Saturday, 21 November 2015

বিভিন্ন স্বাদের গল্প ঃত্রিলোচন বাবুর আক্কেল

 ত্রিলোচন বাবুর আক্কেল' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল বেলা ত্রিলোচন বাবু বাইরের বৈঠক খানা ঘরে সবে সকালের খবরের কাগজনিয়ে
চায়ের
কাপে চুমুক দিয়েছেন, দেখেন সদর দরজার সামনে প্রায় তার সমবয়েসী এক পৌঢ় ভদ্রলোক বেশ সুন্দর ধুতি, পাঞ্জাবী পরা কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলানো ব্যাগ,  উপ্সথিত তার দিকে তাকাতেই ভদ্রলোক একগাল হেসে বলে উঠলেন কি চিনতে পারছিস না? তা না পারার কথা আজ প্রায় তিরিশ বছর পরে দেখা,আমার চেহারার আমুল পরিবর্তন ঘটেছে সেই স্কুল ছেড়ে কলেজে যাওয়ার সময় থেকে ছাড়া ছাড়ি, আমি আমারকাকার দৌলতে ডাক্তারি পড়তে চলে গেলাম ইউ এস , তোরা সব এখানে পড়াশুনাকরে দিব্যি কেঊ চাকরী, কেঊ ব্যাবসা, কেউ ডাক্তার,কাঊ ওকালতি কোরছিস, সুখে আছিস বাড়ির সকলের সাথে, আর আমার ভাগ্য কোন সুদুর আমেরিকায় ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিনওখানের সাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারী কোরে ,মন টিকলোনা, বেড়িয়ে পড়লুম নানা দেশে নানা কিছুজানার শেখার নেশায় কিরে ত্রিলোচন আমায় কি বাইরেই দাঁড় রিয়ে রাখবি ? চিনতেপারছিসনা বোলে? আমাকে ভিতরে যেতেদে বসি, তারপর পরিচয় দিচ্ছি দ্যাখ চিনতে পারিস কিনা, কিছু মনে পড়ে কিনা?
অগত্যা ত্রিলোচনবাবু দোনা মোনা করে বলে ওঠেন
, আরে আরে একশবার ভিতরে না এলে কথা হবে কি করে ?কিন্তু সত্যি আমি ঠিক মনে কোরতে বা চিন্তে পারছিনা আগ্নতুক ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে বোলে উঠলেন, খুউব স্বাভাবিক আমিও পারতুম না নেহাত এখানে ঘুরে ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিয়ে আসছি তাই চিনতে পারছি নইলে অন্য কোথাও দেখলে আমার ও এক ই অবস্থা হোতো চিন্তেই পারতাম না আমি হলাম রজত মিত্রআমরা সেই ৩০/৩৫ বছর আগে এক সাথে সুভাষ চন্দ্র মেমোরিয়ালে ক্লাস ফাইভ থেকে ইলেভেন হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা অবধি,ক্লাস ফাইভ থেকে এইট অব্ধি একসাথে নাইন থেকে আমার সায়েন্স আর তোর আর্টস তোর গোরা চাঁদ বাবু যিনি আমাদের এইট অবধি অঙ্ক করাতেন তাঁকে
মনে আছে? কি রাগী ছিলেন! যা  গাঁট্টা মারতেন, চুলটেনে ধরতেন ম নে পড়ে?
ত্রিলোচন বাবু মনে করার চেষ্টা করেন একটু একটু মনে হচ্ছে অঙ্কের স্যার খুউব রাগী ছিলেন তবে তাঁর হাতে ত্রিলোচন বাবু কখনো গাঁট্টা খাননি
নাম টা গোরাচাঁদ না গোকুল মনে পড়ছেনাতোর কেমেস্ট্রীর অনাদি বাবুকে মনে আছে? অবশ্য উনি তো আর্টসের কোন ক্লাস নিতেন না তাই নাও মনে থাকতে পারে আমরা চন্দন নগরে মিত্র বাগানে থাকতাম, বাবা হাইকোটে ওকালতি কোরতেন, আমি হায়ার সেকেণ্ডারী পরীক্ষা দেবার পর রেজাল্ট বেরুনোর আগেই বাবা হার্ট এটাকে মারাযান, আমার কাকা ইউ এস এ তে ডাক্তার , তিনি আমাকে নিয়ে চলে যান ওখানেই থেকে পড়াশুনা করার জন্য আমার আর কোন ভাই বোন না থাকায় মা এখানে একাই থাকতেন তিনিও বছর পাঁচেক আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আমি সময় মতো জানতে পারিনি কারন আমিও যাযাবরের জীবন বেছে নিয়ে ছিলামআমি এক জায়গায় স্থির থাকতে পারিনি বছর পাঁচেক ইউ এস এ তে ডাক্তারি কোরে পালিয়ে যাই কেনিয়াতে ওখানে আদিবাসীদের কাছে আশ্চর্য্য সব শরীর চর্চা, যাদু বিদ্যা, ভেষজ , চিকিৎসা শিক্ষা পাইআমি  নিরামিষ আহারে অভ্যস্থ হই জানতে পারি সুস্থ থাকার আসল মুল মন্ত্রবুঝি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এদের কাছে শিশু সব ই এরা জানে বহু প্রাচীন কালথেকে এবং এরা যা জানে আধুনিক ডাক্তার রা তা এখনো জানেনা এসব লতাপাতার গুন, এদের যোগ,প্রাণায়াম, মন সংযোগ পদ্ধতি প্রেসার,সুগার, এমন কি ক্যান্সার ও এদের কাছে নস্যিএদের দু চারটে ব্যাপার আমাকে অবাক করে দিয়েছে মনে হয়েছে ম্যাজিক,বা ইশ্বরের দান করা ক্ষমতা, আমিও রপ্ত কোরেছি বিশবছরের বেশী দিন যেমন  কোন ক্লিনিকাল পরীক্ষা ছাড়াই এক জনের শ রীরে কি কি রোগ আছে? কি কি রোগ হতে পারে? স ম্ভাব্য আয়ু কত দিন? কি ভাবে দীর্ঘায়ু সুস্থ সবল ভাবে থাকতে পারবে ডাক্তার বদ্যি ঔষধ পত্র ছাড়াইএই তো আমি বিগত ২০ বছর কোন ঔষধ পত্র খাইনি,এক দিনের জন্য শরীর খারাপ হয়নিএই যে তোমাকে দেখেই আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনাতুমি একজন উচ্চরক্তচাপের,ব্লাড সুগারের আর হার্টের রুগী ডাক্তার দেখাওতো ? নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, সব চেক আপ করাও? নইলে যেকোন দিন বিপদ ঘটে যাবেআগে থেকে কিছুই বুঝতে পারবেনা সব সাইলেন্ট কিলার বুঝলে?রাত দিন ভেজাল খাচ্ছো , টেনশনে ভুগছো তাই তোমার নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলো, জেনে নাও শরীরের কি হাল?জেনে বুঝে নিলে আর কোনো অসুবিধা হবেনা দীর্ঘকাল এই আমার মতন শক্ত পোক্ত নীরোগ থাকবে, তখন ব্যবসাতেও আরো সময় মন দিতে পারবে
 উন্নতি হবে
তোমার বৃহস্পতির স্থান ভালো ,রবির স্থান নীচু তাই ভাগ্যে যা হবার তা হচ্ছেনা,কবচ তাবিজে কিছু হবেনা শরীর, মন ই আসল এ দুটো সতেজ রাখো দেখবে সব ঠিক চলছেভয় নেই আমি যখন এসে পড়েছি তোমার ভাগ্য গুনে , আমারতো এখন এখানে আসার কথা নয় নেহাত ই  কি মনে হোলো কাল চলেযাবার আগে একবার পুরানো সতীর্থ যারা কাছাকাছি থাকে দেখা কোরে খোঁজ খবর নিয়ে যাই, কারো তো উপকারেও লাগতে পারি,যেমন এই তোমার ত্রিলোচন, আমি না এলে তোমার শরীরের কি হাল কোরেছো দেখছি আর ক দিন থাকতে?ত্রিলোচনবাবু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান বলেন কি দেখলে বুঝলে আমায় বুঝিয়ে বলে যাও , আমি ঠিক মেনে চলবো রজত বাবু বলেন তা হলে তোমাকে একটু ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে নিই তবে এসময় বাইরের কেঊ এলে আমার মন সংযোগের ব্যাঘাত ঘটলে মুস্কিল, সব পণ্ড হবে তুমি ঐ ভিতর দিক থেকে কেঊ এসময় মিনিট দশেক এখানে না আসে দেখো ত্রিলোচনবাবু বলেন নানা কেঊ আসবেনা আমি ভিতরের দরজা বন্ধ রাখছি বলে উঠে ভিতরের আসার দরজা দিয়ে এলেন রজতবাবু  ত্রিলোচন বাবুকে বোস তে মানা কোরলেন, বোল্লেন সোজা দাঁড়াতে এরপর গায়ের ফতুয়াটা খুলে তার পকেটে হাতঘড়ি, হাতের আংটি, চশমা সব খুলে ভরে রাখতে বোললেন টেবিলের উপর ত্রিলোচন বাবু তাই কোরলেন  এবার রজত বাবু ত্রিলোচন বাবুর কাছে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বোললেন তিনবার জোরেশ্বাস নিয়ে ওওম বলে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে,ত্রিলোচন বাবু কোরলেন রাজত বাবু বোললেন এবার শরীরের স্টেডিনেস,ফিটনেস আর মনের একগ্রতার প রীক্ষা এটাই আসল এবং খুউব যত্ন সহকারে মন সংযোগ কোরতে হবে একদম অন্য মনস্ক হলেই মুস্কিল সব পণ্ড যা বোলছি মন দিয়ে শুনে নাও মাঝে কথা বলা, থাম্‌অন্য মনস্ক হওয়া একদম নিষেধ ত্রিলোচন বাবুকে বোললে,সদর দরজার দিকে পিছন ফিরে সামনে দেওয়ালের দিকে মুখ কোরে সোজা ঘুরে দাঁড়াতে রজত বাবু দেওয়ালের দিকে গিয়ে  ত্রিলোচন বাবুর ঠিক সামনে  দাঁড়িয়ে দুটো হাত সোজা সামনের দিকে মেঝের সমান্তরাল করে  রাখলেন দুটো হাতের মধ্যেএক হাত ফাঁক,ত্রিলোচন বাবুকে বোললেন দুচোখ বন্ধ কোরে ওই দু হাতের ফাঁক দিয়ে প্রথমে ডান হাত ৩০০বার তারপর বাঁ হাত ৩০০ বারসোজা ওপর নীচ কোরতে হবে আর মুখে গুনতে হবে, কোন অবস্থাতেই অস্থির হওয়া বা চোখ না খুলে যায়এটাই চরম পরীক্ষা এতে সব বোঝা যাবে প্রথমে দুবার চোখ খুলে দুহাতে করে দেখে নিলেন রজত বাবু জিজ্ঞাসা করে নিলেন কি পারবে তো? ত্রিলোচন বাবু বেশ আস্থা সহযোগে জোরের সাথে জানালেন  অবশ্য ই ব্যাস শুরু হোলো ত্রিলোচন বাবুর চোখবুজে হাত ওঠানো নামানো আর মুখে না--১,,৩---এইভাবে চোলতে লাগলো , ডান হাত শেষ কোরে বাম হাতের ৫০ অব্ধি গুনেছেন  হঠাৎ শোনেন বাড়ির কাজের পরিচারকা শান্তার চিৎকার ও কাকিমা শিগগির আসুন কাকু ক্ষেপে গেছে ,ফাঁকা ঘরে দেওয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আপন মনে হাত নাচাচ্ছে আর বিড় বিড় করে কি বোকছে, খালি গায় দেওয়াল পানে চেয়ে ত্রিলোচন বাবুর টনক নড়ে যায়, চট করে ঘুরে দেখেন ঘরে রজত বাবুও নেই  টেবিলে জামা ও নেই সব হাওয়া----হায় হায়, সোনার মোটা আংটি, টাকা মানিব্যাগ, হাত ঘড়ি, সব ই গেছে ভাবছেন তার কি আক্কেল ? ঘরে তখন অনেকেই হাজির, হাসির ফোয়ারা কারন শান্তা অভিনয় কোরে ত্রিলোচন বাবু একা ঘরে দেওয়ালের দিকে মুখ কোরে হাত তুলছেন আর নাবাছেন সেই ভঙ্গিমা টা দেখাচ্ছে সবাইকে  

No comments:

Post a Comment