Sunday, 17 July 2016

কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী নিয়ানডান্থাল এর মুখোমুখী

নিয়ানডান্থাল এর মুখোমুখী
গতকাল ই আমি এখানে প্রসিদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিদ Dr.Mikel SanJose এর একান্ত আমন্ত্রনে এসে পৌঁচেছি তাঁর বাংলোতে,ইতি পুর্বে আমার এখানে আসা হয়নি বহুবার নানা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও নানা কাজে আটকে পড়ায় আসা হয়ে ওঠেনি।মরক্কো র কাসাব্লাঙ্কা তে Hominid Cave atThomas Quary-1 আবিস্কৃত হওয়ার পর সারা বিশ্বজুড়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমি ও আকৃষ্ট হয়ে বহুদিন ধরেই এখানে আসার জন্য উদ্গ্রীব হয়েছিলাম,তাই এই আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র আমি আর কাল বিলম্ব না করেই চলে এসেছি। Dr.Mikel SanJose এর সাথে বছর পাঁচেক আগে জার্মাণীর মিঊনিখে যে 'বিশ্বের  অমীমাংসিত রহস্য উন্মোচনে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ'বিষয়ক  আলোচনা সন্মেলনে আমার পরিচয় ঘটে,সেই সভায় আমি প্রত্নতাত্মিক যে সমস্ত সামগ্রী অদ্যাবধি পাওয়া গেছে সেগুলির প্রকৃত অবস্থান কাল, প্রকৃতি,গঠন বৈচিত্র, চারিত্রিক বিশ্লেষনে অত্যাধুনিক মাইক্রো ইন্ট্রিগ্রেটেড চিপ যুক্ত যন্ত্রে বিশ্লেষন ও নথী ভুক্ত করণ করা হয়,যেখানে আলোক ও তাপের উদীপ্ত বিকিরণ উজ্জ্বলতার নির্দিষ্ট মানমাত্রা অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয় TL/OSL(Thermal, Optically Stimulated Luminescence) মাপা হয়। এই বিষয়ে আমার গবেষণা পত্র টি পাঠ করে ছিলাম।
Dr.Mikel SanJose এর বিষয় ছিলো মানব জীবনের ক্রম বিবর্তন ও প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণাদি।তখন হোমনিড কেভ খননের বিষয় অজ্ঞাত ছিলো।
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাংশে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে মরক্কো প্রদেশের সবথেকে বড় প্রসিদ্ধ শহর কাসাব্লাঙ্কা,যেখানে বিখ্যাত রহস্যময় গুহার  খনন কার্য্যে
(Hominid Cave at Thomas Quarry-1) বিষ্ময় কর সব প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী জীবাশ্ম, কঙ্কাল, পাথরের অস্ত্রসস্ত্র হাতিয়ার  পাওয়া যাচ্ছে নিত্য নতুন সব নানা তথ্য উঠে আসছে।কৌতুহল বাড়ছে বিজ্ঞানী মহলে।আদিম মানুষের কঙ্কালে্র সাথে পাওয়া গেছে নানা প্রাণীর কঙ্কাল কিছু কিছু আবার নরখাদক এগুলো বহু কাল আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।নিয়ান্ডার্থাল (Neanderthal)মানুষের ক্রমবিবর্তনেরএকটি পর্য্যায়এর নৃতাত্বিক প্রজাতি যারা প্লাইটোসিন যুগে পৃথিবীতে মূলত ইউরেশিয়া বসবাস করত(ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্য,পশ্চিমাঞ্চল)
এরা হোমো গনের অন্তর্ভুক্ত ,এদের দ্বিপদী নাম HomoNeanderthalensis বা Homosapiens Neanderthalensis এর কিছু  চোয়ালের অংশ,দাঁত পাওয়া গেছে।এগুলি নিয়ে সারা বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমানে ফ্রান্স আর মরক্কো যৌথ উদ্যগে (Franco-Moroccan Co-Operative Project) গুহাটির খনন অনুসন্ধান কার্য্য চলছে। Mikel SanJose এর আমাকে এত আগ্রহ ভরে নিমন্ত্রণ জানানোর মুলে এই গুহা থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু গুলির প্রকৃত বয়স গঠন বৈশিষ্ঠ সব সঠিক ভাবে নিরুপনের জন্য আমার সাহার্য্য একান্ত প্রয়োজন, সেটা Mikel SanJose  বুঝেছে, আমাকে দিয়ে ও কাজটা করিয়ে নিয়ে আমাকে সরিয়ে দেবে, সব কৃতিত্বটা একাই নেবে। দুনিয়াকে আমার কাজ বা অবদানটুকু জানতে দেবেনা, এটা আমি ওর কথাবার্তা হাব ভাবে এখানে এসেই বুঝে গেছি, কিন্তু ওকে এক টুকুও বুঝতে দিইনি। আমি এতে ভিন্ন মত দেখালে আমাকে হোমিনিড কেভে নিয়েই যাবেনা তাই আমি ঊল্টে বেশী আগ্রহ দেখিয়ে জানালাম যে আমি আমার যথা সাধ্য সাহার্য্য করতে আগ্রহী, কিন্তু বর্তমানে আমি পদার্থের চতুর্থ অবস্থা(Plasma State) নিয়ে গবেষনায়  খুব ব্যস্ত তাছাড়া আমার নৃতাত্ত্বিক বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই তাই আমি শুধু TL/OSL পরীক্ষা করে তার ফলাফল টুকুই জানাতে পারবো এর বেশিকিছু আমি পারবোনা এই কথা গুলো আমি ইচ্ছাকৃত ভাবেই জানালাম যাতে ভাবে আমার এ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ নেই তাই আমার দিক থেকে এই আবিস্কারের প্রতি কোনো বিশেষ দৃষ্টি লক্ষ্য থাকবেনা   Mikel SanJose একাই কৃতিত্বের দাবীদার হবে।আমার স্বীকৃতি বা নাম খ্যাতির কোনো মোহ নেই কিন্তু এখানে আমার নাম প্রকাশ পেলে স্যানযোশের অসুবিধা ,এক্ষেত্রে আমার জীবনের ঝুঁকি এসে যাচ্ছে।
আমি মরক্কোতে এসে কাসাব্লাঙ্কা তে,যেখানে বিখ্যাত রহস্যময় গুহার  খনন কার্য্যের
(Hominid Cave at Thomas Quarry-1) কাজ চলছে খুঁটিয়ে পরিদর্শন করলাম,বহু জীবাশ্ম, কঙ্কাল, পাথরের হাতিয়ার যন্ত্রপাতি রয়েছে আমি প্রয়োজনীয় কিছু ভাঙ্গা হাড়গোড় , পাথরের টুকরো সাথে নিলাম যা আপাত দৃষ্টিতে তেমন গুরুত্ব পুর্ণ কিছু নয় এমন ভাব দেখালাম আর মাইকেল স্যানযোশ কে বললাম এগুলো নিলাম আমার ল্যাবে মেশিন টা সেটিং করতে লাগবে,আপনি যে গুলির পরীক্ষার প্রয়োজন মনে করবেন আমার ল্যাবে নিয়ে আসবেন সামনেই পরীক্ষা করে ফলাফল সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো।আমি  দু চারদিন এখানে কেনারি দ্বীপপুঞ্জ( CanaryIslands) ঘুরে বেড়িয়ে দেশে ফিরবো, অনেক দিনের সাধ এই দ্বীপ পুঞ্জটি ঘুরে দেখার কারন আফ্রিকার মরক্কোর দক্ষিন পশ্চিমাংশের উপকুল বর্তী ,স্পেনের অধীনে এই দ্বীপপুঞ্জের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য পৃথিবী বিখ্যাত।এখানের মুল ৭টি দ্বীপ আর ছোটছোট ৬টিভুখণ্ড মিলিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ অতীব সুন্দর বৈচিত্র ময়। দ্বীপ গুলি যথাক্রমে বড় থেকে ছোট হিসাবে (আয়তনের দিক থেকে) প্রধান সাতটি দ্বীপ এরকম
: তেনেরিফে (Tenerife); ফুয়ের্তেভেন্তুরা (Fuerte ventura), যা আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত; বৃহৎ কানারি বা গ্রান কানারিয়া (Gran Canaria,); লানসারোতে (Lanzarote ); লা পালমা (Lapalma ); গোমেরা (Lo Gomera) এবং হিয়েরো (El Hierro) এছাড়াও আরও অনেকগুলি জনশূন্য ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে এখানে এখানে বহু দর্শনীয় বস্তু আছে, যেমন Tenerife দ্বীপে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চত্তম সুপ্ত(dorment)  আগ্নেয়গিরি mount Telde, এটা Spain এর সর্বোচ্চ পাহাড়, দে তেইদে অথবা পিকো দে তেনেরিফে সর্বোচ্চ; এর উচ্চতা ৩,৭১৫ মিটার।।দ্বীপ গুলিতে, পাহাড়,সবুজ বনাঞ্চল, রুক্ষ মরুঅঞ্চল সবই বর্তমান।আফ্রিকার উপকুল থেকে ৯০ কিমি মধ্যে অবস্থিত এই দ্বীপ পুঞ্জ শুরু।কানারি দ্বীপপুঞ্জগুলি নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং মৃদু, শুষ্ক জলবায়ুর জন্য খ্যাতসাধারণত শীতকালে এখানে বৃষ্টিপাত হয়সমুদ্রতল থেকে ৪০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উদ্ভিদগুলি উত্তর আফ্রিকার মতনএর মধ্যে আছে খেজুর, ড্রাগন গাছ ও ক্যাকটাস৪০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় লরেল, হলি, মার্টল, ইউক্যালিপ্টাস, পাইন এবং অন্যান্য সপুষ্পক উদ্ভিদ জন্মে থাকে এই দ্বীপপুঞ্জে মিশ্র পরিবেশ ও আব হাওয়া থাকায় মহাদেশের মধ্যে এটিও একটি  মহাদেশ বলা যায়,বহু প্রাচীন কাল থেকেই এখানে লোক বসতি গড়ে উঠেছে। এইদ্বীপ পুঞ্জের নাম করণের নানা মত।প্রাচীন কালে এই দ্বীপ মালাকে বলা হোত The Fortunate Islands,  বর্তমান দ্বীপের নাম canariac insulae মানে Islands of dogs এটা মুলতঃ গ্র্যান ক্যানারয়া ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।এখানে বহু পুর্বে sea dog যার latin নাম seal/monk seal ছিলো এখন নিশ্চিহ্ন বিলুপ্ত।এই দ্বীপের আদিবাসীরা (Guanches) কুকুরকে ইশ্বর জ্ঞানে পুজা করত,তাদের বিশ্বাস প্রাচীন গ্রীকরা কুকুরের মুখ বিশিষ্ট একজন পালক সেবক ছিলেন ইনি ছিলেন মিশরের শিয়াল দেবতার (Anubis)মতন মাননীয়।।পণ্ডিত প্লিনির অভিমত এক সময় দ্বীপগুলিতে অনেক অতিকায়  বন্য কুকুর বাস করতঅনেকের মতে কুকুরদের লাতিন নাম কানেস থেকেই দ্বীপগুলির কানারি নামকরণ করা হয়েছেগুয়াঞ্চে(Guanches) নামের আদিবাসী  যে বার্বার জাতিটি এখানে বসবাস করত, তা শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়
আজ সকালে মরক্কোর দক্ষিণাংশের উপকুল থেকে ক্যানারী দ্বীপ পুঞ্জের
Tenerife দ্বীপে এসেছি । এখানের বিখ্যাত Mount Teide ঘুরে দেখে অনান্য চারপাশের দ্বীপ গুলি দেখে আগামী পরশু দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরব সেই মত পরিকল্পনা আছে। সকালেই ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়লাম Mount Teide র উদ্দ্যেশে রুক্ষ পার্বত্য অজানা, অচেনা, চড়াই উতরাই পথ বেয়ে উঠতে লাগলাম গিরি চুড়া আগ্নেয় গিরির জ্বালা মুখের দিকে। এখানটা সম্পুর্ণ সংরক্ষিত এলাকা আমি বিশেষ সুপারিশে একটি ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলাম তাই একাই এই পথে যাবার অনুমোদন পেয়েছি। ঘন পাইন ,ড্রাগন ট্রী,অজানা গাছের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছি চুড়ার দিকে সামনে জমাট লাভা থেকে পাথুরে পথ।এই দ্বীপ "তেনেরিফে(Tenerife) সাতটি দ্বীপ পুঞ্জের বৃহত্তম ও সবচেয়ে জন বহুল, এখানে সব থেকে বেশী পর্য্যটকের ভীড় হয় । ১২লক্ষ্যাধিক বৎসর পূর্বে আটলান্টিকের বুকে অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্টি এই দ্বীপের।এখানে ছিলো ইউরোপের আদিম প্রাণীকুলের ভাণ্ডার,২০০ খৃঃপূর্বে মানুষ এখানে বসবাস শুরু করে।প্রাচীন রোমান রা তেইদে(Teide) পর্বতের শিখর সাদাবরফাচ্ছন্ন বলে নামকরণ করে ছিলো Latinভাষায় 'Niveria'
বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো, চার পাশে রোদের আলো ম্লান হয়ে আসছে, থাকার মতন কোনো জায়গা এখানে নেই। অনেক আগেই জন বসতি লোকালয় ছেড়ে বহু দূরে চলে এসেছি, এখানের পথ নির্দেশ আমার জানা নেই, আমার এই অভিযান একান্ত গোপনীয় কারন আমার ধারনা এমন  বৈচিত্র পূর্ণ
অঞ্চলে অনেক অজানা তথ্য,রহস্য, বৈজ্ঞানিক সম্পদ মেলার সম্ভাবনা যদিও এখানের পরিবেশ সম্পদের গুরুত্ব বহুদিন ধরেই বিজ্ঞান মহলে আগ্রহের বিষয়।এখানে গবেষণার মান মম্দির আছে। আমার আগ্রহ বিলুপ্ত প্রাণীর অবশেষ ,তাদের বিষয়ে কোনো নতুন তথ্য পাওয়া যায় কি না?রহস্যে ঘেরা আটলান্টিক, ভারত মহাসাগরে এখনও অনেক অজানা রহস্য রয়ে গেছে, তাই তার বুকে এমন মিশ্র আবহাওয়ার দ্বীপ পুঞ্জে অনেক অজানা রহস্যের সন্ধান মিলতে পারে।বহু সঙ্কীর্ণ উপত্যকা চারপাশে, এখনে দীর্ঘতম আগ্নেয় গিরি লাভা সুরঙ্গ পথ,ছোটো বড় গুহা কন্দর।এখানে যেকোন মুহুর্ত্তেদেখা মিলতে পারে অতিকায় স্বরীসৃপ গিরগিটি জাতীয়
(Gollotia Gollath), অতিকায় কচ্ছপ(Geochelone burchardi),বিশাল ইঁদুরের(Canariomys Bravol) মতন প্রাণীর

পাহাড়ের নীচের ঢালে ,উপত্যকায় দেখে এসেছি চাষ হচ্ছে,তামাক,আলু,পেয়াঁজ,আখ, কলা
আসার পথে , সমুদ্রের উপকুলে কালো বালী ,পাথরের দেখা পেয়েছি, সামনে ভয়ঙ্কর খাড়া পাথরের সারি, আরো অনেক উঁচুতে সাদা চুড়া।আশেপাশে কোনো জন মানব নেই। সড় সড় করে একটা প্রকাণ্ড গিরগিটি পাথরের খন্ড গুলোর উপর দিয়ে চলে গেলো, সামনে একটা ছোট গুহা মতন পাথরের খাঁজে দেখা যাচ্ছে, ভাবলাম এখানেই রাত টা কোন রকমে কাটিয়ে একদম সুর্য্য ওঠার সাথে সাথে চারপাশ টা দেখে নেমে যাব, কাল অন্য দ্বীপে, আমি ছোটো ওই গুহার কাছে গিয়ে দেখলাম ওটা পাহাড়ের পাথরের ই  ঢাল ছাদের মতন সামান্য আচ্ছাদন আছে। সামান্য দূরে একটা সুরঙ্গ মুখ, মনেহয় এটা কোনো আগ্নেয় লাভা প্রণালীর পথ হবে, ওখানে ঢোকা বিপদজনক, কারণ এই রকম সুরঙ্গ বা গুহার মধ্যে আগ্নেয় উদ্গীরণের গ্যাস,কার্বন ডাই অক্সাইডের মতন মারন গ্যাস থাকে, আমার সাথে গ্যাস মুখোস নেই। প্রায় সন্ধ্যার মুখো মুখি হাল্কা আলোয় হঠাৎ দেখি একটা ভাল্লুকের মতন প্রাণী ওই সুরঙ্গ কাছ থেকে বেড়িয়ে আসছে কিন্তু ভালো করে তাকাতে দেখলাম ওটা ভাল্লুক নয়,দুপায়ে  হেঁটে আসছে উচ্চতা ৫ফুটের মতন, মানুষের মতই দেখতে তবে কোমড় থেকে পায়ের দিকের অংশ টা ছোট , দেহের উপরের অংশের থেকে, শরীর বেশ শক্ত পোক্ত, হাতে একটা ভারী পাথরের লম্বা মুগুড়ের মতন হাতিয়ার। মাথা থেকে বড়বড় লম্বা চুল দাড়ি, হঠাৎ চোখের সামনে যাদুঘরে দেখা প্রস্তর যুগের মানুষ নিয়ান্ডার্থাল এর মুর্তি ভেসে উঠলো, বুঝলাম আমি নিয়ানডার্থালের মুখো মুখি হতে চলেছি।(প্রায় ৫০০০০বছর আগে এশিয়াতে,৩০০০০ বছর আগে ইউরোপে এই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে )পাথরের যন্ত্রপাতি,হাতিয়ার  ব্যবহার (Mousterian) সংস্কৃতির শেষ নিদর্শন জিব্রাল্টারের দক্ষিণমুখী উপকুলে Gorham গুহায় পাওয়া গেছে  নিয়ান্ডার্থালদের করোটির ক্ষমতা বর্তমানের মানুষদের চেয়ে বেশী, মস্তিষ্ক বড়,মাংসাশী,শিকারের দক্ষতা অপরিসীম। Bergman'sRule মোতাবেকঊচ্চ অক্ষাংশের বাসীন্দা তাই এদের আকৃতি  হাড়ের শক্তিশালী গড়নে এরা বেশ ভারী শরীরের অধিকারী ছিলো,তাদের হাতের বাহুতে প্রভুত শক্তি ছিলো,পুরুষ রা সাড়ে পাঁচফুট মহিলারা পাঁচ ফুট তাদের স্তনের আকৃতি ছিলো খুব বড় কারণ দ্রুত মস্তিস্কের আকার বৃদ্ধির জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন তাই এদের শিশুদের মস্তিস্ক বিকাশের শক্তি যোগাতো মাতৃদুগ্ধ।এ সব ই ঐতিহাসিক গবেষকদের মতামত ও তাদের যুক্তি তথ্য থেকেই জানা।এই রকম আকস্মিক ভাবে বহু হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীর সন্মুখীন হতে হবে ভাবতেও পারিনি সাথে কোনো আত্মরক্ষার অস্ত্রসস্ত্র আনিনি, এখন কি করবো? যদি তেড়ে আসে? আক্রমণ করে? আমার আত্মগোপন করার মত কোন জায়গাও আশেপাশে দেখতে পাচ্ছিনা, এখন কি করি? আমাকে দেখতে পায়নি তাই রক্ষে, কিন্তু কত ক্ষণ আর না দেখা থাকবো? আমার থেকে ওর দুরত্ব বেশী নয়, এরা বিলুপ্ত প্রজাতির, কিন্তু এখানে এলো কি ভাবে? এখন ও বেঁচে আছে এই প্রজাতির কোনো প্রাণী? অসম্ভব! অথচ আমি সামনে প্রতক্ষ্য দেখতে পাচ্ছি !আমি সম্পুর্ণ সুস্থ আমার দেখায় কোনো ভুল নেই। হঠাৎআমার হাত থেকে, জোরালো টর্চ লাইট যেটা পথে সন্ধ্যা হয়ে আসছে বলে বার করে হাতে ধরা ছিলো, পড়ে গেলো, আর সুইচে চাপ লাগায় আপনা আপনি আলো জ্বলে উঠতেই একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটলো, মুহুর্তের মধ্যে ঐ প্রাণী টা যে সুরঙ্গ থেকে বেড়িয়ে এসেছিলো মনে হোলো সেপথেই উধাও হয়ে গেলো আমি তক্ষুনী ওই সুরঙ্গটার কাছে ছুটে গেলাম কিন্তু গিয়ে অবাক ওই সুরঙ্গটা তে  ২/৩ ফুটের বেশী যাবার পথ নেই চারপাশেই পাহাড়ের কালো আগ্নেয় শিলার দেওয়াল।চার পাশে কোথাও যাবার পথ দেখতে পেলামনা। তাজ্জব ব্যাপার এই ঘটনা কারো পক্ষেই বিশ্বাস করা কষ্টকর, আমার কাছে কোন প্রমান নেই। হঠাৎশুনি প্রবল হাওয়া বওয়া ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ, চারপাশ কালো অন্ধকার ।এই প্রবল ঘূর্ণী হাওয়ায়  আমাকে কোথায় টেনে এনে ফেললো, আমি পাথরের উপর আছড়ে পড়ে জ্ঞান হারালাম।জ্ঞান ফিরলো পরদিন সকালে, কারণ যখন চোখ মেললাম দেখি আকাশে সবে ভোরের সুর্য্য উঠছে,চারপাশ পরিস্কার দেখা যাছে, কিন্তু আমি হাল্কা সবুজ ঘাসে ঢাকা একটা জায়গায় পড়ে আছি একপাশে সবুজ গাছের সারি অন্যপাশে কালো বালীর সমুদ্রতট।আমি উঠে চারপাশে তাকিয়ে বুঝলাম আমি জন মানবশূন্য কোনো দ্বীপে এসে পড়েছি।একটু বেলা হলে আমি এই দ্বীপ থেকে মাছ ধরার জন্য আসা জেলেদের ট্রলারে করে পুনরায় তেনেরিফে(Tenerife) দ্বীপে ফিরে এলাম, জেলেদের জানালাম আমি ছোট ক্যানো চেপে কাল সমুদ্রে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম, প্রবল হাওয়াতেএই নির্জন দ্বীপে চলে আসি কিন্তু ক্যানোটা সমুদ্রে ভেসে তলিয়ে গেছে, আমার সাথে কেবল আমার ট্রাভেল এর পোর্টেবল রুকস্যাকটা রয়েছে এতেই আমার পরিচয় পত্র, পাশপোর্ট,ফেরার টিকিট সব দরকারী জিনিস পত্র গুলোই রয়ে গেছে তাই বাঁচোয়া
আমি এই দ্বীপে এসে কিছুতেই আর পাহাড়ে যে পথে যেখানে গেছিলাম খুঁজে মনে করতেবা চিনতে পারলাম না সব কিছুই নতুন মনে হোলো। আমি কালকের ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা পাচ্ছিনা, এখনও কি করে কোনো গিরি গুহা কন্দরে সবার অগোচরে বহু হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীরথেকে বিলুপ্ত এই প্রাণী আজ অবধি জীবন্ত থেকে গেলো?আমি এই দ্বিপ থেকে কি করে অত দূরে নির্জন দ্বীপে গিয়ে পড়লাম? এই দ্বীপের আবহাওয়া তো শুষ্ক পরিষ্কার অমন ঘূর্ণী ঝড় এলো কি করে? তবেকি কোনো লাভা সুরঙ্গ পথে ঢুকে ভিতরের বিস্ফোড়ক আন্দোলনে  বায়ুর ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো এবং এর প্রবল বেগ আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঐ দ্বীপে নিয়ে গেছিলো ওই সুরঙ্গ পথ দিয়েই যে পথ হয়ত আটলান্টিকের মধ্য দিয়েই ওই দ্বীপ পর্য্যন্ত প্রসারিত।এই পথ অনাবিস্কৃত অজানা,এই পথেই ঐ অজানা প্রাণীর যাতায়াত।এই রকম জন শূন্য নির্জন দ্বীপেই কোথাও নিভৃত অন্তরালে এখনও রয়ে গেছে বিলুপ্ত প্রাণীকুল।
 

No comments:

Post a Comment