Daktar Ukil jethur diary theke
Updated about a week ago
আকাশ যানে বিপদ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ যে কাহিনীটির
উল্লেখ করছি এটি ডাক্তার উকিল জেঠুর কাছ থেকে পাওয়া ডায়েরী থেকেই উদ্ধৃত। ডায়েরীতে লেখাটি অত্যন্ত
তথ্য বহুল আর ইতিহাসের মতন সন তারিখসহ উচ্চ কারিগরী পদার্থ বিদ্যার আলোচনা,হিসাব,অংকন, সংকেতেই ভর্তি, যথা সম্ভব সেগুলি বাদ দিয়ে ,আর যেমন যেমন লেখা
ছিলো ঠিক সেই মত ই উদ্ধৃত করলাম। কারন ঐ শিক্ষা মুলক আলোচনা গল্প হিসাবে সুখ পাঠ্য নয় তাই বাদ
দিলাম ,এই লেখাটা অনেকের কাছে তত্ত্বের কচ কচি মনে হতে পারে আমায় ক্ষমা
করবেন।
আজ তিন মাস যাবৎ
অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁচেছি। ত্রিমাধ্যমে ( জল,স্থল,অন্তরীক্ষ) বিচরণক্ষম যান প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছি।আমার কাঙ্খিত এই যানটি বানানোর জন্য আমি দিবারাত্র ব্যস্ত ছিলাম, এটাই আমার ধ্যান জ্ঞান।এখন এটা জলে,স্থলে,অন্তরীক্ষে সমান ভাবে স্বছন্দে বিচরণ করতে পারবে অথচ এটা অদৃশ্য থাকবে লোকচক্ষুতে
যা কোনভাবেই কোন যন্ত্র পরীক্ষক, তরঙ্গ,শক্তি দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভবপর হবেনা। ইতি মধ্যে আমি ছোট
খাটো এই রকম অদৃশ্যপ্রায় বা কোন নির্ণয়ক যন্ত্রে ধরা পড়েনাএমন বহু যন্ত্র প্রস্তুত
করেছি। আসলে আমি এক ধরনের রঙ আর পদার্থ বানিয়েছি যা সমস্ত শক্তি-তরঙ্গকে প্রাথমিক ভাবে
শোষন করে তারপর অপর পৃষ্ঠ বা তল দিয়ে নির্গত করে দেয় ফলে ঐ পদার্থের মোড়কে কিছু থাকলে
তা কোন ভাবেই কোন রশ্মি বা তরঙ্গ নির্ণয়ক দ্বারা চিহ্নিত করা যায়না, ধরা পড়েনা। এখনে সৌর শক্তিকে বেশী মাত্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করে এমন একটা ছোট মহাকাশ
যান বানানো বেশ পরিশ্রম ছিলো, যাক কাজ হয়ে গেছে।আমি সৌর শক্তিকে বিপুল ভাবে শক্তির ভাণ্ডার হিসাবে ব্যবহার করতে
চাইতাম,সব কিছুই চলবে সৌর শক্তিতে-তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর শক্তির
সংগ্রাহক ,সঞ্চয় ব্যবস্থা আর শক্তির রুপান্তর ঘটানোর যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি
তৈরী করতে, গবেষণায় ব্যস্ত ছিলাম। কিভাবে করা যায় ?ছিলো এক মাত্র চিন্তা।
১৯০৪ সালে আচার্য্য
জগদীশ চন্দ্র বোস প্রাকৃতিক গ্যালেনা (Galena) ও অন্য পদার্থ রেডিও প্রস্তুতে ব্যবহার করেন (Cats-whisker
detector),১৯০৬ সালে LED (Light Emiting Diode) আবিষ্কার আমাকে পথ দেখায়। আর মহামান্য আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ
ক্রিয়া ১৯০৫ সালে যে নুতন দিগন্তের সন্ধান দেখায়, তার ভিত্তিতে ১৯৫১ সালে প্রথম সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড
-১ উৎক্ষেপনে।ইতিমধ্যে
১৮২১ সালে বার্লিনের বৈজ্ঞানিকের পেলশিয়ার সিবেক ক্রিয়া থেকে Thermo
electric effect, Auto thermo electric Generator(ATGs), polymerise chain
reaction(pelter effect) Radio isotopes , Hyper physics(semiconductor cocepts) জন্ম নেয়।
আমি সৌর বিদ্যুৎ কোষ,আলোক বিভব ক্রিয়া (photo Voltaic Effect) ব্য্যবহারের
জন্য আমি সম্প্রতি যে কয়েকটা বিশেষ ধাতু সংকর প্রস্তুত করেছি, তার মধ্যে ১)ফস্পো গ্যলিনিয়াম জারমিনেট ২)সিলিকো সেলিনিয়াম আরসিনেট ৩)কিউপ্রো
ফেরাম জিঙ্কেট ৪)ম্যাগ্নেসিয়াম কন্সট্যানটাইন বোরেট বিশেষ উপযোগী হয়েছে ।
আমি এখানে একটা বিশেষ জিনিষ লক্ষ্য
করলাম, আমার তৈরী এই বিশেষ ধাতু সংকর মধ্যে
যে কোন দুটির মধ্যে Thermal Energy Conversion / Thermo ElectricPower ক্ষমতা অনেক বেশী ।যেটা আগে অন্যনেকটাই অল্প ছিলো । এই ধাতু সংকর মধ্যে
যকোন দুটিকে একত্রিত করে তার এক পৃষ্ঠ কে উত্তপ্ত করলে অপর ধাতু সংকরের পৃষ্ঠটি তত
ঠাণ্ডা হয়ে যায়, ফলে একাধারে এটিকে কোন
বস্তুকে ঠাণ্ডা করার কাজে যেমন ব্যবহৃত হবে সেই সাথে তড়িৎ উৎপন্ন হবে।সুর্য্যের আলো আর তাপ
শক্তি থেকে প্রভুত অন্য শক্তি যেমন তড়িৎশক্তি ,যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যাবে।
আমি ডোপায়নের মাধ্যমে বেশ কিছু অর্ধপরিবাহীর
ক্ষমতা,বৈশিষ্ট অভাবনীয় ভাবে বদলে
দিতে সক্ষম হয়েছি। কিছুদিনের
মধ্যেই বানানো এই যানটি নিয়ে পরীক্ষামুলক সফরে বেরুবো।
আজ আমার তৈরী যানে করে পাড়ি জমালাম
মহাকাশে ,তবে গতি নিয়ন্ত্রিত করা
আছে যাতে যান টি পৃথিবীর অভিকর্ষজ আকর্ষণ ছাড়িয়ে মুক্তি বেগ না পেয়ে যায়, তাহলে ফেরা মুস্কিল হয়ে যাবে।মুহুর্তের মধ্যে মহাশূণ্যে
পৌঁছে গেলো আমার এই নভঃযান। এবার
গতি নিয়ন্ত্রন করে আবর্তন শুরু করলাম ,পৃথিবীর
চারপাশে।আমি
সবার কাছে অদৃশ্য থাকলেও আমার কাছে সব ই দৃশ্যমান।আমার পথ নির্দেশক যন্ত্রে
আমি আমার অবস্থান জানতে পারছি, মহাকাশে
আতঙ্ক কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole)। আমার কাছে পুরো
তথ্য নেই শুধু জানি বাড়মুডা ত্রিভুজের অন্তর্গত মহাকাশে এমন অনেক কৃষ্ণ গহ্বর (Black
Hole) আছে।আমি সতর্ক দু চক্কর মেরে নেমে যাবো আমার
উৎক্ষেপন কেন্দ্র ঝাড়্গ্রামে।
কিন্তু একি বিপদ পুরো এক চক্কর এখনো
হয়নি সামনে একটা প্রকাণ্ড অগ্নিগোলক বিপুল গতিতে এসে ধাক্কা মারলো আমার মাহাকশের যানে,
বিকট শব্দ, তারপর দেখি আমার এই যানে ডিসপ্লেসিস্টেমে
গণ্ডগোল, কোথায় আছি? পৃথিবী থেকে কতোটা
উপরে তাও জানিনা, কিছুই বুঝতে পারছিনা।বাইরেটাও অন্ধকার।হঠাৎ গোঁও করে সামান্য
একটু ঝাঁকুনি দিয়ে যান টা উল্টো দিকে যেতে শুরু করলো কিছুটা গিয়ে নীচের দিকে,
আমি আতঙ্কিত, এভাবে চললে আকাশে কোন বিমানের অন্য
মহাকাশ যানের সাথে ধাক্কা লাগাও অসম্ভব নয়।এখনি মাটিতে নামা দরকার
কিন্তু কি ভাবে নামবো কোথায় নামবো?যানের
ভিতরে আলো জ্বলছেনা কেবল মাত্র আপৎকালীন জরুরি ব্যবস্থা ,ইঞ্জিন
রুমে আলো জ্বলছে। আমার
সাথে সুপার পাওয়ার টর্চ/স্পট ল্যাম্প আছে। বটম ভিউ ফাইণ্ডার উইন্ডো দিয়ে টর্চ
জ্বালিয়ে নীচের দিকে চেয়ে আতঙ্কে বুক শুকিয়ে গেলো অনেক নীচে নীল সমুদ্র মতন দেখা যাচ্ছে।কিন্তু কোন সমুদ্র
? কিছুই বোঝার উপায় নেই, চারপাশেই জল আর জল,
বুঝলাম এখানে রাত নেমেছে, আবার যান টা বেশ গতিতে
নীচে নামছে এক্ষুণি সমুদ্রে আছড়ে পড়বে।তার পর কি ঘটবে?যান টা কি আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে? এটা যদিও বিশেষ ভাবে
প্রস্তুত আঘাত ঘর্ষণ সইতে পারার কথা।কিন্তু আজ এটা যে অদ্ভুত ব্যবহার করছে আমি
তাতে ভীত আস্থা হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপর?
-------------
একটা প্রচণ্ড আওয়াজ সাথে ঝাঁকুনি বুঝলাম
সমুদ্রে আছড়ে পড়েছে, আমি ইঞ্জিন রুমে ইমারজেন্সী
ব্রেক ধরেই ছিলাম ছিটকে পড়লাম যান টা ডুবতে শুরু করেছে আমি কোনো রকমে উঠে লিভার ঠেলে
মহাকাশ যান অপশন থেকে ডুবো জাহাজ অপশনে নিয়ে গেলাম ওমা দেখি যান টা এবার ঠিক চলতে শুরু
করলো। জলের
তলায় দেখার সব ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলো আপনা আপনি। অক্সিজেন জেনারেটর
সমুদ্রের জল থেকেই অক্সিজেন তৈরী করে যানের অভ্যন্তরে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা রক্ষা
করতে লাগলো। কিন্তু
জলের মধ্যে আমি কি দেখছি? এটা কোথায়?
আমার সামনে ঘন নীল জল তার মধ্যে বিশালাকায়
সব জন্তু একটারও নাম পরিচয় জানিনা কখনো কোথাও ছবি,তথ্য পাইনি। পৃথিবীতে
কেঊ জানে বলেও মনে হয়না। এ
সব অজানা,সমুদ্রের নীচে এক অজানা
জগৎ । সামনে
প্রকাণ্ড তিমি মাছের মত জন্তু চারটে পা কচ্ছপের মতন মুখটা গণ্ডারের মত। ওপাশে একটা সিহর্স
আর স্টার ফিসের মিলিত পেল্লায় জন্তু। জলজ উদ্ভিদ গুলো অস্বাভাবিক,
খুউব সুন্দর। রঙ বেরঙের ফুল জানিনা এগুলো জলজ উদ্ভিদ
না প্রাণী কারন জলের নীচে এমন সুন্দর সুন্দর দেখতে ফুলের মতন প্রাণীও হয় তারা আবার
ভয়ঙ্কর বিষাক্ত হয়। এমন
কি হিংস্র মাংসাসীও হয় ।এই
জন্য ই স্কুবা ড্রাইভিং করার সময় সতর্ক করে দেওয়া হয় যাতে ফুল দেখে আকৃষ্ট হয়ে কেউ
বিপদে না পড়ে।আমি
যানের গতি খুউব কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে সব খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। জলের নীচেও দেখি
বিশাল বিশাল পাহাড়, গাছপালা রয়েছে। বড় বড় পাখনা ওয়ালা
সাপ দেখলাম। আমি
যখন এই সব দেখতে বিভোর আবার প্রচণ্ড ধাক্কা বুঝে উঠলাম না কিসের সাথে চারপাশে কোন পাহাড়
গাছপালা ছিলোনা তাহলে কোন জলজ প্রানী অতিকায় কোন জন্তুর সাথে হবে।এই ধাক্কায় আবার বিভ্রাট
ডুবোজাহাজ দিকবিদিক শূন্য ঊর্ধ গতিতে ছুটে চলতে শুরু করলো কোন দিকে জানিনা। কত ক্ষন কত ঘণ্টা
কিছুই জানিনা। আমি
জ্ঞান হারিয়েছিলাম।আমার
যানের কি হোলো? আমাকে অচৈতন্য অবস্থায়
আটলাণ্টিক মহাসাগরের এক অখ্যাত দ্বীপের উপকুলে পড়ে থাকতে দেখে একটি বাণিজ্যিক পণ্যবাহী
জাহাজ উদ্ধার করে।সাতদিন
বাদে জ্ঞান ফেরে ,তখন আমি আফ্রিকামহাদেশের
নামিবিয়ার উইণ্ডহক (Windhock) এর শহরের হাসপাতালে শয্যাশায়ী চিকিৎসা
চলছে যমে মানুষে টানাটানি, আমি বেঘোরে ভুলবকেছি অনর্গল। মহাশূণ্যে অগ্ন্যুপাত-জলের
তলায় ডাইনোসর ।আমি
চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে প্রায় মাস খানেক বাদে ঝাড়্গ্রামে আমার বাড়ি ঊন্মেষে ফিরেছি। বাড়ি ফিরে দুদিন
বাদে ডায়েরী লিখতে বসলাম।

No comments:
Post a Comment