'আবোলে-তাবোলে পরিক্রমা
' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ল
চলো যাই ঘুরে আসি আবোল-তাবোল জগতে,
কেমন সব আছেন এখন?দেখি নিজের চোখেতে।
শ্রদ্ধেয় সুকুমার রায়ের অমর এই সৃষ্টি,
এরপরে না যেন পড়ে লোভাতুরের দৃষ্টি।
পাগল আছে নিজের মনে ,ভোলা চলে খেয়ালে,
খ্যাপা নাচে মনের সুখে, সকালে ও বিকালে।
খিচুড়ির দেশে দেখি, সব কিছু ঠিক ঠাক,
হাঁসজারু,বকচ্ছপ,হাতিমির ডাকছে নাক।
জিরা ফড়িং,ছাগল বিছে,কেউ লাগেনা কারো পিছে।
মোরগ গরু,টিয়া গিরগিটি, সিংহ হরিণ চলে গুটি গুটি।
বেরুলাম যেই এদেরকে দেখে,
কাঠ বুড়ো দেখি কাঠে কাঠ ঠোকে।
হিসাব তার বোঝা ভার,কাঠ নিয়ে তত্ব,
কাছে গেলে বলে ওঠে কাঠে কেনো গর্ত।
গোঁফচুরিতে বেজায় কাবু,বড়বাবু ক্লান্ত,
গঙ্গারামের পাত্রী খুঁজে সকলে পরিশ্রান্ত।
কাতুকুতু বুড়োর খবর দূর থেকেই নিলাম ,
ভালো আছেন জেনে নিশ্চিন্ত হলাম।
ভীষ্মলোচন গানের সাথে ধরেছে বাজনদারী,
সময় পায়না তাই মুখ ভরতি গোঁফ দাড়ি।
চণ্ডীদাসের খুড়োর কলের বিশ্ব জোড়া নাম,
তার কাছেতে গিয়ে সেটা সচক্ষে দেখলাম।
লড়াই খ্যাপা পাগলা জগাই সেই রকম আছে,
শূণ্যে সে ঘোরায় ছাতা তিড়িং বিড়ং নাচে।
ছায়া কিনতে গিয়ে ছিলুম ছায়াবাজির কাছে,
হরেক রকম ছায়া সেথায় শিশি ভরা আছে।
কুমড়ো পটাশ সেই এক ই চালে চলছে ,
তার মেজাজে হেথায় ত্রাসে সব মরছে।
প্যালারাম আছে ভালো, হাঁকপাঁক করেনা,
আস্তে ছাড়ে নিশ্বাস ,জোরেসে ফেলেনা।
বাবুরাম সাপুরে আর সাপ ধরেনা,
হয়েছে বয়স তাই আর সে পারেনা।
প্যাঁচা আর প্যাঁচানি,থামিয়েছে চ্যাঁচানি।
মাঝে মাঝে ধরে গান, ওষ্ঠাগত তখন প্রাণ।
ডাক্তার হাতুড়ে শর্ট কোর্স করেছে,
হোমিওপ্যাথির সাথে এলোপ্যাথি ধরেছে।
বদ্যি বুড়োর পথ অনেকেই নিয়েছে,
বুড়ো এখন ও এক ই ভাবে চলেছে।
খাবার চোর আজ ও পড়েনি ধরা,
নিত্য চলে তাই সেই পাহারা।
ভালোর দেশে সবাই ভালো,
ভালোও ভালো খারাপ ও ভালো।
সেই দেশটা যেতে চাও ?নয়কো মোটে দূর,
ভালোতারা খায় জানি পাউরুটি ঝোলা গুড়।
বিদ্ঘুটে জানোয়ার কিমাকার কিম্ভুত,
দেখে আমি চমকাই কি ভীষণ অদ্ভুত।
যত সব বিদ্ঘুটে আবদার আছে তার,
মানবে কে এত শত, আছে সে সাধ্য কার?
পাশের গাঁয়ে সব কিছু ঘটে শব্দ করে,
ফুলফোটে,ঘুমভাঙ্গে, সশব্দে হিম পড়ে ।
রাজাবসেন ইঁটের পাঁজায় মনে সদাই ভাবনা,
নেড়া যায় বেল তলাতে, কেউ হিসাব নেয়না?
সেই যে এসে বলে ছিলো, কাঁধে নিয়ে ভিস্তি,
তার কথাটাই মেনে নিয়েছেন একেবারে সত্যি।
শ্যামাদাস আতঙ্কে বদ্যি পাড়ায় যায়না,
তাকে বোঝানো শুরু হলে থামানো যে যায়না।
আলু খেলে বুদ্ধিনষ্ট বদ্যিদের ভাবনা,
এজন্য বদ্যিপাড়ায় আলু বিক্রী হয়না।
এখনোআছেন বেঁচে সীতানাথ বন্দ্যো,
গবেষণার বিষয় যার আকাশের গন্ধ।
গেছিলাম থুরথুরে বুড়ির ঝুরঝুরে বাড়িতে,
এখনো টিকে আছে গোঁজা মারা কাঠিতে।
মন্ত্রী বাজান কলসী যেথা বসে রাজার কোলে।
সিংহাসনে বোম্বাগড়েই ভাঙ্গা শিশিবোতল ঝোলে ,
শিবঠাকুরের দেশের আইন,মেনেনিয়ে সব আছে ফাইন।
একুশে আইন মানছে তারা,এই জগতে সব ছন্ন ছাড়া।
হুকোমুখো হাসেনা,কাছে কেউ ঘেষেনা।
ল্যাজ নিয়ে সদা ই ব্যস্ত,মাছি দেখলে হয় সন্ত্রস্ত ।
দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুমের ঠেলা ,কানে সবার লাগায় তালা।
সর্বদা তাল ঠুকে সব গাইছে,
চিন্তাভাবনা সকলে ভুলে, নাচছে তারা দু হাত
তুলে,
সাথে তারা দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম হাকছে।
হওনা চুলো কিম্বা টেকো,গল্প কেঊ শুনবে নাকো।
কথার উপর উঠবে কথা,শুধুই হবে মুখে ব্যাথা।
এর পড়েতে চড়লে পারদ,লাগবে লড়াই নারদ নারদ।
পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া,কেমনে তুমি পাবে ছাড়া?
উপায় জানা থাকলে পরে ,সেথায় যেতে পারো যেরে।
ভূতের খেলা দেখতে পাবে,পান্তুভূতে মাতিয়ে দেবে।
মায়ে ছানায় করবে খেলা,খ্যাশ খ্যাশে বিকট গলা।
সাবধানে দেখতে হবে, আওয়াজ পেলে উবে যাবে।
ডানপিটে সব ছেলে গুলো,চাচাকে এমন খেপিয়ে দিলো।
বাপরে বলে পালিয়ে গেলো,মানুষ তো নয় দস্যি গুলো।
রাম গরুরের সকল ছানা, হাসেনা মুখ হুলো পানা,
হাসি সেথায় নিষেধ আছে,হাসলে বুকে ব্যাথা বাজে।
আবার আহ্লাদীরা হেসেই মরে,হাসছে তারা নানান সুরে।
কারন ছাড়াই হাসছে তারা,এমন ধারা পাগল পারা।
নন্দ গোঁসাই বদলে গেছে হাত দেখানোর পরে,
আতঙ্কেতে মুখের থেকে হাসি গেছে ঝড়ে।
মৃত্যু ভয়ে শিটিয়ে আছেন,খেতে হুকো ভুলেই গেছেন।
মন্ত্রীর জামার গন্ধ কি তার?,শুঁকে বুড়ো করলো বিচার।
সারা রাজ্যে জয় জয়কার বাজছে কাঁসর ঘন্টা,
তবুও কেন খুঁত খুঁত করে সায় দেয়না মনটা।
নন্দ ঘোষের পাশের বাড়ির বুথ সাহেবেরা বাচ্চটা,
কখন শুনেছো কেঊ ঐ ছেলের কান্নাটা?
আকাশ কাঁপে,দেওয়াল ফাটে এমন গলার জোর,
থামেনা সে কিছুতেই চলে কাঁদার বহর।
নিশুত রাতে চিলেরছাদে দুটি হুলোয় ধরে গান,
রাতের ঘুম উঠলো মাথায় ওষ্ঠাগত হল প্রান।
ঠিকানা খুঁজে গেছিলাম আদ্যিনাথের কাছে,
জগমোহন বলে ছিলো আজো মনে আছে।
রামধনু রঙ দেখে খুঁতু বাবু বলে,একদম কাঁচা রঙ এখনি যাবে চলে।
বাবুর ছেলের দাঁত গজালো,ঢোল করতাল কতকি বাজালো
।
নোটবুক পড়ে আমি এই সব জেনেছি,
আবোল তাবোলে তাই সব ঘুরে দেখেছি।
শিং ওয়ালার কাছে আমি তাই যাইনি।
মুগুরটা কতো ভারী হাতে তুলে দেখিনি।
বিজ্ঞান পড়েশুনে,ফুটোস্কোপ নিয়েছি কিনে।
দেখব এবার পরীক্ষা করে, এক এক জনের মুণ্ডু ধরে।
হারুদের আফিসেতে ট্যাঁশগরু দেখেছি,
জন্তু না পাখী ওটা সারাক্ষণ ভেবেছি।
হুগলীতে শুয়োর দেখে, নিম গাছের শিম চেখে,
ভোজের ভেলকি দেখেছি।
ষষ্টিচরণের হাতি লোফা,নিজের স্বচক্ষে দেখা,
তাইতো আজকে এই সব লিখেছি।
