বিচিত্র
অভিজ্ঞতা-২ অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে' তপন কুমার
বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ যে কাহিনীটা লিখছি এটাও আমার পুরুলিয়া থাকা কালীন অভিজ্ঞতা,ঝালদাতে ঘর ভাড়া নিয়ে একা থাকি মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে ছেলে তার এক বন্ধুকে নিয়ে একবার, আর মেয়ে তার স্কুলের দু জন বান্ধবিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো,স্ত্রী প্রথম বার এসেছিলো একদিন ছিলোতাও পুরুলিয়াতে হোটেলে ছিলো।মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর রেজাল্ট বেরুনোর আগে দু জন বান্ধবিকে নিয়ে বেড়াতে এসে ঝালদা আর তার চারপাশ ঘুরে ,এবার বোললো অযোধ্যা পাহাড়ে যাবে ওখানে বেড়ানো হবে, পিকনিক ও হবে।আমাদের সাথে আমার অফিসের এক কর্মী ,তার স্ত্রী ,তারছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ে,আর মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে, এরা চারজন, ঝালদার একজন ভদ্রলোক, আমার সারাক্ষণের সাথী , স্থানীয় ব্যক্তি,আর আমার রান্নার কাজের বৌ তার ৫বছরের ছেলে আর গাড়ির চালক এই,দল সকাল ৭টার মধ্যে ঝালদা থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হলাম। ব্রেকফাস্টের পাঊরুটি, ডিমসেদ্ধ, কলা মিস্টি,বড় ফ্লাস্কে চা ,ওখানে দুপুরে রান্নার সব, পাম্পদেওয়া বড়কেরোসিনস্টোভ,সাথে নেওয়া হোলো।আমরা পাহাড়ি পথে চার পাশের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে এই পূর্বঘাট পর্বত মালার সম্প্রসারিত ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের অংশ অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গ (৮৫৫ মিটার) গোরবাবুরু যা বাঘমুণ্ডি অঞ্চলে অবস্থিত পোঁছলাম।এটা ছোট নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নীচু ধাপ,চারপাশে সম্প্রসারিত মালভূমি, কিম্বদন্তি রাম সীতা বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন,রাম নিজের ধনুকের তীর দিয়ে মাটি ভেদ করে সীতার পিপাসা নিবারনের জল বের করে আনেন, এই স্থানটি এখন সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত।আমরা খুউব কম সময় বাঘমুণ্ডির ঐখানে ছিলাম,কারন নামার পথে কোথাও জঙ্গলের মধ্যে দুপুরের বন ভোজন সেরে আবার সন্ধ্যারআগেই পাহাড় থেকে নেমে যেতে হবে,পথে হিংস্র জীবজন্তুর ভয়, তাছাড়া ফাঁকা পথে আরো অনেক বিপদ,সঙ্গে বড় মেয়েরা আছে তাই ফিরতে লাগলাম, সঙ্গে ঝালদার তিনজন অভিজ্ঞ লোক থাকায় ভরসা।
পাহাড় থেকে নামার পথে কিছুটা নেমে এসে রাস্তার বাঁ ধারে একটা জায়গায় গাড়ি রেখে আমরা বাঁ দিকেই একটা বেশ চওড়া নালার মতন নদী ,ওটা পেড়িয়ে পাশেই জঙ্গলে ঢুকলাম, বেশী ভিতরে যেতে মানা করায় সামান্য ভিতরে দেখতে গেলাম,রান্নার বৌ ,আমার অফিসের কর্মী তার স্ত্রী আর ঝালদারভদ্রলোক রান্নাবান্নায় লেগে পড়লেন,মেয়েরা চারপাশ ঘুরে দেখতে চাইলে বেশী ভিতরে যেতে বারণ করলাম। ওরা কাছেই বন বিভাগের একটা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখে এসে খুশী,এবার আমি ওই নালার মতন নদীতে স্নান সেরে নিলাম, রান্না তৈরী সকলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম, এবার জিনিস পত্র গোছ গাছ ,বাসন পত্র ধুয়েগুছিয়ে নিতে হবে, তার তোড়জোড়,মেয়েরা পাশে জঙ্গল দেখতে ঢুকেছে আমি ওয়াচ টাওয়ারে, হটাৎ দেখি মেয়েরা ভয়ে আতঙ্কে দৌড়ে যেখানে বাসন মাজার গোছানোর কাজ চলছে সেখানে হাজির ভয়ে কাঁপছে, আমি ওদের ওভাবে আসতে দেখে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে এলাম,এসে শুনি ওরা পাশের জঙ্গলে একটু এগিয়ে গিয়ে সামনে মড় মড় আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে জঙ্গলের ভিতর একটা বড় কালো জন্তু দাঁড়িয়ে ওরা কোন রকমে দূর থেকে দেখেই পালিয়ে এসেছে, এটা শুনে আমার স্টাফ, ঝালদার ভদ্রলোক তক্ষুণী সব মালপত্র বস্তায় ভরে তৎক্ষণাত গাড়িতে ফিরে যেতে বললেন, দেখলাম ওদের দুজনার মুখেই ভয়ে আতঙ্কের ছাপ। সবাই পড়ি মড়ি করে গাড়িতে ,আমি একছুটে পাশে ওয়াচ টাওয়ারে গেয়ে তাকালাম একটু দুরের ওই ঝঁপের দিকে দেখি দূরে বড় কালো মতন একটা জন্তু জঙ্গলে গাছের আড়ালে , মুখটা বোঝা যাচ্ছেনা্ভালো মতন জন্তুটা দেখা যাছেনা তবে বেশ বড় মোষের মতন হবে , মনে হয় আমাদের দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও উর্দ্ধশ্বাসে টাওয়ার থেকে নেমে সোজা গাড়িতে।
গাড়ি কিছুটা নেমে আসার পর ওই ঝালদার ভদ্রলোক আমাকে বললেন বড় বিপদের হাত থেকে আমরা বাঁচলাম স্যার। উনি যা বললেন দলমা পাহাড় থেকেহাতির দল ফসল খাবার জন্য প্রায়ই জঙ্গল দিয়ে নীচে নেমে আসে ফসল খায় ক্ষেত নষ্ট করে আবার ফিরে যায় , মাঝে মধ্যে দু একটা দল ছুট হাতি থেকে যায় এগুলি ভয়ঙ্কর, এরা যত দিন না ফেরে সবাই আতঙ্কে থাকে।এখানের জঙ্গলে বুনো শুয়ার, সজারু,ছোট বুনো মহিষ ,এগুলো থাকে। বৈশাখ মাসের পুর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয় সারা রাত জঙ্গলে ঢেড়া পিটিয়ে পশুদের তাড়িয়ে এনে শিকার করে, এখন বেশী জন্তু পাওয়া যায়না। আমরা যে জন্তুটা দেখেছি ওটা দলছুট হাতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।বুনো শুয়োর হলেও ভয়ঙ্কর।ওখানে বুনো জন্তু থাকে বলেই বন বিভাগের ওয়াচ টাওয়ার আছে, এমনি ভাবে ছোট ছেলে মেয়ে বৌ দের নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়, ভাগ্য আমাদের ভালো সবাই নিরাপদে চলে আসতে পারলাম।
ফেরার পথে অযোধ্যা পাহড়ে ৯০০মেগা ওয়াটের(৪ X ২২৫ মেগা ওয়াট) ক্ষমতার পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্ট এর কাজ চলছে পুরোদমে দেখলাম, এছাড়া তুরগা বাঁধ আর বামনী নদীর একটা সুন্দর জল প্রপাত দেখলাম।ফেরার পথে ছৌ নাচের মুখোশ তৈরী হয় যে গ্রাম চোরদা থেকে বেশ কিছু মুখোশ কিনে নিয়ে ফির লাম ।প্রচণ্ড গরমে রাতে পাহারের জঙ্গলে আগুন লেগে জ্বলতে দেখেছি দাউ দাউ করে। অল্প কয়েক মাসে পুরুলিয়ার অভিজ্ঞতা আমার চিরদিন মনে থাকবে।
আজ যে কাহিনীটা লিখছি এটাও আমার পুরুলিয়া থাকা কালীন অভিজ্ঞতা,ঝালদাতে ঘর ভাড়া নিয়ে একা থাকি মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে ছেলে তার এক বন্ধুকে নিয়ে একবার, আর মেয়ে তার স্কুলের দু জন বান্ধবিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো,স্ত্রী প্রথম বার এসেছিলো একদিন ছিলোতাও পুরুলিয়াতে হোটেলে ছিলো।মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর রেজাল্ট বেরুনোর আগে দু জন বান্ধবিকে নিয়ে বেড়াতে এসে ঝালদা আর তার চারপাশ ঘুরে ,এবার বোললো অযোধ্যা পাহাড়ে যাবে ওখানে বেড়ানো হবে, পিকনিক ও হবে।আমাদের সাথে আমার অফিসের এক কর্মী ,তার স্ত্রী ,তারছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ে,আর মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে, এরা চারজন, ঝালদার একজন ভদ্রলোক, আমার সারাক্ষণের সাথী , স্থানীয় ব্যক্তি,আর আমার রান্নার কাজের বৌ তার ৫বছরের ছেলে আর গাড়ির চালক এই,দল সকাল ৭টার মধ্যে ঝালদা থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হলাম। ব্রেকফাস্টের পাঊরুটি, ডিমসেদ্ধ, কলা মিস্টি,বড় ফ্লাস্কে চা ,ওখানে দুপুরে রান্নার সব, পাম্পদেওয়া বড়কেরোসিনস্টোভ,সাথে নেওয়া হোলো।আমরা পাহাড়ি পথে চার পাশের সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে এই পূর্বঘাট পর্বত মালার সম্প্রসারিত ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের অংশ অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গ (৮৫৫ মিটার) গোরবাবুরু যা বাঘমুণ্ডি অঞ্চলে অবস্থিত পোঁছলাম।এটা ছোট নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নীচু ধাপ,চারপাশে সম্প্রসারিত মালভূমি, কিম্বদন্তি রাম সীতা বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন,রাম নিজের ধনুকের তীর দিয়ে মাটি ভেদ করে সীতার পিপাসা নিবারনের জল বের করে আনেন, এই স্থানটি এখন সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত।আমরা খুউব কম সময় বাঘমুণ্ডির ঐখানে ছিলাম,কারন নামার পথে কোথাও জঙ্গলের মধ্যে দুপুরের বন ভোজন সেরে আবার সন্ধ্যারআগেই পাহাড় থেকে নেমে যেতে হবে,পথে হিংস্র জীবজন্তুর ভয়, তাছাড়া ফাঁকা পথে আরো অনেক বিপদ,সঙ্গে বড় মেয়েরা আছে তাই ফিরতে লাগলাম, সঙ্গে ঝালদার তিনজন অভিজ্ঞ লোক থাকায় ভরসা।
পাহাড় থেকে নামার পথে কিছুটা নেমে এসে রাস্তার বাঁ ধারে একটা জায়গায় গাড়ি রেখে আমরা বাঁ দিকেই একটা বেশ চওড়া নালার মতন নদী ,ওটা পেড়িয়ে পাশেই জঙ্গলে ঢুকলাম, বেশী ভিতরে যেতে মানা করায় সামান্য ভিতরে দেখতে গেলাম,রান্নার বৌ ,আমার অফিসের কর্মী তার স্ত্রী আর ঝালদারভদ্রলোক রান্নাবান্নায় লেগে পড়লেন,মেয়েরা চারপাশ ঘুরে দেখতে চাইলে বেশী ভিতরে যেতে বারণ করলাম। ওরা কাছেই বন বিভাগের একটা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখে এসে খুশী,এবার আমি ওই নালার মতন নদীতে স্নান সেরে নিলাম, রান্না তৈরী সকলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম, এবার জিনিস পত্র গোছ গাছ ,বাসন পত্র ধুয়েগুছিয়ে নিতে হবে, তার তোড়জোড়,মেয়েরা পাশে জঙ্গল দেখতে ঢুকেছে আমি ওয়াচ টাওয়ারে, হটাৎ দেখি মেয়েরা ভয়ে আতঙ্কে দৌড়ে যেখানে বাসন মাজার গোছানোর কাজ চলছে সেখানে হাজির ভয়ে কাঁপছে, আমি ওদের ওভাবে আসতে দেখে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে এলাম,এসে শুনি ওরা পাশের জঙ্গলে একটু এগিয়ে গিয়ে সামনে মড় মড় আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে জঙ্গলের ভিতর একটা বড় কালো জন্তু দাঁড়িয়ে ওরা কোন রকমে দূর থেকে দেখেই পালিয়ে এসেছে, এটা শুনে আমার স্টাফ, ঝালদার ভদ্রলোক তক্ষুণী সব মালপত্র বস্তায় ভরে তৎক্ষণাত গাড়িতে ফিরে যেতে বললেন, দেখলাম ওদের দুজনার মুখেই ভয়ে আতঙ্কের ছাপ। সবাই পড়ি মড়ি করে গাড়িতে ,আমি একছুটে পাশে ওয়াচ টাওয়ারে গেয়ে তাকালাম একটু দুরের ওই ঝঁপের দিকে দেখি দূরে বড় কালো মতন একটা জন্তু জঙ্গলে গাছের আড়ালে , মুখটা বোঝা যাচ্ছেনা্ভালো মতন জন্তুটা দেখা যাছেনা তবে বেশ বড় মোষের মতন হবে , মনে হয় আমাদের দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও উর্দ্ধশ্বাসে টাওয়ার থেকে নেমে সোজা গাড়িতে।
গাড়ি কিছুটা নেমে আসার পর ওই ঝালদার ভদ্রলোক আমাকে বললেন বড় বিপদের হাত থেকে আমরা বাঁচলাম স্যার। উনি যা বললেন দলমা পাহাড় থেকেহাতির দল ফসল খাবার জন্য প্রায়ই জঙ্গল দিয়ে নীচে নেমে আসে ফসল খায় ক্ষেত নষ্ট করে আবার ফিরে যায় , মাঝে মধ্যে দু একটা দল ছুট হাতি থেকে যায় এগুলি ভয়ঙ্কর, এরা যত দিন না ফেরে সবাই আতঙ্কে থাকে।এখানের জঙ্গলে বুনো শুয়ার, সজারু,ছোট বুনো মহিষ ,এগুলো থাকে। বৈশাখ মাসের পুর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয় সারা রাত জঙ্গলে ঢেড়া পিটিয়ে পশুদের তাড়িয়ে এনে শিকার করে, এখন বেশী জন্তু পাওয়া যায়না। আমরা যে জন্তুটা দেখেছি ওটা দলছুট হাতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।বুনো শুয়োর হলেও ভয়ঙ্কর।ওখানে বুনো জন্তু থাকে বলেই বন বিভাগের ওয়াচ টাওয়ার আছে, এমনি ভাবে ছোট ছেলে মেয়ে বৌ দের নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়, ভাগ্য আমাদের ভালো সবাই নিরাপদে চলে আসতে পারলাম।
ফেরার পথে অযোধ্যা পাহড়ে ৯০০মেগা ওয়াটের(৪ X ২২৫ মেগা ওয়াট) ক্ষমতার পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রজেক্ট এর কাজ চলছে পুরোদমে দেখলাম, এছাড়া তুরগা বাঁধ আর বামনী নদীর একটা সুন্দর জল প্রপাত দেখলাম।ফেরার পথে ছৌ নাচের মুখোশ তৈরী হয় যে গ্রাম চোরদা থেকে বেশ কিছু মুখোশ কিনে নিয়ে ফির লাম ।প্রচণ্ড গরমে রাতে পাহারের জঙ্গলে আগুন লেগে জ্বলতে দেখেছি দাউ দাউ করে। অল্প কয়েক মাসে পুরুলিয়ার অভিজ্ঞতা আমার চিরদিন মনে থাকবে।


No comments:
Post a Comment