,সম্ভবত ও গুলো বাড়ির লোক বিক্রী করে দিয়ে ছিলো অভাবের সংসার ওদের)
প্রঃ তুই একে ছেড়ে যাবি কিনা বল
? প্রশ্নের সাথে সাথে ছপটির মার মেঝেতে,আর হাবুলের আর্তনাদ যাচ্ছি যাচ্ছি আমাকে ছেড়ে দাও
আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমি খাবো
প্রঃ কি খাবি বল
? উঃ কলা দিয়ে ভাত
তক্ষুনি পাশে আমাদের কলা বাগান থেকে গাছের থেকে কাঁচা কাঁচা কয়েকটা কলা ভেঙ্গে নিয়ে এসে কলাপাতায় বাড়িথেকে রাতের রান্না ভাত
,নুন আর তেল সাথে দেওয়া হলে সব একসাথে হাবুল চটকে মেখে  গোগ্রাসে কয়েক গ্রাস খেলো,তারপর উঠে দাঁড়াতেই, যদু তান্ত্রিক আবার ছপটি মেরে জিজ্ঞাসা করে কিরে যাবি? উঃ হ্যাঁ যাব

প্রঃ কি নিয়ে যাবি? কিভাবে যাবি? উঃ এক ঘড়া জল দাঁতে করে নিয়ে যাব

ব্যাস তক্ষুণি পাশে আমাদের বাড়ি থকে পিতলের চাদরের মাঝারি ঘড়া ৮
/১০ লিটার জল ধরে নিয়ে আসা হোলো জলভর্তি , হাবুলের সামনে মেঝেতে রেখে যদু তান্ত্রিকের আদেশ নে ওঠা অমনি হাবুল  হেঁট হয়ে দাঁত দিয়ে ঘড়াটার কানা কামড়ে ধরে সোজা উঠে দাঁড়ালো, দুটো হাত দুপাশে ঝুলছে, দাঁতে ঝুলছে জল ভর্তি ঘড়া এবার তান্ত্রিকের আদেশ  চল, দেখি হাবুল সোজা ঐ ঘর থেকে বেড়িয়ে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় এবার হাবুল হাঁটতে থাকে দুটো হাত দুপাশে সোজা ঝুলছে, দাঁতে জল ভর্তি ঘড়া ঝুলছে সজা গট গট করে হেঁটে চলেছে পিছনে বহু  মানুষ আমরাও চলেছিহাবুল ৩০-৩৫গজ   ডান দিকে বেঁকে বড়পুকুরের পাড়ে রাস্তা দিয়ে চলল সোজা সেই রাস্তার  ধারের ইলেকট্রিকের লাইট পোস্টটার কাছে,আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম হাবুল ঐ লাইট পোস্ট টার নীচে গিয়ে ঘড়াটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল পাশে তান্ত্রিকের গায় এরপর হাবুল কে পাঁজাকোলে করে বাড়িতে এনে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হোলো, হাবুল অচেতন ভাবে ঘুমিয়ে থাকলো ঘুম ভাঙ্গার পর ওর কিছুই মনে নেই আমার মা আমাদের ঐ ঘড়াটা ভুতে ধরার ঘড়া বলে কাঁসারি ডেকে বদলে নেন এই ঘটনা হাবুলের বিন্দু মাত্র মনে ছিলোনা পাড়ার লোকজন বহু মানষ স্বচক্ষে দেখেছে পুরো ঘটনাটা
নানান জন নানা ভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করেন
, কেউ বলেন হিস্টিরিয়া,কেউ বলেন এটা এক রকম মানসিক রোগ অথচ আমাদের বন্ধু হাবুলকে আমরা চিন্তাম,ওর কোনো অসুখ ছিলোনা, ওরা পাড়ায় নতুন গণেশের প্রাইজ পাওয়ার কথা আমাদের সবার অজানা, ও যে যে কথা বলেছে গণেশ হিসাবে এই সব তথ্য ওর জানার কথাই নয় আমি আজ ও  এই ঘটনার কথা মনে পড়লে বিস্মিত হই, ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনা এর অনেকজন স্বাক্ষী আছেন এখানে
৩)যোগীর অভিশাপে

আজ  যে কাহিনী টা লিখছি এটা শ্রদ্ধেয় সত্যজিত রায়ের বিখ্যাত গল্প 'খগমের' ভাব ধারায় অনুপ্রাণীত।
'যোগীর অভিশাপে' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
গল্পটা শুনেছিলাম আমার মায়ের দূরসম্পর্কের এক পিসতুত মামার মুখেআজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে দীনু দাদু বলেই ডাকতাম তিনি পুর্ব বঙ্গের মানুষ ছিলেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন ,বিয়ে থা করেননি , সারা পৃথিবী জুড়েবেড়ানোর নেশাউনি পেশায় ছিলেন শিক্ষক,যা উপার্জন করতেন সব জমিয়ে বছরে ৩ বার ঘুরতে বেরুতেনওনার পৃথিবীর সব মহাদেশে যাওয়া হয়ে ওঠেনি ১৯৮৬ সালে মারা যান ৮৬ বছর বয়সে। এই কাহিনী  যখন কার তখন ভারত স্বাধীন হয়নি দীনু দাদুর এক বন্ধু বন দপ্তরে সদ্য রেঞ্জার পদে উত্তীর্ণ হয়ে সাঁওতাল পরগণার একটি ফরেস্ট রেঞ্জে যোগদান করেছেন। দীনু দাদুর ভীষণ জঙ্গলের প্রতি আকর্ষণ, তাই সাথে সাথে হাজির ওই রেঞ্জার বন্ধু অমিয় সরখেল এর কাছে। দীনুদাদু যে অঞ্চলের কথা বলেছিলেন সেটা তখন ছিলো সাঁওতাল পরগণার  অন্তর্গত বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার আগের অবিভক্ত বিহারের অংশ। দীনু দাদুর ভাষায় এখানে যাওয়ার একটা আলাদা আকর্ষণ ছিলোই কারন এটাই প্রাচীন মহাভারতের অঙ্গ রাজ্যের অংশ,ভাগলপুর ডিভিশনের অন্তর্গত,(অঙ্গ রাজ্যের  রাজধানী ছিলো চম্পা ,পরবর্তী
ভাগলপুর,দূর্য্যোধন এই রাজ্যের রাজা করেন কর্ণ কে)
সাঁওতাল পরগণার এই বিস্তৃর্ণ অঞ্চল পাহাড়আর পার্বত্য ঘন জঙ্গলে ঘেরা। ইতিহাস থেকে জানাযায় এই এলাকা এশিয়ান হাতি সমৃদ্ধ ছিলো। দুমকা,গোড্ডা,পাকুড়,সাহেবগঞ্জ,দেওঘর আর জামতাড়া ঘন পাহাড়ী জঙ্গল এলাকা।
১৯৩৪ সালে দুমকার পাতাবাড়ি জঙ্গলে ১১ফুট উচ্চতার এশিয়ান এলিফ্যান্ট এর কঙ্কাল যা এখন কোলকাতার  মিউজিয়ামে  রাখা আছে প্রদর্শনের জন্য পাওয়া গেছে।
দুমকা জেলায় রাণীবাহাল,আসনবনী এলাকার একটা বড় রেঞ্জের দায়িত্ব, তখন ও রাস্তা ঘাট এখনকার  মতন সুন্দর ছিলো না,চারপাশে ঘন জঙ্গল বনের মধ্য দিয়ে হাল্কা জীপ জাতীয় গাড়ি চলার পথ।রেঞ্জ অফিসের লাগোয়া রেঞ্জারের থাকার ব্যবস্থা, দুজন আর্দালী একজন ড্রাইভার
ঠহল দেওয়ার জন্য একটা লেফট হ্যাণ্ড ড্রাইভ উইলিস জীপ তখন ইলেক্ট্রিক ঐ খানে পৌঁছায়নি।বিকাল যেতেনাযেতেই ঝুপ করে রাত্রিনেমে আসে। কাছাকাছি কোনো লোকালয় বা জন বসতি নেই, দু তিন ক্রোশ মানে প্রায় ৫/৬ মাইল দূরে ছোট জন বসতি ১৫/২০ ঘরের বাস।এখান থেকে মাইল দুয়েকের মধ্যেই ঘন পাহাড়ি জঙ্গলের শুরু।বহু রকম ছোট বড় বন্য প্রাণীর বাস।এখান থেকে মাইল চারেক দূরে জঙ্গলীবাবার আস্তানা জঙ্গলের মধ্যে। ছোট্ট পাতার ছাউনী দেওয়া ঘর।সবার মুখেই এই জঙ্গলী বাবার নাম ,এনার জন্য ই এখানের জঙ্গলে এখনো প্রায় সব পশু পাখী গাছ গাছালী টিকে আছে নইলে কয়েক বছর আগে এই জংগল কাটা আর সব জীব জন্তু শিকার শুরু হয়েছিলো, ওই জঙ্গলী বাবা এসে আস্তানা  করে সবাইকে  বলে দিলেন এখনে গাছপালা কাটা চলবেনা, কোন জীব জন্তু, পশু পাখী মারা চলবেনা, যদি কেউ না শোনে তবে জঙ্গলী বাবা তাকে জন্তু বানিয়ে এই জঙ্গলের ই পাহারাদার বানিয়ে রেখে দেবে। এই কথা শুনে যারা জঙ্গল কেটে জন্তু মেরে নিচ্ছিলো তাদের লিডার শুভাইয়া মুণ্ডা দল বল নিয়ে  সাধুবাবার   আস্তানায় হাজির হয়ে সাধুবাবাকে শাসাতে লাগলো এই বলে যে সাধুর চালায় আগুন  লাগিয়ে তাকেই শেষ করে দেবে,ভালো চাইলে যেন চুপচাপ থাক, কোন রকম ট্যাঁ ফো না  করে এদের কাজে বাধা না দেয়, ফল তা হলে ভীষন খারাপ হবে। সবার হাতেই অস্ত্র, লাঠি, বল্লম, টাঙ্গি, তীর কাঁড়।  প্রায় জনা ৫০শের দল। সাধু বাবা প্রথমে কিছুই না বলে  ইশারায় চুপ করতে বললেন, তাতে কোন ফল হোলো না উল্টে হল্লা বাড়িয়ে নাচানাচি করতে শুরু করে দিলো,  তাঁকে ঘিরে চারপাশে।
সাধুবাবা তখন সামনে যে হোমের আগুন জ্বলছিলো তার থেকে এক টুকরো জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে কি মন্ত্র পড়ে কাঠে তিনবার ফু দিয়ে শুন্যে ছুঁড়ে দিলেন কাঠ টা ব্যাস মুহুর্তে আকাশ ফাটানো একশো বড় দাঁতাল হাতি হুঙ্কার দিতে দিতে এসে সব কটাকে ঘিরে ফেললো, কেউ পালাবার পথ পেলো না।এবার সাধুবাবা একজন একজন করে কাছে ডেকে বলে নাকে খত দে,  কান মোল, আর বল কোন দিন এই জঙ্গল মুখো হবোনা। এক এক করে সবাই শুধু শূভাইয়া মুণ্ডা ছাড়া সাধু বাবার কথা শুনলো। শুভাইয়া সমানে সাধুকে গালাগালি দিতে লাগলো আর টাঙ্গি উঁচিয়ে মারতে গেলো। এবার হোলো কি? সাধুবাবা  তার আশ্রমের সামনে থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে মন্ত্রপড়ে শুভাইয়ার গায়ে ছুঁড়ে দিলেন। তক্ষুনি সব হাতি মিলিয়ে গেলো পরিবর্তে দেখা গেলো সাধুবাবার পায়ের সামনে একটা বিরাট কালো চিতা যা আজ থেকে ৩০০ বছর আগেই এখান থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে শুয়ে আছে পোষা বিড়ালের মতন।
সাধু বাবা তখন সবাইকে বললেন আজ থেকে এই আমাদের জঙ্গল পাহারা দেবে সব কিছু রক্ষা  করবে।
ভবিষ্যতে যে অবাধ্য হবে তাকে ই এই শাস্তি পেতে হবে। তার পর থেকে আর কেঊ এই জঙ্গলের কোন কিছু সাধুবাবার অনুমতি ছাড়া নেয় না, সাধু বাবাকে চারপাশে থেকে দুরদুর গ্রামের লোকেরা ঠাকুরের মতন ভক্তি করে। সাধুবাবা সামান্য ফল আর পোষা ছাগলের দুধ খান। প্রতি অমাবস্যায় রাত্রে পুজা হোম হয় , বহু মানুষ আসে প্রসাদনিতে এমন কি ওই চিতা টাও পুজার সময় ঐ খানে থাকে পুজা শেষে আবার জঙ্গলে চলে যায়। আরও শোনাযায় কয়েক বার অন্য জেলা,রাজ্য থেকে চোরা শিকারী এই জঙ্গলে চোরা শিকারের জন্য এসে বিভৎ স ভাবে মারা পড়েছে মুখে গায়ে বাঘের আঁচড় পাশে চিতার পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে।এই জঙ্গলে কোনো বড় বাঘ নেই বন দপ্তর ভালোই জানে। চিতাবাঘ আছে গভীর জঙ্গলে কিন্তু এপাশে আসেনা। এখনে সাধারনত বুনো শুয়ার, খরগোশ, বনমোরগ,বন বিড়াল,হায়েনা,শিয়াল,ময়ুর এইসব প্রাণী আসে।
এই সব কাহিনী শুনে ঐ সাধুবাবার আস্তানায় যাবার খুউব ইচ্ছা হোলো। অমিয় কে বোললাম ইচ্ছার কথা,ও খানিকটা অনিচ্ছা স্বত্বেও রাজি হোলো আমার একান্ত অনুরোধে। ঠিক হোলো আগামী শনিবার বিকাল বিকাল ওই আশ্রমে যাবো ।সঙ্গে আর্দ্দালী ফাগুয়া যাবে ও সাধুবাবার খুউব ভক্ত।ও সাধুবাবার  মাহাত্ব্য সব ই জানে কিন্তু কখনও যায়নি সাধুবাবাকে দেখেও নি।আজ বৃহস্পতিবার মাঝে কালকের দিন পরের দিন বিকাল ৪টায় আমি, অমিয়, ফাগুয়া আর  ড্রাইভার হরিকিষাণ রওনা হলাম, জঙ্গলের পথ মাইল চারেক পথ যেতেই প্রায় এক ঘণ্টা লাগলো। পাঁচটা নাগাদ সাধুবাবার আশ্রমে পৌঁছলাম, একটু দূরে জীপটা রেখে হেঁটে হেঁটে গেলাম সাধুবাবার চালায়। ছোট তালজাতীয় পাতায় ছাওয়া চারপাশ ও ঐ পাতা দিয়ে ঘেরা। খড় পাতা তার উপর একটা মোটা কম্বলপাতা তার উপর লাল কাপড় পড়া গায়ে  ওই লাল কাপড়ের খুঁট চাদরের মতন  ছাড়া কিছু ই নেই তামাটে গায়ের রঙ লম্বা সু সাস্থ্য ও সুপুরুষ লম্বা চুল মাথায় ঝুটি আর দাড়ি গোঁফ,এক জনযোগী পুরুষ বসে আছেন। ওই চালার সামনে  একটা লম্বা বাঁশের তৈরী  বেঞ্চ জনা ছয়েক অনায়াসেই বসা যায়। ঘরের কাছে গিয়ে হিন্দিতে অমিয় সাধুবাবাকে প্রণাম জানিয়ে সবে পরিচয় দিয়ে  আসার কথাটা বলতে যাবে সাধুবাবা গুরু গম্ভীর গলায় পরিস্কার বাংলায় বললেন, বাইরের বেনঞ্চটাতে আপনারা একটু বসুন আজ সন্ধ্যা হয়ে আসছে বেশী কথা বলার সময় হবেনা কারন আমার সান্ধ্য আহ্নিকের সময় হয়ে আসছে।কাল পারলে সকাল ১০টা ১১টার সময় একটু কষ্ট করে সময় নিয়ে আসবেন। কালতো সাধুবাবা  অমিয়কেই রেঞ্জার সাহেব বোললো ,চিনলো কি কর্‌ আমাদের মধ্যে কে রেঞ্জার? সাধুবাবা তাঁর এই চালার বাইরে কোথাও যান না, আর অমিয় চাকরীতে এখানে মাস খানেক আগে এসেছে ও কোথাও  ঘুরতে বের হয়নি  এখনও। আর সাধুবাবার মুখে বাংলা  শুনে।আমি বেশ চমকে গেছিলাম।
আমার আরো চমক বাকী ছিলো ,সাধুবাবা সোজা আমাকে বললেন কি মাষ্টার মশাই জঙ্গল বেড়াতে এসে সোজা সাধুর ডেড়ায় স্থানীয় গপ্প শুনে দেখার ইচ্ছা হোলো? আমি কোন রকমে বিহ্বলতা কাটিয়ে বললাম মানে আপনি বাঙ্গালী? আপনি আমাদের চিনলেন কি করে? তাই অবাক হচ্ছি। সাধুবাবা হেসে উত্তর দিলেন এটা আর এমনকি শক্ত ব্যপার? আমি ধ্যান জপ তপ নিয়ে থাকি জঙ্গলের বহু দুরের আওয়াজ আমার কানে আসে এখানে জীপ গাড়ি করে আসতেপারেন বন দপ্তরের লোক। কাছেই থাকেন রেঞ্জার সাহেব নতুন এসেছেন অনেকে বলা বলি করেছে শুনেছি,তাই অনার আসার সম্ভাবনা তাই বোললাম ওনার পোশাকটাও বন জঙ্গলে ঘোরার উপযুক্ত, শার্ট প্যান্ট বুট আর আপনি যে শিক্ষক   তাও আপনার পোষাক হাবভাব থেকে আন্দাজ করা শক্ত নয়
এই কথা গুলো শুনলেও আমার মন এত সহজে ব্যাখ্যাটা মানতে পারছিলো না।এর পর সাধুবাবা  বোললেন আমি বাঙ্গালী কিনা সব কালকে এলে জানতে পারবে।আমরা কাল আসব বলে প্রণাম জানিয়ে ফিরে এলাম রেঞ্জ অফিসে।
নানা আকাশ পাতাল চিন্তা করে রাত টা কাটলো।সকাল সকাল ব্রেক ফাস্ট সারলাম চা,ডিম ,বিস্কুট দিয়ে।দুপুরের মেনু ভাত মুরগীর ঝোল সাথে চাটনী। আজ আমি আর অমিয়, জীপ  অমিয় চালিয়ে নিয়ে যাবে ছুটির দিন তাই ও ড্রাইভারকে ছুটি দিয়েছে। আমরা ১১টার আগেই আশ্রমে পৌঁছালাম।
যেতেই  সাধুবাবা বেশ স্নেহ ভরে আমাদের বাইরে বেঞ্চে বসালেন। কিছু ফল আর মিস্টি খেতে দিলেন। তারপর নিজেই বললেন হ্যাঁ  আমি বাঙ্গালী আমার নাম দীননাথ ঘোষাল, কোথায় বাড়ি জানাতে অক্ষম। স্কুলের পাঠ শেষ করে দীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছেন হিমালয়ে ৫ বছর কামাক্ষায় ৫বছর
 রাজারাপ্পায়, তারপর নিজে আস্তানা করে এই জঙ্গলে আছি। মানুষের লোভ লালসায় প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে লেগেছে।কত গাছপালা পশু পাখী কে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে।এখানেই বিখ্যাত বড় এশিয়ান  এলিফ্যাণ্ট আজ বিলুপ্ত, মিঊজিয়ামে এখানের হাতির জন্তুর কঙ্কাল দেখতে যেতে হবে। আসল চিতা বিলুপ্ত হয়েছে, এখন আছে চিতা বাঘ সেটাও শিকার করে শেষ করতে বসেছে,আমি আর কত টুকু রক্ষাকরতে পারি চেষ্টা করি যত টা পারি।এই তো এতো চেষ্টা করেও পারছিনা মুন্না ওরাও কে বোঝাতে দাঁত, চামড়, হাড়ের জন্য প্রাণী গুলোকে মেরে শেষ করে দিচ্ছে।ছোট, বড় মুখের হায়েনা যা এই  অঞ্চলে এখনো আছে এরা হাডলাকার
(Hadlakar) বলে, চম্পাপাহাড়িতে দেখা যায়। মুন্না কথা শুনছেনা কি আর করা যাবে? ওর পরিনতি ঐ শুভাইয়ার মতো হবে  ওকেই ওই জঙ্গল পাহারা দিতে হবে জঙ্গল চিতা হয়ে। এই সব শুনে আমি আগ্রহ নিয়ে  জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা সাধুবাবা কবে ওর  বিচার হবে ?আমাদের সামনে কোরবেন? এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেল্লাম।সাধুবাবা বোললেন, আগামী মঙ্গলবার অমাবস্যা ঐ দিন রাত ১২টায় ওর বিচার হবে, কেউ থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমরা আসতে পারি ? ইচ্ছে হলে আসতে পারো তবে কত রাত্তির অবধি চলবে জানিনা।
মঙ্গল বার রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে আমি আর অমিয় আগের দিনের মতন দুজনেই গেলাম রাত ১২টার একটু আগেই পৌঁছালাম সাধুবাবার চালায়, দেখি বিরাট হোমাগ্নি জ্বলছে কিছু গ্রামের আদিবাসী লোক  জমায়েত হয়েছে মুখে চোখে তাদের আতঙ্ক।একজন লম্বা চওড়া বলিষ্ঠ লোক কে ঘিরে রয়েছে আরো কিছু লোক তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি তর্কা তর্কি চলছে বেশ উত্তপ্ত। সাধুবাবা ১২টা বাজতেই  হাতে ইশারা করতেই ঐ লম্বা চওড়া ষণ্ডা মার্কা লোকটাকে জনা দশেক লোক টানতে টানতে হোম কুণ্ডের কাছে সাধুবাবার সামনে নিয়ে গেলো। বুঝলাম .এই মুন্না ওরাও এর ই বিচার হবে। উত্তেজনায় আমার হাতপা কাঁপছে। সাধুবাবা হিন্দিতে ভোজপুরী মেশানো যা বলছেন অমিয় আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে ও স্থানীয় ভাষা বোঝে বলতেও পারে। মুন্না সাধুবাবার কোনো কথাই শুনতে চাইছেনা উলটে যাতা গালি গালাজ করছে, সাধুবাবা তখন মুন্নাকে বললেন ঐ দেখ বলে হাতের ইশারায় পাশে
অন্ধকার একটা গাছ তলার দিকে দেখালেন তাকিয়ে আমার বুকের রক্ত হিম হয়ে গেলো, দেখি অন্ধকারে গাছের নীচে একটা বড় কালো বাঘের মতন জন্তু যার চোখ দুটো আগুনের গোলার মতন অন্ধকারে জ্বলছে,আমি অমিয়কে হাত টা চেপে ধরলাম বুঝলাম ও উত্তেজনায় ভয়ে কাঁপছে।অমিয় বললো ওটা চিতা বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী।এখানে চিতা বাঘ আছে কিন্তু প্রকৃত চিতা নেই।
সাধুবাবা এবার হুঙ্কার দিয়ে মুন্নাকে জিজ্ঞাসা করলেন মুন্না তুই কি চাস ? মানুষ হিসাবে বাঁচতে? নাকি তুই ঐ শুভাইয়ার মতো চিতা হয়ে জঙ্গল আগলাবি। মুন্না আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। ও সাধুবাবাকে নোংড়া গালি দিয়ে বলে উঠলো যা পারিস কর, আমি ঐসব বুজরুকি বিশ্বাস করিনা। সাধুবাবা ওকে শেষ বারের মতন ভেবে নিতে বলাতেও ওর মত বদলালোনা, তখন রেগে সাধুবাবা বোললেন তবে তুই মরগে যা, থাক চিতা হয়ে,এই বলে এক মুঠো বালী মন্ত্র পড়ে ছুঁড়ে দিলেন মুন্নার গায়। সঙ্গে সঙ্গে মুন্না উধাও ওখানে কালো একটা চিতা, আর সেই গাছ তলার চিতাটা নেই।
এর পর সবাই চলে গেলো একে এক করে। আমি সাধুবাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ চিতাটা শুভাইয়ার কি হোলো? সাধুবাবা বললেন আজ ও মুক্তি পেয়ে গেলো ওর জায়গায় মুন্না থাকবে আজথেকে জঙ্গলের পাহারা দার চিতা হয়ে, আবার যত দিন না কেউ নতুন করে এই ভাবে আসে তাছাড়া শুভাইয়া বদলেগেছে একদম, ও পশুপ্রেমী প্রকৃতি সচেতন দরদী হয়ে গেছে।  



৪)অযোধ্যাপাহাড়ে

বিচিত্র অভিজ্ঞতা-২ অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ যে কাহিনীটা লিখছি এটাও আমার পুরুলিয়া থাকা কালীন অভিজ্ঞতা
,ঝালদাতে  ঘর ভাড়া নিয়ে একা থাকি মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে ছেলে তার এক বন্ধুকে নিয়ে একবার, আর মেয়ে তার স্কুলের দু জন বান্ধবিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো,স্ত্রী প্রথম বার এসেছিলো একদিন ছিলোতাও পুরুলিয়াতে হোটেলে ছিলোমেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর রেজাল্ট বেরুনোর আগে  দু জন বান্ধবিকে নিয়ে বেড়াতে এসে ঝালদা আর তার চারপাশ ঘুরে এবার বোললো  অযোধ্যা পাহাড়ে যাবে ওখানে  বেড়ানো হবে, পিকনিক ও হবেআমাদের সাথে আমার অফিসের এক কর্মী ,তার স্ত্রী ,তারছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ে,আর মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে, এরা চারজন, ঝালদার একজন ভদ্রলোক, আমার সারাক্ষণের সাথী , স্থানীয় ব্যক্তি,আর আমার রান্নার কাজের বৌ তার  ৫বছরের ছেলে আর গাড়ির চালক এই,দল সকাল ৭টার মধ্যে ঝালদা থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হলাম ব্রেকফাস্টের পাঊরুটি, ডিমসেদ্ধ, কলা মিস্টি,বড় ফ্লাস্কে চা ,ওখানে দুপুরে রান্নার সব, পাম্পদেওয়া বড়কেরোসিনস্টোভ,সাথে নেওয়া হোলোআমরা পাহাড়ি পথে চার পাশের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে এই পূর্বঘাট পর্বত মালার সম্প্রসারিত ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের অংশ অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গ (৮৫৫ মিটার) গোরবাবুরু যা বাঘমুণ্ডি অঞ্চলে অবস্থিত পোঁছলামএটা ছোট নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে সবচেয়ে নীচু ধাপ,চারপাশে সম্প্রসারিত মালভূমি, কিম্বদন্তি রাম সীতা বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন,রাম নিজের ধনুকের তীর দিয়ে মাটি ভেদ করে সীতার পিপাসা নিবারনের জল বের করে আনেন, এই স্থানটি এখন সীতাকুণ্ড নামে পরিচিতআমরা খুউব কম সময়  বাঘমুণ্ডির ঐখানে ছিলাম,কারন নামার পথে কোথাও জঙ্গলের মধ্যে দুপুরের বন ভোজন সেরে আবার সন্ধ্যারআগেই  পাহাড় থেকে নেমে যেতে হবে,পথে হিংস্র জীবজন্তুর ভয়, তাছাড়া ফাঁকা পথে আরো অনেক বিপদ,সঙ্গে বড় মেয়েরা আছে তাই ফিরতে লাগলাম, সঙ্গে ঝালদার তিনজন অভিজ্ঞ লোক থাকায় ভরসা। 
পাহাড় থেকে নামার পথে কিছুটা নেমে এসে রাস্তার বাঁ ধারে একটা জায়গায় গাড়ি রেখে আমরা বাঁ দিকেই একটা বেশ চওড়া নালার মতন নদী  পেড়িয়ে পাশেই জঙ্গলে ঢুকলাম, বেশী ভিতরে যেতে মানা করায় সামান্য ভিতরে দেখতে গেলাম,রান্নার বৌ ,আমার অফিসের কর্মী  তার স্ত্রী আর ঝালদারভদ্রলোক রান্নাবান্নায় লেগে পড়লেন,মেয়েরা চারপাশ ঘুরে দেখতে চাইলে বেশী ভিতরে যেতে বারণ করলাম। ওরা কাছেই বন বিভাগের একটা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখে এসে খুশী,এবার আমি ওই নালার মতন নদীতে স্নান সেরে নিলাম, রান্না তৈরী সকলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম, এবার  জিনিস পত্র গোছ গাছ ,বাসন পত্র ধুয়েগুছিয়ে নিতে হবে, তার তোড়জোড়,মেয়েরা পাশে জঙ্গল দেখতে ঢুকেছে আমি ওয়াচ টাওয়ারে, হটাৎ দেখি মেয়েরা ভয়ে আতঙ্কে দৌড়ে  যেখানে বাসন মাজার গোছানোর কাজ চলছে সেখানে হাজির ভয়ে কাঁপছে, আমি ওদের ওভাবে  আসতে দেখে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে এলাম,এসে শুনি ওরা পাশের জঙ্গলে একটু এগিয়ে গিয়ে সামনে মড় মড় আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে জঙ্গলের ভিতর একটা বড় কালো জন্তু দাঁড়িয়ে  ওরা কোন রকমে দূর থেকে দেখেই পালিয়ে এসেছে, এটা শুনে আমার স্টাফ, ঝালদার  ভদ্রলোক তক্ষুণী সব মালপত্র বস্তায় ভরে তৎক্ষণাত গাড়িতে ফিরে যেতে বললেন, দেখলাম ওদের দুজনার মুখেই ভয়ে আতঙ্কের ছাপ। সবাই পড়ি মড়ি করে গাড়িতে আমি  একছুটে পাশে  ওয়াচ টাওয়ারে গেয়ে তাকালাম একটু দুরের ওই ঝঁপের দিকে দেখি দূরে বড় কালো মতন একটা জন্তু জঙ্গলে গাছের আড়ালে , মুখটা বোঝা যাচ্ছেনা ভালো মতন জন্তুটা দেখা যাছেনা তবে বেশ বড় মোষের মতন হবে , মনে হয় আমাদের দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও উর্দ্ধশ্বাসে টাওয়ার থেকে নেমে সোজা গাড়িতে।
 গাড়ি কিছুটা নেমে আসার পর  ওই ঝালদার ভদ্রলোক আমাকে বললেন বড় বিপদের হাত থেকে আমরা বাঁচলাম স্যার। উনি যা বললেন দলমা পাহাড় থেকেহাতির দল ফসল খাবার জন্য প্রায়ই জঙ্গল দিয়ে নীচে নেমে আসে ফসল খায় ক্ষেত নষ্ট করে আবার ফিরে যায় , মাঝে মধ্যে দু একটা দল ছুট হাতি থেকে যায় এগুলি ভয়ঙ্কর, এরা যত দিন না ফেরে সবাই আতঙ্কে থাকে।এখানের জঙ্গলে বুনো শুয়ার, সজারু,ছোট বুনো মহিষ ,এগুলো থাকে। বৈশাখ মাসের পুর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয় সারা রাত জঙ্গলে ঢেড়া পিটিয়ে পশুদের তাড়িয়ে এনে শিকার করে, এখন বেশী জন্তু পাওয়া যায়না। আমরা যে জন্তুটা দেখেছি ওটা দলছুট হাতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।বুনো শুয়োর হলেও ভয়ঙ্কর।ওখানে বুনো জন্তু থাকে বলেই বন বিভাগের ওয়াচ টাওয়ার আছে, এমনি ভাবে ছোট ছেলে মেয়ে বৌ দের নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়, ভাগ্য আমাদের ভালো সবাই নিরাপদে চলে আসতে পারলাম।
ফেরার পথে অযোধ্যা পাহড়ে ৯০০মেগা ওয়াটের(৪
X ২২৫ মেগা ওয়াট) ক্ষমতার পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্ট এর কাজ চলছে পুরোদমে দেখলাম, এছাড়া তুরগা বাঁধ আর বামনী নদীর একটা  সুন্দর জল প্রপাত দেখলাম।
৫)বিচিত্রভিজ্ঞতা

আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা -১ 'তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার চাকরি করার সময় ,বেশ কিছু বিচিত্র অবস্থার সন্মুখীন হতে হয়েছ,যার থেকে এমন সব অভিজ্ঞতা লাভ করেছি যা আমার জীবনে মুল্যবান সম্পদ, এমন ই একটি ছোট্ট কাহিনী,আমি ১৯৯৮ সালের ২রা ডিসেম্বর হুগলী জেলা থেকে বদলী হয়ে পুরুলিয়া যোগদান করি। আমার চাকরি র স্থল ঝালদা ২নং , কোটশিলা তে। একদম নতুন ঝাঁ চকচকে দোতলা অফিস ফাঁকা জায়গায় পিছনে একটু দূর দিয়ে রেল লাইন  অফিস থেকেই সামনে দেখাযায়। ওখানে থাকার মতন ঘর না পাওয়ায় আমি ওখান থেকে কিছু দূরে বাসে করে যেতে আধ ঘণ্টা লাগে ঝালদাতে ঘর ভাড়া নিলাম।দিন৪/৫ এর মধ্যেই অফিসের দায়িত্ব আগের অফিসারের কাছ থেকে বুঝে নিলাম। এর ঠিক দু দিনের মাথায় কোলকাতা হাই কোর্ট সংলগ্ন সি টি সিভিল কোর্ট থেকে সমন ৩দিন বাদে ওই কোর্টে হাজির  হয়ে  পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষন মামলা য় আমাকে সাক্ষী দিতে যেতে হবে কোর্টে  জেলা আদালতে,কোলকাতা    উচ্চ আদালতে  বিভাগীয় বিভিন্ন মোকদ্দমায় আমি ইতি পুর্বে স্বাক্ষী দিয়েছি কিন্তু সে বিষয় গুলো সবই বিভাগীয়  রেকর্ড নথী পত্র সংক্রান্ত, এই রকম বিষয় যার কিছুই আমি জানিনা কাগজে পড়েছিলাম যে ১৯৯৫ সালের ১৭ই ডিসেম্বর শীতের রাত্রে প্লেন থেকে বহু কয়েক শত
AK47 সহ
অত্যাধুনিক অস্ত্র  ঝালদার কাছে ফেলা হয় এ নিয়ে খুউব সরগোল হৈ চৈ  পড়েছিলো, ওই প্লেন টি অস্ত্র বর্ষণের কদিন বাদেই ভারতের আকাশ সীমায় ঢুকলে বায়ু সেনার
MIG-21তাড়া করে মাটিতে নামতে বাধ্য করে  কয়েক জন গ্রেফতার হয়  ২ জন পলাতক। প্লেন টা ডেনমার্কের তাই নাটাভিয়ান নাগরিক আর একজন ব্রিটীশ নাগরিক ধরা পড়ে। কলিকাতায়  মহামান্য উচ্চ আদালতে মোকদ্দমা  চলছে খবরে শুনেছিলাম এই পর্য্যন্ত।
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম কি সাক্ষী দেব কিছুই জানিনা, অফিসে এর ফাইল ও তেমন ভাবে প্রস্তুত করা নেই যাতে প্রামাণ্য তথ্য কিছু পাওয়া যায় বিষয় টা প্রশাসনিক আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত তাই,আরক্ষা দপ্তর,জেলা করণ বিষয় টা দেখছে।হাতে সময় নেই জেলা অফিসের সাথে যোগাযোগ করার কারণ মাঝে দুটো দিন ই ছুটি শনি আর রবি বার আমিও বাড়ি আসবো। স্থানীয় লোকের মুখে শোনা কাহিনী আদালতে বলা যাবেনা, তাছাড়া ইতিপুর্বে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেটার উপর তাকেই ভিত্তি করে ই আদালত জানতে চাইবেন,আমার বক্তব্য। আমি কিছুই পেলামনা খালি হাতে পুরুলিয়া থেকে বাড়ি এলাম। শনি আর রবি দুদিন ভীষন দুঃশ্চিন্তায় কাটালাম  রবিবার সকাল ১০টার আগেই মহামান্য আদালতে সমন হাতে হাজির হলাম খুজঁতে লাগলাম চারপাশে আমার চেনা কেঊ আসে কিনা আমার বন্ধু যার কাছ থেকে আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম তার আসার কথা অবশ্য তিনিও এব্যাপারে সাক্ষী দেবার মতন কিছুই জানে না তিনি ও সাময়িক দায়িত্বে ছিলেন ঘটনা তিনবছর আগের, এর মধ্যে দেখি অনেক আধুনিক অস্ত্র হাতে সসস্ত্র প্রহরী আমাদের আদালত চত্বরে ঘিরে ফেলেছে সবাই সতর্ক সন্ত্রস্ত ভাব,আদালতে মাননীয় বিচারপতি এসে আসন গ্রহণ করেছেন, পাশে নির্বাহী সহায়ক তার পাশে একজন কালোসামলা গায়ে বোধ হয় সেকার পক্ষের উকিল কৌঁসলি, আমি আদালত ক ক্ষে প্রবেশ  করলাম দান পাশেই ঘেরা আসামীদের রাখার গারদ। হঠাৎ সবাইকে উত্তেজিত সন্ত্রস্ত চোখে দ্রজার দিকে চেয়ে দেকছে দেখে ওই দিকে তাকাতেই দেখি একজন খুউব ফর্সা লালচে গায়ের রঙ হাসিহাসি মুখ হাতে হাত কড়া তাকে ঘিরে সসস্ত্র অনেক প্রহরী ঐ কায়হের ঘেরা গারদে পুরে দিলো চারপাসে ভীড় করা প্রহরী বা সরকারী আমাদের মতন কোন ব্যক্তি বোল্লেন পিটার ব্লিচ ব্রিটিশ নাগরিক প্রাক্তন মিলিটারীর লোক। আমি ভয়ে চারপাশ দেখছি হঠাত আমার বন্ধুকে দেখলাম এগিয়ে এসে আমায় ডেকে বলল পুরুলিয়ার বর্তমান ডি,এম, এসেছেন ঊনি আমাদের দপ্তরেই ছিলেন  অনাকে আমার অবস্থাটা জানাতে। ওনাকেও সমন করেছে,আমাকে দেখিয়ে দিতে আমি গিয়ে জানালাম, যে আমি এইমাসের ই ২ তারিখ পুরুলিয়ায় এসেছি্‌সবে দায়িত্ব নিয়েছি ,কিছুই  জানিনা কি বোলব ? উনি আমায় বললেন রিপোর্টিং অফিসার কোথায় ? আমি বললাম উনি অনেক দিন আগেই মেদিনীপুর জেলায় বদলী হয়ে চলে গেছেন ঠিক কোথায়এখনউনি পোস্টেড জানিনা , আমিকি স্যার থাকবো না চলে যেতে পারি ?  উনি আমায় চলে যেতে বললেন। আমার ধরে প্রাণ ফিরে পেলাম, তখন আদালতের ভিতর দেখি এটাচি হাতে একজন কালো সুটপরা লোক মাথায় পণি টেল বাঁধা চুল সেই সরকারি উকিলের সাথে কি আলোচনা করছেন। পুরুলিয়ার ডি,এম ওদিকে এগিয়ে যেতেই আমি পাশের কাঠ গড়ার মধ্যে পিটার ব্লিচ কে খুইয়ে একবার দেখলাম পাশে আরো দুজন ফর্সা বিদেশী আসামী রয়েছেন।আমি দুর্গা দুর্গা বলে পিছন ফিরে উর্দ্ধশ্বাসে একদম আদালত চত্বর পেড়িয়ে সোজা চাঁদপাল ঘাটে ফেরী সার্ভিসের লঞ্চ ধরে হাওড়া।
পুরুলিয়ায় যোগদান করেই আমার এই অভিজ্ঞতা।
এর পর আমি পুরুলিয়ায় ফিরে গিয়ে স্থানীয় মানুষ জনের মুখে অস্ত্র বর্ষণ সম্বন্ধে যা শুনেছিলাম তা হোলো, ১৯৯৫ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর ,বেশ ঠাণ্ডাছিলো সেদিন। ঝালদা র একটু আগে পুরুলিয়া রাঁচী সড়কে কোটশিলা য় আমাদের ভুমি সংস্কার দপ্তরের  ,ব্লক ভুমি সংস্কার আধিকারিকের নতুন দোতলা সুন্দর  অফিস রাস্তার ধারেই।পিছনে ফাঁকা মাঠ রেল লাইন রাঁচি থেকে ঝালদা,  পুরুলিয়া, বোকারো গেছে।শীত কাল সন্ধ্যার পর জায়গাটা নিঝুম স্থানীয় লোকেরা আগুন জ্বেলে রাস্তার ধারে মাঠে পিকনিক মতন করে খাওয়া দাওয়া করে আগুন পোহাচ্ছিলো,নেশা করে কেঊ কেঊ নাচ গান কোরছিলো, পাশের গ্রামের ঝালদা,বেলামৌ,মরামু, লোকজন প্রায়ই ঘুমিয়ে,একটু গভীর রাত হঠাত প্লেনের আওয়াজ, বেশ নীচে নেমে এসেছে প্লেনটা, তার পর বৃষ্টি ধারার মতন ওই এরোপ্লেন থেকে শয়েশয়ে অস্ত্র সস্ত্র মাটিতে পড়তে লাগলো সব ই অত্যাধুনিক অস্ত্র ,এ কে -৪৭।মুহুর্তে জানাজানি থানা পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার এইসব শুরু হোলো।নানা গুজব পরস্পর দোষারোপ, কেঊ বলে কোটশিলার পাশেই আনন্দমার্গী দের হেড কোয়াটার আনন্দ নগরে এই অস্ত্র ফেলার কথা আগুন জ্বলার ভুল  সিগ্ন্যালে কোটশিলার চারপাশে অস্ত্র ফেলা হয়েছে ,কেঊ বলে কেন্দ্রের সরকার রাজ্য সরকার কে ফেলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য এই চক্রান্ত, বিষয় টা মহামান্য আদালতের বিচারাধীন। আমি আট মাস পুরুলিয়ায় ঝালদাতে ছিলাম দুটি মারাত্মক অভিজ্ঞতা হয়  একটি এই ঘটনা অন্যটি অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে। সে কাহিনী পরে লিখব।
    
 
৬)ঝাড়ফুঁক
ঝাড়ফুঁক ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
এর কোন প্রয়োগ, সাফল্য (ব্যতিক্রম ভুতে ধরা র ঘটনা টা) আমি দেখিনি সব ই লোকের মুখে মুখে, আমি ভেবেছি যদি গুনে ঝাড় ফুঁকে চোর, অপরাধী ধরা যায় তা হলে এতো খরচ করে থানা পুলিশ দরকার কি? আর সত্যি যদি গণনায় সব বলে দেওয়া যায় তাহলে এতো কেস সমাধান না হয়ে আছে কেনো?যাই হোক ব্যাপারটা আমার ব্যক্তিগত চিন্তা  , কারো বিশ্বাস অবিশ্বাসের বিতর্কে যাচ্ছিনা এই প্রসঙ্গে আমার কোনো মতামত ও নেই আমি নিছক একটা ঘটনার উল্লেখ কোরছি যাতে এই বিষয়ের সত্যতা কি অ সত্যতা স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয় নাআমি তখন  মেদিনীপুর জেলার দীঘার কাছে কাঁথি মহকুমার ,রামনগর থানার রামনগরে ই থাকি আমি ,আমার স্ত্রী,৬বছরের ছেলে, ১বছরের মেয়ে ১৯ ৮৩ সালরামনগরে বাজারের কাছেই একটি দোতালা বাড়ির উপর তলায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকিআমার বাড়িতে একটি স্থানীয় বৌ  ঘরের কাজ,বাসনমাজা,     ঘরমোছা ,কাপড় কাচা এই সব কাজ করে ভীষন ভালো বিশ্বাসী আমার বাড়ির লোকের মতই ওর একটা বছর ৬ এর মেয়ে ছিলো বেশী ভাগ সময় আমাদের বাসাতেই থাকত
একদিন দুপুরে আমার স্ত্রী হঠাৎ দেখে গলায় তার সোনার প্রায় আড়াই ভরির হারটা নেই
আমাকে অফিস থেকে ডেকে বাসায় আনলো কাছেই অফিস তাই তক্ষুনী চলে এলাম,সব শুনে জানতে চাইলাম শেষ কখন হারটা গলায় ছিলো? কখন খুলেছে? কখন প্রথম জানতে পারলো হারটা গলায় নেই? ইত্যাদি যা জানলাম কাল রাতে  গলায় ছিলো মনে আছে সকালে ছিলো কিনা মনে নেই, সারা ঘর তন্ন তন্ন করে  খোঁজা হয়েছে , আমার স্ত্রীর ভীষন মন খারাপ বাইরের লোক যে কজন এসেছে তারা সবাই বিশেষ কাছের লোক তাই চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা কম  কিন্তু উপরে জল এনে যেখানে স্নান করা হয় সেখানে অ খেয়ালে খুলে রাখলে বা গলা থেকে পড়ে গেলে জলের সাথে নর্দমা দিয়ে বেড়িয়ে গেলে পাওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই কাজের বৌটি ওএসে সব খুঁজেছে, ও কাঁদছে ওকে না চোর ভাবিহার চুরির কথাটা চার পাশে রাষ্ট্র হয়ে গেলো অনেকে থানায় ডায়েরী কোরতে বলল আমি বললাম দু দিন দেখি
কাজের বৌ টি আর অফিসের কয়েকজন কর্মী আমাকে নাছোড় বান্দা কাছেই একজন মস্ত গুণীন আছেন কাল ভোর বেলা সূর্য্য উদয়ের সাথে সাথে তার কাছে পৌঁছতে হবে তিনি গুনে ব লে দেবেন হার কোথায় আছে কে নিয়েছে গলিয়ে ফেলেছে কিনা ইত্যাদি
আমি যাবনা কিন্তু কাজের বৌ টি আমার হাতে পায়ে ধরতে  লাগলো, আমার অফিসের যারা সারাক্ষন আমার কাছে থাকে তারাও পই পই করে আমাকে অতিষ্ঠ করে তোলায় আমি রাজী হলাম
পর দিন শেষ রাতে বেড়িয়ে সূর্য্য ওঠার আগেই  গণৎকার এর বাড়িতে হাজির পরিচয় পেয়ে সাদর আমন্ত্রন বারান্দায় মাদুরে বসলাম আমি আর আমার সাথে অফিসের এক কর্মী
গণক ঠাকুর সবাই বলে আমি কি বলব ভাবছি উনি জিজ্ঞাসা করলেন কিছু হারিয়েছে নিশ্চয়? আমি বোল্লাম হ্যাঁ সেই জন্য ই তো এই সময় আসা উনি মাটিতে খড়ি দিয়ে ছক আঁকলেন অনেক সংখ্যা লিখলেন, আমি দেখলাম বুঝলাম না কিছুই উনি কিছু ক্ষণ চোখ বুঝে ধ্যান করার মতন থেকে চোখ খুলে বললেন যে জিনিস টা হারিয়েছে সেটি গোলাকার ? আমি বললাম হ্যাঁ, উনি  ব ল্লেন দামী বস্তু মনে মনে বললাম নইলে ভোর রাত্তিরে এতোটা পথ ঠেঙিয়ে এখানে আসবো কেনো?মুখে বললাম হ্যাঁ অনেক দামউনি এইবার বললেন ওটা এখনো অক্ষত আছে তবে ঘর থেকে জলের সাথেবেড়িয়ে     গেছে মন খারাপ গণক ঠাকুর  টাকা পয়সা নিতে চাননি আমি জোর করে কিছু টাকা দিয়ে চলে এলাম বাড়িতে শুনলে মন খারাপ করবে আমি গণনা বিশ্বাস করিনা কিন্তু আর সবাই শুনে ভেঙে পড়বে
বাড়ি ফিরতেই আমার স্ত্রী
, কাজের বৌটি এসে উতলা কন্ঠে জানতে চাইলো হারের সন্ধান পেয়েছি কিনা? বোললাম না ঠিক জানতে পারিনি তবে মনে হয় পর হস্তগত হয়ে গেছে বাইরের কেঊ পেয়েছে এতোক্ষণে কাজের বৌ টির কি কান্না, ওর কাজের কোন বাড়িতে এমন কখন ও ঘটেনি এখানেই ঘটলো আসলে এই বৌ টি আমাদের বেশী নিজের ভাবতো বেশী কোরতো কারণ ও অনেক ব্যাপারে কৃতজ্ঞ  ছিলো ওর থাকার জমি বাস্তু ঘর সব আমি এক রকম লড়াই করে পাইয়ে দিয়ে ছিলাম ওর
খুউব কষ্ট ছিলো বাপের বাড়িতে ভাইদের সংসারে ছোট মেয়েকে নিয়ে পড়ে ছিলো
, স্বামী ভিখারী  অন্যত্র দূরে থাকে খোঁজ খবর রাখেনা ও লোকের বাড়ি কাজ করে সময় পেলে খালে ডোবায় ছোট মাছ ধরে কোন দিন পায় কোন দিন পায় না মেয়েটি খুউব ভালো তাই আমার মন বেশী খারাপ লাগছিলো এদিকে হার পাবার জন্য আমার স্ত্রী ঠাকুরের কাছে মানত করেছে আমাদের পাড়ার বিখ্যাত মা মহীষাসুরমর্দ্দিনীর কাছে আমি চুপচাপ মন খারাপ
কিছুক্ষণ বাদে কাজের বৌ টি আবার  আমার স্ত্রীকে ডাকলো দিদি এসো আবার একটু খুঁজে দেখি
, ঘর থেকে যাবে কোথায় তুমি রাত্রে দেখেছিলে অথচ পরদিন সকালে নেই এমন কেঊই আসেনি যে নিয়ে পালাবে এসো দুজনে আবার মাথা ঠাণ্ডা করে খুঁজি হয়তো চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে আমার স্ত্রীর মন ভালো নয় ও হতাশ  বোললো আর কি দেখবো সব ই দেখা হয়ে গেছে আমি বোললাম বিছানাটা একবার ভালও করে খুঁজে দেখো, বালিশের মধ্যে ঢুকে গেছে কিনা অনেক সময় এমন হয়, মনের অখেয়ালে
বালিশে ঘুমের ঘোরে দুল হার  খুলে পুরে রাখে
অনিচ্ছা সত্বেও বিছানা খুঁজতে আমরা তিনজনাই গেলাম, খাটের তিন দিকে তিন জন, মাথার দিকে ঐ কাজেরবৌটি, পায়ের দিকে আমার স্ত্রী, আমি মাঝের এক পাশেচাদর তুলে ঝাড়া হোলো, বালিশ গুলোর ওয়ার খুলে ঝেড়ে বালিশ পরীক্ষা করে আবার ওয়ার পড়িয়ে  সব মেঝেতে রাখা হোলো,তোষক তুলে ওটাও ঝাড়া হোলো,তলায় নামানো হোলো , এবার খাটের গদী ধরা ধরি করে উঠিয়ে, খাটটার দিকে  তাকাতেই কাজের বৌ টার চিৎকার, দাদা , বৌদি ঐ দেখো ওর হাত আর দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি খাটের মাথার দিকের প্যানেলে মাঝে যে আড়াআড়ি সাপোর্ট দেওয়ার লম্বা কাঠের বাতাটা থাকে খাটের ছত্রি বা চালি টা যার উপরে থাকে সেই  বাতা আটকানোর গ্রুপের খাঁজে হারটা আটকে ঝুলছেসবাই তখন আনন্দে আত্মহারা, কাজের বৌটির কি কান্না আমার স্ত্রীও কেঁদে ফেলেছে, আমার মন থেকে একটা ভার নামলো, যাক বৌটি নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ওর মুখে সেই স্বাভাবিক ভাব ফিরে এলো আমি বোললাম গণনার কি হোলো? জলের সাথে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আবার খাটে ফিরে এলো? এইবার আমার স্ত্রী বোললো ও এইবার ম্নে হচ্ছে কাল রাতে শুয়ে হারটা গলাতে অস্বস্তি হচ্ছিলো তাই ঘুমের ঘোরে খুলে ছিলাম কোথায় রেখাছুলাম বালিশের পাশে রাখতে গিয়ে হয়তো পেছনে তোষ্কের ফাঁকে রেখেছিলাম ফাঁক গলে গদীর নীচে পড়েযেতে খাটের ডাঁশায় আটকে ছিলো এতো নীচে তো খুঁজিনি আমাদের সম্ভব ও ছিলোনা এই ভাবে খুঁজে দেখার ভাগ্য থানায় ডায়েরী করোনি লজ্জার ব্যাপারআমি বোললাম আমরা জানি বিশ্বাস করি তাই ঐ লক্ষ্মী কে (কাজের বৌ এরনাম) হার নিয়েছে বোলে ভাবিইনি অন্য বাড়ি বা ও নতুন হলে ওকেই সন্দেহ কোরতো , ডায়েরী করলে ওকে নিয়ে গিয়ে জেরা করে অতিষ্ঠ করে ছাড়ত আমি লক্ষ্মী কে বোললাম ভাগ্যি হারটা পেলে নইলে ভাবতে গণক ঠাকুরের গণনাই নির্ভুল,হার স্নান কোরতে গিয়ে জলের সাথে বেড়িয়ে গেছে আজ না খুজলে পরে খাট থেকে পড়ে হারিয়ে যেতো তখন হয়তো চুরিও হোতো, গণনা বিশ্বাস করে হাল ছেড়ে দিলে পাওয়া যেতো না
৭)ভেপুদার গল্প

ভেপুদা র গল্প ' চম্বলের সিংহ'  তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
ভেপুদাকে নিশ্চয় সবাই চেনো? হ্যাঁ হ্যাঁ ওই যে মাঠের ধারে একতলা টালীর চালের বাড়িটা, পাশে সব্জীর ক্ষেত। একাই থাকেন, বয়স? ঊনি বলেন ৭৫ ,দেখলে মনে হয় ৫০এর বেশী হবেনা।সংসার বোলতে কেঊ নেই, কখনো কাঊকে আস্তেও দেখিনি। বিয়ে থা করেননি, চাকরী করেন না পাশের ক্ষেতে সব্জী চাষ করেন, শাক, কপি, মুলো,লাঊ, কুমড়ো, এইসব। উনি গোবর,পাতা সার, খোল এইসব  ব্যবহার করেন কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না অথচ কি সুন্দর সব ফসল, যেমন চকচকে দেখতে তেমন ভালো সাইজ।কি চাহিদা এই সব্জীর বাড়ি থেকেই লোকে নিয়ে চলে যায়, দাম বেশী তাও। এখন নয় স্বাস্থ্য সচেতন কিন্তু ভেঁপুদার ফসলের চাহিদা বরাবর। ভেঁপুদা খুব মিশুকে তার কাছে গল্প শুনতে যেতাম , ভেঁপুদা নানা রকম সুন্দর সুন্দর গল্প বলেন।রুপ কথার গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, পুরানের গল্প, ভুতের গল্প, হাসির গল্প। ভেঁপুদা বলেন এই সব গল্প তাঁর বাবার মুখে শোনা, দাদুর মুখে শোনা।ভেঁপুদা বেশী দূর লেখা পড়া করেন নি, স্কুল ভালো লাগতোনা।পাড়ার যারা ভেঁপুদার থেকে বয়স কম সবাই ভেঁপুদা বলেই ডাকে। ভেঁপুদা নামের একটা কারন আছে। উনি ছোট থেকে পেঁপে ডালের একদিকে পাতলা কাগজ বেঁধে নলে ফুটো করে ভেঁপু বাজাতেন, আম আঁটী ঘষে ভেঁপু বাজাতেন। পরে দেখেছি ,মেলায় যে  ছোট ছোট বাঁশের তারের বেহালা পাওয়া যায় সেগুলোতে অদ্ভুত সুন্দর সব গান বাজাতে পারেন।ভেঁপু দার চায়ের ছাড়া কোনো নেশা নেই।আমরা  কয়েক জন স্কুল ছুটির পর বিকালে প্রায়ই যেতাম ভেঁপুদার বাড়ি গল্প শোনার লোভে। ভেঁপুদা আমাদের এই জনাচারেকছেলেকে লজেন্স দিতেন মাঝে মাঝে। ভেঁপুদা আমাদের চম্বলের ডাকাত মান সিং, পুতলীবাঈ, মালখান সিং , বেহড়,বাগী , বন্দুকের কথা  বোলেছেন,  আমরা অবাক হয়ে শুনেছি সেইসব রক্তহিম করা কাহিনী
আজ চম্বলের ডাকাতের ই একটা ছোট গল্প শোনাবো ভেঁপুদার কাছেই শোনা।ভেঁপুদার দাদু মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে থাকতেন , ওখানে শিক্ষকতা কোরতেন, ভালো ছাত্র ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। কাছেই চম্বলনদী বয়ে গেছে পাহাড়ের আঁকা বাঁকা পথে খরস্রোতা নদী। এই অঞ্চল দুর্গম    পাহাড়ি পথ চড়াই উতরাই ঘন জঙ্গলে ঘেরা দিনের বেলাও আলো আঁধারি ঘেরা খাঁ খাঁ করে। মধ্যপ্রদেশের মোরেনা থেকে গোয়ালিয়র যাওয়ার পথে  চম্বল নদীর উপত্যাকা অঞ্চলে দূরে মাটির পাহাড়ের গা বেয়ে থরে থরে নেমে এসেছে সংকীর্ণ  গিরি খাত এর মত, যাকে বলে র‍্যাভাইন চম্বল নদীর র‍্যাভাইন।মোরেনা (Morena), ভিন্দ(Bhind),  শেহপুর (Sheopur) জেলার এই পথেই চারপাশে শক্ত কাদা মাটির  ১০'-২০' উচ্চতার প্রাচীরের মতন ঘেরা বহুজায়গা, এদের ঠিক টিলা বলা যাবেনা অনেকটা ছাদ বিহীন গুহার মতোন , এই ঘেরা গুলোকেই বলে বেহড়।এই অঞ্চলেই শক্তি শালী যুবক যুবতী যারা কিশোর বয়সেই শপথ নেয় সমাজে উচ্চ বর্গীয় বিত্তশালী  অত্যাচারী সম্প্রদায়ের যাদের সাথে বরাবরের শত্রুতা  তাদের ধন সম্পত্তি ছিনিয়ে দরিদ্র লোকেদের মধ্যে বিলিয়ে দেবার ,তারা ঘর ছেড়ে বেহড়ে আশ্রয় নেয়, এদেরকে বলে বাগী,  এদের জীবন যোগী বা সাধুর মতন বাগীরা হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, বন্দুক,   দুরন্ত গতিতে আশ পাশের অঞ্চলে কখনো কয়েক মাইল দুরেও গিয়ে ডাকাতি করে নিয়ে আসে।এরা সাধারণত দলবদ্ধ ভাবে ডাকাতি করে। দূরে দূরে গাঁয়ের লোকেরা এদের ভয়ে আতঙ্কিত।পুলিশ এদের কিছুই কোরতে পারেনা ,যেহেতু এই অঞ্চলের পথ খুউবই দুর্গম বহু শাখা প্রশাখা গুপ্ত চোরা পথ আর লুকানোর জায়গা যা বাগীদের নখ দর্পণে অথচ প্রশাসনের কাছে অজানা।পুলিশ এই অঞ্চলে গেলে অতর্কিত চারপাশ থেকে আক্রমনে তারা প্রাণ হারায়।বাগীরা বেহড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। বাগীদের বহু সংবাদ দাতা গোপন চর আছে, তাছড়া এরা দুঃস্থ গরীব লোকেদের কাছে পরিত্রাতা ভগবান, তাই তারাই সাহার্য্য করে এদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে।এরা সাধারণ পথচারী আর মহিলাদের কোনো জিনিস ছিন্তাই করেনি কোন দিন। এরা চম্বলের সিংহ (Chambal ka sheer,i.e Lion of the Chambal) অনেক গান গাথা, নাটক আছে এদের নিয়ে।এই অঞ্চলেরঅধিকাংশ মানুষ বুন্দেলখন্ড ভাষী উচ্চারণ ঠিক হিন্দী নয় ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৫ চম্বলের ত্রাস  ডাকু মান সিং রাঠোর, রাজপুত ছিলেন।ইনি চম্বলের খেড়া রাঠোর (Khera Rathore) গ্রামে থাকতেন,সব থেকে বড় ১৭ জনের ডাকাতের দল ছিলো যার মধ্যে বেশীভাগ আত্মীয়, ছেলে, ভাই নবাব সিং,ভাইপো ,তার ছেলে সুবেদার সিং এই অঞ্চলে অপ্রতিরোদ্ধ  হয়ে উঠেছিলো ১৯৫৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর  কাকেকাপুরা(KakekaPura) তে কলা বাগানে গাছের নীচে গোর্খা রেজিমেন্টের হাতে মান সিং মারা যান। মান সিং, রুপা পণ্ডিত, পুতলীবাই, ঐ সময়ের মধ্যে ১১১২টা ডাকাতি করে, ১৮৫টা খুন, ৯০ বারের বেশি পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় ৩২ জন পুলিশ আধিকারিক মারা যান। পুতলীবাঈ ১৯৫৮ সালে মারা যায়।
এদের নিয়ে অনেক রোমহর্ষক কাহিনী আছে, আজ একটা ছোট মান সিংকে নিয়ে শোনা কাহিনী বলি।
একদিন সকালে মান সিং খাটিয়াতে বসেন সকালে নারিকেল মুড়ি খাচ্ছিলেন হঠাৎদেখেন এক তরুন যুবক তাঁর ডেরায়  একদম সামনা সামনি উপস্থিত। হাতে উদ্ধত রিভলবার, এসেই সোজা মান সিং এর দিকে তাক করে বলেন হাত তোলো আমি তোমাকে গ্রেফতার কোরছি। মান সিং হেসে তাকে বলেন, সাহেব আপনি তো আমাকে ধরেই ফেলেছেন, আমারতো অনেক বয়স হয়েছে,ছেলেরাও সব বড় বড় হয়ে গেছে, অনেকদিন সংসার জীবন কাটালাম, আপনিতো নও যোয়ান, আপনার জীবন অনেক বাকী, আপনি ফিরে যান আমার লোক আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে ,নইলে এখান থেকে এক পাও যেতে পারবেন না প্রাণে মারা যাবেন, আমার অনুরোধ এই ভুল কোরবেন না , ফিরে যান।ঐ যুবক তখন নিজের পরিচয় জাহির করে জানান, তিনি জেনে শুনেই এখানে এসেছেন ভয় পাননা কিছু কেই, তাঁর সশত্র বাহিনী পিছনেই আছে, অতএব কোনো চালাকি নয়, হাত বাড়িয়ে দাও হ্যান্ড কাপ পড়িয়ে দিচ্ছি, মান সিং শেষ বারের মত অনুরোধ জানালেন বোললেন আমি এতো বোললাম আপনি শুনলেন না এখন আপনার বরাত আমার কিছু করার নেই আমি হাত এগিয়েই দিচ্ছি, এই বলে খাবারের থালাটা নীচে নামিয়ে  হাত টা পরিস্কার করার মতো করে দুবার ঝাড়লেন , মুহুর্তে চারপাশ থেকে গুলি এসে ঐ পুলিশের দেহটা ঝাঁঝড়া করে দিলো। মান সিং বোললেন দুর্ভাগ্য

এই চম্বলের সিংহ ,মান সিং কে ও তাঁর দলকে ধরতে সৈন্য বাহিনী,সশস্ত্র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ১০,০০০ বেশী লোক নিয়োগ কোরতে হয়ে ছিলো।
৮)মতিভ্রম

মতিভ্রম' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
(প্রায় সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত)
অমলেন্দু বিকাশ আমাদের সাথে ই পড়ত ইস্কুলে তাপপর ও ডাক্তারি পড়তে কোলকাতায় চলে যায়অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলো, তেমন সুপুরুষ লম্বায় ৬ফুট, সুন্দর বলিষ্ঠ সুঠাম চেহারা, উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত দুটিচোখ,বড়বড় ঝাকড়া এক মাথা চুল একদম চলচিত্রের নায়কোচিত চেহারাখুউব নাম করা বাড়ির ছেলেওর বাবা নাম করা একটি আন্তর্জাতীক ঔষধ কোম্পানীর বড় পদে চাকুরী করেনসুন্দর চোখ ধাঁধানো বাড়ি ,দামী গাড়ি, কি নেই? অমলেন্দুর নেশা বই পড়া ,আমরা দেখেছি ও যেমন পাঠ্য বই পত্র পড়তোতেমনি নানা সাধারণ জ্ঞানের বই, গল্পের বই, দেশ বিদেশের নানা বিষয়ের বই ওর নখ দর্পণে ছিলোস্কুলে দেখেছি শিক্ষকরাও ওর জ্ঞানকে সমীহ কোরতো, ওকে আলাদা চোখে দেখতো, আমরাও ওকে একটুবিশেষ খাতির কোরতাম মনে মনে হিংসাও হোতো, ভাবতাম ওর সুযোগ সুবিধা আছে প্রচুর পয়সাকড়ি,বাবা দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান ওরাও যায় ফলে ওর সাথে কি আমাদের তুলনা চলে ? আমরা ভুগোল পড়ি নানা দেশ বিদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা নানা অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার কথা প্রাণী দের কথা যা কোন্দিন চোখে দেখিনি জীবনে হয়তো দেখা হয়েও উঠবেনা অথচ ওর প্রায় সবই চোখেদেখা মনে গাঁথা ও দেশ বিদেশের বিজ্ঞানের সংগ্রহ শালা দেখেছে আমাদের কোথাও যাওয়াহয়নি ওর মুখে গল্প শুনেছি হাঁ করেআমাদের মানসিক চাহিদা, প্রয়োজনের বিষয় কেঊ কোনদিন ভাবেও নি যাই হোক হায়ার সেকেণ্ডারী পাশ করার পর আমি স্থানীয় কলেজে রসায়নে অনার্স নিয়ে বি,এস,সি পড়তে ভরতি হলাম পাশ করে প্রথমে ব্যবসা শুরু কোরলাম, বাবা গত হয়েছেন আমার পার্ট অয়ান পরীক্ষার আগে তারপর আমাদের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে আমিও  সরকারী চাকুরী নিয়ে অন্য জেলায় এরপর বিয়ে থা সংসার নিয়ে অন্য জেলাতেই ১০ বছর ছিলামবদলী হয়ে নিজের জেলায় এসেছি  একদিন  স্টেশনে  অমলেন্দুর সাথে দেখা এক মাথা ঝাঁকড়া চুল মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ, ফুলহাতা শার্ট আর জিন্সের ফুল প্যান্ট পীঠেএকটাবড় স্কুল ব্যাগের মতোন ব্যাগ পায়ে নর্থস্টারের মতোন জুতো, শরীর টা একটু সামনেঝোঁকা কিন্তু চোখ মুখ তেমন উজ্জ্বলআমায় দেখে চিনতে পারলো একগাল হেসে জানতে চাইলো কেমন আছি ? কি কোরছি ?আমি পালটা প্রশ্ন কোরলাম কি তুমি কেমনআছো?
উত্তর পেলাম যাছিলাম আছি তাই বিনা পারিশ্রমিকের কাজ বিশুদ্ধ ভাবে পরনির্ভরশীল
তার মানে? আমি জিজ্ঞাসা করি কোথায় ডাক্তারী কোরছো? চাকুরী না নিজের চেম্বার ? উত্তর পেলাম না কোনটাই নয় আমি ডাক্তারীর ফাইনাল পরীক্ষা দিই ইনি তো ডাক্তারহবো কিকরে? আমি অবাক হয়ে জানতে চাই কেনো? কি হয়ে ছিলো ? অমলেন্দুবলে কিছুই নয় তোমাদেরমনে হবে মতি ভ্রম সত্যি হয়তো তাই আমি ফাইনাল পরীক্ষার আগে ভেবে দেখিআমি পাশ কোরলেই আমাকে সবাই ডাক্তার বানিয়েই ছাড়বে,সেই চেম্বার, মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভ, সেই প্যাথোলজি, ডাইগোনোস্টিক সেন্টারের পার্শেনটেজ নানা দিকে অর্থের হাতছানি, যান্ত্রিক মানুষে পরিনত হয়ে যাচ্ছি মিশনারি স্কুলে পড়তাম, প্রতিদিন স্কুলে প্রার্থণা হোতো,বোলতাম হে ইশ্বর আমি যেন দরিদ্র, অসমর্থ, অসহায়, মানুষদের নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা শূশ্রষা করি,হিংসা লোভ থেকে দুরে থাকি পাশকরা স্পেশালিস্ট ডাক্তার হলে আগেই এগুলো ভুলতে হবে নইলে তুমি টিকতেইপারবেনা, চন্দন গুহ,সুশীল পাল হয়ে যাবে নয়তআত্মহত্যা কোরবেপ্রতিদিন তুমি গাদা গাদা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ অপারগ রুগীদেরকেনাকরাবে, অপ্রয়োজনীয় সব দামী পরীক্ষা করাবে, তাঁবেদার দালালদের রোজগারেরসুযোগ করে দেবেআমি যদি ভাবি এসবের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবো আমাকেই সরিয়ে দেবেঅপদার্থ প্রতিপন্ন করে ছাড়বে, চাই কি তোমাকে কত রকম সাজানো কেসে ফাঁসিয়ে
 দেবেতার ইয়ত্তা আছে? তাই আমি প্রকৃত গরীব দুঃখী অসহায় মানুষদেরসেবায়
পালিয়
গেলাম তাদের মাঝেকিন্তু সেখানেও ঠাঁই পাওয়া শক্ত এই অসহায় মানুষদের
অভাব
, অভিযোগ কে মুলধন কোরে এক শ্রেনী রাজনীতি করে এরা ওতাদেরহাতের
পুতুল
,ভয়েভক্তিকরেএই অসহায় মানুষ দের ওরাই চালায় এদের মাথা তোলার নিজস্ব
কিছু
বলার করারনেই আমার মতন বাইরের লোকের সাথে যোগাযোগ রাখায় প্রবল আপত্তি, তাই আমিএগ্রামে কদিন, ওগ্রামেকদিনএইভাবে চষে বেড়ালাম রাজ্যের গ্রামাঞ্চলআমারকাছে প্রস্তাব এলো শক্তিশালী দলে নাম লেখানোর আমি রাজি না হয়ে যাযাবর হলাম
আমিঅস্থির ভাবে জানতে চাইলাম তারপর?তার পর আর কিএকদিন আমি আমার
 বাড়িফিরে এলাম এসে শুনি বাবা চারবছর হোলো গত হয়েছেন মা অসুস্থ বাতে শয্যা শায়ী দেখাশোনা করার মতো কেঊনেই,পাড়ার এক বৌদি এসে দেখাশোনা করেন , মামা বাড়ি থেকে মামা মাঝে মাঝে আসেন বাবার যে টাকা পয়সা ছিলো তা পোস্ট অফিসেজমাকরে মাসিকসুদেসবখরচখরচাচলে বড় বাড়ি আর নেই সব জমি বাড়ি বিক্রীহয়ে গেছেবড় ফ্ল্যাটহয়েছে, এরইদোতলায়একটি দুকামড়ার ফ্ল্যাট মাকে দিয়েছে তাতে থাকে আমি আসার পর মামা আর আসেননাআমাকে সব হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাবার যা কিছু ছিলো সব নাকি বাবা মায়ের অসুখে খরচ হয়ে গেছে এখন শুধু ওই ফ্ল্যাট আর মাসে পাঁচ হাজার টাকার মতনসুদের টাকা, এতেই চলেডাক্তার ওষুধ পরিচারিকার খরচ অনান্য সবখরচমেটানোপ্রায়অসাধ্য কিন্তু কি উপায়?আমি বলি আচ্ছা অমলেন্দু তুমি ডাক্তারি না হয় না কোরলে, টিঊশানিতো কোরতেপারোএতোভালো ছাত্র ছিলে এখনপ্রাইভেট টিউশানএর খুউব চাহিদা ভালো উপার্জনঅমলেন্দুবলেওখানেও ব্যাপার আছে আমি তো কোনো স্কুলের শিক্ষক নই আমার ছাত্রজোটা মুস্কিল, তা ছাড়া এখনকার পড়া শুনা আমাদের সময়ের মতন নয় এখনবিরাট সিলেবাসে বিষয় অনেক জানতে হয় অনেক কিছুতবেআমাদের সময়ের মতন অতো বিস্তারিত ভাবেনয় এখন কার প্রশ্ন উত্তর সংক্ষিপ্তএকদম যেটুকু দরকার যাকে বলে টুদি পয়েন্ট বুঝলে? আমরা এই ধারায় অভ্যস্ত নই তাই অসুবিধাআছেযাকআজআসিপরেএকদিন কথা হবে,এই বলে অমলেন্দু হনহন করে চলে গেলো ভীড়ে মিশে গেলোএরপরআবারআমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি , অমলেন্দুকে ভুলেই গেছিলাম দিন সাতেক আগেবেলা ১২ টা নাগাদ  দেখি আমার বাড়ির সামনে একজন প্রবীন লোক গায়ে ঢোলাপাঞ্জাবীরঙ চটা, একটা আধ ময়লা পাজামা, পায়ে হাওয়াই চটি কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ তাতে ভর্তি বইপত্র হবে শরীর ঝুঁকেগেছে, ক্লান্তপা টেনে টেনে রাস্তা দিয়ে উদ্ভ্রান্তের  মতন যাচ্ছে খুউব ভালো করেখুঁটিয়ে দেখে চিনতে পারলাম অমলেন্দু, আমি কিছুবলার আগেই আমার মেয়ে এসে আমায় ভাবে আগ্রহ ভরে ওকে দেখছি দেখে প্রশ্নকরেপাগলা ডাক্তার কে কি দেখছো ? তুমি চেনো ওনাকে?আমি অবাক হয়ে মেয়েকেবলিতুই চিনিস ? কি করে ডাক্তার জানলি কি করে? মেয়ে বলে সেকি একে সবাইচেনেও আমার বান্ধবী যুথিকা দের বাড়ির কাছেই পুকুর ধারেরফ্ল্যাটে থাকেন,উনি ভালো ছাত্রছিলেন কিন্তু ডাক্তারী পড়তে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেছিলো, বছর আগে একদিন আবার উদয় হয়, তখন কিন্তু মাথা খারাপের কোনো লক্ষণ ইছিলো না, যুথিকার দিদি ডাক্তারী পাশ করেনি ফাইনাল পরীক্ষা, কি একটা বিষয় নিয়ে সমস্যা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা তখন এই পাগলা ডাক্তারওদের বাড়িতেখুউবআসতো,যুথিকার দিদিকে উদবিগ্ন দেখে জানতে চান কিহয়েছে ?যুথিকার দিদি মিত্রাদিজানতোইনিডাক্তারী পড়তেন খুউব ভালো ছাত্র ছিলোতাই সমস্যার কথাটাবোলতেই উনি সহজসরলভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বছর তিনেক আগে ওনার মা মারা যায় উনি মাকে দাহ কোরতে দিতে চান নি বোলেছিলেন মাকে ডাক্তার ভুল চিকিৎসা কোরে এই অবস্থা কোরেছেএই রোগের ওষুধ বিদেশে বেড়িয়েছে আনতে পারলে মাকে বাঁচানো যাবে, মৃত দেহ কিছুতেইছাড়বেনা পারার লোক জোর করে দাহ করিয়েছে, তার পর থেকে উনিকেমনউদ্ভ্রান্ত, চুপচাপ য়ে গেছেন, ঘর থেকে বের হননা, মাঝে মাঝে কাঁধে ঝোলায়বইনিয়ে বেরহন চেনা লোক দেখলে বলেন দামী দামী বই লাইব্রেরীতে দিয়েআসি গরীবছেলেরাপড়বেরোজ পাড়ার দোকানে গিয়ে খবরের কাগজ পড়েনস্নান খাওয়া কিছুর ঠিকনেই
প্রায় বলেন চিকিৎসা ব্যবস্থাটা বিরাট ফাঁদ , ব্যবসা এরসাথে ওর কমিশনেরযোগ,
 একবার চক্রে ফেঁসেছো কি সর্বসান্ত করে ছেড়ে দেবে, বিপদে পড়লে কি আর টাকার
কথা ভাবে ঘটি বাটি বেচেও চিকিৎসা করাবে ডাক্তার ওষুধ যা বোল্বে তাই
অমলেন্দু কে দেখে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো , কি ছেলের কি হোয়ার কথা
 আজ কোথায় থাকতো আর কোথায় কি অবস্থা? সত্যি এটাই মতিভ্রম নাকি অদৃষ্ট?
 
৯)ত্রিলোচনবাবুর আক্কেল

ত্রিলোচন বাবুর আক্কেল' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল বেলা ত্রিলোচন বাবু বাইরের বৈঠক খানা ঘরে সবে সকালের খবরের কাগজনিয়ে
চায়ের
কাপে চুমুক দিয়েছেন, দেখেন সদর দরজার সামনে প্রায় তার সমবয়েসী এক পৌঢ় ভদ্রলোক বেশ সুন্দর ধুতি, পাঞ্জাবী পরা কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলানো ব্যাগ,  উপ্সথিত তার দিকে তাকাতেই ভদ্রলোক একগাল হেসে বলে উঠলেন কি চিনতে পারছিস না? তা না পারার কথা আজ প্রায় তিরিশ বছর পরে দেখা,আমার চেহারার আমুল পরিবর্তন ঘটেছে সেই স্কুল ছেড়ে কলেজে যাওয়ার সময় থেকে ছাড়া ছাড়ি, আমি আমারকাকার দৌলতে ডাক্তারি পড়তে চলে গেলাম ইউ এস , তোরা সব এখানে পড়াশুনাকরে দিব্যি কেঊ চাকরী, কেঊ ব্যাবসা, কেউ ডাক্তার,কাঊ ওকালতি কোরছিস, সুখে আছিস বাড়ির সকলের সাথে, আর আমার ভাগ্য কোন সুদুর আমেরিকায় ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিনওখানের সাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারী কোরে ,মন টিকলোনা, বেড়িয়ে পড়লুম নানা দেশে নানা কিছুজানার শেখার নেশায় কিরে ত্রিলোচন আমায় কি বাইরেই দাঁড় রিয়ে রাখবি ? চিনতেপারছিসনা বোলে? আমাকে ভিতরে যেতেদে বসি, তারপর পরিচয় দিচ্ছি দ্যাখ চিনতে পারিস কিনা, কিছু মনে পড়ে কিনা?
অগত্যা ত্রিলোচনবাবু দোনা মোনা করে বলে ওঠেন
, আরে আরে একশবার ভিতরে না এলে কথা হবে কি করে ?কিন্তু সত্যি আমি ঠিক মনে কোরতে বা চিন্তে পারছিনা আগ্নতুক ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে বোলে উঠলেন, খুউব স্বাভাবিক আমিও পারতুম না নেহাত এখানে ঘুরে ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিয়ে আসছি তাই চিনতে পারছি নইলে অন্য কোথাও দেখলে আমার ও এক ই অবস্থা হোতো চিন্তেই পারতাম না আমি হলাম রজত মিত্রআমরা সেই ৩০/৩৫ বছর আগে এক সাথে সুভাষ চন্দ্র মেমোরিয়ালে ক্লাস ফাইভ থেকে ইলেভেন হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা অবধি,ক্লাস ফাইভ থেকে এইট অব্ধি একসাথে নাইন থেকে আমার সায়েন্স আর তোর আর্টস তোর গোরা চাঁদ বাবু যিনি আমাদের এইট অবধি অঙ্ক করাতেন তাঁকে
মনে আছে? কি রাগী ছিলেন! যা  গাঁট্টা মারতেন, চুলটেনে ধরতেন ম নে পড়ে?
ত্রিলোচন বাবু মনে করার চেষ্টা করেন একটু একটু মনে হচ্ছে অঙ্কের স্যার খুউব রাগী ছিলেন তবে তাঁর হাতে ত্রিলোচন বাবু কখনো গাঁট্টা খাননি
নাম টা গোরাচাঁদ না গোকুল মনে পড়ছেনাতোর কেমেস্ট্রীর অনাদি বাবুকে মনে আছে? অবশ্য উনি তো আর্টসের কোন ক্লাস নিতেন না তাই নাও মনে থাকতে পারে আমরা চন্দন নগরে মিত্র বাগানে থাকতাম, বাবা হাইকোটে ওকালতি কোরতেন, আমি হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা দেবার পর রেজাল্ট বেরুনোর আগেই বাবা হার্ট এটাকে মারাযান, আমার কাকা ইউ এস এ তে ডাক্তার , তিনি আমাকে নিয়ে চলে যান ওখানেই থেকে পড়াশুনা করার জন্য আমার আর কোন ভাই বোন না থাকায় মা এখানে একাই থাকতেন তিনিও বছর পাঁচেক আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আমি সময় মতো জানতে পারিনি কারন আমিও যাযাবরের জীবন বেছে নিয়ে ছিলামআমি এক জায়গায় স্থির থাকতে পারিনি বছর পাঁচেক ইউ এস এ তে ডাক্তারি কোরে পালিয়ে যাই কেনিয়াতে ওখানে আদিবাসীদের কাছে আশ্চর্য্য সব শরীর চর্চা, যাদু বিদ্যা, ভেষজ , চিকিৎসা শিক্ষা পাইআমি  নিরামিষ আহারে অভ্যস্থ হই জানতে পারি সুস্থ থাকার আসল মুল মন্ত্রবুঝি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এদের কাছে শিশু সব ই এরা জানে বহু প্রাচীন কালথেকে এবং এরা যা জানে আধুনিক ডাক্তার রা তা এখনো জানেনা এসব লতাপাতার গুন, এদের যোগ,প্রাণায়াম, মন সংযোগ পদ্ধতি প্রেসার,সুগার, এমন কি ক্যান্সার ও এদের কাছে নস্যিএদের দু চারটে ব্যাপার আমাকে অবাক করে দিয়েছে মনে হয়েছে ম্যাজিক,বা ইশ্বরের দান করা ক্ষমতা, আমিও রপ্ত কোরেছি বিশবছরের বেশী দিন যেমন  কোন ক্লিনিকাল পরীক্ষা ছাড়াই এক জনের শ রীরে কি কি রোগ আছে? কি কি রোগ হতে পারে? স ম্ভাব্য আয়ু কত দিন? কি ভাবে দীর্ঘায়ু সুস্থ সবল ভাবে থাকতে পারবে ডাক্তার বদ্যি ঔষধ পত্র ছাড়াইএই তো আমি বিগত ২০ বছর কোন ঔষধ পত্র খাইনি,এক দিনের জন্য শরীর খারাপ হয়নিএই যে তোমাকে দেখেই আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনাতুমি একজন উচ্চরক্তচাপের,ব্লাড সুগারের আর হার্টের রুগী ডাক্তার দেখাওতো ? নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, সব চেক আপ করাও? নইলে যেকোন দিন বিপদ ঘটে যাবেআগে থেকে কিছুই বুঝতে পারবেনা সব সাইলেন্ট কিলার বুঝলে?রাত দিন ভেজাল খাচ্ছো , টেনশনে ভুগছো তাই তোমার নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলো, জেনে নাও শরীরের কি হাল?জেনে বুঝে নিলে আর কোনো অসুবিধা হবেনা দীর্ঘকাল এই আমার মতন শক্ত পোক্ত নীরোগ থাকবে, তখন ব্যবসাতেও আরো সময় মন দিতে পারবে
 উন্নতি হবে
তোমার বৃহস্পতির স্থান ভালো ,রবির স্থান নীচু তাই ভাগ্যে যা হবার তা হচ্ছেনা,কবচ তাবিজে কিছু হবেনা শরীর, মন ই আসল এ দুটো সতেজ রাখো দেখবে সব ঠিক চলছেভয় নেই আমি যখন এসে পড়েছি তোমার ভাগ্য গুনে , আমারতো এখন এখানে আসার কথা নয় নেহাত ই  কি মনে হোলো কাল চলেযাবার আগে একবার পুরানো সতীর্থ যারা কাছাকাছি থাকে দেখা কোরে খোঁজ খবর নিয়ে যাই, কারো তো উপকারেও লাগতে পারি,যেমন এই তোমার ত্রিলোচন, আমি না এলে তোমার শরীরের কি হাল কোরেছো দেখছি আর ক দিন থাকতে?ত্রিলোচনবাবু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান বলেন কি দেখলে বুঝলে আমায় বুঝিয়ে বলে যাও , আমি ঠিক মেনে চলবো রজত বাবু বলেন তা হলে তোমাকে একটু ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে নিই তবে এসময় বাইরের কেঊ এলে আমার মন সংযোগের ব্যাঘাত ঘটলে মুস্কিল, সব পণ্ড হবে তুমি ঐ ভিতর দিক থেকে কেঊ এসময় মিনিট দশেক এখানে না আসে দেখো ত্রিলোচনবাবু বলেন নানা কেঊ আসবেনা আমি ভিতরের দরজা বন্ধ রাখছি বলে উঠে ভিতরের আসার দরজা দিয়ে এলেন রজতবাবু  ত্রিলোচন বাবুকে বোস তে মানা কোরলেন, বোল্লেন সোজা দাঁড়াতে এরপর গায়ের ফতুয়াটা খুলে তার পকেটে হাতঘড়ি, হাতের আংটি, চশমা সব খুলে ভরে রাখতে বোললেন টেবিলের উপর ত্রিলোচন বাবু তাই কোরলেন  এবার রজত বাবু ত্রিলোচন বাবুর কাছে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বোললেন তিনবার জোরেশ্বাস নিয়ে ওওম বলে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে,ত্রিলোচন বাবু কোরলেন রাজত বাবু বোললেন এবার শরীরের স্টেডিনেস,ফিটনেস আর মনের একগ্রতার প রীক্ষা এটাই আসল এবং খুউব যত্ন সহকারে মন সংযোগ কোরতে হবে একদম অন্য মনস্ক হলেই মুস্কিল সব পণ্ড যা বোলছি মন দিয়ে শুনে নাও মাঝে কথা বলা, থাম্‌অন্য মনস্ক হওয়া একদম নিষেধ ত্রিলোচন বাবুকে বোললে,সদর দরজার দিকে পিছন ফিরে সামনে দেওয়ালের দিকে মুখ কোরে সোজা ঘুরে দাঁড়াতে রজত বাবু দেওয়ালের দিকে গিয়ে  ত্রিলোচন বাবুর ঠিক সামনে  দাঁড়িয়ে দুটো হাত সোজা সামনের দিকে মেঝের সমান্তরাল করে  রাখলেন দুটো হাতের মধ্যেএক হাত ফাঁক,ত্রিলোচন বাবুকে বোললেন দুচোখ বন্ধ কোরে ওই দু হাতের ফাঁক দিয়ে প্রথমে ডান হাত ৩০০বার তারপর বাঁ হাত ৩০০ বারসোজা ওপর নীচ কোরতে হবে আর মুখে গুনতে হবে, কোন অবস্থাতেই অস্থির হওয়া বা চোখ না খুলে যায়এটাই চরম পরীক্ষা এতে সব বোঝা যাবে প্রথমে দুবার চোখ খুলে দুহাতে করে দেখে নিলেন রজত বাবু জিজ্ঞাসা করে নিলেন কি পারবে তো? ত্রিলোচন বাবু বেশ আস্থা সহযোগে জোরের সাথে জানালেন  অবশ্য ই ব্যাস শুরু হোলো ত্রিলোচন বাবুর চোখবুজে হাত ওঠানো নামানো আর মুখে না--১,,৩---এইভাবে চোলতে লাগলো , ডান হাত শেষ কোরে বাম হাতের ৫০ অব্ধি গুনেছেন  হঠাৎ শোনেন বাড়ির কাজের পরিচারকা শান্তার চিৎকার ও কাকিমা শিগগির আসুন কাকু ক্ষেপে গেছে ,ফাঁকা ঘরে দেওয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আপন মনে হাত নাচাচ্ছে আর বিড় বিড় করে কি বোকছে, খালি গায় দেওয়াল পানে চেয়ে ত্রিলোচন বাবুর টনক নড়ে যায়, চট করে ঘুরে দেখেন ঘরে রজত বাবুও নেই  টেবিলে জামা ও নেই সব হাওয়া----হায় হায়, সোনার মোটা আংটি, টাকা মানিব্যাগ, হাত ঘড়ি, সব ই গেছে ভাবছেন তার কি আক্কেল ? ঘরে তখন অনেকেই হাজির, হাসির ফোয়ারা কারন শান্তা অভিনয় কোরে ত্রিলোচন বাবু একা ঘরে দেওয়ালের দিকে মুখ কোরে হাত তুলছেন আর নাবাছেন সেই ভঙ্গিমা টা দেখাচ্ছে সবাইকে 
১০) অণুগল্প ফিশান

অনুগল্প "ফিশান " তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বন্ধুরা কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম একটা অনুগল্প লিখি যা শুধু আকারে ছোট নয়, মৌলের অনুর প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য পুর্ণ। তাই এই প্রচেষ্টা। কেমন লাগলো? জানতে পারলে ভালো হয়।
আমরা ছোটবেলায় এই পাড়াতে দেখেছি বড় বড় পাকাবাড়ি,পাঁচিল ঘেরা বাগান,পুকুর নিয়ে অনেক পরিবার,প্রশান্ত ব্যানার্জীদের,অজয় মুখার্জীদের,উমাপতি বিশ্বাস দের,কালু ঘোষ,জীতেন নিয়োগী,ফণী সুর, ধীরেন চ্যাটার্জী,নারায়ন পাল দের এমনি, বাড়ির কর্তাদের নামে সবাই বাড়িটা চিনতো ।কি জম জমাট ছিলো তখন প্রত্যেকের পরিবার।একটু বড় হতে দেখলাম,এই সব একান্নবর্তীপরিবারের কর্তারা ভাইরা আলাদা আলাদা নিজেদের পরিবারের লোকজন নিয়ে পৃথকান্ন হলেও বাড়িটা ভাগাভাগি না করে একসাথে থাকতেন,কর্তারা মারা যেতে সেই পরিবারের একাত্মতা,উতসব,সব বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো।ধীরেন মুখার্জীদের বাড়িতে সব রকম পুজা-দূর্গাপুজা,জগধাত্রী,শীতলা,কালি,আর নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায়দের বাড়িতে অন্নপুর্ণা,বাসন্তী,পুজা সব এক এক করে বন্ধ হয়ে যেতে সুরু করে। অনেকের বাড়িতেই নানা রকম পুজা পার্বণ হোতো, আমরা সবাই যেতাম,কত আনন্দ, হোতো।বড়বড় বাড়ি, উঠোন,দালান,পুজা মন্ডপ  কিছু কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়েছে,বাড়ির গাদিয়ে নানা রকম গাছ বেড়িয়েছে।অনেকের বাড়ির সবাই এখানে না থাকলেও ,কর্মসুত্রে অন্যত্র থাকলেও পুজা, অনুষ্ঠানে সবাই এক হোতো। দোলের সময় ঐ সব বাড়িতে কি হৈ চৈ ,ছেলে মেয়ে,বৌরা এক সাথে দোল খেলা ।এরপর আমি যখন স্কুলগন্ডি পেড়িয়ে কলেজে,অধিকাংশ ঐ যৌথ পরিবার তখন ভেঙ্গে পড়েছে,কর্মসুত্রে,বিবাহসুত্রে বাড়ির ছেলে মেয়েরা অন্যত্র স্থায়ী বসবাস শুরু করেছে,কয়েক টা পরিবারে শুধু বুড়োবুড়ি-ছেলে,মেয়েরা বিদেশে প্রতিষ্ঠিত।মা-বাবা অসুস্থ হলে দেখতে আসতেও পারবেকিনা সন্দেহ।মরন কালে হয়ত কেউ কাছেই থাকবেনা,খবর ও পাবেনা।কয়েকটা পরিবারের এমন করুন অবস্থা-বংশের প্রায় কেউ থাকেনা,শরিকি গন্ডগোলে হয় মামলা মোকদ্দমা চলছে নয়ত বিক্রী বাট্টা হয়ে গেছে পৈতৃকসম্পত্তি এখন অন্যের দখলে, বাড়ির মালিক বৃদ্ধাশ্রমে শেষ দিনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।                                        ছাত্র অবস্থায় জীবন বিজ্ঞানে পড়েছিলাম কোষ বিভাজন,বড় একটা কোষ ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নানা কোষের জন্ম,রসায়ন বিজ্ঞানে পড়ে ছিলাম, মৌলের অনুর বিভাজন বা "ফিশান" বিক্রিয়া।অনুর এই বিভাজন প্রক্রিয়াটি অতিদ্রুত হয়,এই সময় প্রচুর শক্তির উদ্ভবহয়। যে তত্বের ভিত্তিতে আনবিক বিস্ফোরণের আবিস্কার।অনেক সময় মৌলটির এই বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য বাইরে থেকে অন্য শক্তি প্রয়োগ করা হয় তার কাজ দ্রুত বিভাজন কাজটি সম্পন্ন করা। তেমনি এই পরিবার বিভাজনের ক্ষেত্রে বাইরের প্ররোচনা সহায়তা করে আর প্রচুর ক্ষমতা বানের উদয় হয়,যাদের বলা হয় শুদ্ধ ভাবে 'প্রমোটার' আর চলতি কথায় 'দালাল'।এরা হামলে পড়ে প রিবার গুলির মধ্যে বিভাজনটা সুসম্পন্ন আর নিশ্চিত করে , নিজেরা ওটা গ্রাস করে , জন্ম নেয় একটা বড় যৌথ পরিবার ভেঙ্গে-বহুতল,আকাশ চুম্বী অট্টালিকা বা কমপ্লেক্স, হাই রাইজ ,রিয়েল এস্টেট।এর মধ্যে ঘোষ, বোস,মিত্তির, দাস,মল্লিক,ব্যানার্জী,মুখার্জী,সুর, বিশ্বাস ইত্যাদি সেই পুরানো মালিকদের কাউকে পাওয়া যাবেনা, সব নতুন পদবী যেমন-বাজোরিয়া,নেওটিয়া বা বিত্তশালী গোষ্ঠীর হাতে। কখনও কোথাও  হয়ত ঐ বংশের কেউ  বহুতলের একটি খোপ (ফ্ল্যাট) কিনে বসবাস করছেন বা পেয়েছেন বিভাজনের হস্তান্তরের চুক্তি অনুসারে।জন্ম নিয়েছে নতুন নামে নতুন ক্ষেত্র--"... মল", '-------বাজার"--------আবাসন" , ---এটাই ফিশান এটাই বর্তমান যুগের ভিশান । আমার ছাত্র জীবনে পড়া বিভাজন এর বা মলিকিউলার ফিশানের এম্ন জ্বলন্ত উদাহরণ বাস্তব জীবনে দেখা সত্যই অভাবনীয়।









চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছেন, দেখেন সদর দরজার সামনে প্রায় তার সমবয়েসী এক পৌঢ় ভদ্রলোক বেশ সুন্দর ধুতি, পাঞ্জাবী পরা কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলানো ব্যাগ,  উপ্সথিত তার দিকে তাকাতেই ভদ্রলোক একগাল হেসে বলে উঠলেন কি চিনতে পারছিস না? তা না পারার কথা আজ প্রায় তিরিশ বছর পরে দেখা,আমার চেহারার আমুল পরিবর্তন ঘটেছে সেই স্কুল ছেড়ে কলেজে যাওয়ার সময় থেকে ছাড়া ছাড়ি, আমি আমারকাকার দৌলতে ডাক্তারি পড়তে চলে গেলাম ইউ এস , তোরা সব এখানে পড়াশুনাকরে দিব্যি কেঊ চাকরী, কেঊ ব্যাবসা, কেউ ডাক্তার,কাঊ ওকালতি কোরছিস, সুখে আছিস বাড়ির সকলের সাথে, আর আমার ভাগ্য কোন সুদুর আমেরিকায় ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিনওখানের সাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারী কোরে ,মন টিকলোনা, বেড়িয়ে পড়লুম নানা দেশে নানা কিছুজানার শেখার নেশায় কিরে ত্রিলোচন আমায় কি বাইরেই দাঁড় রিয়ে রাখবি ? চিনতেপারছিসনা বোলে? আমাকে ভিতরে যেতেদে বসি, তারপর পরিচয় দিচ্ছি দ্যাখ চিনতে পারিস কিনা, কিছু মনে পড়ে কিনা?
অগত্যা ত্রিলোচনবাবু দোনা মোনা করে বলে ওঠেন
, আরে আরে একশবার ভিতরে না এলে কথা হবে কি করে ?কিন্তু সত্যি আমি ঠিক মনে কোরতে বা চিন্তে পারছিনা আগ্নতুক ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে বোলে উঠলেন, খুউব স্বাভাবিক আমিও পারতুম না নেহাত এখানে ঘুরে ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিয়ে আসছি তাই চিনতে পারছি নইলে অন্য কোথাও দেখলে আমার ও এক ই অবস্থা হোতো চিন্তেই পারতাম না আমি হলাম রজত মিত্রআমরা সেই ৩০/৩৫ বছর আগে এক সাথে সুভাষ চন্দ্র মেমোরিয়ালে ক্লাস ফাইভ থেকে ইলেভেন হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা অবধি,ক্লাস ফাইভ থেকে এইট অব্ধি একসাথে নাইন থেকে আমার সায়েন্স আর তোর আর্টস তোর গোরা চাঁদ বাবু যিনি আমাদের এইট অবধি অঙ্ক করাতেন তাঁকে
মনে আছে? কি রাগী ছিলেন! যা  গাঁট্টা মারতেন, চুলটেনে ধরতেন ম নে পড়ে?
ত্রিলোচন বাবু মনে করার চেষ্টা করেন একটু একটু মনে হচ্ছে অঙ্কের স্যার খুউব রাগী ছিলেন তবে তাঁর হাতে ত্রিলোচন বাবু কখনো গাঁট্টা খাননি
নাম টা গোরাচাঁদ না গোকুল মনে পড়ছেনাতোর কেমেস্ট্রীর অনাদি বাবুকে মনে আছে? অবশ্য উনি তো আর্টসের কোন ক্লাস নিতেন না তাই নাও মনে থাকতে পারে আমরা চন্দন নগরে মিত্র বাগানে থাকতাম, বাবা হাইকোটে ওকালতি কোরতেন, আমি হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা দেবার পর রেজাল্ট বেরুনোর আগেই বাবা হার্ট এটাকে মারাযান, আমার কাকা ইউ এস এ তে ডাক্তার , তিনি আমাকে নিয়ে চলে যান ওখানেই থেকে পড়াশুনা করার জন্য আমার আর কোন ভাই বোন না থাকায় মা এখানে একাই থাকতেন তিনিও বছর পাঁচেক আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আমি সময় মতো জানতে পারিনি কারন আমিও যাযাবরের জীবন বেছে নিয়ে ছিলামআমি এক জায়গায় স্থির থাকতে পারিনি বছর পাঁচেক ইউ এস এ তে ডাক্তারি কোরে পালিয়ে যাই কেনিয়াতে ওখানে আদিবাসীদের কাছে আশ্চর্য্য সব শরীর চর্চা, যাদু বিদ্যা, ভেষজ , চিকিৎসা শিক্ষা পাইআমি  নিরামিষ আহারে অভ্যস্থ হই জানতে পারি সুস্থ থাকার আসল মুল মন্ত্রবুঝি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এদের কাছে শিশু সব ই এরা জানে বহু প্রাচীন কালথেকে এবং এরা যা জানে আধুনিক ডাক্তার রা তা এখনো জানেনা এসব লতাপাতার গুন, এদের যোগ,প্রাণায়াম, মন সংযোগ পদ্ধতি প্রেসার,সুগার, এমন কি ক্যান্সার ও এদের কাছে নস্যিএদের দু চারটে ব্যাপার আমাকে অবাক করে দিয়েছে মনে হয়েছে ম্যাজিক,বা ইশ্বরের দান করা ক্ষমতা, আমিও রপ্ত কোরেছি বিশবছরের বেশী দিন যেমন  কোন ক্লিনিকাল পরীক্ষা ছাড়াই এক জনের শ রীরে কি কি রোগ আছে? কি কি রোগ হতে পারে? স ম্ভাব্য আয়ু কত দিন? কি ভাবে দীর্ঘায়ু সুস্থ সবল ভাবে থাকতে পারবে ডাক্তার বদ্যি ঔষধ পত্র ছাড়াইএই তো আমি বিগত ২০ বছর কোন ঔষধ পত্র খাইনি,এক দিনের জন্য শরীর খারাপ হয়নিএই যে তোমাকে দেখেই আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনাতুমি একজন উচ্চরক্তচাপের,ব্লাড সুগারের আর হার্টের রুগী ডাক্তার দেখাওতো ? নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, সব চেক আপ করাও? নইলে যেকোন দিন বিপদ ঘটে যাবেআগে থেকে কিছুই বুঝতে পারবেনা সব সাইলেন্ট কিলার বুঝলে?রাত দিন ভেজাল খাচ্ছো , টেনশনে ভুগছো তাই তোমার নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলো, জেনে নাও শরীরের কি হাল?জেনে বুঝে নিলে আর কোনো অসুবিধা হবেনা দীর্ঘকাল এই আমার মতন শক্ত পোক্ত নীরোগ থাকবে, তখন ব্যবসাতেও আরো সময় মন দিতে পারবে
 উন্নতি হবে
তোমার বৃহস্পতির স্থান ভালো ,রবির স্থান নীচু তাই ভাগ্যে যা হবার তা হচ্ছেনা,কবচ তাবিজে কিছু হবেনা শরীর, মন ই আসল এ দুটো সতেজ রাখো দেখবে সব ঠিক চলছেভয় নেই আমি যখন এসে পড়েছি তোমার ভাগ্য গুনে , আমারতো এখন এখানে আসার কথা নয় নেহাত ই  কি মনে হোলো কাল চলেযাবার আগে একবার পুরানো সতীর্থ যারা কাছাকাছি থাকে দেখা কোরে খোঁজ খবর নিয়ে যাই, কারো তো উপকারেও লাগতে পারি,যেমন এই তোমার ত্রিলোচন, আমি না এলে তোমার শরীরের কি হাল কোরেছো দেখছি আর ক দিন থাকতে?ত্রিলোচনবাবু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান বলেন কি দেখলে বুঝলে আমায় বুঝিয়ে বলে যাও , আমি ঠিক মেনে চলবো রজত বাবু বলেন তা হলে তোমাকে একটু ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে নিই তবে এসময় বাইরের কেঊ এলে আমার মন সংযোগের ব্যাঘাত ঘটলে মুস্কিল, সব পণ্ড হবে তুমি ঐ ভিতর দিক থেকে কেঊ এসময় মিনিট দশেক এখানে না আসে দেখো ত্রিলোচনবাবু বলেন নানা কেঊ আসবেনা আমি ভিতরের দরজা বন্ধ রাখছি বলে উঠে ভিতরের আসার দরজা দিয়ে এলেন রজতবাবু  ত্রিলোচন বাবুকে বোস তে মানা কোরলেন, বোল্লেন সোজা দাঁড়াতে এরপর গায়ের ফতুয়াটা খুলে তার পকেটে হাতঘড়ি, হাতের আংটি, চশমা সব খুলে ভরে রাখতে বোললেন টেবিলের উপর ত্রিলোচন বাবু তাই কোরলেন  এবার রজত বাবু ত্রিলোচন বাবুর কাছে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বোললেন তিনবার জোরেশ্বাস নিয়ে ওওম বলে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে,ত্রিলোচন বাবু কোরলেন রাজত বাবু বোললেন এবার শরীরের স্টেডিনেস,ফিটনেস আর মনের একগ্রতার প রীক্ষা এটাই আসল এবং খুউব যত্ন সহকারে মন সংযোগ কোরতে হবে একদম অন্য মনস্ক হলেই মুস্কিল সব পণ্ড যা বোলছি মন দিয়ে শুনে নাও মাঝে কথা বলা, থাম্‌অন্য মনস্ক হওয়া একদম নিষেধ ত্রিলোচন বাবুকে বোললে,সদর দরজার দিকে পিছন ফিরে সামনে দেওয়ালের দিকে মুখ কোরে সোজা ঘুরে দাঁড়াতে রজত বাবু দেওয়ালের দিকে গিয়ে  ত্রিলোচন বাবুর ঠিক সামনে  দাঁড়িয়ে দুটো হাত সোজা সামনের দিকে মেঝের সমান্তরাল করে  রাখলেন দুটো হাতের মধ্যেএক হাত ফাঁক,ত্রিলোচন বাবুকে বোললেন দুচোখ বন্ধ কোরে ওই দু হাতের ফাঁক দিয়ে প্রথমে ডান হাত ৩০০বার তারপর বাঁ হাত ৩০০ বারসোজা ওপর নীচ কোরতে হবে আর মুখে গুনতে হবে, কোন অবস্থাতেই অস্থির হওয়া বা চোখ না খুলে যায়এটাই চরম পরীক্ষা এতে সব বোঝা যাবে প্রথমে দুবার চোখ খুলে দুহাতে করে দেখে নিলেন রজত বাবু জিজ্ঞাসা করে নিলেন কি পারবে তো? ত্রিলোচন বাবু বেশ আস্থা সহযোগে জোরের সাথে জানালেন  অবশ্য ই ব্যাস শুরু হোলো ত্রিলোচন বাবুর চোখবুজে হাত ওঠানো নামানো আর মুখে না--১,,৩---এইভাবে চোলতে লাগলো , ডান হাত শেষ কোরে বাম হাতের ৫০ অব্ধি গুনেছেন  হঠাৎ শোনেন বাড়ির কাজের পরিচারকা শান্তার চিৎকার ও কাকিমা শিগগির আসুন কাকু ক্ষেপে গেছে ,ফাঁকা ঘরে দেওয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আপন মনে হাত নাচাচ্ছে আর বিড় বিড় করে কি বোকছে, খালি গায় দেওয়াল পানে চেয়ে ত্রিলোচন বাবুর টনক নড়ে যায়, চট করে ঘুরে দেখেন ঘরে রজত বাবুও নেই  টেবিলে জামা ও নেই সব হাওয়া----হায় হায়, সোনার মোটা আংটি, টাকা মানিব্যাগ, হাত ঘড়ি, সব ই গেছে ভাবছেন তার কি আক্কেল ? ঘরে তখন অনেকেই হাজির, হাসির ফোয়ারা কারন শান্তা অভিনয় কোরে ত্রিলোচন বাবু একা ঘরে দেওয়ালের দিকে মুখ কোরে হাত তুলছেন আর নাবাছেন সেই ভঙ্গিমা টা দেখাচ্ছে সবাইকে 
১০) অণুগল্প ফিশান

অনুগল্প "ফিশান " তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বন্ধুরা কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম একটা অনুগল্প লিখি যা শুধু আকারে ছোট নয়, মৌলের অনুর প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য পুর্ণ। তাই এই প্রচেষ্টা। কেমন লাগলো? জানতে পারলে ভালো হয়।
আমরা ছোটবেলায় এই পাড়াতে দেখেছি বড় বড় পাকাবাড়ি,পাঁচিল ঘেরা বাগান,পুকুর নিয়ে অনেক পরিবার,প্রশান্ত ব্যানার্জীদের,অজয় মুখার্জীদের,উমাপতি বিশ্বাস দের,কালু ঘোষ,জীতেন নিয়োগী,ফণী সুর, ধীরেন চ্যাটার্জী,নারায়ন পাল দের এমনি, বাড়ির কর্তাদের নামে সবাই বাড়িটা চিনতো ।কি জম জমাট ছিলো তখন প্রত্যেকের পরিবার।একটু বড় হতে দেখলাম,এই সব একান্নবর্তীপরিবারের কর্তারা ভাইরা আলাদা আলাদা নিজেদের পরিবারের লোকজন নিয়ে পৃথকান্ন হলেও বাড়িটা ভাগাভাগি না করে একসাথে থাকতেন,কর্তারা মারা যেতে সেই পরিবারের একাত্মতা,উতসব,সব বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো।ধীরেন মুখার্জীদের বাড়িতে সব রকম পুজা-দূর্গাপুজা,জগধাত্রী,শীতলা,কালি,আর নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায়দের বাড়িতে অন্নপুর্ণা,বাসন্তী,পুজা সব এক এক করে বন্ধ হয়ে যেতে সুরু করে। অনেকের বাড়িতেই নানা রকম পুজা পার্বণ হোতো, আমরা সবাই যেতাম,কত আনন্দ, হোতো।বড়বড় বাড়ি, উঠোন,দালান,পুজা মন্ডপ  কিছু কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়েছে,বাড়ির গাদিয়ে নানা রকম গাছ বেড়িয়েছে।অনেকের বাড়ির সবাই এখানে না থাকলেও ,কর্মসুত্রে অন্যত্র থাকলেও পুজা, অনুষ্ঠানে সবাই এক হোতো। দোলের সময় ঐ সব বাড়িতে কি হৈ চৈ ,ছেলে মেয়ে,বৌরা এক সাথে দোল খেলা ।এরপর আমি যখন স্কুলগন্ডি পেড়িয়ে কলেজে,অধিকাংশ ঐ যৌথ পরিবার তখন ভেঙ্গে পড়েছে,কর্মসুত্রে,বিবাহসুত্রে বাড়ির ছেলে মেয়েরা অন্যত্র স্থায়ী বসবাস শুরু করেছে,কয়েক টা পরিবারে শুধু বুড়োবুড়ি-ছেলে,মেয়েরা বিদেশে প্রতিষ্ঠিত।মা-বাবা অসুস্থ হলে দেখতে আসতেও পারবেকিনা সন্দেহ।মরন কালে হয়ত কেউ কাছেই থাকবেনা,খবর ও পাবেনা।কয়েকটা পরিবারের এমন করুন অবস্থা-বংশের প্রায় কেউ থাকেনা,শরিকি গন্ডগোলে হয় মামলা মোকদ্দমা চলছে নয়ত বিক্রী বাট্টা হয়ে গেছে পৈতৃকসম্পত্তি এখন অন্যের দখলে, বাড়ির মালিক বৃদ্ধাশ্রমে শেষ দিনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।                                        ছাত্র অবস্থায় জীবন বিজ্ঞানে পড়েছিলাম কোষ বিভাজন,বড় একটা কোষ ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নানা কোষের জন্ম,রসায়ন বিজ্ঞানে পড়ে ছিলাম, মৌলের অনুর বিভাজন বা "ফিশান" বিক্রিয়া।অনুর এই বিভাজন প্রক্রিয়াটি অতিদ্রুত হয়,এই সময় প্রচুর শক্তির উদ্ভবহয়। যে তত্বের ভিত্তিতে আনবিক বিস্ফোরণের আবিস্কার।অনেক সময় মৌলটির এই বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য বাইরে থেকে অন্য শক্তি প্রয়োগ করা হয় তার কাজ দ্রুত বিভাজন কাজটি সম্পন্ন করা। তেমনি এই পরিবার বিভাজনের ক্ষেত্রে বাইরের প্ররোচনা সহায়তা করে আর প্রচুর ক্ষমতা বানের উদয় হয়,যাদের বলা হয় শুদ্ধ ভাবে 'প্রমোটার' আর চলতি কথায় 'দালাল'।এরা হামলে পড়ে প রিবার গুলির মধ্যে বিভাজনটা সুসম্পন্ন আর নিশ্চিত করে , নিজেরা ওটা গ্রাস করে , জন্ম নেয় একটা বড় যৌথ পরিবার ভেঙ্গে-বহুতল,আকাশ চুম্বী অট্টালিকা বা কমপ্লেক্স, হাই রাইজ ,রিয়েল এস্টেট।এর মধ্যে ঘোষ, বোস,মিত্তির, দাস,মল্লিক,ব্যানার্জী,মুখার্জী,সুর, বিশ্বাস ইত্যাদি সেই পুরানো মালিকদের কাউকে পাওয়া যাবেনা, সব নতুন পদবী যেমন-বাজোরিয়া,নেওটিয়া বা বিত্তশালী গোষ্ঠীর হাতে। কখনও কোথাও  হয়ত ঐ বংশের কেউ  বহুতলের একটি খোপ (ফ্ল্যাট) কিনে বসবাস করছেন বা পেয়েছেন বিভাজনের হস্তান্তরের চুক্তি অনুসারে।জন্ম নিয়েছে নতুন নামে নতুন ক্ষেত্র--"... মল", '-------বাজার"--------আবাসন" , ---এটাই ফিশান এটাই বর্তমান যুগের ভিশান । আমার ছাত্র জীবনে পড়া বিভাজন এর বা মলিকিউলার ফিশানের এম্ন জ্বলন্ত উদাহরণ বাস্তব জীবনে দেখা সত্যই অভাবনীয়।