Sunday, 17 July 2016

'ডাক্তার উকিল ও নিখোঁজ বিজ্ঞানী'

'ডাক্তার উকিল নিখোঁজ বিজ্ঞানী' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আমি আমার সর্বত্রগামী যান ত্রিলোক বিহারীর পরীক্ষা মুলক উড়ানের সময় যে অভাবনীয় পরিস্থিতির মধ্যে এক অকল্পনীয় সত্যের সন্মুখীন হই এবং দুর্ল্ভ আবিস্কারের সাথে পরিচয় ঘটে, আমি তাতে যে কি পরিমান উপকৃত হয়েছি তা বোঝেতে পারবোনা আজ সেই ঘটনার কথাই লিখে রাখছি আমার ডায়েরীতে ,আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো যাঁর কাছ থেকে আমার এই অমুল্য আবিস্কৃত সামগ্রীটি পেয়েছি
আমি আমার ত্রিলোক বিহারী নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছি এর কর্ম কুশলতা পরীক্ষা পর্য্যবেক্ষণের  জন্য আমি মহাকাশে এক চক্কর মেরে ঝাড়গ্রামে আমার বাংলো উন্মেষে ফেরার জন্য আকাশের কম উচ্চতায় নেমে এসেছি এবং যানের গতিবেগ অনেক কমিয়ে এনেছি, তখন যানের নীচের দেখার জন্য যে বিশেষ লেন্স যন্ত্র লাগানো দর্শন ব্যবস্থা আছে তা দিয়ে নীচের ১০কিমি দুরের জিনিস স্পস্ট দেখাযায় চোখের সামনে মনিটরের পর্দ্দায়তাতে দেখি নীচে চারপাশে সমুদ্রজলে ঘেরা , গাছ পালায় ঢাকা বেশ কিছু সবুজ দ্বীপ   এর ই একটা দ্বীপে জন বসতির কোনো চিহ্ন চোখে পড়ছেনা অথচ গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা ছোটো তাঁবুর মতন কি দেখা যাচ্ছে?আমি তখন আমার ত্রিলোক বিহারীর গতি কমিয়ে ঐ দ্বীপের জঙ্গলের কাছে একটু ফাঁকা জায়গায় নামলাম আমার এই ত্রিলোক বিহারী,চর্ম চক্ষে বা আজ অবধি আবিস্কৃত  কোনো যন্ত্রে ধরা পড়বেনাআমি যে পোষাক পড়ে আছি তাতে আমি কোন রকম বাহ্যিক আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত কিন্তু ত্রিলোক বিহারী থেকে বাইরে বেরুলে আমাকে দেখা যাবে পোষাকে ঢাকা মহাকাশচারীদের মতআমি তাই ত্রিলোক বিহারী থেকে প্রথমে না বেরিয়ে ওর ভিতর থেকেই খুঁটিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম, আমার বিশেষ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পর্য্যবেক্ষন যন্ত্র 'অবলোকন' এর মাধ্যমেএটি আমার চশ্মার সাথেই লাগানো থাকে দেখি ঘন ম্যান গ্রোভ ফরেস্টের মধ্যে গাছের উপরে একটা বহু পুরানো তাঁবুর ঘর যার অনেক জায়গাই ছিঁড়ে গেছে গোল পাতায় ,সরু গাছের ডাল আর গাছের সরু সরু শিকড় দিয়ে ঢাকা,বড় বড় কোনো গাছের কাঁটা  দিয়ে পাতা গুলো তাঁবুর গায়ে আটকানো আলপিনের মতন, বুঝলাম ঘরে কেঊ বাস করেচারিপাশে নানা রকম বন্য প্রাণী, পাখীর ডাক ছাড়া কোনো মানুষের অস্তিত্ব চোখে পড়ছেনাআমার লোকেশন ফাইণ্ডার যন্ত্রে জানাচ্ছে এটা আন্দামান  নিকোবর আইল্যাণ্ডের অন্তর্গত কোনো দ্বীপ এলাকা এই দ্বীপ পুঞ্জ গুলি ভারত মহাসাগরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চল ইংরাজ আমলে সাগর মধ্যে এখানের দ্বীপে রাজবন্দীদের নির্বাসন দেওয়া হোতো ,বলা হোতো দীপান্তর বা কালাপানি আন্দামান শব্দটি মালায়াম অর্থ হনুমান, নিকোবরের অর্থ নগ্ন মানুষের জমিএই কালাপানির দেশ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বেশীরভাগ ই জনবসতি হীন ,দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন অংশে রয়েছে গভীর দুর্গম জঙ্গলসেখানে বাস করে হিংস্র আদিবাসীপৃথিবীর আদিম আদিবাসী গোষ্ঠী ফিলিপাইন্সের ইয়েতো আদিবাসী এরা মুলতঃ পিগমি ,মধ্য আফ্রিকার বাসিন্দা, আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জে এদের  কিছু কিছু দেখা যায় , গভীর জঙ্গলে 'জারোয়া 'রা ছাড়াও ওঙ্গি,গ্রেট আন্দামানিজ  সহ বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় রা বাস করে ধারনা এরা আফ্রিকা থেকে প্রথম এশিয়ায় যাত্রা করেএখানে পৃথিবীর বৃহত্তম কচ্ছপের বাস, জায়ান্ট লেদার ব্যাক টার্টলস(দৈত্যাকায় চর্মপৃষ্ঠ বিশিষ্ট কচ্ছপ ) জারোয়ারা থাকে আন্দা মানের দক্ষিণ পুর্বের দ্বীপে এই গাছ তাঁবু তে নিশ্চয় কোনো আদিবাসী বাস করেনা তারা  গাছ-গৃহবাসী নয়, তারা জঙ্গল বাসী নীচেগোলপাতা,শন,বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঘর বানায়এরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হ্রিংস, আধুনিক সভ্যতা থেকে নিজেদের বহু দূরে রেখেছে, সভ্য জগতের মানুষ এদের কাছে এলে বিষ মাখানো তীর দিয়ে মেরেফেলে ভয়েই কেঊ ঘেঁষেনা এরা বিলুপ্ত জাঙ্গিল উপজাতি থেকেই বিভক্ত, এরা দক্ষিন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিনপুর্ব অংশে কাছাকাছি দ্বীপ গুলিতেই আগে বসবাস  করত,
বনের জীব জন্তু
,জঙ্গলের ফল মুল,সমুদ্রের মাছ ও অনান্য প্রাণী খেয়ে জীবন ধারন করে, বৃটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পরে এদের নানা রোগ ভোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমে বিলুপ্ত হতে থাকে, এরা বাইরের সভ্য জগতের লোকেদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলে
আন্দামান নিকোবর দ্বীপ পুঞ্জের ৫৭২টি দ্বীপের মধ্যে ১৩০টি দ্বীপে লোকের যাতায়াত থাকলেওমাত্র ৩৬টি দ্বীপে জন বসতি আছে প্রকৃতির ক্যানভাসে প্রবাল সবুজ জঙ্গল,পাহাড়,নীল সমুদ্রের কোলাজচারদিকে নীল বঙ্গোপসাগরের জল রাশি তার মাঝে গহন সবুজ পার্বত্যময় এই দ্বীপ সমুহ জাপানী বোমায় আর ভুমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ ও বিধ্বস্ত, দূরে দক্ষিন আন্দামানের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউণ্ট হ্যারিয়েটের চুড়া দেখা যাচ্ছে
ম্যানগ্রোভ গাছের মধ্যে মাটি থেকে ২৫/৩০ ফুট উপরে এই তাঁবু ঘর
, অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর দেখি একটা নর-বানর গোছের জীব হঠাত জঙ্গল মধ্য থেকে ওই তাঁবুঘরের নীচে হাজির দুহাতে একটা জালির মতন বস্তা তাতে পাকা বড়বড় কলা, নারিকেল, পাকা পেঁপের মতন ফল ভর্তি , ঐ তাঁবুর নীচে এসে মুখ দিয়ে শিস দেওয়ার মতন শব্দ করতেই তাঁবুর পর্দাটা কিছুটা ফাঁক করে একজন অতি শীর্নকায়
বৃদ্ধ পরনে শত ছিন্ন জামা প্যান্ট যার রঙ বোঝাদায় অতি পুরাতন ময়লা বোঝাযাচ্ছে এই অতিশক্তিশালী দুরবীক্ষন বা পর্য্যাবেক্ষন যন্ত্রে
এই পর্য্যবেক্ষন যন্ত্রে দুরের অতি ক্ষীণশব্দ স্পষ্ট শোনাযায় আমি শুনতে
পেলাম
, নর-বানর টার সাথে এক অজানাভাষায় কথোপকথন হচ্ছে,বৃদ্ধটি খুউব আস্তে আস্তে কষ্ট করে
কিছু বলছেন
, এরপর দেখি ঐ বন্য-প্রাণী না আদিম বন মানুষ টা ফলভর্তি বস্তাটা নিয়ে তর তর করে গাছ বেয়ে ঐ কুঁড়ে ঘরে পৌঁছে গেলো , ঘরের মধ্যে ঢুকে বস্তাটা রেখে আবার গাছ বেয়ে নেমে জঙ্গলের মধ্যে চলে গেলো
আমি  বুঝলাম ওই প্রাণীটা কোনো বন্য জন্তু নয় এখানের নেগ্রেটো  আদিম জন জাতির কোন সম্প্রদায়ের উপজাতি গ্রেট আন্দামানিজ,ওঙ্গি,বা সেন্টিনেলিস জারোয়া শ্রেনীর হবেআদিম এই আদিবাসীরা মানুষের কাঁচা মাংস খায়, নরখাদক উলঙ্গ মাথায় কালো কুচকুচে কোঁকড়ানো চুল,গায়ের রং মিশমিশে কালো, ভয়ঙ্কর চোখের চাহনীএদের চলাফেরা নিঃশব্দ অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে, বিষমাখানো তীর আর ধনুক বা লম্বা ফুঁক নল থাকে যার দ্বারা ওই বিষ তীর ছুঁড়ে শিকার করে বা বাইরের মানুষ কে দেখলেই হত্যা করে এখানে এই তাঁবু ঘরের যে বৃদ্ধ কে দেখলাম তিনি আমাদের সভ্য জগতেরই মানুষ তিনি কি করে কবে এখানে এলেন? কেন ই বা এসেথেকে গেলেন এই নির্জন ভয়ঙ্কর বিপদ সঙ্কুল গহন অরণ্যে ?তাঁর সাথে কি করে এই হিংস্র আদিবাসীর বন্ধুত্ব হোলো? কি ভাষায় কথা বললেন? সম্ভবতঃ এখানের নেগ্রেটা আদিম জন গোষ্ঠীর বিলুপ্ত ভাষা 'বো' তিনি জানলেন কি করে? এই সমস্ত নানা প্রশ্ন আমায় অস্থির করে তুললো, আমি ঠিক করলাম ঐ তাঁবুতে থাকা বৃদ্ধের সাথে দেখা করে সব জেনে নেবো                                   ক্রমশঃ-২

আমি আমার নিজস্ব বানানো মাইক্রো পাব্লিক এড্রেস সিস্টেম টা সাথে নিলাম এটা হেলমেট বা শিরস্তানে লাগানো খুউব জোরালো ক্ষমতা সম্পন্নএবার আমার ভ্রমনযান থেকে বেড়িয়ে আস্তে আস্তে ওই  গাছতাঁবুঘরের দিকে এগুলামঐ তাঁবু ঘরের নীচে গিয়ে ভাবতে লাগলাম কি ভাবে ঊপরে তাঁবুতে ঊঠবো? কিভাবে আলাপ করব? কিভাষায় কথা বলব?
হঠাৎ শুনি তাঁবু ঘর থেকে স্পষ্ট ইংরাজী ভাষায় আমাকে নাম
,কোথা থেকে কেনো এখানে এসেছি? জানতে চাইছেন ঐ বৃদ্ধ
আমিও ইংরাজীতে উত্তর দিলাম, নাম জানিয়ে জানালাম আমি ভারতবর্ষের একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বৈজ্ঞাণিক গবেষনার কাজে আন্দামান নিকোবর এসেছিলাম,চারপাশের দ্বীপগুলিতে নানাপ্রজাতির উদ্ভিদ অর্কিড,বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী কচ্ছপ, কোরালস এর অনুসন্ধান করছিলাম, দুর্ভাগ্য ক্রমে আমার ভ্রমন যানটি বিকল হয়ে যাওয়ায় আমি এখানে এসে আটকে পড়েছি ,এখন আপনার সাহার্য্য ছাড়া আমার ফেরার উপায় নেইআমাকে অবাক করে দিয়ে ঐ বৃদ্ধ জানতে চাইলেন আমি কি ডাক্তার ঊকিল হিসাবে পরিচিত ? আসলে আমি আমার পুরোনাম উপেন্দ্র কিশোর লস্কর বলেছি তাই উনি এই প্রশ্ন টি করলেন, আমি জানালাম হ্যাঁ এবার আমার অবাক হবার পালা উনি আমাকে বললেন,"আমি প্রায় ৪০ বছর এই দ্বীপে আছি আমার হাতে বেশী সময় নেই আমার দিন ফুরিয়ে এসেছে আমি ও গবেষণার জন্য এখানে এসেছিলাম, বহু কিছু বিষ্ময়কর দুর্লভ অমুল্য জিনিষের সন্ধান পেয়েছি আমি এই গবেষনার বিষয় এতকাল গোপন রেখেছি, উপযুক্ত কাঊকে দিয়ে যাবার মত পাইনিআমি আজ তোমাকে পেয়েছি আমি তোমার সমস্ত কার্য্যকলাপ অবগত আছি কারন আমি রোজ  বিবিসি, ভয়েজ অফ আমেরিকা সহ অল ইন্ডিয়া রেডিওর নিঊজ শুনি ,আমার নিজের তৈরী ট্রাণজিস্টর রেডিওতে যা এখানে  বায়োলজিক্যাল ব্যাটারীতে চলেইশ্বর আমাকে তোমার সাথে দেখা হবে বলেই বাঁচিয়ে রেখেছেনআমি জানতে চাইলাম কি করে ঐ তাঁবু তে উঠবো? কোনো সিঁড়িনেইতখন উপর থেকে একটা সরু দড়ির বানানো মই  ঝুলিয়ে দিয়ে বৃদ্ধ ভদ্রলোক আমায় ওটা বেয়ে উপরে আসতে বললেন আমিও তাই কোরলামউপরে তাঁবুতে ঢুকে দেখি চারপাশ অগোছালো ,চালির মেঝেতে শুকনো খড়ের মতন ঘাস পাতা,চাদর বালিশ কিছুই নেই একটা কাপড়ের আর চামড়ার ঝোলা ভর্তি কাগজ পত্র ছোটো ছোটো হোমিওপ্যাথির শিশির মতন শিশি, নারিকেলের খোলা,বাঁশের সরু,মোটা নানা সাইজের নল, হুকার মতন কতকগুলো কি সাজানো রয়েছে বাঁশের গেলাস,মাটির হাঁড়ি, কড়াই, কাঠের হাতার মতন ধারালো নানা রকম লোহার পাত,পাথরের নানা রকম জিনিষ খল, নুড়ি, হামান দিস্তা ভর্তি, ঘরটা জানি এক আয়ুর্বেদ কবিরাজের চিকিৎসালয়, নানা সাইজের কত কাগজের চোঙ্গাএছাড়া কত যে কালো সাদা, হলুদ,মেটে, লাল গুড়া, বটিকা আর তরল ওষুধের শিশি প্যাকেটে ভরা জমা করা আছে কি বলবো?আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলামএকপাশে জমা করা কত রকম লতা পাতা, শিকড় বাকড়,কত মরা কীট পতঙ্গ,হাড় কঙ্কাল ইয়ত্তা নেইএকটা বড় আর দুটো মাঝারি আতস কাঁচ, পোড়া মাটির দুটো তোলা উনাননানা রকম পাথরের টুকরা, পাত্র এছাড়া বহু কাঁচা,পাকা শুকনা ফল ফলের বিচি,রুদ্রাক্ষ, আমলকি, হরিতকি, বহেড়া সহ চেনা অচেনা বহু ভেষজ উপাদান                                                                              
বৃদ্ধ
ভদ্রলোকের বয়স আন্দাজ করা কঠিন তবে ৮০ বছরের কম হবেনা এক মাথা জটপড়া সাদা চুল, লম্বা অগোছালো সাদা দাড়ি পেট অব্ধি, গায়ে শতছিন্ন জামার উপর চামড়ার জ্যাকেট প্যান্টটা তলার দিকটা ছিঁড়ে গেছে জামা, প্যান্ট, জ্যাকেটের আসলরঙ চাপা পড়েগেছে ধুলা ময়লাতে এখন ধুসর কালো একটা আচ্ছাদন মাত্র বৃদ্ধ বললেন তুমি বাঙালী আমিও বিখ্যাত এক আয়ুর্বেদ কবিরাজ গঙ্গা প্রসাদ সেনের পরিবারের বংশধর, আমার নাম দীননাথ প্রসাদ সেনআমি রায় বাহাদুর স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কর্ণওয়ালিস স্ট্রীটে নিজ বাস ভবনে যে Brhhmachari-Research Institute স্থাপন করেছিলেন সেখানে আমিও কতকটা স্যারের গবেষণা বিষয় Studies in Haemolysis মতন বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলাম ,স্যার  Urea Sibamine(Carbostibamide) যা এন্টিমনিঘটিত যৌগের প্রকৃত কার্য্যকরীবিকল্প,১৯২২ সালে আবিস্কার করেন ,কালাজ্বরের চিকিৎসায় লাগেআমি চেয়েছিলাম প্রাচীন আয়ুর্বেদ,ইউনানী,সিদ্ধ ও নানা ধরনের লোকজ চিকিৎসা পদ্ধতি তে উন্নতি সাধন ঘটিয়ে এই রকম বেশ কিছু দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক ও ঔষধ বের করার, আমি কাশিম বাজারের মহারাজা স্যার মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দীর আনুকুল্যে স্থাপিত গোবিন্দ সুন্দরী আয়ুর্বেদিক কলেজে থেকে অধ্যয়নকরি ,সেখানে পশ্চিমা চিকিৎসা বিদ্যা ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র একই সাথে পড়ানো হোতো তখন পশ্চিমবঙ্গে কুমারটুলি ও মুর্শীদাবাদ ছিলো ঔষধ প্রস্তুত করার জন্য  , নাড়িদেখা আর রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো ১৯শতকের গোড়া থেকেই ইউরোপীয়দের মধ্যে এই সমৃদ্ধ ভারতীয় চিকিৎসা বিদ্যার গুনাগুন,এর দীর্ঘ কালের প্রাচীন মহিমা মণ্ডিত ঐতিহ্য জানার জন্য ব্যকুলতা দেখা যায়
১৮৩৫ সালে কলিকাতায় মেডিক্যাল কলেজস্থাপিত হওয়ার পর আয়ুর্বেদ শিক্ষার উপযুক্ত বই এর অভাব দেখা দেয়
, প্রাচীন ভারতে কণিষ্কের চিকিৎসক'চরক' এর নামে আয়ুর্বেদ বিদ্যা শাস্ত্রে  'চরক- সংহিতা' মুল সংস্কৃত ভাষায় লেখা হলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিদেশী ভাষা যেমন,আরবি,গ্রীক, ল্যাটিন
অনুদিত হয়
শ্রদ্ধেয় গঙ্গাধর প্রসাদ রায় প্রাশ্চাত্ব চিকিৎসা পদ্ধতি সংশ্রব ব্যাতিরেকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি র আদিবিশুদ্ধতা রক্ষার পক্ষবাদী হলেও তাঁর সমসাময়িক গঙ্গাপ্রসাদ সেন প্রাশ্চাত্ব চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতির একটা সমন্বয় করেন পরবর্তী কালে ১৯১৬সালে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ কলেজ হাসপাতাল স্থাপিত হলে এখানে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের শিক্ষার্থীদের প্রাশ্চাত্ব এনাটমি,ফিজিওলজি, শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি ও ধাত্রী বিদ্যার বিষয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হোতোচরকের মেডিসিন বিষয়ক 'চরক-সংহিতা আর সুশ্রুতের শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়ক 'সুশ্রুত- সংহিতা'জানিনা এখনও কলেজে এগুলো পড়ানো হয় কি না?চরক সংহিতায় শরীরের নানা আভ্যন্তরীন ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড(ফিজিওলজি) ,রোগের উৎপত্তি ও কারণ (ইটিওলজি ) ,ভ্রুণ তত্ব(এন্থ্রপলজি), হজম প্রক্রিয়া(ডাইজেশন),বিপাক প্রক্রিয়া (মেটাবলিজম) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা(ইমুনিটি) সহ শ্রেণীবদ্ধভাবে শরীর বিষয়ক প্রায় সকল বিষয়ে আলোচনা আছেআমি দুটি বইএর টীকাসহ অনুবাদ করেছি তোমাকে দিচ্ছি
জেনেটিক্সের একেবারে প্রাথমিক পর্য্যায়ের ধারনার সন্ধান এই সংহিতায় আছে
সংহিতায় মোট আটটি
অংশ
,১২০ টি অধ্যায়১২০০০শ্লোক,২০০০হাজারের অধিক ঔষধের বর্ণনা আছেশরীরের সকল অংশের
অসুস্থতা নিরাময়ের জন্য প্রাকৃতিক ঔষধ নির্ভরচিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা আছে
আমি জানি তোমার আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি আছে তাই তোমাকে এতো বিশদে জানাচ্ছি, আয়ুর্বেদ শিক্ষায় বাংলার অবদানের কথা, এটা জানা দরকার                                                                         ক্রমশঃ-৩
আমি আয়ুর্বেদ ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার জন্য আদর্শ পরিবেশ আন্দামান নিকোবর দ্বীপ পুঞ্জকে বেছে নিয়েছিলাম তাই আমি আমার এক দক্ষিণী বন্ধু ভেনুগোপাল পিল্লাই এর সহায়তায় বিশাখাপত্তনম থেকে মালবাহী জাহাজে চেপে আন্দামানের পোর্টব্লেয়ারে উপস্থিত হলাম এখানে আমার স্কুলের সহপাঠী গোপীনাথ বিশ্বাস এর দেখা পেলাম ও তখন স্থানীয় একটা ঠিকাদারী সংস্থা যারা এখানে জাপানী সেনা বাহিনীর অধীনে রাস্তা ঘাট পানীয়জলের ব্যবস্থা রক্ষনাবেক্ষন তদারকির কাজ কোরছিলো, কিন্তু ১৯৪৫ সালে মিত্রবাহিনীর হাতে জাপানের পরাজয় ঘটলে এই দ্বীপ সমুহ চলে যায় সাম্রাজ্য বাদী বৃটিশ বাহিনীর হাতে.১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই এই দ্বীপপুঞ্জ সমুহের মালিকানা আসে ভারতের হাতেকেন্দ্রা শাসিত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হয় ,এখানের শাসক, একজন মেজর/লেঃজেনারেল  পদ মর্য্যাদার অফিসার আমার এই বন্ধু গোপীনাথ অনেক বছর এই আন্দামানে আছ্‌ চারপাশে অনেক কিছুই তার জানা নখ দর্পনে তার মুখেই জানলাম এখানে ৫৭২টি দ্বীপের মধ্যে ৩৮টি দ্বীপে মানুষ বাস করে,আন্দামান নিকোবর দ্বীপ পুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে শুধু পাখীদের বিচরণ,সেই পাখির মল জমে স্তুপীকৃত হয়ে পাহারের মতন হয়ে আছে, এগুলির উন্নত জৈব সার হিসাবে প্রবল চাহিদা ১৯টি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে নিকোবর দ্বীপ পুঞ্জ,এখানে পর্য্যটকদের জন্য নানা বিলাস বহুল ব্যবস্থা এমন কি উন্নত পর্ণ কুঠির আছে যা গোলপাতা,শন,বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানোএই দ্বীপ সমুহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে যেমন মনোরম,তেমন উদ্ভিদও প্রাণী কুলে পরিপুর্ণ এক সুবিশাল ভাণ্ডারএই দ্বীপের বন্যপ্রাণী,পাখি,মাছ,প্রবাল এর বিপুল সমাবেশ পৃথিবী বিখ্যাত যেমন, গ্রেট নিকোবর, কচল দ্বীপ উষ্ণ-ক্রান্তীয় জলবায়ু এখানে বিপুল প্রজাতির বৃক্ষ সমুহের দ্রুত বেড়ে ওঠার অনুকুলএখানের অর্কিড ব্যাপক বৈচিত্র পুর্ণ আকর্ষনীয় এই দ্বীপের প্রকৃতিজাত উদ্ভিদ প্রাণীকুল বহুকাল ধরে উদ্ভিদ প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে এক মহানআকর্ষনীয় বিষয়এই জন্য বিশ্বের বিপুল সংখ্যক বিজ্ঞানী আকৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর এখানে আসেনআমি ঠিক করলাম আমি দ্বীপপুঞ্জ গুলোতেই আমার গবেষনার জন্য যাবোআমি আমার এই অভিযান গবেষনা একান্ত গোপনে চালানোর সিদ্ধান্ত নিই ছোটো ডোঙার মতন বোট জোগার করে রাতের অন্ধকারেই মুল আন্দামান ভূখন্ড ছেড়ে নিকোবরের অজানা দ্বীপ পুঞ্জের দিকে যাত্রা করিআবহাওয়া অনুকুল থাকায় প্রথম দুদিন কোনো অসুবিধা হোলো না কাছা কাছি ছড়িয়ে থাকা ছোটো ছোটো  দুটো দ্বীপ ঘুরে দেখলাম, জন বসতি শূন্য, তেমন কোনো বড় বন্য প্রাণী চোখে পড়েনি, সমুদ্র উপকুলে সারি সারি নারিকেল আর সুপারি গাছ, পিছনে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল তৃতীয় দিন বিকালের দিকে আকাশ কালো করে ভীষন ঝড় ঊঠলো সমুদ্র উত্তাল হয়ে ঊঠলো,শোঁ শোঁ করে প্রবল এলোমেলো হাওয়া বইতে লাগলোআমার ডিঙি কোথায় ভেসে চললো জানিনা, চারিদিক অন্ধকার হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে ডিঙির সাথে কিসের ধাক্কা লাগলো জানিনা আমার ডিঙি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো আমি প্রাণপনে আমার সঙ্গের জিনিস পত্রের পুটুলি আঁকড়ে ধরে জলে পড়ে গেলাম, তারপর আর কিছু মনে নাই জ্ঞান যখন ফিরলো তখন আমি একটা অজানা দ্বীপের উপকুলে বিস্তৃর্ণ সমুদ্র তটে  পড়ে আছি একটু দূরে আমার পুটুলীটা পড়ে আছেঅসম্ভব গা হাত পায় ব্যাথা,মাথার যন্ত্রণায় চোখ খোলা যাচ্ছেনাআবার চোখ অন্ধকার হয়ে এলো জ্ঞান হারালামকতক্ষন অচৈতন্য ছিলাম জানিনা এরপর যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম দেখি সবে সুর্য্য উঠছে, আকাশ লাল,কমলা, সোনালী ছটায় ভরে গেছেকিচির মিচির করে কত পাখ পাখালীর আওয়াজ চারপাশেআমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারছিনা অসম্ভব যন্ত্রণা সারা শরীরে, আবছাদৃষ্টিতে দেখি জঙ্গলের মধ্য থেকে দুটো  শিম্পাঞ্জির মতন দেখতে বন মানুষ না প্রকৃত মানুষ ? আমার দিকেই হেঁটে আসছে হাতে তীর ধনুক যখন রয়েছে, এরা এখানকার আদিবাসী, কোন সম্প্রদায়ের? বুঝতে পারছি না আমার জানা কোনো সম্প্রদায়ের নয়, গোপীনাথ বলেছিলো এখানের জঙ্গলে পিগমি সম্প্রদায়ের খুউব অল্প সংখ্যক আদিবাসী আছে তারা জন সমক্ষে আসেনা,জারোয়াদের মতন এরাও জন সমাজ থেকে নিজেদের বিছিন্ন করে জঙ্গলেরমধ্যে বাস করে তবে এরা জারোয়াদের মতন অত হ্রিংস নয় এরা লোক জন এড়িয়ে চললেও চট করে কাঊকে আক্রমন করেনা এরাও বিলুপ্ত প্রায় গোষ্ঠীএদের হালচাল চলন সব কিছুই অজানা এরা জারোয়া বা ওঙ্গিদের মতন সম্পুর্ণ উলঙ্গ নয়, কোমর থেকে গাছের শিকড় দিয়ে একটা গাছের ছালকে সামনে ল্যাঙটের মতন ঝুলিয়ে রাখে উপরের অংশ সম্পুর্ণ অনাবৃতএদের মোট সংখ্যাটা অজানাজঙ্গলের ফলমুল ছাড়া এরা বন্য জন্তু, সমুদ্রের জীব  শিকার করে, এরা কাঁচা বা পুড়িয়ে খায় এরা ক্রমশঃ আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে প্রথমে ভয় পেলেও বুঝলাম আমায় আক্রমণ করবেনা                                          
আমার একদম কাছে এসে হেঁট হয়ে একজন আমাকে ভালো মতন খুঁটিয়ে দেখলো তারপর কি অদ্ভুত ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করে আবার জঙ্গলের দিকে তারা চলে গেলো ,প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে দেখি আবার ঐ দুজন আমার কাছে আসছে একজনের হাতে মাঝারি বাঁশের ঝুড়ি তাতে অনেক রকম ফল, কলা,পাকা পেঁপে, পেয়ারার মতন,জামের মতন কত কি? অন্য জনের হাতে তালপাতার মতন কোনো পাতার তৈরী চারচৌকো টুকরি তাতে একটা মাটির গেলাস জল ভর্তি,নানা রকম শিকড় বাকড়,একটা ছোট মাটির প্রদীপের মতন পাত্রে তেল জাতীয় কিছু আর লাল-হলুদ সাদা তিন রকমের কিছু বাটা এবার ওরা কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে প্রথমে আমায় খাবার ফল গুলো এগিয়ে ইশারায় খেয়ে নিতে বলল আমার খুউব খিদে পেয়েছিলো সব রকম ফল গোটা কয়েক খেলাম, এবার মাটির গেলাসের জল টা খেলাম এরপর ওরা দুজন সাবধানে আমাকে তুলে বসালো  মাথায় হাত দিয়ে দেখলো গায়ে জ্বর আছে কিনা, নাড়ি টিপে দেখলো, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমার কপালে, হাতে পায়ে  লাল,হলুদ,সাদা গুড়ি গুলো তেলে মিশিয়ে সারা গায়ে হাত পায়ে মালিশ করে দিলো ঠিক ম্যাসাজের ভঙ্গিতে মুহুর্তে সব ব্যাথা বেদনা ক্লান্তি দূর হয়ে গেলোতারপর ওদের মধ্যে একজন ভাঙাভাঙা অশুদ্ধ ইংরাজীতে জানালো যে  কিছুক্ষন বাদে ওরা আবার আসবে, থাকার মতন একটা ব্যবস্থা আপাতত করে দেবে, ফল মুল কাঁচা সব্জী টমাটো,শশা ,জঙ্গলের শাক খেয়েই থাকতে হবে, মোষের দুধ কাঁচা দিয়ে যাবে,মাটির সরাতে গরম করে নেওয়া যাবে, স্থানীয় জঙ্গলে এক রকম গাছের পাতা কে চায়ের মত খাওয়া যায় আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানালাম ইশারায় আর ইংরাজীতে ,ওরা বুঝলোঘন্টা দুয়েক বাদে দেখি ওই দুজন একটা গাছের ডাল দিয়ে বানানো বড় চালিতে করে স্তুপীকৃত ডাল পালা শনের মতন আর শিকড় দিয়ে বানানো দড়ি নিয়ে হাজির, বুঝলাম আমার থাকার চালা বানাবে, আমি বোললাম আমার সাথে ভালো তাঁবু আছে, কোথায় টাঙাবো ?  উত্তরে ওরা জানালো নীচে তাঁবু টাঙানো খুউব একটা নিরাপদ নয়,বিষধর সাপ, পোকা মাকড় নীচে চলাফেরা করে বালির মধ্যে বহু কিছু থাকে, এখানে তাই গাছের উপর মাচা বানিয়ে তার উপর তাঁবু,পাতার ছাওয়া চালা ঘর বানানো যায়, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে এমনি ঘর বানিয়ে দিলো জঙ্গলের মধ্য, সমুদ্র সৈকতের থেকে বেশী দূরে নয় যাতে সমুদ্রে নজর রাখা যায় আমায় ওই তাঁবু ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেলো ওঠা নামার জন্য দড়িআর শিকড়ের শক্ত সিঁড়ি তাঁবু থেকেই তোলা নামানো করা যায় রোজ সকাল বিকেল আমার খোঁজ খবর রাখে খাবার দাবার পোঁছে দিয়ে যায়,আস্তে আস্তে আমাকে খাবার জলের নদী, ঝরনা, ফলের বাগান সব চিনিয়ে দিতে লাগলো,আমি এখানে সব কিছুর সাথে আস্তে আস্তে পরিচিত হয়ে গেলাম,আমি গ্রেট আন্দামানিজ দের ভাষা 'বো' একটু একটু শিখে রপ্ত করতে লাগলাম ওরা আমার কাছে রোজ দু জনে আসে অথচ ওদের বাসস্থানে আমার যাওয়া মানা
ওরা এই দ্বীপে সাকুল্য .৪জনা আছে ওদের আর কেঊ এখানে নেই এরাও আমার মতন একদা মুল গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড থেকে  সমুদ্রে মাছ ধরতে এসে ঝড়ে ভেসে এই দ্বীপে চলে এসেছে আর ফিরে যেতে পারিনি
, বহুদিন হয়ে গেছে এখানেই একটা ঘর সংসার হয়ে গেছে এই পরিবার টাই এখানের এক মাত্র বাসিন্দাএরাও প্রাচীন নেগ্রেটা উপজাতির গ্রেট আন্দামানিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়ে কিন্তু আকৃতিতে  এরা বামনাকৃতি পিগমি ই রয়ে গেছে    নিকোবর আইল্যাণ্ডে পর্য্যটকরা আসে তাই গ্রেট আন্দামানিজদের অনেকেই নানা ভাষা তামিল,তেলেগু,ইংরাজী শিখেছে একমাত্র এখনও জারোয়া উপজাতীরা গভীর জঙ্গলে বন্য জীবন কাটায়‌,হিংস্র রয়েই গেছে, তারা সভ্য জগতের মানুষদের বিশ্বাস করেনা দেখলেই হত্যা করে রক্ত পান করেএই জঙ্গলে কোনো জারোয়া নেই তাই রক্ষেগ্রেট আন্দামানিজ আর ওঙ্গি রা বর্তমানে অনেকেই সভ্য জগতের সাথে নিজেদের কে পরিচিত করিয়ে চাল চলন বদলাচ্ছে এখন আর তাদের সেই বন্য ভাব নেই তবে জারোয়ারা এখনো অপরিবর্তীত রয়ে গেছেজারোয়ারা ঝাড়ফুঁক,মন্ত্র,তন্ত্র, ডাকিনী প্রেত,তুক তাকে বিশ্বাসী অন্য দিকে গ্রেট আন্দামানি্জ আর ওঙ্গিরা এখন আর এইসব ততটা বিশ্বাস করেনা কিন্তু প্রাচীন কাল থেকে যে লতাপাতা,শিকড় বাকড়,ভেষজ প্রাকৃতিক ঔষধ নির্ভরচিকিৎসা পদ্ধতি তাদের মধ্যে চালু আছে তা আজ অব্ধি মেনে চলেআমি বহু লতা পাতা ভেষজ উপকরণ চিনেছি দেখেছি তাদের ঔষধি গুনাগুন, ,চমৎকৃত হয়েছি এর আশ্চর্য ফলা ফল দেখেআমি এদের কাছ থেকে বহু কিছু জেনেছি শিখেছি আমিকিছু কিছু খাতায় লিখে রেখেছি সবটা সম্ভব হয়নি আমি হঠাৎ করে বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়েছি আর সময় নেই তোমাকে খাতাটা দিয়ে দেবো দেখো যদি তুমি আরো কিছু মুল্যবান জিনিসের সন্ধান পাও আমি ঘ্রানশক্তি,শ্রবণ শক্তি আর দৃষ্টি শক্তির প্রভুত ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ তৈরী করে ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি আমি ৫কিলো মিটার দুরের কোনো অতি ক্ষুদ্র জিনিস কে খালি চোখে দেখতে পাই,ঐ দুরত্বে কোন বস্তুর ঘ্রাণ ও মৃদু শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাই, এ সব ই ভেষজ লতাপাতা ঔষধের গুনে শরীরের ব্যাথা,বেদনা ক্লান্তি অবসাদ সব নিমেষে দূর হয়ে যাবে এমন ঔষধি ও আছে আমি তোমাকে সব উপকরণের নমুনা প্রস্তুত করার নিয়ম বিধি প্রকরণ সব দিয়ে দেবো রেডি আছে, অপেক্ষায় ছিলাম কবে উপযুক্ত কেঊ এখানে আসবে?তার হাতে তুলে দিয়ে আমি শান্তি পাবো আমার এত দিনের পরিশ্রম গবেষনা স্বার্থক হবে ! আজ সেই ক্ষন উপস্থিত হয়েছে তুমি ঠিক উপযুক্ত লোক আমি জানি
এরপর দীননাথ বাবু আমার হাতে একটা মাঝারি প্যাকেট পাতলা বাঁশের বাতার তৈরী আর গাছের পাতায় মোড়া মোড়ক আমার হাতে দিয়ে বললেন এর মধ্যে খাতায়লেখা আর সব কিছুর নমুনা আছে অসুবিধা হবেনা আমি এখানের আদিবাসীদের সামনে দিতে পারবোনা তুমি নীয়ে চলে যাও ওদের সাথে সামনা সামনি না হওয়াই ভালো ওরা এটা ভালো ভাবে নেবে না আটকে দিতে পারে
আমি ওনার কথা মতন ঐ প্যাকেট নিয়ে আমার 'ত্রিলোক বিহারী' তে ফিরে এলাম ওখান থেকে তাঁবু ঘরের উপর লক্ষ্য রাখছিলাম, বিকালের দিকে দেখি ঐ তাঁবুতেএকটা  ফল মুল নিয়ে  আদিবাসী দুজন এলো  তাঁবুতে ঢুকেই একটা অস্ফুট করুন কান্নার মতন আওয়াজ পেলাম তারপর দেখলাম দীনবন্ধু বাবুর অসার নিস্পন্দ দেহ টা দুজনে ধরে দড়ি বেঁধে নীচে নামালো, তারপর দেহটা সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে গিয়ে জঙ্গলের থেকে শুকনো কাঠ ডাল পালা এনে ছড়িয়ে তার উপর দীনবন্ধু বাবুর দেহ টা শোয়ালো এইভাবে মৃত দেহ টা সজানোর পর একজন দ্রুত জঙ্গলের মধ্য দিয়ে কোথায় চলে গেলো প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে ঐ লোক টা সাথে আরো দুজন একজন মহিলা অন্য জন অল্প বয়সের বাচ্চা ছেলে না মেয়ে বোঝা যাচ্ছেনা বছর ৭/৮ এর হবে, ওই লোক টার হাতে জ্বলন্ত মশাল, ওরা তখন কাঠের উপর    সাজানো মৃত দেহ টার কাছে গিয়ে সবাই প্রথমে কাঁদলো তারপর এক জংলী গানের করুন সুরে গান গাইতে গাইতে মৃত দেহ টা প্রদক্ষিন করলো শেষে মশাল দিয়ে সাজানো চিতায় আগুন দিয়ে দিলো
যতক্ষন মৃত দেহটা পুড়লো ওরা হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলো
, পোড়ানো শেষে মাটির কলসী করে সমুদ্রের জল এনে ধুয়ে দিলো  একটা গাছের ডাল পুঁতে দিলো ঐ পোড়ানোর জায়গায় ওরা রাতের মধ্যেই তাঁবু ঘর খুলে যাকিছু ছিলো সব নিয়ে চলে গেলো একদম পরিস্কার শুধু বড় বড় গাছ খাড়া দাঁড়িয়ে এখানে যে কোনো তাঁবু ঘর ছিলো তার চিহ্ন রইলোনাআমি প্রকৃত জায়গাটা বুঝতে পারলাম না ৫৭২ টা দ্বীপের মধ্যে এটা কোন টা ? আমি রাতে ই রওনা দিলাম আমার ঝাড়্গ্রামের বাংলো উন্মেষের উদ্দ্যেশে

No comments:

Post a Comment