Monday, 18 July 2016

রহস্য গল্প (৩) লালদাদা জিন্দাবাদ'

লালদাদা জিন্দাবাদ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
হঠাৎ আমার বন্ধু রুপা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল জানিস কাকলি দের বাড়িতে কাল খুউব বড় চুরি হয়ে গেছে চোরে সব নিয়ে পালিয়েছে অনেক লোক ভীড় করেছে ওদের বাড়িতে,এক্ষুনি নাকি পুলিশ আসবেশুনেই আমি বললাম তাই নাকি?চল এক্ষুণি যাইরণি আর তোতনকেও ডেকে নিয়ে যাব-তার আগে লালদাদা কে খবরটা দেইপাঁচমিনিটের মধ্যে আমরা সদলবলে যখন হাজির     হলাম দেখি ততক্ষণে পুলিশ এসে গেছেসব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে নিচ্ছে বাড়ির সবার কাছ  থেকেকাকলিদের সবার মন ভীষণ খারাপ কান্না কাটি করছে কারণ জামা কাপড় বাসনপত্র, ঘড়ি, সব নিয়ে গেছে একতলা  নীচের তলা থেকেউপরের তলায় কাকলির মা,ঠাকুমা আর কাকলি ঘুমায়, তলায় বাইরের দিকের  ঘরে কাকলির ভাই রাজু আর কাকলির বাবা ঘুমিয়ে ছিলেনচোরেরা শিকল তুলে দিয়েছিলো কেউ টের পায়নি অথচ চারপাশে অনেক বাড়ি, বড় রাস্তা,সারারাত লোকজন    চলাচল করে পিছনে জঙ্গল সোজা জি,টি রোড(গ্রাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড ) অবধিচোরেরা কি ধূণার মতন পুড়িয়ে ছিলো,তাই খাবার টেবিল ছিলো ছাইতে ভরাপুলিছে সব দেখেশুনে বলল দেখি চেষ্টা করে, তবে কোন কিছু বোঝা যাচ্ছেনা যে কি করে চোর বন্ধঘরের মধ্যে ভিতরে ঢুকলো? পুলিশ চলে গেলে  হঠাৎ লালদাদা আমাদের ডাকলো, দৌড়ে  গেলাম লালদাদার কাছে,দেখি লালদাদা সিঁড়ির টালির ছাদের কাছে উঠে হাতে কি নিয়ে নেমে এলো,কাছে গিয়ে দেখি হাতে কিছু লোমলালাদাদা বলল চোর কোন বাঁদর এই চালার টালির ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে তাকে দিয়েই দরজা খুলিয়েছেআর ঐ দেখ পাশের বেলগাছটাতে এক টুকরো জামার কাপড় আটকেআছে কাপড়টা নীল ডোরাকাটা    একটা জামার ছেঁড়া অংশ লালদাদা একটু চুপ করে থেকে বলল বুঝতে পেরেছি কে চুরি করে থাকতে পারেআমার একজনকে সন্দেহ হচ্ছে,চল একটু পরীক্ষা করে দেখি সন্দেহটা কতটা সঠিক? একজনের ঘরের সামনে গিয়ে লালদাদা ডাকতে লাগলো ও রং মিস্ত্রীদাদা বাড়ি আছেন? একজন বৌ ঘরের ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন 'উনি খুব অসুস্থ, এখন ঘুমিয়ে আছেনকাল থেকে ভীষণ বমি হচ্ছে'লাল দাদা তখন জোরে জোরে বলল ,কিন্তু ওনার সাথে যে খুউব জরুরী একটা দরকার ছিলো,আমাদের স্কুল বিল্ডিং রঙ হবে ,তাই ওনার সাথে দেখা করার প্রয়োজন ছিলো,আমার সাথে গেলে উনি কাজটা পেতেন,কাজটার তাড়া আছে,আগামী কালকের মধ্যে মিস্ত্রী ঠিক করে দেবার জন্য আমাকে হেডস্যার একজন ভালো রঙ মিস্ত্রী সাথে নিয়ে যেতে বলেছেনতা উনি যখন অসুস্থ কাজটা তো ওনার পক্ষে করা সম্ভব হবেনা দেখি সুকান্ত পল্লীর রবিদাদাকে যদি পাই ওনাকে নিয়েই যাব হঠাৎ দেখি তক্ষুনি বাড়ির ভিতর থেকে একজন লোক বেড়িয়ে এসে বলল ,আমি এখন ঠিক আছি কালকে স্কুলে যেতে পারবোলালদাদা আমার হাতটা চেপে ধরে চাপ দিতে বুঝলাম, তাকিয়ে দেখি লোকটার গায়ে নীল ডোরা কাটা শার্ট পিছনে শার্ট টার কিছুটা অংশ ছেঁড়া রয়েছে, কাপড়ের টুকরোটা ওই অংশের নেইব্যাস প্রমাণ পেয়ে গেলাম-এবার লোকটার সাথে কথাবলার আছিলায় লোকটার ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলামঢুকে ই দেখলাম ঘরের কোণে শিকল দিয়ে বাঁধা একটা ছোট বাঁদর একটা এলুমিনিয়ামের বাটিতে ছোলা আর বাদাম বাঁদরটা খাচ্ছেলালদাদা ওই রং মিস্ত্রীকে কাল সকালে স্কুলে যাবার সময় ডেকে নিয়ে যাবে বলে আমরা সকলে বেড়িয়ে এলামআরকি আমরা কাকলির  বাড়িতে গিয়েওর বাবাকে সব জানিয়ে দিয়ে এলাম  কাকু তক্ষুনি থানায় গিয়ে সব বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দিয়ে এলেন পুলিস এসে মাল সমেত রং মিস্ত্রীকে ধরে নিয়ে এলোআমরা লালদাদাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম'তুই একবারে সব বুঝে ধরলি কি করে যে ঐ চুরি করতে পারে?লালদাদা বলল এতো খুউব সোজা-ঐ বন্ধ ঘরে বাইরে থেকে যখন বড় কোন মানুষের ঢোকা সম্ভব নয় তখন দুটি রাস্তা, এক আগে থেকে বাড়ির মধ্যে কাউকে লুকিয়ে থাকতে হবে নয়ত কোন ছোট ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ট্রেণীং দেওয়া বানর জাতীয় জন্তুকে ঢুকিয়ে দরজা খুলিয়ে নেওয়া তবে যদি শিকল বা খিল দেওয়া দরজা হয় তবেই সম্ভব কাকলি দের বাড়িতে দেখলাম সিঁড়ির ওপর টালীর চাল, সেখানে ঐ চালের ফাঁক দিয়ে ছোট জন্তু ঢোকানো সম্ভবএটা আগে শুনেছিলাম, তাছাড়া আমাদের বাড়ির জানলার গরাদের ছোট ফাঁক দিয়ে হনুমানের বাচ্চা ঢুকে  রান্না ঘর থেকে প্রায় ই খাবার দাবার এটা ওটা সেটা নিয়ে পালিয়ে যায়হনুমান কে তাড়া করে দেখেছি দরজার শিকল খুলে পালিয়ে যেতেতাওতো এই হনুমানগুলোর কোনো ট্রেণীং নেইএবার ছাদের পাশেই লাগোয়া বেলগাছে ছেঁড়া জামার টুকরোটা দেখেই চিনতে পেরেছিলাম ওটা ঐ রঙ মিস্ত্রীর ,ওর হাত টানের স্বভাবের কথা আগে শুনেছিলাম ক দিন আগে  কাকলিদের বাড়িতে রঙ হয়েছে, তখন ওই রঙ মিস্ত্রীকে এই জামাটা পরে কাজ করতে দেখেছি এখানে ওই রং মিস্ত্রীর যে ছোট পোষ মানানো একটা বাঁদর ছানা আছে সবাই জানেএবার রাতে চুরি  করে জঙ্গল পথে সোজা জি,টি রোডে পৌঁছানো খুউব সোজাঘরের সব আগেথেকে জানা না থাকলে কখনো চোর এইভাবে চুরি করতে পারেনাসে নিশ্চয় এবাড়িতে আগে এসেছে সব কিছু জানেআমি আগেই জেনে নিয়েছিলাম রাতে শোবার আগে সারা বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ আছে কিনা, প্রতিটি ঘর ভালো মতন দেখা ভেতরে কেউ লুকিয়ে আছে কিনা এটা দেখা হয়এবার আমার অঙ্ক মিলে গেলো
আমরা সমস্বরে চিৎকার করে বললাম লালদাদা জিন্দাবাদ

No comments:

Post a Comment