কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী -৬ থেকে
৬)
Edit
আকাশযানের বিপদ
By Tapan Kumar Bandyopadhyay on Monday, April 20, 2015 at 3:11pm
Daktar Ukil jethur diary theke
Updated about a week ago
PublicFriendsOnly MeCustomFamilyHooghly-Chinsurah, West Bengal, India AreaGo Back
আকাশ যানে বিপদ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যে কাহিনীটির উল্লেখ করছি এটি ডাক্তার উকিল জেঠুর কাছ থেকে পাওয়া ডায়েরী থেকেই উদ্ধৃত। ডায়েরীতে লেখাটি অত্যন্ত তথ্য বহুল আর ইতিহাসের মতন সন তারিখসহ উচ্চ কারিগরী পদার্থ বিদ্যার আলোচনা,হিসাব,অংকন, সংকেতেই ভর্তি, যথা সম্ভব সেগুলি বাদ দিয়ে ,আর যেমন যেমন লেখা ছিলো ঠিক সেই মত ই উদ্ধৃত করলাম। কারন ঐ শিক্ষা মুলক আলোচনা গল্প হিসাবে সুখ পাঠ্য নয় তাই বাদ দিলাম ,এই লেখাটা অনেকের কাছে তত্ত্বের কচ কচি মনে হতে পারে আমায় ক্ষমা করবেন।আজ তিন মাস যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁচেছি। ত্রিমাধ্যমে ( জল,স্থল,অন্তরীক্ষ) বিচরণক্ষম যান প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছি।আমার কাঙ্খিত এই যানটি বানানোর জন্য আমি দিবারাত্র ব্যস্ত ছিলাম, এটাই আমার ধ্যান জ্ঞান।এখন এটা জলে,স্থলে,অন্তরীক্ষে সমান ভাবে স্বছন্দে বিচরণ করতে পারবে অথচ এটা অদৃশ্য থাকবে লোকচক্ষুতে যা কোনভাবেই কোন যন্ত্র পরীক্ষক, তরঙ্গ,শক্তি দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভবপর হবেনা। ইতি মধ্যে আমি ছোট খাটো এই রকম অদৃশ্যপ্রায় বা কোন নির্ণয়ক যন্ত্রে ধরা পড়েনাএমন বহু যন্ত্র প্রস্তুত করেছি। আসলে আমি এক ধরনের রঙ আর পদার্থ বানিয়েছি যা সমস্ত শক্তি-তরঙ্গকে প্রাথমিক ভাবে শোষন করে তারপর অপর পৃষ্ঠ বা তল দিয়ে নির্গত করে দেয় ফলে ঐ পদার্থের মোড়কে কিছু থাকলে তা কোন ভাবেই কোন রশ্মি বা তরঙ্গ নির্ণয়ক দ্বারা চিহ্নিত করা যায়না, ধরা পড়েনা। এখনে সৌর শক্তিকে বেশী মাত্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করে এমন একটা ছোট মহাকাশ যান বানানো বেশ পরিশ্রম ছিলো, যাক কাজ হয়ে গেছে।আমি সৌর শক্তিকে বিপুল ভাবে শক্তির ভাণ্ডার হিসাবে ব্যবহার করতে চাইতাম,সব কিছুই চলবে সৌর শক্তিতে-তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর শক্তির সংগ্রাহক ,সঞ্চয় ব্যবস্থা আর শক্তির রুপান্তর ঘটানোর যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি তৈরী করতে, গবেষণায় ব্যস্ত ছিলাম। কিভাবে করা যায় ?ছিলো এক মাত্র চিন্তা।১৯০৪ সালে আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বোস প্রাকৃতিক গ্যালেনা (Galena) ও অন্য পদার্থ রেডিও প্রস্তুতে ব্যবহার করেন (Cats-whisker detector),১৯০৬ সালে LED (Light Emiting Diode) আবিষ্কার আমাকে পথ দেখায়। আর মহামান্য আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ১৯০৫ সালে যে নুতন দিগন্তের সন্ধান দেখায়, তার ভিত্তিতে ১৯৫১ সালে প্রথম সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড -১ উৎক্ষেপনে।ইতিমধ্যে ১৮২১ সালে বার্লিনের বৈজ্ঞানিকের পেলশিয়ার সিবেক ক্রিয়া থেকে Thermo electric effect, Auto thermo electric Generator(ATGs), polymerise chain reaction(pelter effect) Radio isotopes , Hyper physics(semiconductor cocepts) জন্ম নেয়। আমি সৌর বিদ্যুৎ কোষ,আলোক বিভব ক্রিয়া (photo Voltaic Effect) ব্য্যবহারের জন্য আমি সম্প্রতি যে কয়েকটা বিশেষ ধাতু সংকর প্রস্তুত করেছি, তার মধ্যে ১)ফস্পো গ্যলিনিয়াম জারমিনেট ২)সিলিকো সেলিনিয়াম আরসিনেট ৩)কিউপ্রো ফেরাম জিঙ্কেট ৪)ম্যাগ্নেসিয়াম কন্সট্যানটাইন বোরেট বিশেষ উপযোগী হয়েছে ।আমি এখানে একটা বিশেষ জিনিষ লক্ষ্য করলাম, আমার তৈরী এই বিশেষ ধাতু সংকর মধ্যে যে কোন দুটির মধ্যে Thermal Energy Conversion / Thermo ElectricPower ক্ষমতা অনেক বেশী ।যেটা আগে অন্যনেকটাই অল্প ছিলো । এই ধাতু সংকর মধ্যে যকোন দুটিকে একত্রিত করে তার এক পৃষ্ঠ কে উত্তপ্ত করলে অপর ধাতু সংকরের পৃষ্ঠটি তত ঠাণ্ডা হয়ে যায়, ফলে একাধারে এটিকে কোন বস্তুকে ঠাণ্ডা করার কাজে যেমন ব্যবহৃত হবে সেই সাথে তড়িৎ উৎপন্ন হবে।সুর্য্যের আলো আর তাপ শক্তি থেকে প্রভুত অন্য শক্তি যেমন তড়িৎশক্তি ,যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যাবে। আমি ডোপায়নের মাধ্যমে বেশ কিছু অর্ধপরিবাহীর ক্ষমতা,বৈশিষ্ট অভাবনীয় ভাবে বদলে দিতে সক্ষম হয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই বানানো এই যানটি নিয়ে পরীক্ষামুলক সফরে বেরুবো।আজ আমার তৈরী যানে করে পাড়ি জমালাম মহাকাশে ,তবে গতি নিয়ন্ত্রিত করা আছে যাতে যান টি পৃথিবীর অভিকর্ষজ আকর্ষণ ছাড়িয়ে মুক্তি বেগ না পেয়ে যায়, তাহলে ফেরা মুস্কিল হয়ে যাবে।মুহুর্তের মধ্যে মহাশূণ্যে পৌঁছে গেলো আমার এই নভঃযান। এবার গতি নিয়ন্ত্রন করে আবর্তন শুরু করলাম ,পৃথিবীর চারপাশে।আমি সবার কাছে অদৃশ্য থাকলেও আমার কাছে সব ই দৃশ্যমান।আমার পথ নির্দেশক যন্ত্রে আমি আমার অবস্থান জানতে পারছি, মহাকাশে আতঙ্ক কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole)। আমার কাছে পুরো তথ্য নেই শুধু জানি বাড়মুডা ত্রিভুজের অন্তর্গত মহাকাশে এমন অনেক কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole) আছে।আমি সতর্ক দু চক্কর মেরে নেমে যাবো আমার উৎক্ষেপন কেন্দ্র ঝাড়্গ্রামে।কিন্তু একি বিপদ পুরো এক চক্কর এখনো হয়নি সামনে একটা প্রকাণ্ড অগ্নিগোলক বিপুল গতিতে এসে ধাক্কা মারলো আমার মাহাকশের যানে, বিকট শব্দ, তারপর দেখি আমার এই যানে ডিসপ্লেসিস্টেমে গণ্ডগোল, কোথায় আছি? পৃথিবী থেকে কতোটা উপরে তাও জানিনা, কিছুই বুঝতে পারছিনা।বাইরেটাও অন্ধকার।হঠাৎ গোঁও করে সামান্য একটু ঝাঁকুনি দিয়ে যান টা উল্টো দিকে যেতে শুরু করলো কিছুটা গিয়ে নীচের দিকে, আমি আতঙ্কিত, এভাবে চললে আকাশে কোন বিমানের অন্য মহাকাশ যানের সাথে ধাক্কা লাগাও অসম্ভব নয়।এখনি মাটিতে নামা দরকার কিন্তু কি ভাবে নামবো কোথায় নামবো?যানের ভিতরে আলো জ্বলছেনা কেবল মাত্র আপৎকালীন জরুরি ব্যবস্থা ,ইঞ্জিন রুমে আলো জ্বলছে। আমার সাথে সুপার পাওয়ার টর্চ/স্পট ল্যাম্প আছে। বটম ভিউ ফাইণ্ডার উইন্ডো দিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে নীচের দিকে চেয়ে আতঙ্কে বুক শুকিয়ে গেলো অনেক নীচে নীল সমুদ্র মতন দেখা যাচ্ছে।কিন্তু কোন সমুদ্র ? কিছুই বোঝার উপায় নেই, চারপাশেই জল আর জল, বুঝলাম এখানে রাত নেমেছে, আবার যান টা বেশ গতিতে নীচে নামছে এক্ষুণি সমুদ্রে আছড়ে পড়বে।তার পর কি ঘটবে?যান টা কি আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে? এটা যদিও বিশেষ ভাবে প্রস্তুত আঘাত ঘর্ষণ সইতে পারার কথা।কিন্তু আজ এটা যে অদ্ভুত ব্যবহার করছে আমি তাতে ভীত আস্থা হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপর? -------------একটা প্রচণ্ড আওয়াজ সাথে ঝাঁকুনি বুঝলাম সমুদ্রে আছড়ে পড়েছে, আমি ইঞ্জিন রুমে ইমারজেন্সী ব্রেক ধরেই ছিলাম ছিটকে পড়লাম যান টা ডুবতে শুরু করেছে আমি কোনো রকমে উঠে লিভার ঠেলে মহাকাশ যান অপশন থেকে ডুবো জাহাজ অপশনে নিয়ে গেলাম ওমা দেখি যান টা এবার ঠিক চলতে শুরু করলো। জলের তলায় দেখার সব ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলো আপনা আপনি। অক্সিজেন জেনারেটর সমুদ্রের জল থেকেই অক্সিজেন তৈরী করে যানের অভ্যন্তরে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা রক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু জলের মধ্যে আমি কি দেখছি? এটা কোথায়?আমার সামনে ঘন নীল জল তার মধ্যে বিশালাকায় সব জন্তু একটারও নাম পরিচয় জানিনা কখনো কোথাও ছবি,তথ্য পাইনি। পৃথিবীতে কেঊ জানে বলেও মনে হয়না। এ সব অজানা,সমুদ্রের নীচে এক অজানা জগৎ । সামনে প্রকাণ্ড তিমি মাছের মত জন্তু চারটে পা কচ্ছপের মতন মুখটা গণ্ডারের মত। ওপাশে একটা সিহর্স আর স্টার ফিসের মিলিত পেল্লায় জন্তু। জলজ উদ্ভিদ গুলো অস্বাভাবিক, খুউব সুন্দর। রঙ বেরঙের ফুল জানিনা এগুলো জলজ উদ্ভিদ না প্রাণী কারন জলের নীচে এমন সুন্দর সুন্দর দেখতে ফুলের মতন প্রাণীও হয় তারা আবার ভয়ঙ্কর বিষাক্ত হয়। এমন কি হিংস্র মাংসাসীও হয় ।এই জন্য ই স্কুবা ড্রাইভিং করার সময় সতর্ক করে দেওয়া হয় যাতে ফুল দেখে আকৃষ্ট হয়ে কেউ বিপদে না পড়ে।আমি যানের গতি খুউব কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে সব খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। জলের নীচেও দেখি বিশাল বিশাল পাহাড়, গাছপালা রয়েছে। বড় বড় পাখনা ওয়ালা সাপ দেখলাম। আমি যখন এই সব দেখতে বিভোর আবার প্রচণ্ড ধাক্কা বুঝে উঠলাম না কিসের সাথে চারপাশে কোন পাহাড় গাছপালা ছিলোনা তাহলে কোন জলজ প্রানী অতিকায় কোন জন্তুর সাথে হবে।এই ধাক্কায় আবার বিভ্রাট ডুবোজাহাজ দিকবিদিক শূন্য ঊর্ধ গতিতে ছুটে চলতে শুরু করলো কোন দিকে জানিনা। কত ক্ষন কত ঘণ্টা কিছুই জানিনা। আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।আমার যানের কি হোলো? আমাকে অচৈতন্য অবস্থায় আটলাণ্টিক মহাসাগরের এক অখ্যাত দ্বীপের উপকুলে পড়ে থাকতে দেখে একটি বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজ উদ্ধার করে।সাতদিন বাদে জ্ঞান ফেরে ,তখন আমি আফ্রিকামহাদেশের নামিবিয়ার উইণ্ডহক (Windhock) এর শহরের হাসপাতালে শয্যাশায়ী চিকিৎসা চলছে যমে মানুষে টানাটানি, আমি বেঘোরে ভুলবকেছি অনর্গল। মহাশূণ্যে অগ্ন্যুপাত-জলের তলায় ডাইনোসর ।আমি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে প্রায় মাস খানেক বাদে ঝাড়্গ্রামে আমার বাড়ি ঊন্মেষে ফিরেছি। বাড়ি ফিরে দুদিন বাদে ডায়েরী লিখতে বসলাম।
৭)
অজানা দ্বীপের ড্রাগন
By Tapan Kumar Bandyopadhyay on Monday, April 20, 2015 at 2:45pm
অজানা দ্বীপের ড্রাগন' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যে কাহিনীটির কথা লিখছি এটাও ডাক্তার উকিলজেঠুর ডায়েরী থেকে পাওয়া কিন্তু ওনার নিজের জীবনে ঘটা ঘটনা নয়।উনিও একটা ডায়েরী পেয়েছিলেন সেটার কাহিনী এটা।এটা ডাক্তার উকিল জেঠুর ডায়েরীতে যেভাবে লেখা ছিলো সেই মতন ই উল্লেখ করছি। আজ এক অদ্ভুত ঘটনা,বিকালের পার্শেলে দেখি আমার এক বন্ধু বিখ্যাত জীব বিজ্ঞাণী ডঃ লিলি এডামসন অস্ট্রেলিয়ার 'ডারউইন'(Darwin) থেকে আমাকে একটি মাঝারি খয়েরী রঙের ডায়েরী-ডায়েরী না বলে হ্যান্ডবুক বা পকেট বুক বলাই ভালো, পাঠীয়েছেন সাথে একটা ছোট চিঠি তাতে লেখা 'আমার প্রিয় ডক্টর উকিল, আশা করি তোমার খবর কুশল,ভালোই আছো-কদিন আগে'Mistry of the Nature' পত্রিকায় তোমার লেখা Extinet pices inthe World নামে প্রকাশিতআর্টিকেল টি পড়লাম,বেশ ভালো লাগলো ,তুমিও যে এই প্রাণীকুল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে এত ভাবিত এবং তথ্যপুর্ণ ঘটনা সমুহের উল্লেখ করেছ তাতে আমি ভীষণ খুশী। তোমার মতন বিরাট মাপের বড় মনের বিজ্ঞানীরা যদি এই বিষয় নিয়ে সমানএকদিন ভাবিত হয়,কিছু করেন, তা হলে বিশ্বের উপকার হবে। অন্যথায় লোভী মানুষেরা যে ভাবে পৃথিবীর বুক থেকে হাজার হাজার প্রজাতির জীব জন্তু,প্রাণী,উদ্ভিদ কে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তাতে সারা পৃথিবী জন মানব হীন মরুভূমিতে পরিনত হবে।আমার অনেক বয়স তার উপর সম্প্রতি একটা ম্যাসিভ এটাকে আমার দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি হারাতে বসেছি, আমি নিজেই বুঝতে পারছি আর অল্প কয়েক দিন আমার আয়ু।আমি চোখ বোজার সাথে সাথে আমার সমস্ত কিছুই পর হস্ত গত হয়ে যাবে-আমার বিজ্ঞান সাধনা ,গবেষণা, সমস্ত কিছুই অন্যেরা গ্রাস করবে।হয়ত এমন লোকের হাতে আমার গবেষণার নথী পড়বে যারা আমার চিন্তা ভাবনা ইচ্ছার সম্পূর্ণ পরিপন্থী,অর্থের লোভ,খ্যাতির লোভে জলাঞ্জলি দেবে মহান উদ্দেশ্যকে,ধ্বংস করে দেবে পৃথিবীর জীব-প্রাণী জগতের আবহ পরিবেশকে। তাই আমি চাই তোমার মতন একজন মহান আদর্শবান সৎ বিজ্ঞানীর কাছে আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান যে তথ্যটি আমি সংগ্রহ করেছি,অনুসন্ধান করেছি,তোমাকে একান্তে দিয়ে যেতে,তুমি একে রক্ষা করবে নিশ্চিহ্নপ্রায় এমন প্রাণীকুল কে পুর্ণজীবিত করতে-আমার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে। আমি জানি তুমি আমার অনুরোধ রাখবে।সাথে আমার হাতবইটি পাঠালাম যাতে কিছুটা আমার দিনপঞ্জীকার মতন কিছুটা আমার মতামত অভিব্যাক্তি নিয়ে বর্ণনা আছে। তুমি আমায় জানো তাই অবিশ্বাস করবেনা,গুরুত্ব দিয়েই দেখবে বিষয়টা।তোমার প্রতি আমার অনেক আস্থা,আমি তোমাকে শ্রদ্ধাকরি,তোমার জীবন যাত্রা,চিন্তাভাবনা, সব ই মহান।আমি তোমার মতন এত জ্ঞানী বিজ্ঞানমনষ্ক ঋষিতুল্য মানুষ আর দেখিনি,তাই আমার অন্তিম ইচ্ছা তুমিই পুরণ করবে এটা আমার বিশ্বাস । আমার হাতে সময় বেশী নেই জানিনা তোমার হাতে এই চিঠি আর হাতবইটা পৌঁছানোর আগেই হয়ত আমার পরপারের ডাক পৌঁছে যাবে। ইশ্বর তোমার মঙ্গল করুন,সহায় হউন।তোমার একান্ত লিলি এডামস্যন।" আমি চিঠিটা পড়ে, উল্টেপাল্টে হ্যাণ্ডবুক টা দেখলাম- ছাড়া ছাড়া কিছুটা কিছুটা লেখাতে ভরা, মাঝে মাঝে আঁকা,কিছু বন্যপ্রাণী,গাছপালার ছবি। বেশ কিছু বৈজ্ঞাণিক তথ্য।বুঝলাম খুঁটিয়ে পড়তে হবে।বিষয় টা আকর্ষনীয় এবং পুরো তত্ত্ব ও তথ্য যাচাই করতে সময় লাগবে।আমি এখন একটা বিশেষ গবেষণায় ব্যস্ত।কিভাবে সৌর শক্তিকে বেশী মাত্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করে এমন একটা ছোট মহাকাশ যান বানানো যায় যেটা জলে,স্থলে,অন্তরীক্ষে সমান ভাবে স্বছন্দে বিচরণ করতে পারবে অথচ এটা অদৃশ্য থাকবে লোকচক্ষুতে যা কোনভাবেই কোন যন্ত্র পরীক্ষক, তরঙ্গ,শক্তি দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভবপর হবেনা।অনেকটাই কাজ হয়ে গেছে।অল্প কিছুদিনের মধ্যে ই বানান হয়ে যাবে আমার কাঙ্খিত এই যানটি, তাই আমি দিবারাত্র ব্যস্ত, এটাই আমার ধ্যান জ্ঞান। ইতি মধ্যে আমি ছোট খাটো এই রকম অদৃশ্যপ্রায় বা কোন নির্ণয়ক যন্ত্রে ধরা পড়েনাএমন বহু যন্ত্র প্রস্তুত করেছি। আসলে আমি এক ধরনের রঙ আর পদার্থ বানিয়েছি যা সমস্ত শক্তি-তরঙ্গকে প্রাথমিক ভাবে শোষন করে তারপর অপর পৃষ্ঠ বা তল দিয়ে নির্গত ক রে দেয় ফলে ঐ পদার্থের মোড়কে কিছু থাকলে তা কোন ভাবেই কোন রশ্মি বা তরঙ্গ নির্ণয়ক দ্বারা চিহ্নিত করা যায়না ধরা পড়েনা।আমি সৌর শক্তিকে বিপুল ভাবে শক্তির ভাণ্ডার হিসাবে ব্যবহার করতে চাই,সব কিছুই চলবে সৌর শক্তিতে-তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর শক্তির সংগ্রাহক ,সঞ্চয় ব্যবস্থা আর শক্তির রুপান্তর ঘটানোর যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি তৈরী করতে হচ্ছে।ভাবলাম দু তিন মাসের মধ্যে এগুলি সম্পন্ন হয়ে গেলে ডায়েরীটা নিয়ে ভাবা যাবে।কিন্তু পার্শেল টা হাতে পাবার সাত দিনের মধ্যেই কাগজে দেখলাম ডঃলিলি এডামস্যন মারা গেছেন। মনটা ভীষন ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো।তখন ভাবলাম,দেখি ওনার ডায়েরীতে কি বলতে চেয়েছেন একটু চোখ বুলিয়ে। ডায়েরীর পাতা ওল্টাতেই যা লেখা দেখলাম আমি বিস্মিত হতবাক, রোমাঞ্চিত হলাম।যে ভাবে ডায়েরীতে পেয়েছি সেগুলি একটু সাজিয়ে গুছিয়ে আমার ডায়েরীতে লিখে রাখছি- ওনার লেখার ভাষাতেই।
আমি গতকাল রাত্রে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন থেকে ইন্দোনেশীয়ার বালী দ্বীপে এসে পৌঁছেছিলাম, এখান থেকে জল পথে একাই অভিযান চালাবো আগেই স্থির করা ছিলো তাই ভোর হওয়ার আগেই এখান থেকে সংগ্রহ করা ছোট মোটর চালিত বোট নিয়ে ভারত মহাসাগরে ভেসে চল্লাম উদ্দেশ্য ল্যাম্বক (Lambok) বা Labuan Bajo ফ্লোরাসাইল্যণ্ডে র কাছাকাছি কোন নির্জন দ্বীপে যাওয়ার কারন এখান থেকে গোপনে একা সমীক্ষা চালান যাবে। সন্ধ্যার কিছু আগে একটা অজানা দ্বীপে এসে উঠেছি। সাথে শুকনো খাবার দাবার,টর্চ্চ, আগ্নেয়াস্ত্র, ঔষধপত্র,খাবার জল, সবই মজুদ আছে,দিন ১০ ভালোই কেটে যাবে, তার মধ্যে এখানকার কাজ সেরে ফেলবো,তারপর আমার দেশ অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন এ ফিরে যাব।আমার এবারের গবেষণার বিষয় বিগত ৪০০ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন সব প্রাণী আর উদ্ভিদের পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিলুপ্তির মূল কারন খুঁজে বার করা, সেই সাথে এখন ও টিকে আছে বিপন্ন এমন প্রাণী উদ্ভিদদের রক্ষা করা।এই কাজটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং বিপদ সংকুল। সাথে অন্য সঙ্গী নেওয়াও কিছু অসুবিধা আছে, কারণ তাতে অন্য বিপদ বাড়বে, আমার অনুসন্ধান বিঘ্নিত হবে।নাম জাহির করার জন্য সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে।মানুষের লোভ,চোরা শিকারীর আক্রমণ আর অতি উৎসাহ বিপন্ন করে তুলবে এই সব বিপন্ন প্রাণীদের জীবন যাত্রা ইতি মধ্যে আমি নিউজিল্যাণ্ডের স ন্নিকটস্থ দ্বীপ সমূহ ঘুরে এসেছি এবং তথ্য সংগ্রহ করেছি মোয়াস (MOAS) কিভাবে বিলুপ্ত হয়েছে।মানুষের ভোজন লিপ্সার বলি হয়েছে ডোডো পাখি। শেষ বলি ১৬৮১ খৃষ্টাব্দে,ভারত মহাসাগরের ম্যারিটীটাস(Maurititus) দ্বীপে ৫০ পাউণ্ডের মতন ওজন ছিলো এক একটার।অতিকায় মোয়াস প্রায় ২০০কেজি ওজন ছিলো,২থকে ৩ মিটার উচ্চতার এমুর মতন দেখতে উড়তে পারত না,হাজার বছর আগে নিশ্চিহ্ন হয়েছে, মানুষের লোভের বলি এরাও (Tasmarian Tiger Wolf,The Carrabian Monk Seal,Hairy eared dwarf lemur ) বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিগত ৪০০ বছরে ৭২৪ রকম জানা প্রাণী যার ৯০%উত্তর অস্ট্রলিয়ার দ্বীপের বাসিন্দা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন ইন্দোনেশিয়ার কোমোডর দ্বীপের এই প্রাণী কোমোডর ড্রাগন এরাও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।মানুষের চোখ পরেছে ,এদের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ভালো কথা কিন্তু নিরিবিলি দ্বীপে বসবাস কারী প্রাণীরা মানুষের উপস্থিতিতে, সান্যিধ্যে, রোগগ্রস্থ হয়ে পড়ছে,অস্থির হচ্ছে জীবন যাত্রা,মারা পড়ছে,একে এদের খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে, তাই খোঁজ খবর নিতে এসেছিলাম গোপনে প্রকৃত এখন কি অবস্থা এদের। ইন্দোনাশিয়ার চারটি দ্বীপে Komodo,Flores,GiliMotang,আর Padar এদের দেখাযায়, এই সর্ব বৃহৎ গোসাপের মতন দেখতে জীবন্ত সরীসৃপ কোমোডর মনিটর,যকে সবাই কোমোডর ড্রাগন বলে।বিশাল প্রায় ১২ ফুট লম্বা ১৩৬ কিলোগ্রাম অব্ধি ওজনের পাওয়া গেছে। সারা গা আঁশে (মোটা চামড়ায়) ঢাকা ভয়ংকর সরীসৃপ লম্বা সরু লিক লিকে চেরা সাপের মতন উজ্জ্বল লালাভ জিভ।অনেকেই মনে করে চীনের ড্রাগনের একটি প্রতিরুপ তাই এর নাম কোমোডো ড্রাগন।ঐ চারিটি দ্বীপে বহু লোক জনের আনাগোনা তাই অন্য একটা নির্জন দ্বীপ যেখান থেকে আমি একান্তে থেকে ওইসব দ্বীপেও প্রয়োজনে নজর রাখতে পারি বেছেএকটি আশ্রয় যেখনে তাঁবু ফেলে দু চার দিন থাকতে পারি তার ব্যবস্থা করে নিয়েছি, সমুদ্র তট থেকে কাছেই জঙ্গলের ধারে পাশেই পাহাড়,পাথরের অনেক ঢিবি আছে। জঙ্গলের থেকে সংগ্রহ করে শুকনো কাঠ রাখলাম রাতে তাঁবুর চারধারে আগুন জ্বালিয়ে রাখবার জন্য। নির্জন দ্বীপ যেখানে সন্ধ্যা নেমে আসে তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা নামতেই জংগলে প্রথমে ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর অচেনাপোকা মাকড়ের ডাক।সন্ধ্যার মুখে গাছে নানা রকম পাখ পাখালী কিচির মিচির শব্দ শুনেছি।জঙ্গলের ঝোঁপে সহস্র জোনাকি জ্বলছে,একটু রাত বাড়তেই ওই পাখির ডাক বন্ধ, নিস্তব্ধ চার ধার, মাঝে মাঝে জঙ্গলের মধ্য থেকে কর্কশ কোন জন্তুর চিৎকার।আমি অনেক জঙ্গলে রাত কাটিয়েছি তাই জানি কি ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে সারাক্ষণ থাকতে হয়।কোমোডোর ড্রাগন হিংস্র মাংসাসী প্রাণী হলেও মানুষ কে সাধারনত আক্রমন করেনা এড়িয়ে চলে। প্রথম দিন আর রাত মোটামুটি নির্বিঘ্নেই কাটলো। আজ দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে ভালোই কাটছে সকালে সমুদ্র থেকে কিছু সার্ডিন আর ম্যাকারেল জাতীয় মাছ ছিপে ধরে পুড়িয়ে খেলাম। এই দ্বীপটা ঘুরে বুঝলাম এটাতে কোমোডর ড্রাগন না থাকলেও পাশের দ্বীপ গুলো থেকে খাবারের খোঁজে এখানে আসে।কোমোডোর ড্রাগন ভালো সাঁতার কাটে, ডাঙায় ২০ কিমি বেগে দৌড়তে পারে।এই নির্জন দ্বীপে তেমন কোন হিংস্র বড় প্রাণী চোখে পড়েনি। কোমোডর ড্রাগন হরিণ,বুনো শুয়োর,মেরুদণ্ডী অমেরুদণ্ডী প্রাণী মেরে খায়, দ্বীপ গুলিতে এদের খাদ্য কমেআসছে।এরা পাহাড়ের গর্ত্তে বাস করে।
রাত ৯টা চারপাশ নিস্তব্দ।আমার হাত ঘড়িতে ফ্লুরোসেন্ট ফস্পোহ্যালাইডের কোটিং থাকায় রাতের বেলায় কটা বাজে ঘড়ি দেখতে অসুবিধা হয়না।আমি সাথে নাইট ভিশন দুরবীনটা নিয়ে এসেছি, এটাতে রাতেরবেলা চারপাশ ভালো মতন পরিষ্কার দেখা যায় যেহেতু IR(ইনফ্রারেড) লেন্স লাগানো আছে।আজ বোধ হয় পুর্ণিমা-চারপাশে চাঁদের আলোয় এমনিতেই সব কিছুই ভালো মতন দেখা যাচ্ছে।কোন কিছুই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা।আমি রাতের হাল্কা খাবার খেয়ে নিলাম।যাতে ঘুম না পায়, অকাতরে ঘুমিয়ে না পড়ি তাই সজাগ থাকার জন্য কিছু মজার ধাঁধা আর খেলনার মতন জিনিস সাথে নিয়ে এসেছি,তাতে মন সংযোগ করে ঘুম তাড়ানোর ব্যবস্থা।আমার সাথে দুটো আগ্নেয়াস্ত্র একটা রিভলবার অন্যটা শর্টগান।এছাড়া একটা বর্শার মতন অস্ত্র আছে যেটা অনেক বেশী কাজে লাগে।তাঁবুটা গাছের ডালপালাঝোপ ঝাড় দিয়েঢেকে ক্যমোফ্লেজ করা।বাইরে একটু দূর দিয়ে গোল করে তাঁবুর চারপাশ ঘিরে আগুন জ্বলছে ।কোন জন্তু জনোয়ার বন্য প্রাণী না কাছে আসে। আমি তাঁবুর মধ্যে ফোল্ডিং হাল্কা ইজি চেয়ারে বসে পুরো শরীর ঢাকা মোটা জ্যকেটে। আমি জঙ্গলের শোভা দেখছিলাম মন দিয়ে।পাশেই নাইটভিশন বাইনোকুলার ,,আগ্নেয়াস্ত্র সব গুছিয়ে রাখা আছে।হঠাৎ কাছেই একটা বড় গাছের মাথায় কিছু বানর বা ঐ জাতীয়প্রাণী অস্থির ভাবে চেঁচামেচি, ঝুপঝাপ আওয়াজ করে ঊঠল। আমি সতর্ক হলাম কারন কোমোডোর ড্রাগন এদের কাছে পরিচিত জী্ এদের দেখলে এরা এত অস্থির হয়ে উঠবেনা।নিশ্চয় কোনো অজানা বা ভয়নঙ্কর প্রাণী জীব জন্তু কাছাকাছি কোথাও এসেছে, তারই আভাষ পেয়ে এরা চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কোমোডোর ড্রাগন সম্পর্কে যে তথ্য আমার কাছে আছে তাতে আমি জানি নিজে থেকে এসে ওরা মানুষ কে আক্রমণ করবেনা-যদিও সেপ্টেম্বর মাসে এরা ডিম পাড়ে।এই পৃথিবীর বৃহত্তম জীবিত স্বরীসৃপটির লালা অতি বিষাক্ত,কামড়ে বড় জন্তুও অবসন্ন হয়ে পড়ে মারা যায়।ওরা বহু দূর থেকে প্রায় ১কিলোমিটারের বেশী দূর থেকে রক্তের গন্ধ পায়। দ্বীপের অন্য প্রাণীরা এদের স্বভাব জানে তাই এদের দেখে এমন আতঙ্কিত হয়ে এই আচরণ করার কথা নয়।আমি তাই বিশেষ সতর্কভাবে লক্ষ্য করতে লাগ লাম কি হয়? হঠাৎ একটা সোঁ সোঁ করে জোরে হাওয়া বওয়ার মতন আওয়াজ ফাঁকা সমুদ্র ও পাহাড়ের মিলন হয়েছে তটের সেই দিক থেকে এই দিকেভেসে আস্তে লাগলো -আওয়াজটা ক্রমশঃ জোর হতে লাগলো। গাছের মাথায় পশু পাখির আওয়াজ থেমে গেছে, দেখি একটা কালো মতন প্রকাণ্ড জন্তু বাদুরের মতন ধেয়ে আসছে,মনে হল মাটির ও সমুদ্রের জলের থেকে কিছুটা ওপর দিয়েই ভেসে আসছে -বুঝলাম ডানা ঝটপটানির শব্দ হচ্ছে সাথে তীব্র বেগে হাওয়া কাটানোর শব্দ।নাইট ভিশন চোখে লাগালাম-অবাক ওটা কি ? একটা প্রকাণ্ড কোমোডর ড্রাগন জানি ঊড়ে আসছে তার গায়ে দুটো পাখনা-মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে উজ্বল লাল আভা যুক্ত চেড়া লম্বা সরু লিক লিকে জিভটা লক লক করে মুখ থেকে বেড়িয়ে আসছে যেন আগুনের হল্কা ।বুঝলাম এটাই আসল ড্রাগন।চীন,জাপান,কোরিয়া,ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশীয়া দেশের রুপকথায় এদের উল্লেখ আছে.১৯১৯ খৃষ্টাব্দে এল্লি অটোস্মিথ তাঁর ইংরাজী বই Evolution of the Dragon বইতে এই প্রাণীর উল্লেখ করেছেন, তার আগেই ১৯১০ সালে প্রথম ইউরোপীয় রা কুমির দ্বীপ থেকে এখন যেটাকে কোমোডর আইল্যাণ্ড বলে সেখানে কোমোডর ড্রাগনের সন্ধান পায় বলে প্রকাশ করে। আসল ড্রাগনের অস্তিত্ব আজ অব্ধি প্রমানিত হয়নি-এটা কাল্পনিক জীব বলেই সারা বিশ্ব জানে, অথচ আজ আমার সামনে ই উপস্থিত সেই ভয়ঙ্কর প্রাণী আমি কি করব এখন জানিনা। ওই প্রাণীটা আমার তাঁবুর দিকেই উড়ে আসছে, কিন্তু মনে হয় তাঁবুটা বুঝতে পারিনি-ক্যমোফ্লেজ করে রাখার জন্য বা চারপাশে আগুন জ্বলছে বলে।ভয়ে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে জানিনা আমি জ্ঞান হারাবো কিনা? কোন ক্রমে এই কথা গুলো লিখে রাখছি। খুব আতঙ্কিত অবস্থায় ডায়েরীতে এই শেষের দিকের লাখা গুলো তারপর অস্পষ্ট কিছু লেখা আঁকা। এরপর বেশ কয়েকটা পাতা ছাড়া কিছু লেখা নেই মনে হয় কিছু লেখার বিষয় ছিলো পরে লিখবেন ভেবে ছিলেন আর লেখা হয়ে ওঠেনি।
এরপর ডায়েরীর পাতায় জীব বিদ্যার অনেক তথ্য,বিস্তারিত বিবরণ,বেশ কিছু পাতায় নানা রকম ম্যাপ, গাছ পা লা, ইন্দোনেশীয়ার অন্তর্গত বহু অজানা দ্বীপের অবস্থান উল্লেখ আছে।তারপর আবার কয়েকটা পাতা ছেড়ে লেখা শুরু।আমার উদ্দেশ্য আংশিক সফল কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার,আমি যে দ্বীপে এসে এই প্রকৃত ড্রাগনের সাক্ষাৎ পেলাম, সেখনে রাত্রে জ্ঞান হারানোর পর পরদিন স ন্ধ্যায় আমার যখন সম্বিত ফিরে আসে দেখি তাবু লণ্ডভণ্ড ,আমি একটা গোলাপী সমুদ্র তটে অচৈতন্য পড়ে ছিলাম,আমার পকেটে ছিলো হ্যাণ্ড বুক আর কলম,ছিন্নভিন্ন তাঁবুর পাশে খাবার জলের বোতল, একটু দূরে ছিটিয়ে পড়ে আছে আমার আত্ম রক্ষার অস্ত্রগুলি,কিছু ঔষধপত্র, ছেঁড়া কিছু কাগজপত্র ছেঁড়া জামা কাপড়ের টুকরো।মোটর বোটটা তে এসে কোন রকমে উঠতেই চারপাশ তাকিয়ে দেখার আগেই ঊঠলো প্রবল ঝড়,সামুদ্রিক ঝড় সাথে দ্বীপের দিক থেকে ধেয়ে আসা বালির ঝড়,আমার মোটর বোট মোচার খোলার মতন কোথায় ভেসে চলল জানিনা,সারা আকাশ কালো,সাথে টর্চটাও নেই হারিয়েছি-এখন নিরুপায়,আবার আমি ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞান হারালাম। মাঝে এক মাস অতিক্রান্ত,আমাকে সমুদ্রে মাছ ধরার জেলেরা , ভাঙা মোটর বোটে লাইফবেল্ট পরা (কখন বোটে অজান্তে পরে নিয়েছিলাম ইশ্বরের কৃপায়)অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে, পকেটে পরিচিতি পত্র ছিলো তারা আমাকে East Timor এ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে খানিক টা সুস্থ করে আমাকে যত্ন সহকারে অস্ট্রেলিয়ায় DARWIN এ নিজের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।কিন্তু আমার কথা কেউ ই বিশ্বাস করেনি,বলেছে কোন কারনে ভয়ে স্মৃতিবিভ্রম ঘটেছে, আমি মানসিক রোগগ্রস্থ হয়ে পরেছি। আমার বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি যে দ্বীপের কথা, যেখানে অবস্থিত বলেছি তা নাকি অবাস্তব, অমন কোন দ্বীপ ই নাকি ওখানে নেই।ইন্দোনেশীয়ার Pink beach (NusuaTengra, Barat/Bima) তে এমন কোন জীব বা পরিবেশ নেই,আমি যেমনটি দেখেছি বা বলেছি এটা নাকি সম্পুর্ণ কাল্পনিক। ঐ সব অঞ্চল সবার চেনা জানার মধ্যে পড়ে তাই আমার তথ্য কেউ ই বিশ্বাস করেনি। এরপর ডায়েরীর শেষ দিকে লেখা। আমার শরীর খুউব খারাপ, বুঝতেই পারছি আর বেশী দিন আয়ু নেই সময় হয়ে এসেছে চলে যাবার। আমার অনুসন্ধান কাজ অসম্পুর্ণ থেকে গেলো।আমার ব্যক্তিগত ভাবে জীবন স্বার্থক কারণ আমি স্বচক্ষে ঐ কাল্পনিক জীব উপ কথার ড্রাগন দেখেছি। আমার বিশ্বাস এই রকম বহু পুরানে,রুপকথায় স্থানীয় লোক কথায় বর্ণিত বহু কাল্পনিক প্রাণীর অস্তিত্ব প্রকৃত পক্ষেই পৃথিবীতে ছিলো,আছে ,হয়ত আগামী দিনেও কোথাও কোথাও খোঁজ মিলবে।অনেক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তবুও খুঁজে দেখলে হয়ত মিলতে পারে এম ন অবশিষ্টকিছু প্রাণীর যা বিস্ময়কর। এজন্য নির্লোভপ্রকৃত বিজ্ঞান সাধকের প্রয়োজন। ইন্ডিয়াতে আছে,আমার বন্ধু ডক্টর উকিল, সেইএকমাত্র পারলে পারবে,আমার মতন এই ভাবে খুঁজে উদ্ধার করতে প্রকৃত সত্যটা ,তাঁকে সব তথ্য পাঠিয়ে দেব। (এই লেখার বেশী ভাগ তথ্য সঠিক কোমোডর ড্রাগন এখন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রাণী,কোমোডর ড্রাগন দেখার জন্য বিশেষ ভ্রমন ব্যবস্থা,এখন এদের সংরক্ষন করা হয়েছে, সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু এদের সংকটাপন্ন জীব তালিকা ভুক্ত রাখা হয়েছে। প্রকৃত ড্রাগনের অস্তিত্ব প্রমানিত হয়নি)
Edit
আকাশযানের বিপদ
By Tapan Kumar Bandyopadhyay on Monday, April 20, 2015 at 3:11pm
Daktar Ukil jethur diary theke
Updated about a week ago
PublicFriendsOnly MeCustomFamilyHooghly-Chinsurah, West Bengal, India AreaGo Back
আকাশ যানে বিপদ' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যে কাহিনীটির উল্লেখ করছি এটি ডাক্তার উকিল জেঠুর কাছ থেকে পাওয়া ডায়েরী থেকেই উদ্ধৃত। ডায়েরীতে লেখাটি অত্যন্ত তথ্য বহুল আর ইতিহাসের মতন সন তারিখসহ উচ্চ কারিগরী পদার্থ বিদ্যার আলোচনা,হিসাব,অংকন, সংকেতেই ভর্তি, যথা সম্ভব সেগুলি বাদ দিয়ে ,আর যেমন যেমন লেখা ছিলো ঠিক সেই মত ই উদ্ধৃত করলাম। কারন ঐ শিক্ষা মুলক আলোচনা গল্প হিসাবে সুখ পাঠ্য নয় তাই বাদ দিলাম ,এই লেখাটা অনেকের কাছে তত্ত্বের কচ কচি মনে হতে পারে আমায় ক্ষমা করবেন।আজ তিন মাস যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁচেছি। ত্রিমাধ্যমে ( জল,স্থল,অন্তরীক্ষ) বিচরণক্ষম যান প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছি।আমার কাঙ্খিত এই যানটি বানানোর জন্য আমি দিবারাত্র ব্যস্ত ছিলাম, এটাই আমার ধ্যান জ্ঞান।এখন এটা জলে,স্থলে,অন্তরীক্ষে সমান ভাবে স্বছন্দে বিচরণ করতে পারবে অথচ এটা অদৃশ্য থাকবে লোকচক্ষুতে যা কোনভাবেই কোন যন্ত্র পরীক্ষক, তরঙ্গ,শক্তি দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভবপর হবেনা। ইতি মধ্যে আমি ছোট খাটো এই রকম অদৃশ্যপ্রায় বা কোন নির্ণয়ক যন্ত্রে ধরা পড়েনাএমন বহু যন্ত্র প্রস্তুত করেছি। আসলে আমি এক ধরনের রঙ আর পদার্থ বানিয়েছি যা সমস্ত শক্তি-তরঙ্গকে প্রাথমিক ভাবে শোষন করে তারপর অপর পৃষ্ঠ বা তল দিয়ে নির্গত করে দেয় ফলে ঐ পদার্থের মোড়কে কিছু থাকলে তা কোন ভাবেই কোন রশ্মি বা তরঙ্গ নির্ণয়ক দ্বারা চিহ্নিত করা যায়না, ধরা পড়েনা। এখনে সৌর শক্তিকে বেশী মাত্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করে এমন একটা ছোট মহাকাশ যান বানানো বেশ পরিশ্রম ছিলো, যাক কাজ হয়ে গেছে।আমি সৌর শক্তিকে বিপুল ভাবে শক্তির ভাণ্ডার হিসাবে ব্যবহার করতে চাইতাম,সব কিছুই চলবে সৌর শক্তিতে-তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর শক্তির সংগ্রাহক ,সঞ্চয় ব্যবস্থা আর শক্তির রুপান্তর ঘটানোর যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি তৈরী করতে, গবেষণায় ব্যস্ত ছিলাম। কিভাবে করা যায় ?ছিলো এক মাত্র চিন্তা।১৯০৪ সালে আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বোস প্রাকৃতিক গ্যালেনা (Galena) ও অন্য পদার্থ রেডিও প্রস্তুতে ব্যবহার করেন (Cats-whisker detector),১৯০৬ সালে LED (Light Emiting Diode) আবিষ্কার আমাকে পথ দেখায়। আর মহামান্য আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ১৯০৫ সালে যে নুতন দিগন্তের সন্ধান দেখায়, তার ভিত্তিতে ১৯৫১ সালে প্রথম সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড -১ উৎক্ষেপনে।ইতিমধ্যে ১৮২১ সালে বার্লিনের বৈজ্ঞানিকের পেলশিয়ার সিবেক ক্রিয়া থেকে Thermo electric effect, Auto thermo electric Generator(ATGs), polymerise chain reaction(pelter effect) Radio isotopes , Hyper physics(semiconductor cocepts) জন্ম নেয়। আমি সৌর বিদ্যুৎ কোষ,আলোক বিভব ক্রিয়া (photo Voltaic Effect) ব্য্যবহারের জন্য আমি সম্প্রতি যে কয়েকটা বিশেষ ধাতু সংকর প্রস্তুত করেছি, তার মধ্যে ১)ফস্পো গ্যলিনিয়াম জারমিনেট ২)সিলিকো সেলিনিয়াম আরসিনেট ৩)কিউপ্রো ফেরাম জিঙ্কেট ৪)ম্যাগ্নেসিয়াম কন্সট্যানটাইন বোরেট বিশেষ উপযোগী হয়েছে ।আমি এখানে একটা বিশেষ জিনিষ লক্ষ্য করলাম, আমার তৈরী এই বিশেষ ধাতু সংকর মধ্যে যে কোন দুটির মধ্যে Thermal Energy Conversion / Thermo ElectricPower ক্ষমতা অনেক বেশী ।যেটা আগে অন্যনেকটাই অল্প ছিলো । এই ধাতু সংকর মধ্যে যকোন দুটিকে একত্রিত করে তার এক পৃষ্ঠ কে উত্তপ্ত করলে অপর ধাতু সংকরের পৃষ্ঠটি তত ঠাণ্ডা হয়ে যায়, ফলে একাধারে এটিকে কোন বস্তুকে ঠাণ্ডা করার কাজে যেমন ব্যবহৃত হবে সেই সাথে তড়িৎ উৎপন্ন হবে।সুর্য্যের আলো আর তাপ শক্তি থেকে প্রভুত অন্য শক্তি যেমন তড়িৎশক্তি ,যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যাবে। আমি ডোপায়নের মাধ্যমে বেশ কিছু অর্ধপরিবাহীর ক্ষমতা,বৈশিষ্ট অভাবনীয় ভাবে বদলে দিতে সক্ষম হয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই বানানো এই যানটি নিয়ে পরীক্ষামুলক সফরে বেরুবো।আজ আমার তৈরী যানে করে পাড়ি জমালাম মহাকাশে ,তবে গতি নিয়ন্ত্রিত করা আছে যাতে যান টি পৃথিবীর অভিকর্ষজ আকর্ষণ ছাড়িয়ে মুক্তি বেগ না পেয়ে যায়, তাহলে ফেরা মুস্কিল হয়ে যাবে।মুহুর্তের মধ্যে মহাশূণ্যে পৌঁছে গেলো আমার এই নভঃযান। এবার গতি নিয়ন্ত্রন করে আবর্তন শুরু করলাম ,পৃথিবীর চারপাশে।আমি সবার কাছে অদৃশ্য থাকলেও আমার কাছে সব ই দৃশ্যমান।আমার পথ নির্দেশক যন্ত্রে আমি আমার অবস্থান জানতে পারছি, মহাকাশে আতঙ্ক কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole)। আমার কাছে পুরো তথ্য নেই শুধু জানি বাড়মুডা ত্রিভুজের অন্তর্গত মহাকাশে এমন অনেক কৃষ্ণ গহ্বর (Black Hole) আছে।আমি সতর্ক দু চক্কর মেরে নেমে যাবো আমার উৎক্ষেপন কেন্দ্র ঝাড়্গ্রামে।কিন্তু একি বিপদ পুরো এক চক্কর এখনো হয়নি সামনে একটা প্রকাণ্ড অগ্নিগোলক বিপুল গতিতে এসে ধাক্কা মারলো আমার মাহাকশের যানে, বিকট শব্দ, তারপর দেখি আমার এই যানে ডিসপ্লেসিস্টেমে গণ্ডগোল, কোথায় আছি? পৃথিবী থেকে কতোটা উপরে তাও জানিনা, কিছুই বুঝতে পারছিনা।বাইরেটাও অন্ধকার।হঠাৎ গোঁও করে সামান্য একটু ঝাঁকুনি দিয়ে যান টা উল্টো দিকে যেতে শুরু করলো কিছুটা গিয়ে নীচের দিকে, আমি আতঙ্কিত, এভাবে চললে আকাশে কোন বিমানের অন্য মহাকাশ যানের সাথে ধাক্কা লাগাও অসম্ভব নয়।এখনি মাটিতে নামা দরকার কিন্তু কি ভাবে নামবো কোথায় নামবো?যানের ভিতরে আলো জ্বলছেনা কেবল মাত্র আপৎকালীন জরুরি ব্যবস্থা ,ইঞ্জিন রুমে আলো জ্বলছে। আমার সাথে সুপার পাওয়ার টর্চ/স্পট ল্যাম্প আছে। বটম ভিউ ফাইণ্ডার উইন্ডো দিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে নীচের দিকে চেয়ে আতঙ্কে বুক শুকিয়ে গেলো অনেক নীচে নীল সমুদ্র মতন দেখা যাচ্ছে।কিন্তু কোন সমুদ্র ? কিছুই বোঝার উপায় নেই, চারপাশেই জল আর জল, বুঝলাম এখানে রাত নেমেছে, আবার যান টা বেশ গতিতে নীচে নামছে এক্ষুণি সমুদ্রে আছড়ে পড়বে।তার পর কি ঘটবে?যান টা কি আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে? এটা যদিও বিশেষ ভাবে প্রস্তুত আঘাত ঘর্ষণ সইতে পারার কথা।কিন্তু আজ এটা যে অদ্ভুত ব্যবহার করছে আমি তাতে ভীত আস্থা হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপর? -------------একটা প্রচণ্ড আওয়াজ সাথে ঝাঁকুনি বুঝলাম সমুদ্রে আছড়ে পড়েছে, আমি ইঞ্জিন রুমে ইমারজেন্সী ব্রেক ধরেই ছিলাম ছিটকে পড়লাম যান টা ডুবতে শুরু করেছে আমি কোনো রকমে উঠে লিভার ঠেলে মহাকাশ যান অপশন থেকে ডুবো জাহাজ অপশনে নিয়ে গেলাম ওমা দেখি যান টা এবার ঠিক চলতে শুরু করলো। জলের তলায় দেখার সব ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলো আপনা আপনি। অক্সিজেন জেনারেটর সমুদ্রের জল থেকেই অক্সিজেন তৈরী করে যানের অভ্যন্তরে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা রক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু জলের মধ্যে আমি কি দেখছি? এটা কোথায়?আমার সামনে ঘন নীল জল তার মধ্যে বিশালাকায় সব জন্তু একটারও নাম পরিচয় জানিনা কখনো কোথাও ছবি,তথ্য পাইনি। পৃথিবীতে কেঊ জানে বলেও মনে হয়না। এ সব অজানা,সমুদ্রের নীচে এক অজানা জগৎ । সামনে প্রকাণ্ড তিমি মাছের মত জন্তু চারটে পা কচ্ছপের মতন মুখটা গণ্ডারের মত। ওপাশে একটা সিহর্স আর স্টার ফিসের মিলিত পেল্লায় জন্তু। জলজ উদ্ভিদ গুলো অস্বাভাবিক, খুউব সুন্দর। রঙ বেরঙের ফুল জানিনা এগুলো জলজ উদ্ভিদ না প্রাণী কারন জলের নীচে এমন সুন্দর সুন্দর দেখতে ফুলের মতন প্রাণীও হয় তারা আবার ভয়ঙ্কর বিষাক্ত হয়। এমন কি হিংস্র মাংসাসীও হয় ।এই জন্য ই স্কুবা ড্রাইভিং করার সময় সতর্ক করে দেওয়া হয় যাতে ফুল দেখে আকৃষ্ট হয়ে কেউ বিপদে না পড়ে।আমি যানের গতি খুউব কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে সব খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। জলের নীচেও দেখি বিশাল বিশাল পাহাড়, গাছপালা রয়েছে। বড় বড় পাখনা ওয়ালা সাপ দেখলাম। আমি যখন এই সব দেখতে বিভোর আবার প্রচণ্ড ধাক্কা বুঝে উঠলাম না কিসের সাথে চারপাশে কোন পাহাড় গাছপালা ছিলোনা তাহলে কোন জলজ প্রানী অতিকায় কোন জন্তুর সাথে হবে।এই ধাক্কায় আবার বিভ্রাট ডুবোজাহাজ দিকবিদিক শূন্য ঊর্ধ গতিতে ছুটে চলতে শুরু করলো কোন দিকে জানিনা। কত ক্ষন কত ঘণ্টা কিছুই জানিনা। আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম।আমার যানের কি হোলো? আমাকে অচৈতন্য অবস্থায় আটলাণ্টিক মহাসাগরের এক অখ্যাত দ্বীপের উপকুলে পড়ে থাকতে দেখে একটি বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজ উদ্ধার করে।সাতদিন বাদে জ্ঞান ফেরে ,তখন আমি আফ্রিকামহাদেশের নামিবিয়ার উইণ্ডহক (Windhock) এর শহরের হাসপাতালে শয্যাশায়ী চিকিৎসা চলছে যমে মানুষে টানাটানি, আমি বেঘোরে ভুলবকেছি অনর্গল। মহাশূণ্যে অগ্ন্যুপাত-জলের তলায় ডাইনোসর ।আমি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে প্রায় মাস খানেক বাদে ঝাড়্গ্রামে আমার বাড়ি ঊন্মেষে ফিরেছি। বাড়ি ফিরে দুদিন বাদে ডায়েরী লিখতে বসলাম।
৭)
অজানা দ্বীপের ড্রাগন
By Tapan Kumar Bandyopadhyay on Monday, April 20, 2015 at 2:45pm
অজানা দ্বীপের ড্রাগন' তপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যে কাহিনীটির কথা লিখছি এটাও ডাক্তার উকিলজেঠুর ডায়েরী থেকে পাওয়া কিন্তু ওনার নিজের জীবনে ঘটা ঘটনা নয়।উনিও একটা ডায়েরী পেয়েছিলেন সেটার কাহিনী এটা।এটা ডাক্তার উকিল জেঠুর ডায়েরীতে যেভাবে লেখা ছিলো সেই মতন ই উল্লেখ করছি। আজ এক অদ্ভুত ঘটনা,বিকালের পার্শেলে দেখি আমার এক বন্ধু বিখ্যাত জীব বিজ্ঞাণী ডঃ লিলি এডামসন অস্ট্রেলিয়ার 'ডারউইন'(Darwin) থেকে আমাকে একটি মাঝারি খয়েরী রঙের ডায়েরী-ডায়েরী না বলে হ্যান্ডবুক বা পকেট বুক বলাই ভালো, পাঠীয়েছেন সাথে একটা ছোট চিঠি তাতে লেখা 'আমার প্রিয় ডক্টর উকিল, আশা করি তোমার খবর কুশল,ভালোই আছো-কদিন আগে'Mistry of the Nature' পত্রিকায় তোমার লেখা Extinet pices inthe World নামে প্রকাশিতআর্টিকেল টি পড়লাম,বেশ ভালো লাগলো ,তুমিও যে এই প্রাণীকুল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে এত ভাবিত এবং তথ্যপুর্ণ ঘটনা সমুহের উল্লেখ করেছ তাতে আমি ভীষণ খুশী। তোমার মতন বিরাট মাপের বড় মনের বিজ্ঞানীরা যদি এই বিষয় নিয়ে সমানএকদিন ভাবিত হয়,কিছু করেন, তা হলে বিশ্বের উপকার হবে। অন্যথায় লোভী মানুষেরা যে ভাবে পৃথিবীর বুক থেকে হাজার হাজার প্রজাতির জীব জন্তু,প্রাণী,উদ্ভিদ কে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তাতে সারা পৃথিবী জন মানব হীন মরুভূমিতে পরিনত হবে।আমার অনেক বয়স তার উপর সম্প্রতি একটা ম্যাসিভ এটাকে আমার দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি হারাতে বসেছি, আমি নিজেই বুঝতে পারছি আর অল্প কয়েক দিন আমার আয়ু।আমি চোখ বোজার সাথে সাথে আমার সমস্ত কিছুই পর হস্ত গত হয়ে যাবে-আমার বিজ্ঞান সাধনা ,গবেষণা, সমস্ত কিছুই অন্যেরা গ্রাস করবে।হয়ত এমন লোকের হাতে আমার গবেষণার নথী পড়বে যারা আমার চিন্তা ভাবনা ইচ্ছার সম্পূর্ণ পরিপন্থী,অর্থের লোভ,খ্যাতির লোভে জলাঞ্জলি দেবে মহান উদ্দেশ্যকে,ধ্বংস করে দেবে পৃথিবীর জীব-প্রাণী জগতের আবহ পরিবেশকে। তাই আমি চাই তোমার মতন একজন মহান আদর্শবান সৎ বিজ্ঞানীর কাছে আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান যে তথ্যটি আমি সংগ্রহ করেছি,অনুসন্ধান করেছি,তোমাকে একান্তে দিয়ে যেতে,তুমি একে রক্ষা করবে নিশ্চিহ্নপ্রায় এমন প্রাণীকুল কে পুর্ণজীবিত করতে-আমার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে। আমি জানি তুমি আমার অনুরোধ রাখবে।সাথে আমার হাতবইটি পাঠালাম যাতে কিছুটা আমার দিনপঞ্জীকার মতন কিছুটা আমার মতামত অভিব্যাক্তি নিয়ে বর্ণনা আছে। তুমি আমায় জানো তাই অবিশ্বাস করবেনা,গুরুত্ব দিয়েই দেখবে বিষয়টা।তোমার প্রতি আমার অনেক আস্থা,আমি তোমাকে শ্রদ্ধাকরি,তোমার জীবন যাত্রা,চিন্তাভাবনা, সব ই মহান।আমি তোমার মতন এত জ্ঞানী বিজ্ঞানমনষ্ক ঋষিতুল্য মানুষ আর দেখিনি,তাই আমার অন্তিম ইচ্ছা তুমিই পুরণ করবে এটা আমার বিশ্বাস । আমার হাতে সময় বেশী নেই জানিনা তোমার হাতে এই চিঠি আর হাতবইটা পৌঁছানোর আগেই হয়ত আমার পরপারের ডাক পৌঁছে যাবে। ইশ্বর তোমার মঙ্গল করুন,সহায় হউন।তোমার একান্ত লিলি এডামস্যন।" আমি চিঠিটা পড়ে, উল্টেপাল্টে হ্যাণ্ডবুক টা দেখলাম- ছাড়া ছাড়া কিছুটা কিছুটা লেখাতে ভরা, মাঝে মাঝে আঁকা,কিছু বন্যপ্রাণী,গাছপালার ছবি। বেশ কিছু বৈজ্ঞাণিক তথ্য।বুঝলাম খুঁটিয়ে পড়তে হবে।বিষয় টা আকর্ষনীয় এবং পুরো তত্ত্ব ও তথ্য যাচাই করতে সময় লাগবে।আমি এখন একটা বিশেষ গবেষণায় ব্যস্ত।কিভাবে সৌর শক্তিকে বেশী মাত্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করে এমন একটা ছোট মহাকাশ যান বানানো যায় যেটা জলে,স্থলে,অন্তরীক্ষে সমান ভাবে স্বছন্দে বিচরণ করতে পারবে অথচ এটা অদৃশ্য থাকবে লোকচক্ষুতে যা কোনভাবেই কোন যন্ত্র পরীক্ষক, তরঙ্গ,শক্তি দ্বারা চিহ্নিত করা সম্ভবপর হবেনা।অনেকটাই কাজ হয়ে গেছে।অল্প কিছুদিনের মধ্যে ই বানান হয়ে যাবে আমার কাঙ্খিত এই যানটি, তাই আমি দিবারাত্র ব্যস্ত, এটাই আমার ধ্যান জ্ঞান। ইতি মধ্যে আমি ছোট খাটো এই রকম অদৃশ্যপ্রায় বা কোন নির্ণয়ক যন্ত্রে ধরা পড়েনাএমন বহু যন্ত্র প্রস্তুত করেছি। আসলে আমি এক ধরনের রঙ আর পদার্থ বানিয়েছি যা সমস্ত শক্তি-তরঙ্গকে প্রাথমিক ভাবে শোষন করে তারপর অপর পৃষ্ঠ বা তল দিয়ে নির্গত ক রে দেয় ফলে ঐ পদার্থের মোড়কে কিছু থাকলে তা কোন ভাবেই কোন রশ্মি বা তরঙ্গ নির্ণয়ক দ্বারা চিহ্নিত করা যায়না ধরা পড়েনা।আমি সৌর শক্তিকে বিপুল ভাবে শক্তির ভাণ্ডার হিসাবে ব্যবহার করতে চাই,সব কিছুই চলবে সৌর শক্তিতে-তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর শক্তির সংগ্রাহক ,সঞ্চয় ব্যবস্থা আর শক্তির রুপান্তর ঘটানোর যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি তৈরী করতে হচ্ছে।ভাবলাম দু তিন মাসের মধ্যে এগুলি সম্পন্ন হয়ে গেলে ডায়েরীটা নিয়ে ভাবা যাবে।কিন্তু পার্শেল টা হাতে পাবার সাত দিনের মধ্যেই কাগজে দেখলাম ডঃলিলি এডামস্যন মারা গেছেন। মনটা ভীষন ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো।তখন ভাবলাম,দেখি ওনার ডায়েরীতে কি বলতে চেয়েছেন একটু চোখ বুলিয়ে। ডায়েরীর পাতা ওল্টাতেই যা লেখা দেখলাম আমি বিস্মিত হতবাক, রোমাঞ্চিত হলাম।যে ভাবে ডায়েরীতে পেয়েছি সেগুলি একটু সাজিয়ে গুছিয়ে আমার ডায়েরীতে লিখে রাখছি- ওনার লেখার ভাষাতেই।
আমি গতকাল রাত্রে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন থেকে ইন্দোনেশীয়ার বালী দ্বীপে এসে পৌঁছেছিলাম, এখান থেকে জল পথে একাই অভিযান চালাবো আগেই স্থির করা ছিলো তাই ভোর হওয়ার আগেই এখান থেকে সংগ্রহ করা ছোট মোটর চালিত বোট নিয়ে ভারত মহাসাগরে ভেসে চল্লাম উদ্দেশ্য ল্যাম্বক (Lambok) বা Labuan Bajo ফ্লোরাসাইল্যণ্ডে র কাছাকাছি কোন নির্জন দ্বীপে যাওয়ার কারন এখান থেকে গোপনে একা সমীক্ষা চালান যাবে। সন্ধ্যার কিছু আগে একটা অজানা দ্বীপে এসে উঠেছি। সাথে শুকনো খাবার দাবার,টর্চ্চ, আগ্নেয়াস্ত্র, ঔষধপত্র,খাবার জল, সবই মজুদ আছে,দিন ১০ ভালোই কেটে যাবে, তার মধ্যে এখানকার কাজ সেরে ফেলবো,তারপর আমার দেশ অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন এ ফিরে যাব।আমার এবারের গবেষণার বিষয় বিগত ৪০০ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন সব প্রাণী আর উদ্ভিদের পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিলুপ্তির মূল কারন খুঁজে বার করা, সেই সাথে এখন ও টিকে আছে বিপন্ন এমন প্রাণী উদ্ভিদদের রক্ষা করা।এই কাজটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং বিপদ সংকুল। সাথে অন্য সঙ্গী নেওয়াও কিছু অসুবিধা আছে, কারণ তাতে অন্য বিপদ বাড়বে, আমার অনুসন্ধান বিঘ্নিত হবে।নাম জাহির করার জন্য সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে।মানুষের লোভ,চোরা শিকারীর আক্রমণ আর অতি উৎসাহ বিপন্ন করে তুলবে এই সব বিপন্ন প্রাণীদের জীবন যাত্রা ইতি মধ্যে আমি নিউজিল্যাণ্ডের স ন্নিকটস্থ দ্বীপ সমূহ ঘুরে এসেছি এবং তথ্য সংগ্রহ করেছি মোয়াস (MOAS) কিভাবে বিলুপ্ত হয়েছে।মানুষের ভোজন লিপ্সার বলি হয়েছে ডোডো পাখি। শেষ বলি ১৬৮১ খৃষ্টাব্দে,ভারত মহাসাগরের ম্যারিটীটাস(Maurititus) দ্বীপে ৫০ পাউণ্ডের মতন ওজন ছিলো এক একটার।অতিকায় মোয়াস প্রায় ২০০কেজি ওজন ছিলো,২থকে ৩ মিটার উচ্চতার এমুর মতন দেখতে উড়তে পারত না,হাজার বছর আগে নিশ্চিহ্ন হয়েছে, মানুষের লোভের বলি এরাও (Tasmarian Tiger Wolf,The Carrabian Monk Seal,Hairy eared dwarf lemur ) বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিগত ৪০০ বছরে ৭২৪ রকম জানা প্রাণী যার ৯০%উত্তর অস্ট্রলিয়ার দ্বীপের বাসিন্দা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন ইন্দোনেশিয়ার কোমোডর দ্বীপের এই প্রাণী কোমোডর ড্রাগন এরাও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।মানুষের চোখ পরেছে ,এদের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ভালো কথা কিন্তু নিরিবিলি দ্বীপে বসবাস কারী প্রাণীরা মানুষের উপস্থিতিতে, সান্যিধ্যে, রোগগ্রস্থ হয়ে পড়ছে,অস্থির হচ্ছে জীবন যাত্রা,মারা পড়ছে,একে এদের খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে, তাই খোঁজ খবর নিতে এসেছিলাম গোপনে প্রকৃত এখন কি অবস্থা এদের। ইন্দোনাশিয়ার চারটি দ্বীপে Komodo,Flores,GiliMotang,আর Padar এদের দেখাযায়, এই সর্ব বৃহৎ গোসাপের মতন দেখতে জীবন্ত সরীসৃপ কোমোডর মনিটর,যকে সবাই কোমোডর ড্রাগন বলে।বিশাল প্রায় ১২ ফুট লম্বা ১৩৬ কিলোগ্রাম অব্ধি ওজনের পাওয়া গেছে। সারা গা আঁশে (মোটা চামড়ায়) ঢাকা ভয়ংকর সরীসৃপ লম্বা সরু লিক লিকে চেরা সাপের মতন উজ্জ্বল লালাভ জিভ।অনেকেই মনে করে চীনের ড্রাগনের একটি প্রতিরুপ তাই এর নাম কোমোডো ড্রাগন।ঐ চারিটি দ্বীপে বহু লোক জনের আনাগোনা তাই অন্য একটা নির্জন দ্বীপ যেখান থেকে আমি একান্তে থেকে ওইসব দ্বীপেও প্রয়োজনে নজর রাখতে পারি বেছেএকটি আশ্রয় যেখনে তাঁবু ফেলে দু চার দিন থাকতে পারি তার ব্যবস্থা করে নিয়েছি, সমুদ্র তট থেকে কাছেই জঙ্গলের ধারে পাশেই পাহাড়,পাথরের অনেক ঢিবি আছে। জঙ্গলের থেকে সংগ্রহ করে শুকনো কাঠ রাখলাম রাতে তাঁবুর চারধারে আগুন জ্বালিয়ে রাখবার জন্য। নির্জন দ্বীপ যেখানে সন্ধ্যা নেমে আসে তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা নামতেই জংগলে প্রথমে ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর অচেনাপোকা মাকড়ের ডাক।সন্ধ্যার মুখে গাছে নানা রকম পাখ পাখালী কিচির মিচির শব্দ শুনেছি।জঙ্গলের ঝোঁপে সহস্র জোনাকি জ্বলছে,একটু রাত বাড়তেই ওই পাখির ডাক বন্ধ, নিস্তব্ধ চার ধার, মাঝে মাঝে জঙ্গলের মধ্য থেকে কর্কশ কোন জন্তুর চিৎকার।আমি অনেক জঙ্গলে রাত কাটিয়েছি তাই জানি কি ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে সারাক্ষণ থাকতে হয়।কোমোডোর ড্রাগন হিংস্র মাংসাসী প্রাণী হলেও মানুষ কে সাধারনত আক্রমন করেনা এড়িয়ে চলে। প্রথম দিন আর রাত মোটামুটি নির্বিঘ্নেই কাটলো। আজ দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে ভালোই কাটছে সকালে সমুদ্র থেকে কিছু সার্ডিন আর ম্যাকারেল জাতীয় মাছ ছিপে ধরে পুড়িয়ে খেলাম। এই দ্বীপটা ঘুরে বুঝলাম এটাতে কোমোডর ড্রাগন না থাকলেও পাশের দ্বীপ গুলো থেকে খাবারের খোঁজে এখানে আসে।কোমোডোর ড্রাগন ভালো সাঁতার কাটে, ডাঙায় ২০ কিমি বেগে দৌড়তে পারে।এই নির্জন দ্বীপে তেমন কোন হিংস্র বড় প্রাণী চোখে পড়েনি। কোমোডর ড্রাগন হরিণ,বুনো শুয়োর,মেরুদণ্ডী অমেরুদণ্ডী প্রাণী মেরে খায়, দ্বীপ গুলিতে এদের খাদ্য কমেআসছে।এরা পাহাড়ের গর্ত্তে বাস করে।
রাত ৯টা চারপাশ নিস্তব্দ।আমার হাত ঘড়িতে ফ্লুরোসেন্ট ফস্পোহ্যালাইডের কোটিং থাকায় রাতের বেলায় কটা বাজে ঘড়ি দেখতে অসুবিধা হয়না।আমি সাথে নাইট ভিশন দুরবীনটা নিয়ে এসেছি, এটাতে রাতেরবেলা চারপাশ ভালো মতন পরিষ্কার দেখা যায় যেহেতু IR(ইনফ্রারেড) লেন্স লাগানো আছে।আজ বোধ হয় পুর্ণিমা-চারপাশে চাঁদের আলোয় এমনিতেই সব কিছুই ভালো মতন দেখা যাচ্ছে।কোন কিছুই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা।আমি রাতের হাল্কা খাবার খেয়ে নিলাম।যাতে ঘুম না পায়, অকাতরে ঘুমিয়ে না পড়ি তাই সজাগ থাকার জন্য কিছু মজার ধাঁধা আর খেলনার মতন জিনিস সাথে নিয়ে এসেছি,তাতে মন সংযোগ করে ঘুম তাড়ানোর ব্যবস্থা।আমার সাথে দুটো আগ্নেয়াস্ত্র একটা রিভলবার অন্যটা শর্টগান।এছাড়া একটা বর্শার মতন অস্ত্র আছে যেটা অনেক বেশী কাজে লাগে।তাঁবুটা গাছের ডালপালাঝোপ ঝাড় দিয়েঢেকে ক্যমোফ্লেজ করা।বাইরে একটু দূর দিয়ে গোল করে তাঁবুর চারপাশ ঘিরে আগুন জ্বলছে ।কোন জন্তু জনোয়ার বন্য প্রাণী না কাছে আসে। আমি তাঁবুর মধ্যে ফোল্ডিং হাল্কা ইজি চেয়ারে বসে পুরো শরীর ঢাকা মোটা জ্যকেটে। আমি জঙ্গলের শোভা দেখছিলাম মন দিয়ে।পাশেই নাইটভিশন বাইনোকুলার ,,আগ্নেয়াস্ত্র সব গুছিয়ে রাখা আছে।হঠাৎ কাছেই একটা বড় গাছের মাথায় কিছু বানর বা ঐ জাতীয়প্রাণী অস্থির ভাবে চেঁচামেচি, ঝুপঝাপ আওয়াজ করে ঊঠল। আমি সতর্ক হলাম কারন কোমোডোর ড্রাগন এদের কাছে পরিচিত জী্ এদের দেখলে এরা এত অস্থির হয়ে উঠবেনা।নিশ্চয় কোনো অজানা বা ভয়নঙ্কর প্রাণী জীব জন্তু কাছাকাছি কোথাও এসেছে, তারই আভাষ পেয়ে এরা চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কোমোডোর ড্রাগন সম্পর্কে যে তথ্য আমার কাছে আছে তাতে আমি জানি নিজে থেকে এসে ওরা মানুষ কে আক্রমণ করবেনা-যদিও সেপ্টেম্বর মাসে এরা ডিম পাড়ে।এই পৃথিবীর বৃহত্তম জীবিত স্বরীসৃপটির লালা অতি বিষাক্ত,কামড়ে বড় জন্তুও অবসন্ন হয়ে পড়ে মারা যায়।ওরা বহু দূর থেকে প্রায় ১কিলোমিটারের বেশী দূর থেকে রক্তের গন্ধ পায়। দ্বীপের অন্য প্রাণীরা এদের স্বভাব জানে তাই এদের দেখে এমন আতঙ্কিত হয়ে এই আচরণ করার কথা নয়।আমি তাই বিশেষ সতর্কভাবে লক্ষ্য করতে লাগ লাম কি হয়? হঠাৎ একটা সোঁ সোঁ করে জোরে হাওয়া বওয়ার মতন আওয়াজ ফাঁকা সমুদ্র ও পাহাড়ের মিলন হয়েছে তটের সেই দিক থেকে এই দিকেভেসে আস্তে লাগলো -আওয়াজটা ক্রমশঃ জোর হতে লাগলো। গাছের মাথায় পশু পাখির আওয়াজ থেমে গেছে, দেখি একটা কালো মতন প্রকাণ্ড জন্তু বাদুরের মতন ধেয়ে আসছে,মনে হল মাটির ও সমুদ্রের জলের থেকে কিছুটা ওপর দিয়েই ভেসে আসছে -বুঝলাম ডানা ঝটপটানির শব্দ হচ্ছে সাথে তীব্র বেগে হাওয়া কাটানোর শব্দ।নাইট ভিশন চোখে লাগালাম-অবাক ওটা কি ? একটা প্রকাণ্ড কোমোডর ড্রাগন জানি ঊড়ে আসছে তার গায়ে দুটো পাখনা-মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে উজ্বল লাল আভা যুক্ত চেড়া লম্বা সরু লিক লিকে জিভটা লক লক করে মুখ থেকে বেড়িয়ে আসছে যেন আগুনের হল্কা ।বুঝলাম এটাই আসল ড্রাগন।চীন,জাপান,কোরিয়া,ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশীয়া দেশের রুপকথায় এদের উল্লেখ আছে.১৯১৯ খৃষ্টাব্দে এল্লি অটোস্মিথ তাঁর ইংরাজী বই Evolution of the Dragon বইতে এই প্রাণীর উল্লেখ করেছেন, তার আগেই ১৯১০ সালে প্রথম ইউরোপীয় রা কুমির দ্বীপ থেকে এখন যেটাকে কোমোডর আইল্যাণ্ড বলে সেখানে কোমোডর ড্রাগনের সন্ধান পায় বলে প্রকাশ করে। আসল ড্রাগনের অস্তিত্ব আজ অব্ধি প্রমানিত হয়নি-এটা কাল্পনিক জীব বলেই সারা বিশ্ব জানে, অথচ আজ আমার সামনে ই উপস্থিত সেই ভয়ঙ্কর প্রাণী আমি কি করব এখন জানিনা। ওই প্রাণীটা আমার তাঁবুর দিকেই উড়ে আসছে, কিন্তু মনে হয় তাঁবুটা বুঝতে পারিনি-ক্যমোফ্লেজ করে রাখার জন্য বা চারপাশে আগুন জ্বলছে বলে।ভয়ে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে জানিনা আমি জ্ঞান হারাবো কিনা? কোন ক্রমে এই কথা গুলো লিখে রাখছি। খুব আতঙ্কিত অবস্থায় ডায়েরীতে এই শেষের দিকের লাখা গুলো তারপর অস্পষ্ট কিছু লেখা আঁকা। এরপর বেশ কয়েকটা পাতা ছাড়া কিছু লেখা নেই মনে হয় কিছু লেখার বিষয় ছিলো পরে লিখবেন ভেবে ছিলেন আর লেখা হয়ে ওঠেনি।
এরপর ডায়েরীর পাতায় জীব বিদ্যার অনেক তথ্য,বিস্তারিত বিবরণ,বেশ কিছু পাতায় নানা রকম ম্যাপ, গাছ পা লা, ইন্দোনেশীয়ার অন্তর্গত বহু অজানা দ্বীপের অবস্থান উল্লেখ আছে।তারপর আবার কয়েকটা পাতা ছেড়ে লেখা শুরু।আমার উদ্দেশ্য আংশিক সফল কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার,আমি যে দ্বীপে এসে এই প্রকৃত ড্রাগনের সাক্ষাৎ পেলাম, সেখনে রাত্রে জ্ঞান হারানোর পর পরদিন স ন্ধ্যায় আমার যখন সম্বিত ফিরে আসে দেখি তাবু লণ্ডভণ্ড ,আমি একটা গোলাপী সমুদ্র তটে অচৈতন্য পড়ে ছিলাম,আমার পকেটে ছিলো হ্যাণ্ড বুক আর কলম,ছিন্নভিন্ন তাঁবুর পাশে খাবার জলের বোতল, একটু দূরে ছিটিয়ে পড়ে আছে আমার আত্ম রক্ষার অস্ত্রগুলি,কিছু ঔষধপত্র, ছেঁড়া কিছু কাগজপত্র ছেঁড়া জামা কাপড়ের টুকরো।মোটর বোটটা তে এসে কোন রকমে উঠতেই চারপাশ তাকিয়ে দেখার আগেই ঊঠলো প্রবল ঝড়,সামুদ্রিক ঝড় সাথে দ্বীপের দিক থেকে ধেয়ে আসা বালির ঝড়,আমার মোটর বোট মোচার খোলার মতন কোথায় ভেসে চলল জানিনা,সারা আকাশ কালো,সাথে টর্চটাও নেই হারিয়েছি-এখন নিরুপায়,আবার আমি ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞান হারালাম। মাঝে এক মাস অতিক্রান্ত,আমাকে সমুদ্রে মাছ ধরার জেলেরা , ভাঙা মোটর বোটে লাইফবেল্ট পরা (কখন বোটে অজান্তে পরে নিয়েছিলাম ইশ্বরের কৃপায়)অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে, পকেটে পরিচিতি পত্র ছিলো তারা আমাকে East Timor এ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে খানিক টা সুস্থ করে আমাকে যত্ন সহকারে অস্ট্রেলিয়ায় DARWIN এ নিজের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।কিন্তু আমার কথা কেউ ই বিশ্বাস করেনি,বলেছে কোন কারনে ভয়ে স্মৃতিবিভ্রম ঘটেছে, আমি মানসিক রোগগ্রস্থ হয়ে পরেছি। আমার বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি যে দ্বীপের কথা, যেখানে অবস্থিত বলেছি তা নাকি অবাস্তব, অমন কোন দ্বীপ ই নাকি ওখানে নেই।ইন্দোনেশীয়ার Pink beach (NusuaTengra, Barat/Bima) তে এমন কোন জীব বা পরিবেশ নেই,আমি যেমনটি দেখেছি বা বলেছি এটা নাকি সম্পুর্ণ কাল্পনিক। ঐ সব অঞ্চল সবার চেনা জানার মধ্যে পড়ে তাই আমার তথ্য কেউ ই বিশ্বাস করেনি। এরপর ডায়েরীর শেষ দিকে লেখা। আমার শরীর খুউব খারাপ, বুঝতেই পারছি আর বেশী দিন আয়ু নেই সময় হয়ে এসেছে চলে যাবার। আমার অনুসন্ধান কাজ অসম্পুর্ণ থেকে গেলো।আমার ব্যক্তিগত ভাবে জীবন স্বার্থক কারণ আমি স্বচক্ষে ঐ কাল্পনিক জীব উপ কথার ড্রাগন দেখেছি। আমার বিশ্বাস এই রকম বহু পুরানে,রুপকথায় স্থানীয় লোক কথায় বর্ণিত বহু কাল্পনিক প্রাণীর অস্তিত্ব প্রকৃত পক্ষেই পৃথিবীতে ছিলো,আছে ,হয়ত আগামী দিনেও কোথাও কোথাও খোঁজ মিলবে।অনেক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তবুও খুঁজে দেখলে হয়ত মিলতে পারে এম ন অবশিষ্টকিছু প্রাণীর যা বিস্ময়কর। এজন্য নির্লোভপ্রকৃত বিজ্ঞান সাধকের প্রয়োজন। ইন্ডিয়াতে আছে,আমার বন্ধু ডক্টর উকিল, সেইএকমাত্র পারলে পারবে,আমার মতন এই ভাবে খুঁজে উদ্ধার করতে প্রকৃত সত্যটা ,তাঁকে সব তথ্য পাঠিয়ে দেব। (এই লেখার বেশী ভাগ তথ্য সঠিক কোমোডর ড্রাগন এখন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রাণী,কোমোডর ড্রাগন দেখার জন্য বিশেষ ভ্রমন ব্যবস্থা,এখন এদের সংরক্ষন করা হয়েছে, সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু এদের সংকটাপন্ন জীব তালিকা ভুক্ত রাখা হয়েছে। প্রকৃত ড্রাগনের অস্তিত্ব প্রমানিত হয়নি)
No comments:
Post a Comment