Friday, 30 January 2015


২০০০সালে আমাদের জেলার বিভাগীয় দপ্তরের,একটি সমবায় সমিতির রজত জয়ন্তী বর্ষ স্মরণিকাতে আমার লেখটি প্রকাশিত হয়ে ছিলো, এখানের বন্ধুদের জন্য লেখাটি প্রকাশ করলাম। আঁকা ছবি সাম্প্রতিক।
প্রসাধন,প্রয়োজন  ও বিজ্ঞাপন
কথায় আছে গল্পের গরু গাছে চড়ে,আজ উন্নত প্রযুক্তির দৌলতে বিজ্ঞাপনে গরু আকাশে ওড়ে।শক্তিশালী গনপ্রচার মাধ্যমের একটা বিশাল অংশ জুড়ে থাকে নানা বাণিজ্যিক দ্রব্যের বিজ্ঞাপন-উদ্দেশ্য ক্রেতাকুলকে মোহিত করে ঐ বিজ্ঞাপিত সামগ্রীটির প্রতি তাকে আকৃষ্ট করা। এখন কার ক্রেতা সমাজ অনেক সচেতন তাই প্রথমেই দেখে নিতে চান তিনি যে দ্রব্যটি কিনছেন তাতে পারিপার্শ্ব কোন কুফল ঘটার উল্লেখ আছে কিনা?বিশেষতঃ প্রসাধনীর সামগ্রীর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন,ত্বকের উপর কোন প্রতিক্রিয়া নেই তো? এই মানসিকতা বুঝে নিয়ে আজকের ঐ  প্রসাধনীর সামগ্রীর উতপাদক গন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বোঝাতে চান-এটি কতখানি কার্য্যকরী অথচ কোন কুফল নেই।  প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে প্রবস্তুত,একদম নিরাপদ,বহু প্রাচীন কাল থেকেই এর ব্যবহার গুনাগুন প্রমানিত ইত্যাদি ইত্যাদি। স্লোগানে আপ্নি,আমি স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাবিত হব। আমরা ভারতীয়রা গাছ গাছড়া লতাপাতার গুনে আমাদের জন্মগত দু্র্বলতা   বিশ্বাস।আর রাসায়নিকউপাদানের বিরুপ ক্রিয়া,নানা কুফলের কথা নানা প্রবন্ধে বিস্তারিত ভাবে ছাপা হচ্ছে তাই এটা কেনা জানে? এর উপর নিজেকে সুন্দরকরতে ,কেনা চায়? যদি এক সপ্তাহে কালোকে ফর্সা বানানো যায়-স্রেফ এক টিউব ক্রীম মাখলেই চট জলদি সমাধান ।বয়স বাড়বে অথচ ত্বকে তার ছাপ পড়বে না,যে কোন ভাঁজ,বলিরেখা -নিমেষে দূর হয়ে যাবে।চুল পড়বেনা,চুল পাকবেনা,নিস্তেজ চুল সতেজ হয়ে উঠবে-এক মাথা কালোলম্বা চুলে ভরে উঠবে-শুধু আপনি বিজ্ঞাপিত প্রসাধনীটি  ব্যাবহার করুন।মুখে ব্রণ,মেচেতা,ছুলি কিছুই থাকবেনা।সবার মুখই উজ্জ্বল   লাবণ্যে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।দাঁত নড়বেনা,পড়বেনা,লোহা চিবিয়ে খেতে  পারবেন। এর উপর হাত বাড়ালেই পাচ্ছেন কৌটা,শিশি,প্যাকেট ভর্ত্তি শক্তি,ফুর্তি,বুদ্ধি।শরীরের সব ঘাটতি নিমেষে উধাও সব দিক দিয়েই সেরা রেডিমেড ইনসট্যান্ট সমাধান।এরপর রুপচর্চার ভেষজ উপাদান-আঙুর,আপেল,কমলালেবু,পেস্তা,বাদাম,জায়ফল,জয়ত্রী,কোশর,জাফরাণ,কলা,  শশা,মূলো,আলু,দুধের সর,মধু,গোলাপ জল,টক,মিষ্টি,দই,চিনির রস,ভিনিগার,মেহেন্দী,মূলতানী মাটি,চন্দনের গুড়ো,হলুদ, মেথী,রাধুনী,কালোজীরা, মায় রান্নার প্রায় সব উপাদান-নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়ে যান-যেগুলো খেলে হয়ত কোন উপকার পেতেন-সেটা বেটে মাখুন,ত্বকে লাগান-ত্বক ভেদ করে কোষে পৌঁছবে-জৌলুস ফুটে বেরুবে।এবার আসুন একটু ভেবে দেখি, এগুলো কি সত্যই ম্যাজিকের মতোন কাজ করে?সবার রুপচর্চার ত্বকের যত্নের আদর্শউপাদান? এর কোন কুফল বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই?প্রাচীন ভারতে চরক সংহিতা সহ নানা আয়ুর্বেদিয় তপুঁথিপত্রে নানা গাছ- গাছড়া ভেষজ উপাদানের ঔষধি গুনের উল্লেখ আছে।কবিরাজী চিকি্তসায় মুলতঃ এই সকল ভেষজ উপাদানগুলিই -ঔষধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।কিন্তু রোগের লক্ষণ,রুগীর শারিরিক অবস্থা,তার শরীর বৃত্তিয় ব্যবস্থা সব লক্ষণগুলি বিচারকরে ঔষধ হিসাবে প্রয়োগ করা হয়।ভেষজগুলির নানা শর্ত,পরিশোধন বিধি,মাত্রা,ব্যবহারের  নিয়ম,অবশ্যই পালনীয়। কোন একটি ভেষজ একজনের ক্ষেত্রে উপযোগী হলেও সকলের ক্ষেত্রে উপযোগী নাও হতে পারে।
                                           ক্রমশ-২        আগামী পর্ব-২  পরবর্ত্তী অংশে সমাপ্য
(২)প্রসাধন,প্রয়োজন  ও বিজ্ঞাপন
ভেষজ বা বনৌ ষধিগুলি প্রধানতঃ তার বিভিন্ন ক্ষরিত উ তসেচক,জৈব আম্লিক বা ক্ষারীয় উপাদান, বিভিন্ন লবন,জটিল যৌগের বিক্রিয়া  শরীর বৃত্তিয়ের উপপর প্রভাব ঘটিয়েই কাজ করে -তাই এগুলির ত্বকের উপর-প্রভাব থাকবেই।ত্বকের সুরক্ষা মানে পারিপাশ্বিক আবহাওয়ায় বিভিন্ন ত্বকের উপর যে প্রভাব ফেলে,আলো বাতাস, ধূলো ময়লা ,আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদিতে আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক প্রশম অবস্থা (PH-7) বিনষ্ট হয় তাকে এই স্বাভাবিক সঠিকভাবে রক্ষা করা অর্থাৎ প্রশম রাখাই ত্বকের চর্চা ।ত্বকের কোষে জলীয় অংশের ঘাটতি  দেখা দিলে ত্বক শুষ্ক হয়, নানা বিপত্তি দেখা যায় তেমনি কোন কারণে ত্বকে আম্লিক ভাব বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত সেবাম নিসৃত হলে নানা উপসর্গ ত্বকের উপর দেখা যায় ব্রণ,ফুস্কুড়ি ইত্যাদি।ত্বকে জবাণুর সংক্রমনে নানা ক্ষতিকর অসুখ দেখা দেয়। শারিরিক নানা ব্যাধি,রক্তদুষিত হওয়া ,হজম পরিপাকবিপাকীয় ব্যবস্থায় গন্ডগোল ত্বকের উপর নানা প্রভাব ফেলে এগুলিকে ত্বকের স্থানীয় পরিবর্তন বা ত্রুটি হিসাবে গণ্য করা সঠিক নয়। তাই ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রেও সর্ব   প্রথম জরুরী আপনার ত্বকের প্রকতি ও প্রয়োজনীয়তা কি সেটা সঠিকভাবে  স্থির করা-তাই বিষয়টি সম্পূর্ণরুপে শারীরিক চিকিতসা বিজ্ঞানের অন্তর্গত,বৈজ্ঞানিক  বিধিসন্মত উপায়ে যথাযথ ভাবে ত্বকের প্রতি যত্ন নেওয়া।বর্ত্তমানে বিজ্ঞাপনের যুগে, বিজ্ঞাপনের শুনে বাজারে হাজারো প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে আপনার মনে হবে সবগুলিই আদর্শ, আপনার প্রয়োজনীয় উপযুক্ত।প্রৃকত প্রসাধনীর উপকরণ ,তার ভাষা,তার ক্রিয়া সম্পের্কে আপনার যথাযথ জ্ঞান না থাকলে বিভ্রান্ত হবেন,ত্বকের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে দরকার।ভেষজ উপাদানে প্রস্তুত বা ঘরোয়াভাবে প্রস্তুত প্রসাধনীর ত্বকচর্চার উপকরণ সর্ম্পকেও এই একই কথা । উপকরণের পরিশুদ্ধি, নির্বাচন,যথাযথ কার্য্যক্ষমতা এবং ভেষজ প্রকরণ পদ্ধতি না জানলে ঘরোয়া প্রসাধনীও ত্বকের পক্ষে নিরাপদ নয়। প্রসাধনীর যে কোনএকটি উপাদানও যদি আপনার ত্বকের পক্ষে উপযুক্ত না হয় তাহলে ক্ষতি হবে। বিদেশের জল হাওয়া পরিবেশ আর আমাদের দেশের আবহাওয়া এক নয়,তাই বিদেশ খুব সমাদৃত,বহুল ব্যবহৃত,প্রচলিত  প্রসাধনী,আপনার পক্ষে এদেশে উপযুক্ত নাও হতে পারে।বর্তমানে রুপচর্চা বলতে সাজ-প্রসাধন বোঝায়না-ইহা আপনার শরীর স্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি।ত্বকের বিধি সন্মত ও স্বাস্থ্য সন্মত রক্ষনাবেক্ষন কেই ত্বক পরিচর্য্যা বলে।জন্মগত রুপলাবণ্য যদিও বংশগত দান তথাপি ইহাকে যথাযথ রক্ষাকরা বা আপনার নিজস্ব স্বকীয়তাস্বকেই বিজ্ঞান ভিত্তিক অনুশীলন আর নিয়মানুবর্ত্তিতার মাধ্যমে প রিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোই সৌন্দর্য্যচর্চার মূল উদ্দেশ্য। শরীরচর্চা, রুপচর্চার একটা মূল অঙ্গ। তাই ব্যায়াম, যোগাসন,যার যেটা প্রয়োজন বুঝে সঠিকভাবে করা উচিত।সুস্থ শরীরই  সৌন্দর্য্যের উতস।শরীরে শক্তির উতসো পুষ্টিকর সুষম খাদ্য,খাদ্যের মধ্যে তালিকায় কোনটা বাড়াবেন,কোনটা কমাবেন বুঝে করতে হবে।প্রকিত   সৌন্দর্য্য বলতে বোঝায়  আপনার যা কিছু নিজস্বতা তার প রিপূর্ণ সুন্দরভাবে প্রকাশ করা।তাই হাব ভাব,চাল, চলন-কথাবার্তা,  পোষাক-প রিচ্ছদ সবই উপযুক্ত হতে হবে।অনুকরণ বা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে নয়-নিজস্ব আকার আকৃতি ধরণ বুঝেই নির্বাচন করতে হয়। নখ পালিশ,চুলের মেহেন্দী,রঙ,সেন্ট থেকেও নানা অসুখ , ত্বকের বিপত্তির সৃষ্টি হয়।কার কিসে এলার্জী হবে বলা শক্ত। তাই আগে প্রাথমিক পরীক্ষা পরে নিয়মিত ব্যবহার। বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে নিজের ক্ষতি করবেন না।

No comments:

Post a Comment